প্রথম প্রথম এ-রকম মনে হচ্ছে। ক’দিন পর ভালাে লাগবে না। আমার কখনাে এ বাড়ি খারাপ লাগবে না। যদি হাজার বছর থাকি তবুও লাগবে না। আচ্ছা দেখা যাবে। দেখাে তুমি।
আসলেই তাই হল। মিসির আলি লক্ষ্য করলেন এ বাড়ি যেন প্রবল মায়ায় বেঁধে ফেলেছে নীলুকে। ছুটিছাটা হলেই সে ময়মনসিংহ আসবার জন্য অস্থির হয়। একবার এলে আর কিছুতেই ফিরে আসতে চায় না। রীতিমতাে কান্নাকাটি করে। বিরক্ত হয়ে মাঝে মাঝে তাকে একা রেখেও চলে এসেছেন। ভেবেছেন ক’দিন একা থাকলে আর থাকতে চাইবে না। কিন্তু তা হয়নি। এ বিচিত্র বাড়িটির প্রতি নীলুর আকর্ষণ বাড়তেই থাকল। শেষটায় এ-রকম হল যে বৎসরের প্রায় অর্ধেক সময় তাদের কাটে এ বাড়িতে।
তাদের প্রথম ছেলেটির জন্মও হল এ বাড়িতে। ঠিক তখন মিসির আলি লক্ষ্য করলেন নীলু যেন পুরােপুরি স্বাভাবিক নয়। একদিন কথা বলতে বলতে হঠাৎ সে বলল, জানাে আমাদের এ ছেলেটা আসলে একটা গাছ।
মিসির আলি অবাক হয়ে বললেন, এ-কথা বলছ কেন? নীলু লজ্জিত স্বরে বলল, এম্নি বললাম, ঠাট্টা করলাম। এ কেমন অদ্ভুত ঠাট্টা?
নীলু উঠে চলে গেল। মিসির আলি দেখলেন সে ছাদে দাঁড়িয়ে দূরের গারাে পাহাড়ের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । তার চোখ ভেজা।
সেই অজানা লতানাে গাছটি আরাে লতা ছেড়ে অনেক বড় হয়েছে। প্রচুর ফুল ফুটিয়েছে। দিনের বেলা সে-ফুলের কোনাে গন্ধ পাওয়া যায় না। কিন্তু যতই রাত বাড়ে মিষ্টি সুবাসে বাড়ি ভরে যায়। মিসির আলির অস্বস্তি বােধ হয়, কিন্তু যতই রাত বাড়ে অস্বস্তির কারণ তিনি ধরতে পারেন না।
তিনি তার ছেলেকে নিয়েও খুব দুশ্চিন্তা বােধ করেন । ছেলেটি সবে হামা দিতে শিখেছে। সে ফাঁক ফেলেই হামা দিয়ে ছাদে উঠে যায়। চুপচাপ রােদে বসে থাকে। তাকে নামিয়ে আনতে গেলেই হাত ছুড়ে বড় কান্নাকাটি করে।