মুন্সিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা হলো শ্রীনগর উপজেলা।পদ্মার তীর ঘেঁষা এই উপজেলাটি বেশ সুন্দর। ঢাকার খুব কাছে এই উপজেলাটি ।এই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও দারুন। অনেক জ্ঞানী ও গুনী মানুষের জন্ম এই শ্রীনগরে।
বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু:
বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু এর মধ্যে অন্যতম।শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল গ্রামে বিজ্ঞানীর পৈত্রিক নিবাস। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী এবং উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে এটা উনারই আবিস্কার।
তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরম বন্ধু ছিলেন। জগদীশচন্দ্র বসুর পৈত্রিক নিবাসটি ৩০ একর জায়গা জুড়ে।উনি উনার জীবন দশায় তার সম্পত্তি দান করে গেছেন।সেখানে ১৯২১ সালে সুরুজ বালা সাহা বিদ্যালয় ও পরে ১৯৯১ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
২০১১ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে, যা চলে জগদীশ চন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশনের উদ্যোগে। কমপ্লেক্সে নির্মিত হয়েছে জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর, পশু-পাখির , কৃত্রিম পাহাড়-ঝরনা ও সিঁড়ি বাধানো পুকুর ঘাট। জাদুঘরে জগদীশ চন্দ্র বসুর পোট্রেট, গবেষণাপত্র, হাতে লেখা পান্ডুলিপি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল প্রাপ্তিতে তাকে লেখা চিঠি ও রবীন্দ্রনাথের বসুকে লেখা চিঠি, তেল রং দিয়ে অাঁকা ১৭টি দুর্লভ ছবি, রয়্যাল সোসাইটিতে দেওয়া বক্তৃতার কপি এবং নানা দুর্লভ জিনিস রয়েছে।
সবুজে ঘেরা জগদীশ চন্দ্র বসুর বাড়ির পরিবেশ বড়ই মনোরম ।প্রতি বছর বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এখানে আসে পিকনিক করতে।
বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারক অতীশ দীপঙ্কর:
শ্রীনগরের আরেক উল্লেখযোগ্য কৃতি সন্তান হচ্ছেন বোদ্ধ ধর্ম প্রচারক অতীশ দীপঙ্ক। ইতিহাসে উনার নাম স্বর্নাক্ষরে লিখা আছে।তিনি ৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।এই গ্রামটি শ্রীনগর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত।এটি “নাস্তিক পন্ডিত” এর ভিটা নামে পরিচিত।
গৌড়ীয় রাজা কল্যাণশ্রী ও প্রভাবতির সন্তান তিনি।নেপালের রাজার আমন্ত্রণে প্রথমে নেপাল পরে ঔখান থেকে তিব্বত যান, যার বর্তমান নাম চীন। তিব্বতের রাজা রাজকীয় সংবর্ধনা দিয়ে উনাকে থোলিং বিহারে নিয়ে জান।সেখানেই তিনি “বোধিপথপ্রদীপ ” রচনা করেন।তিনি তিব্বতের বিভিন্ন অংশে ঘুরেন আর বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন এবং বিশুদ্ধ ‘মহাযান’মতবাদের রচনা করেন।বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা গ্রহনের পর তাঁর নাম হায় ” দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞন “।
তিববতের ধর্ম ও সংস্কৃতিতে দীপঙ্করের প্রভাব আজও বিদ্যমান। তিব্বতের রাজা উনাকে প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেন।প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি তিব্বতের একটি নদীতে বাঁধ দিয়ে বন্যা প্রতিরোধের মাধ্যমে জনহিতকর কাজেও অংশগ্রহণ করেন।প্রাচীন তিব্বতের আলোচনা উনাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। তিব্বতিয় ভাষায় তিনি বৌদ্ধশাস্ত্র, চিকিৎসাবিদ্যা এবং কারিগরি বিদ্যা সম্পর্কে অনেক গ্রন্থ রচনা করেন বলে তিব্বতিরা তাঁকে ‘অতীশ’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
তিনি সেখানে অনেক জনহীতকর কাজ করেছেন।তিনি তিব্বতেই মরা জান। আর তার সমাধিক্ষেএ তাদের কাছে তীর্থ ক্ষেএ। ১৯৭৮ সালের ২৮শে জুন দীপঙ্করের পবিত্র চিতাভস্ম চীন থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকায় আনা হয় এবং তা বর্তমানে ঢাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারে সংরক্ষিত আছে।এমন একজন জ্ঞানী লোকের জন্মস্থান অবশ্যই দর্শনীয় বলেই আমার মনে হয়।
শ্রীনগর উপজেলাটি ঢাকা থেকে অনেক কাছেই।সকালে গিয়ে সারাদিন ঘুরে বিকালেই ফেরত আসা যায়। আর যাতায়াত ব্যবস্থাও বেশ ভাল আর যাত্রা পথের প্রাকৃতিক দৃশ্যও বেশ মনোরম। তাছাড়ও শ্রীনগরে আর অনেক কিছুই দেখার আছে যেমন – পদ্মার পাড় আর খানারের মধ্যে ঘোল, ছানার সন্দেশ। তাই সময় করে এই দর্শনীয় এই স্থানগুলো ঘুড়ে আসা যা।
By —
ত্রোপা চক্রবর্তী।