উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

হারুন বিস্মিত গলায় বলল, চাকরি কে পেয়েছে ? সফিক বলল, চাকরি কে পেয়েছে সেটা তাে আমি আজ বলব নাহারুন বলল, তুই না তাে? উড়ালপঙ্খি

সফিক বলল, আমি নাআল্লাহর কসম বলআল্লাহর কসম বলতে পারব নাতবে আমি না। 

হারুন বলল, তাের ভাবভঙ্গি, কথাবার্তার ধরনধারণ সবই অন্যরকম লাগছেআমার তাে ধারণা তুই চাকরি পেয়েছিস। 

সফিক বলল, আমি চাকরি পেয়েছি এটা বলব না, আবার চাকরি পাই নিএটাও বলব নাএই বিষয়ে আজ কোনাে ডিক্লারেশন দেয়া হবে নাকথা বলে সবাই সময় নষ্ট করছে কেনএই ব্যাপারটা বুঝতে পারছি নারক্ত কই ? গাজা কই

রাত এগারােটার ভেতর গরুর রক্ত দিয়ে ঘর মাখামাখি করে ফেলা হলােরক্তের মধ্যে একটা মাছ কাটা বটি ডুবিয়ে রাখা হলােভয়াবহ অবস্থামহসিন মিনমিনে গলায় বলল, সর্বনাশ! দেখে তাে আমার নিজেরই ভয় লাগছেশরীর ঝিমঝিম করছে। 

| হারুন বলল, বােতল ভেঙে দেয়ার দরকার নেইএমনিতেই যথেষ্ট হয়েছেজিনিসপত্র বেশি থাকলে Fake‘ মনে হতে পারেকোনাে কিছুইওভার ডু করকৃত নেই। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

ইয়াকুব বলল, একটা ছবি তুলে রাখা দরকার ছিলজিনিসটা যে এত ইন্টারেস্টিং হবে আগে বুঝতে পরি নিআগে বুঝতে পারলে বাসা থেকে ক্যামেরা নিয়ে আসতামআজমীর মামার খবর আছেমামার বিচি শুধু যে কপালে উঠে থেমে থাকবে তা না, মাথা ছুঁড়ে বের হয়ে যাবে। 

নীরব ঘাতক সাবের বলল, আমরা শুধু আজমীর মামাকে শাস্তি দেয়ার কথা ভাবছিআসল যে লােককে শাস্তি দেয়া উচিত তার কথা ভাবছি নামূল অপরাধী শাস্তি পাচ্ছে না। 

সফিক বলল, কার কথা বলছিস ? | আরজু সাহেবের কথা বলছিউনার কারণেই তাে এই অবস্থাআজ আমরা আশ্রয়হারাগৃহহারা । আজ আমরা পথহারা পাখি। 

সফিক বলল, কথা সত্যিউনাকে কী শাস্তি দেয়া যায় ? | সাবের বলল, উনাকে ডেকে নিয়ে এসে এই ঘর দেখিয়ে দেইতাতেই উনার খবর হয়ে যাবেতারপর উনাকে বলিডিয়ার স্যার, আপনি খবর দিয়েছেন আমরা সবাই নাকি নেংটো হয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করেছিকাজটা তাে স্যার ঠিক করেন নিআমরা সামান্য রাগ করেছিএখন আপনি যদি স্যার দয়া করে একবার শুধু নেংটো হয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করেন তাহলে আমাদের রাগটা কমে

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

আমরা আবার রেগে গেলে ভয়ঙ্কর হয়ে যাই| সাবেরের কথা শেষ হবার পর দলের সবাই কিছুক্ষণের জন্যে নীরব হয়ে গেলনীরবতা ভঙ্গ করে ইয়াকুব বলল, অসাধারণ আইডিয়া! একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আইডিয়া! আমার হাতে নােবেল পুরস্কার থাকলে আইডিয়ার জন্যে সাবেরকে নােবেল পুরস্কার দিয়ে দিতাম। 

হারুন বলল, আরজু সাহেবকে এখানে কে ডেকে আনবে ? ঘণ্টা কে বাধবে

সফিক বলল, এটা কোনাে ব্যাপার নামুহিব যাবেমুহিবের রাজপুত্রের মতাে চেহারা সে যা বলে সবাই তা বিশ্বাস করেমুহিব উনাকে বলবে যে, আমরা তার হাতে বাড়ির চাবিটা দিতে চাইচাবি দেয়ার আগে ঘরগুলি খুলে উনাকে দেখিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাই যে সব ঠিক আছেকীরে মুহিব, তুই গুছিয়ে সুন্দর করে বলতে পারবি না

মুহিব বলল, পারব। 

সফিক বলল, মুহিবকে পাঠানাের সবচেবড় সুবিধা হলাে, ওর মুখে কোনাে হাবিজাবির গন্ধ নেইআমি নিজেই যেতাম কিন্তু আমার মুখ থেকে ভকভক করে হাবিজাবির গন্ধ বের হচ্ছে। 

মুহিব বলল, কোনাে অসুবিধা নেইআমি যাচ্ছি ইয়াকুব বলল, ঘুমিয়ে পড়লে ঘুম থেকে ডেকে তুলবি। 

কলিংবেল বাজতেই আঠারােউনিশ বছরের কিশােরী ধরনের মুখের একটা মেয়ে দরজা খুলে দিলমুহিবকে দেখে সে খুবই হকচকিয়ে গেলএই সময়ের মেয়ে এত সহজে হকচকিয়ে যায় নামুহিব বলল, স্লমালিকুমমেয়েটা এতে আরাে ঘাবড়ে গেলমুহিব বলল, আরজু সাহেব কি আছেন

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

মেয়েটি ক্ষীণ গলায় বলল, বাবা শুয়ে পড়েছেনএখনাে ঘুমান নিআমি এক্ষুণি উনাকে ডেকে নিয়ে আসছিবলেই ছুটে বের হয়ে গেলএবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাবাকে নিয়ে উপস্থিত হলাে। 

মুহিব বলল, স্যার, আপনি একটু উপরে আসবেন ? ফ্ল্যাট নাম্বার D4আব্দুল গফুর সাহেবের ফ্ল্যাট। 

কী ব্যাপার বলাে তাে? আমি কিন্তু বাবা তােমাকে চিনতে পারছি নাD4 ফ্ল্যাটের মালিক আব্দুল গফুর সাহেবের ভাগ্নে সফিকের আমি বন্ধু আচ্ছা আচ্ছা। 

মুহিব বলল, গফুর মামা সফিকের উপর খুব রাগ করেছেনউনি বলেছেনসবগুলি ঘর দেখিয়ে তারপর যেন আপনার হাতে চাবি দেয়া হয়। 

বাবা কোনাে দরকার নেইতুমি চাবিটা আমার কাছে দিয়ে যাও। 

গফুর মামা ঘরগুলি দেখিয়ে আপনার হাতে চাবি দিতে বলেছেনউনি খুবই আপসেট। 

| আমার আসলে উনাকে কিছু জানানােই উচিত হয় নিতােমাকে দেখেএখন তাে আমার নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগছেআসলে হয়েছে কী, একটা ছেলেকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় সিড়ি দিয়ে নামতে দেখে... আমি নিজেই দেখলামসে আমাকে দেখে মােটেই লজ্জা পেল নাখুবই স্বাভাবিক গলায় বলল, হ্যালাে মিস্টার । 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

মুহিব ছােট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমাদের বন্ধু মহসিন নামজুলজিতে M.Sc পাস করেছেঅনার্স এমএসসি দুটাতেই ফার্স্টক্লাস পাওয়া তিন বছর চেষ্টা করেও কোনাে চাকরি পাচ্ছিল নামনটন খুব খারাপ থাকতহঠাৎ খবর এসেছে তার মা মারা গেছেআমরা তাকে সান্ত্বনা দেবার জন্যেই এই বাড়িতে নিয়ে এসেছিলামখবরটা শােনার পর হঠাৎ কী যেন হলাে। 

বলাে কী! খুবই দুঃখজনক ঘটনাআমার বােঝার ভুল। 

ভদ্রলােক মেয়ের দিকে তাকিয়ে হতাশ গলায় বললেন, যুথী মা, দেখ তােকী লজ্জার মধ্যে পড়লামমামৃত্যুতে একটা ছেলের সুখেদুখে মাথা ইয়ে হয়ে গেছে আর আমি কিনা... ছিঃ ছিঃ। 

যূথী বলল, বাবা, তুমি উনার সঙ্গে যাওভদ্রলােক যদি থাকেন তার কাছে ক্ষমা চাও। 

অবশ্যই ক্ষমা চাইববাবা, তােমার নাম কী ? আমার নাম মুহিব চা খাওজিনা, আমি চা খাব না। 

চা তাে খেতেই হবেচলাে উপরে যাই, সবার সঙ্গে কথা বলে আসিতারপর না হয় সবার সঙ্গেই চা খাবমুহিব বাবা শােন, হলাে আমার বড় মেয়েডাক নাম যূথীভালাে নাম শায়লাখুবই ভালাে ছাত্রীএসএসসিতে ছেলেমেয়ে সবার মধ্যে ফিফথ হয়েছেমেয়েদের মধ্যে প্রথমএর ছােট্ট একটা ইন্টারভিউ বিটিভিতে প্রচার করেছিলটিভিতে তাকে অবশ্যি অনেক বড় বড় লেগেছেআমি নিজেই চিনতে পারি নি। 

যূথী লজ্জিত গলায় বলল, বাবা চুপ করাে তােভদ্রলােক মুহিবের দিকে তাকিয়ে বললেন, বাবা চলাে যাই। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *