অনন্ত নক্ষত্র বীথি-পর্ব (১৮)- হুমায়ূন আহমেদ

না, তারা জানে না। তাদের সঙ্গে যােগাযোেগ সম্ভব হয় নি। তারা তাদের মিশন সম্পূর্ণ করতে চায়আমরা তাদের তা করতে দেব।

অনন্ত নক্ষত্র বীথিমহাকাশযানটি তৈরি করা প্রায় শেষ। শিগগিরই ইয়তো ওরা যাত্রা শুরু করবে।” 

‘আমাকে নিয়ে আপনাদের কী পরিকল্পনা ? 

‘পরিকল্পনার কথা তােমাকে আগেই বলেছি । মানবজাতির ত্রুটিগুলি আমরা দূর করতে চাই। তুমি এবং তােমার বান্ধবী সম্পূর্ণ নতুন একটি ত্রুটিমুক্ত মানব-সমাজ তৈরি করতে পার, যা হবে অসামান্য ক্ষমতার অধিকারী। যারা তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকবে। বস্তুর ওপর প্রয়ােগ করবে তার সীমাহীন ক্ষমতা। 

তা কি ভালাে হবে? ‘কেন হবে না ? 

আপনারা যে-সমস্ত জিনিসকে ক্রটি বলছেন, হয়তাে সেগুলি ত্রুটি নয়। পরা বস্তু ক্ষমতার প্রয়ােগের সময় এখনাে আসে নি বলেই হয়তাে তা সুপ্ত অবস্থায় আছে । একদিন বিকশিত হবে। 

কিংবা কোনাে দিনও হবে না। আমরা তা হওয়াতে চাই বলেই প্রভাব হিসেবে কাজ করতে চাই।’ 

‘আপনারা দয়া করে আমাদের আমাদের মতাে থাকতে দিন। আমাকে আমার জায়গায় ফিরে যেতে দিন। 

অনন্ত নক্ষত্র বীথি-পর্ব (১৮)- হুমায়ূন আহমেদ

কী হবে ওখানে গিয়ে, এ জীবনে যা চেয়েছ সবই তো পাচ্ছ। জীবন শুরু করবে মৎকার একটি গ্রহে। পাশে থাকবে তােমার বান্ধুবী।’ 

দয়া করে আপনারা আমাকে ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা করুন। 

“তােমাকে ফেরত পাঠানো কঠিন কিছুই নয়। কিন্তু তার ফলাফল তােমার জনাে ভয়াবহ হবে। 

কেন ? ‘ঠাণ্ডামাথায় বুঝতে চেষ্টা কর । যে-পৃথিবী ছেড়ে তুমি মহাকাশযানে করে চলে এসেছ সেই পৃথিবীতেই তুমি হঠাৎ করে উপস্থিত হবে। তােমাকে পাঠাতে হবে চতুর্মাত্রার মাধ্যমে, তাতে সময় সংকোচন হবে। সেই সময় সংকোচনের ফলে তুমি উপস্থিত হবে এমন এক সময়ে যখন তুমি পৃথিবী ছেড়ে রওনা হও নি। 

“আমি বুঝতে পারছি না।“সময় সংকোচনের ব্যাপারটা তাে জান ?’ 

, জানি না। সময়-সম্প্রসারণের ব্যাপারটা জানি। আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটিতে আছে। মহাশূন্যে সময় শ্লথ হয়ে যায়। সেই তুলনায় পৃথিবীর বয়স দ্রুত বাড়ে। একজন মহাকাশচারী তিনমাস নক্ষত্রপুঞ্জে কাটিয়ে ফিরে এলে দেখতে পায় পৃথিবীতে তিন বছর পরে হয়ে গেছে।’ 

‘সময় সংকোচন হচ্ছে ঠিক তার উল্টো। তােমাকে এখন পাঠানাে হলে তুমি অতীতে চলে যাবে‘ 

কী রকম অতীতে ? ‘খুব বেশি নয়। তুমি পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করেছিলে ৩০ জুন। তােমাকে পৃথিবীতে পাঠালে তুমি উপস্থিত হবে এপ্রিল মাসের যাত্রা শুরুর দু’মাল আগে । এর একটা ভয়াবহ দিক আছে। তা নিয়ে কি ভেবেছ? ভয়াবহ দিকটি বুঝতে পারছ ? 

‘পারছি। যেহেতু আমি পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু হবার আগেই পৃথিবীতে পৌছাচ্ছি, সেই হেতু পৃথিবীতে পৌছে আমি আমাকেই দেখতে পাব । আবার আমরা হব দু’ জুন। 

অনন্ত নক্ষত্র বীথি-পর্ব (১৮)- হুমায়ূন আহমেদ

না। তা হবে না। প্রকৃতি অনিয়ম সহ্য করে না। কাজেই তুমি তােমাকে পাবে 

প্রকৃতি তা হতে দেবে না । তােমার অতীতে ফিরে যাবার ব্যাপারটা প্রকৃতির নিয়মে গ্রহণযােগ্য হবার জন্যে যে পৃথিবী থেকে তুমি এসেছিলে অবিকল সেই পৃথিবীতে তুমি ফিরে যাবে না। পৃথিবী হবে একটু অন্যরকম। মাত্রা যাবে বদলে। 

তার মানে ? ‘আমরা বলতে পারছি না। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অসীম রহস্যের অতি অল্পই আমরা জানি। সেই অল্প জ্ঞান নিয়ে সব ব্যাখ্যা করা যায় না। তবে তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি, মান্না ভাঙার ফল সাধারণত ভয়াবহ হয়ে থাকে। তুমি একটি ভয়াবহ চক্রে পড়ে যেতে পার। তারপরেও যদি যেতে চাও তাহলে ভিন্ন কথা। 

যেতে চাই।’ ভালাে করে ভেবে বল। ভেবেই বলছি। ‘বেশ, ব্যবস্থা হবে। মাত্রা ভেঙে তােমাকে ফেরত পাঠানাে হবে।’ 

ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ। সেই বিশেষ ক্ষণটি কখন ? 

‘অস্থির হয়াে না। হবে, শিগগিরই হবে। পৃথিবীতে ফিরে যাবার আগে তুমি কি একবার দেখতে চাও না, আমরা এখানে তােমার এবং তোমার বান্ধবীর জনাে কী ব্যবস্থা করে রেখেছি। হয়তাে এটা দেখলে তুমি মত বদলাবে।’ 

‘আমি কিছুই দেখতে চাই না।’ 

‘জন বরগ তার মিশন নিয়ে যাত্রা শুরু করবে। তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে কত না বিস্ময় ! ঐ দলের সঙ্গেও তুমি যােগ দিতে চাও না ? 

না। ‘বিদায় সম্ভাষণ জানাবে না ? 

‘বেশ, তুমি যা চাও তাই হবে। আর কিছু কি তােমার স্বলার আছে ? 

আপনি যে আমার মতাে আরেকজন তৈরি করেছেন তার কী হবে? সেও যদি আমার মতাে পৃথিবীতে উপস্থিত হয়, তাহলে তাে ভয়াবহ ব্যাপার হবে। আমরা হব তিনজন। 

‘নে এখানেই থাকবে। যে গ্রহটি তােমাদের জন্যে নির্ধারিত করা ছিল, সেই গ্রহে সে চলে যাবে। তােমার বান্ধবী নিকি যাবে তার সঙ্গে। নতুন বসতি শুরু হবে। নতুন মানব সম্প্রদায়ের শুরু করবে তারা। 

অনন্ত নক্ষত্র বীথি-পর্ব (১৮)- হুমায়ূন আহমেদ

‘অসম্ভব। নিকি কেন যাবে ? 

যাবে, কারণ তুমি পৃথিবীতে তােমার নিকিকে পাবে। একে তােমার প্রয়ােজন নেই। তুমি একজন নিকিকে সঙ্গে করে নিশ্চয়ই পৃথিবীতে উপস্থিত হতে চাও না। 

আমি চুপ করে রইলাম । আমার অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে। কী ভয়ংকর পরিস্থিতি। এর থেকে উদ্ধার পাওয়ার কি কোনাে পথ নেই? ওরা আবার কথা বলল, ওদের নতুন জীবন শুরুর দৃশ্যটি আমরা তােমাকে দেখাতে চাই।’ 

আমি দেখতে চাই না‘ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *