উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৩)-হুমায়ুন আহমেদ

সফিক চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল, আল্লাহপাক, তুমি দয়া করে সবার প্রথম সাবের, মুহিব কিংবা মহসিনএই তিনজনের একজনকে আমার কাছে পাঠাও গাে দয়াময় উড়ালপঙ্খিতুমি দয়ার সাগরতােমার কাছে এটা কোনাে ব্যাপারই নাসফিক এই প্রার্থনা করল কারণ সে দেখেছে আল্লাহর কাছে সে যেটা চায় তার উল্টোটা হয়যেহেতু সাবের, মুহিব কিংবা মহসিনকে চাওয়া হয়েছেএই তিনজন আসবে না

অন্য যে কেউ আসবেতাৎক্ষণিকভাবে সিগারেট সমস্যার সমাধান হবে| আজ সফিকের দোয়া আল্লাহ ঠিকঠাকমতাে শুনলেনসবার প্রথম মুহিব এসে উপস্থিত হলােমুহিব এই আড্ডার সর্বকনিষ্ঠ সদস্যসফিক তাকে বিশেষ স্নেহ করেমুহিব গত তিনদিনের আসরে অনুপস্থিতআজ তাকে দেখে সফিকের ভালাে লাগছে, তবুও সে বিরক্তি চাপতে পারছে না। 

সফিক বলল, মুহিব, তুই চট করে নিচে যা তাে, আমার জন্যে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে আয়টাকা নিয়ে যাযাবি আর আসবি। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৩)-হুমায়ুন আহমেদ

মুহিব কিছু বলল নাপলিথিনের ব্যাগে মােড়া এক প্যাকেট সিগারেট বের করে এগিয়ে দিল। 

সফিক বিস্মিত হয়ে বলল, ব্যাপার কী! সিগারেট ধরেছিস ? মুহিব বলল, নাআপনার জন্যে এনেছি। সিগারেট এনেছিস কেন? কারণ কী ? ভালাে খবর আছে ? জিচাকরি পেয়েছিস

জি। 

অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার সাথে আছে ? আছেদেখি কী ব্যাপারসফিক গভীর মনােযােগে অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার পড়লআনন্দিত গলায় বলল, চাকরি তাে খুবই ভালাে পেয়েছিসমুহিব চুপ করে রইল। 

সফিক বলল, আজ আর কাউকে কিছু বলিস নাসবাই মন খারাপ করবেচেপে যা। 

মুহিব হাসূচক মাথা নাড়ল। 

সফিক বলল, আগামীকাল কোনাে এক সময় সবাইকে তাের খবরটা দেবতুই কিন্তু আর আড্ডায় আসবি নাবুঝেছিস? তুই তাের মতাে থাকবিনতুন বন্ধুবান্ধব তৈরি করবিবাসার সবাই খুশি

বাসায় কাউকে বলি নি। 

কেন ? ইচ্ছা করল না

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৩)-হুমায়ুন আহমেদ

ইচ্ছা করল না কেন ? আচ্ছা থাক, ইচ্ছা না করলে বলতে হবে নাকারােউপর এখন রাগ রাখবি নামন দিয়ে চাকরি করবিমামার টেলিফোন পেয়ে মনটা অত্যন্ত খারাপ হয়ে গিয়েছিল, এখন তাের চাকরির খবর শুনে মনের কিছুটা রিপেয়ারিং হয়েছেহাবিজাবি কিছু খেতে পারলে ফুল রিপেয়ারিং হয়ে যাবে। 

মুহিব বলল, আজকের হাবিজাবির খরচ আমি দিবতুই দিলে সবাই সন্দেহ করবেটাকা আমার কাছে দেকত দিবি ? এক হাজার টাকা সঙ্গে আছে। 

দেখি দে টাকাটা অন্য সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলে আজ না হয় কিছু ভালাে হাবিজাবি খাইগতকাল মহসিন এমন এক জিনিস বানিয়ে দিয়েছে যে ঘুমায়ে কূল পাই নামনে হয় আফিমটাফিম মিশিয়েছেমহসিনের এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ করতে হবেকোন দিন দেখা যাবে সবাই মরে পড়ে আছিআজ রাতে কি তােকে বাসায় ফিরতে হবে

না ফিরলেও চলে। 

তাহলে আজ রাতে থেকে যাবাসায় যদি দুশ্চিন্তা করে একটা টেলিফোন করে দেআজ রাতটা সবাই মিলে হৈচৈ করে কাটাইকারণ অদ্য শেষ রজনী। 

শেষ রজনী কেন

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৩)-হুমায়ুন আহমেদ

এই বাড়িতে শেষ রজনীমামা গেট আউট করে দিয়েছেখুবই খারাপ ব্যবহারও করেছেকুৎসিত গালাগালি আমি আপন ভাগ্নে, সেই দিকে খেয়ালনেইকুত্তার বাচ্চা শুয়ােরের বাচ্চা বলে যাচ্ছেএর ফল মামাকে ভােগ করতে হয়মামা হােক চাচা হােকসস্তায় পার পাবে কেন

আপনি কী করবেন ? | অনেকগুলি প্ল্যান মাথার ভেতর আছেকোন প্ল্যান এক্সিকিউট করব বুঝতে পরছি নাদেখি সবাই আসুক সবার সাথে আলােচনা করে দেখিএকা একা ডিসিশান নেয়া ঠিক হবে না । 

রাত নটা পঁচিশএমন কিছু রাত না, কিন্তু আসর জমে গেছেঝড়বৃষ্টিরকারণে সবাই আগেভাগে এসে পড়েছেদুই দফা হাবিজাবিখাওয়া হয়েছেসবাই উৎফুল্ল এবং সামান্য উত্তেজিততবে অন্যদিনের মতাে কারাে গলাই চড়ছে নাসবাই কথা বলছে নিচু গলায় আজ আবহাওয়া শীতলসবার খানিকটা শীত শীতও করছেতারপরেও এসি চলছেঘর ক্রমেই ঠাণ্ডা হচ্ছে। 

আজকের আলােচনার বিষয়বস্তু সফিকের মামাকে (ইতিমধ্যে তাঁর নাম হয়েছে আজমীর মামা) কী শাস্তি দেয়া যায়? অনেকগুলি প্রস্তাব এসেছেপ্রথম প্রস্তাব দামি দামি সমস্ত ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র নষ্ট করে দেয়াএসি, টিভি, ফ্রিজ, মিউজিক সিস্টেম। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৩)-হুমায়ুন আহমেদ

সফিক এই প্রস্তাবে রাজি হয় নিসে বলেছে মামা খুবই কৃপণ মানুষএই জিনিসগুলি তাঁর সন্তানের মতােনিজের কোনাে সন্তান নেই বলে এইগুলিকে তিনি সন্তানের চেয়েও বেশি স্নেহ করেনএদের ক্ষতি হলে তিনি হার্টফেল করে মারা যাবেনতাকে শাস্তি দিতে হলে মানসিক শাস্তির লাইন ধরতে হবে। 

তখন প্রস্তাব হলাে (নীরব ঘাতক সাবেরের প্রস্তাব) গরু, ছাগলের রক্ত এনে শােবার ঘরে রক্ত দিয়ে মাখামাখি করে রাখা হােকরক্তমাখা একটা ছুরি রেখে দেয়া হবেরক্ত শুকিয়ে জমে থাকবেবিছানার চাদরেও রক্ত মাখানাে থাকবে সব থাকবে লণ্ডভণ্ডভদকার একটা বােতল ভেঙে চারদিকে কাচ ছড়িয়ে রাখা 

হবেযাতে এই ঘরে ঢুকেই মনে হবে এখানে একটা হত্যাকাণ্ড হয়েছেতখন আজমীর মামার বিচিআসল জায়গা ছেড়ে কপালে উঠে যাবে। 

| প্রস্তাব সবার পছন্দ হলােশুধু মহসিন বলল, আজমীর মামা যদি থানা পুলিশ করেন, তখন কী হবে? পুলিশ তাে আমাদের খােজ করবে। 

সফিক বলল, খোজ করলে করবেআমরা তাে কাউকে খুন করি নি আমাদের সমস্যা কী! দুএকদিন যদি থানাতে থাকতে হয় থাকলাম। 

রেজা বলল, রক্ত এনে কখন ফেলা হবে

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৩)-হুমায়ুন আহমেদ

সাবের বলল, এখন ফেলা হবেকাল ভােরে তাে আমরা চলে যাচ্ছিআজমীর মামার বাসায় আর আসব না। 

রেজা বলল, রক্ত কে আনবে

হারুন বলল, আমি আনবআমাদের বাসার কাছে সাত মসজিদ রােডে কসাই আছেআমার পরিচিতদুলা ভাইয়ের কুকুরের জন্যে তার কাছ থেকে প্রায়ই মাংসের ছােবড়া কিনিমাঝে মাঝে রক্ত কেনা হয় । 

সফিক বলল, তাহলে দেরি করছিস কেন, চলে যাপরে দেখা যাবে কসাই চলে গেছে। 

কসাই চলে গেলে নিউমার্কেট থেকে নিয়ে আসবরক্ত নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে নাদেখি আমাকে ভর্তি করে এক গ্লাস হাবিজাবি দাওগাঁজা থাকলে ভালাে হতােআমার কাছে খুবই একসাইটিং লাগছেএর মধ্যে গাঁজার বাতাস পড়লে...। 

সফিক বলল, একজন কেউ গাঁজা নিয়ে আসআজ একটা বিশেষ দিনআমাদের মধ্যে একজন চাকরি পেয়েছেএকজন মেম্বার আমরা হারাতে যাচ্ছিসেই উপলক্ষে একই সঙ্গে আনন্দ এবং নিরানন্দ পার্টিগাঁজা ছাড়া এই পার্টি হবে কীভাবে

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *