ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালী কবি, সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। স্বদেশ ও স্বসমাজের প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল অত্যন্ত নিবিড়। তিনি বাংলা ভাষার উন্নায়নের জন্য যে আন্দোলন করেছেন তা আজ স্মরণীয় হয়ে আছে। তিন সবসময় ইংরেজি প্রভাব বর্জিত খাঁটি বাংলা শব্দ ব্যবহার করতেন।
প্রথম দিকে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ আন্দোলনের বিরোধিতা করে এ বিষয়ে নানা ব্যঙ্গ কবিতা রচনা করলেও পরে স্ত্রীশিক্ষার সমর্থন, ধর্মসভার বিরোধিতা, দেশের বৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন প্রচেষ্টা এবং দরিদ্র জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে উদার মনোভাবের পরিচয় দেন। এমনকি তিনি অক্ষতযোনি বিধবার বিবাহেও আর আপত্তি করেননি। তাঁর কবিতায় উঠে আসে সমসাময়িক রাজনতিক, সামাজিক ঘটনাবলির চিত্ররূপ তাঁর নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে। সাংবাদিক রূপেও ঊনবিংশ শতকের এই আধুনিক মানুষটি যথাযোগ্য কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম
- তিনি জন্মগ্রহণ করেন – ৬ মার্চ, ১৮৮২ সালে।
- তাঁর পৈতিক নিবাস – চব্বিশ পরগনা জেলার কাঞ্চনপল্লী (বর্তমানে কাঁচড়াপাড়া) গ্রামের এক সম্ভ্রন্ত্র বৈদ্য পরিবার, যা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত।
- পিতার নাম – হরিনারায়ণ দাশগুপ্ত (আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ছিলেন) এবং মায়ের নাম শ্রীমতী দেবী।
- তাঁর প্রপিতামহ ছিলেন – নিধিরাম, যিনি একজন সুবিখ্যাত কবিরাজ।
- তাঁর শিক্ষাজীবন – তিনি শৈশবে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হওয়ার কারণে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশিদূর এগোয়নি, তবে অসাধারণ মেধা ও স্মৃতিশক্তির অধিকারী ঈশ্বরচন্দ্র নিজ চেষ্টায় বাংলা ও ইংরেজি ভাষা শেখেন এবং বেদান্তদর্শনে পারদর্শিতা লাভ করেন।
- ছদ্মনাম – ‘ভ্রমণকারী বন্ধ’।
- বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম দৈনিক পত্রিকা – দৈনিক সংবাদ প্রভাকর।
- তিনি কোন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে খ্যাত ছিলেন – সংবাদ প্রভাকর(১৮৩১ সালে সাপ্তাহিক, ১৮৩৯ সালে দৈনিক)।
- দৈনিক সংবাদ প্রভাকর প্রকাশিত হয় – ১৮৩৯ সালে।
- বাংলা সাহিত্যে তাঁর পরিচয় – যুগসন্ধির কবি।
- তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত অন্যান্য পত্রিকাগুলো হলো – ‘সংবাদ রত্নাবলী’(১৮৩২), ‘সংবাদ সাধুরঞ্জন’(১৮৪৭) প্রভৃতি।
- বাংলা কবিতা মধ্যযুগের গন্ডি পেরিয়ে আধুনিকতার রূপ পেয়েছে – ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের হাত ধরে।
- তাঁর রচনারীতির বিশেষত্ব – ব্যঙ্গবিদ্রুপ এবং দেশপ্রেম ও সমাজভাবনা।
- ’পাঁঠা’, ’আনারস’, ‘তোপসে মাছ’ ইত্যাদি বিষয় অবলম্বনে কবিতা লেখেন – ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত।
- তাঁর বিখ্যাত উক্তি – ”তুমি মা কল্পতরু আমরা সব পোষা গরু, শিখিনি শিং বাকানো”।
- ’বোধেবন্দু বিকাশ’ কোন জাতীয় রচনা – নাটক।
- ’বোধেবন্দু বিকাশ’ নাটকটির রচয়িতা – ঈশ্বরচন্দ্রর গুপ্ত।
- ১৮৬৩ সালে-’বোধেবন্দু বিকাশ’ নাটকটি প্রকাশিত হয় ।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম
- ভাষা ও ছন্দের উপর তাঁর বিস্ময়কর অধিকারের প্রমাণ পাওয়া যায় – ‘বোধেন্দু বিকাশ’ নাটকে।
- তাঁকে ’খাঁটি বাঙালি কবি’ বলে অবহিত করেছেন – ‘বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
- ’প্রবোধ প্রভাকর’ কোন জাতীয় রচনা – কাব্যগ্রন্থ।
- ’প্রবোধ প্রভাকর’ কাব্যের রচয়িতা – ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত।
- ১৮৫৮ সালে-’প্রবোধ প্রভাকর’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ।
- ’হিত প্রভাকর’ কোন জাতীয় রচনা – কাব্যগ্রন্থ।
- ’হিত প্রভাকর’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯৬১ সালে।
- ‘হিত প্রভাকর’ এবং ‘বোধেন্দু বিকাশ’ গ্রন্থের রচয়িতা – ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ।
- তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো – ভারতচন্দ্র রায়, রামপ্রসাদ সেন, নিধুগুপ্ত, হরু ঠাকুর ও কয়েকজন কবিয়ালের লুপ্তপায় জীবনী উদ্ধার করে প্রকাশ করা।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তর – ’কবিতা সংগ্রহ’ (১৮৮৫) এবং ‘সত্যনারায়ণ ব্রতকথা’ (১৯১৩)।
- তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম – রামপ্রসাদ সেন কৃত কারীকীর্তন(১৮৩৩), ‘কবিবর ভারতচন্দ্র রায় ও তাঁর জীবনবৃত্তান্ত (১৮৫৫)।
- তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ – রামচন্দ্রগুপ্ত সংগৃহীত কবিতার সংকলন (১৮৬২), কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন সম্পাদিত সংগ্রহ (১৮৯৯), মণিকৃষ্ণ গুপ্ত সম্পাদিত সংগ্রহ (১৯০১)।
- তিনি মৃত্যুবরণ করেন – ১০ মাঘ, ১২৬৫ বঙ্গাব্দে (২৩ জানুয়ারি, ১৮৫৯)।