উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১২)-হুমায়ুন আহমেদ

মহসিন বলল, দশ টাকা সম্বল আর তুই হাজার টাকার বাজি ধরেছিস ? 

হারুন বলল, বাজিতে তুই যদি জিতে যাসহয় তােকে হাজার টাকা দেব, আর নয় তাে এখান থেকে নেংটো হয়ে বাসায় ফিরব

উড়ালপঙ্খিরাত একটা দশ পুরাে দল ঝিমুচ্ছে শিক কাবাব এবং নানরুটি এসেছে, কেউ কিছু মুখে দেয় নিশুধু হারুন একাই পাচটা শিক এবং তিনটা নানরুটি খেয়ে ফেলেছেসফিকের অবস্থা খুব খারাপসে পাঁচদশ মিনিট করে ঘুমাচ্ছে, আবার জেগে উঠছেতার চোখ গাঢ় লাল| শয়তান ফেরেশতা না জ্বিনএই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছেশয়তানজ্বিন। 

বাজির শর্ত অনুসারে মহসিন নেংটো হয়ে দারােয়ানের কাছে যেতে এবং ফিরে আসতে রাজি হয়েছে হারুন দয়াপরবশ হয়ে বলেছেযা মাফ করে দিলামনেংটো হওয়ার দরকার নেইসফিক হুঙ্কার দিয়ে উঠেছে অবশ্যই দরকার আছেতার উচিত শিক্ষা হতে হবে না জেনে তর্ক করেনা জেনেবাজি ধরে । 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১২)-হুমায়ুন আহমেদ

হারুন বলল, এই কাজটা করলে ফ্ল্যাট বাড়িতে জানাজানি হবেতাের মামার কানে যাবে তােরই অসুবিধা। হােক অসুবিধা আমি কি মামাকে কেয়ার করি ? Who is মামা

সাবের চাদর গায়ে দিয়ে কোলবালিস বগলে নিয়ে শুয়েছিলতার চোখ বন্ধ এই দলে তার নাম নীরব ঘাতক সে কখনােই কোনাে কথা বলে নাহঠাৎ হঠাৎ দুএকটা এমন কথা বলে যে পুরাে দলের মুড বদলে যায়সাবের চোখ না মেলেই বলল, Who is মে মেমে মে| বারুদে আগুন পড়ার মতাে হলােসবাই বলা শুরু করল মে মেমে 

মে তারা কিছুক্ষণ মে মে করে, তারপর হাে হাে করে হাসেআবারাে মে মেকরে আবারাে হাসেরাত দুটার দিকে তাদের হাসি বন্ধ হলােমহসিনকে পাঠানাে হলাে বাজির শর্তপূরণের জন্যেমহসিন নির্বিকার ভঙ্গিতেই কাপড় খুলে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নিচে গেল। 

রাত আটটাসফিক বসার ঘরের মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে আছে আজ সারাটা দিন তার ঘুমে ঘুমে কেটেছেমাঝে কয়েকবার ঘুম ভেঙেছে, তাও অল্প সময়ের জন্যেএকবার ঘুম ভাঙল সকাল এগারােটার সময়সে রেস্টুরেন্ট থেকে হাফ প্লেট তেহারি খেয়ে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লসেই ঘুম ভাঙল বিকাল তিনটায়রেস্টুরেন্টে গেলপরােটা আর গােশত খেয়ে সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত ঘুমাল। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১২)-হুমায়ুন আহমেদ

ঘুম ভাঙল টেলিফোনের শব্দেদিল্লি থেকে সফিকের মামা টেলিফোন করেছেনতাঁর গলা থমথম করছেসফিক মামার থমথমে গলা অগ্রাহ্য করে আনন্দিত স্বরে বলল, কেমন আছ মামা ? বেড়ানাে কেমন হচ্ছে? তাজমহল দেখেছ

সফিকের মামা বললেন, বাসায় তুই ছাড়া আর কে কে আছে

সফিক অবাক হয়ে বলল, আমি আছি, আর কে থাকবে ? জুতিয়ে তাের আমি পিঠের খাল তুলে ফেলব। সফিক বিস্মিত হবার ভঙ্গি করে বলল, এইসব তুমি কী বলছ মামা! ঘটনা কী

চুপ শুয়াের। বদমায়েশের বদমায়েশমামা, আমি তাে কিছুই বুঝতে পারছি নাকেউ কি তােমার কাছে কিছু লাগিয়েছে

শাটআপ হারামিকী আশ্চর্য, বলবে তাে কী হয়েছে ? আমি খবরাখবর নেয়ার জন্যে আরজু সাহেবের বাসায় টেলিফোন করেছি..

কী বলেছেন আরজু সাহেব... উল্টা পাল্টা কিছু বলেছেন ? মাই গড! মানুষকে বিশ্বাস করা মুশকিলউনার সঙ্গে একবার আমার দেখা হয়েছিল সিড়িতেআমার তাে মনে হলাে খুবই ভদ্র মানুষ| তুই অস্বীকার করতে চাস বন্ধুবান্ধব নিয়ে আমার বাড়িতে মচ্ছব বসাস নি ? হৈচৈচেঁচামেচিড্রাগ খাওয়া খাওয়ি করিস নি ? সবাই মিলে নেংটো হয়ে সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করিস নি

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১২)-হুমায়ুন আহমেদ

সফিক মধুর স্বরে বলল, মামা, তুমি রাগের মাথায় কী বলছ নিজেই বুঝতে পারছ নাতােমার রাগ কমানাের জন্যে স্বীকার করলাম তুমি যা বলছ সবই সত্যিতারপরেও আমার একটা কথা শুনবেপ্লিজ মামা, প্লিজ। 

তাের আর কী কথা থাকতে পারে ? | মামা শােন, আমার বন্ধুবান্ধব সবাই ভদ্র ঘরের ছেলেশিক্ষিত ছেলেএমন একজনও নেই যে এম.পাস করে নিআমাদের সমস্যা একটাইআমরা কোনাে চাকরি পাচ্ছি নাআমরা খুবই মন খারাপ করে থাকিমাঝে মধ্যে এক সঙ্গে হই, চাকরির কোনাে লাইন পাওয়া যায় কিনাএই নিয়ে আলাপ আলােচনা করিআমাদের বয়েসি যুবকদের সবাই সন্দেহের চোখে দেখে বলেই কয়েকজন একত্র হলেই মনে করে কিছু করছি, ড্রাগ নিচ্ছি বা মদ খাচ্ছি।  চুপচুপমিথুক কোথাকার। 

ঠিক আছে মামা, তর্কের খাতিরে স্বীকার করলাম আমরা খারাপখুবই খারাপ তােমার বাসায় বসে মদফদ খাচ্ছিলামএখন তুমি বলাে মামা, আমরা যত খারাপই হই আমাদের পক্ষে কি সম্ভব নেংটো হয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করা ? এটা কি কোনাে লজিকে পড়ে ?

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১২)-হুমায়ুন আহমেদ

আরজু সাহেব মিথ্যা কথা বলছেন

এই কথাটা উনি কেন বলছেন মামা আমি সত্যি জানি নাতবে আমি উনাকে জিজ্ঞেস করবতুমি টেলিফোন রেখে দিলেই আমি তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করব। 

তােকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে না তুই এক্ষুণি আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যা এক্ষুণি! এই মুহূর্তে। 

এখন চলে যাব

হ্যা এখন যাবিআমি টেলিফোন রাখব আর তুই বাসায় তালা লাগিয়ে বের হবি। 

মামা, চাবিটা কি আরজু সাহেবকে দিয়ে যাব ? হ্যা দিয়ে যাআমি ঢাকায় এসে তাের বদমায়েশি বের করছি। 

উল্টোটাও হতে পারে মামাদেখা যাবে তুমি লজ্জিত হয়ে আমার কাছে গেলে বললে, ভুল হয়েছে কিছু মনে করিস নারাগের মাথায় তােকে অনেক আজেবাজে গালি দিয়েছি। 

শাটআপএক্ষুণি যাআরজু সাহেবকে চাবি দিয়ে আয়। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১২)-হুমায়ুন আহমেদ

যাচ্ছিমামা তুমি ভালাে থেকোমামিকে আমার সালাম দিওকুতুব মিনার দেখে আসতে ভুল করাে নাঅনেকেই তাজমহল দেখে চলে আসে, কুতুব মিনার দেখে না| সফিকের কথা শেষ হবার আগেই তার মামা টেলিফোন রেখে দিলেনসফিক মুখ ভোঁতা করে বসে রইলএই মুহূর্তে একটা সিগারেট দরকারতার সঙ্গে সিগারেট নেইদোকানে গিয়ে সিগারেট কিনতে ইচ্ছা হচ্ছে নাবন্ধু বান্ধবদের আসার সময় হয়ে গেছেযে কেউ একজন এলেই সিগারেটের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবেশুধু সাবের এবং মহসিন হলে সমস্যার সমাধান হবে নাএই দুই জন সিগারেট খায় না

মুহিব এলেও হবে নামুহিব সিগারেট খায় নামুহিব হাবিজাবি কিছুই খায় নাগল্পউপন্যাসের ভালাে ছেলেএদের চেহারা হয় রাজপুত্রের মতােএদের চরিত্রে কোনাে ত্রুটি থাকে নাঅত্যন্ত রূপবতী মেয়ের সঙ্গে এদের প্রণয় হয়এরা পরীক্ষায় ফার্স্টসেকেন্ড হয়এদের চাকরি পেতেও কোনাে সমস্যা হয় নাফর্মুলাতে মুহিব খুব ভালাে মতােই পড়ে, শুধু একটা জায়গায় ফর্মুলা মিলছে নাঅনেক ঘােরাঘুরি করেও বেচারা চাকরি পাচ্ছে নামনে হচ্ছে তাকে সােনারুপার পানি দিয়ে ধােয়াতে হবেসােনা রুপার পানি দিয়ে ধােয়ালে দোষ কাটা যায়। 

সাবের, মুহিব, মহসিনএই তিনজনের যে কেউ এলে তাৎক্ষণিকভাবে সিগারেট পাওয়া যাবে নাসিগারেট কেনার জন্য এদের আবার নিচে পাঠাতে হবেমাফিজ বলছে আজ এরাই প্রথম আসবেমাফিজ খুবই মজার সূত্রএই সূত্র বলেগাদা করে রাখা বইয়ের ভেতর কেউ যদি কোনাে একটা বিশেষ বই খোঁজে তাহলে সেই বইটা থাকবে সবার নিচেসে যদি বুদ্ধি করে নিচ থেকে বইটা খুঁজতে শুরু করে তাহলে বইটা থাকবে সবার উপরে। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *