মুহিব বলল, আছে।
কমনসেন্স বলে একটা জিনিস যে বাজারে প্রচলিত আছে তার ব্যাপারে সেটা মনে হলাে না। I am so annoyed. কী করেছে ? ভাের ছ‘টার সময় টেলিফোন করে তােকে চাচ্ছে। আমি বললাম, জরুরি কিছু ? সে বলল— না, জরুরি কিছু না।
আমি বললাম, জরুরি কিছু না হলে পরে টেলিফোন করাে। ছুটির দিনে ভাের ছ‘টায় জরুরি কোনাে কারণ ছাড়া টেলিফোন করা অপরাধের মধ্যে পড়ে। সে টেলিফোন রেখে দিয়ে ঠিক বিশ মিনিটের মাথায় আবার টেলিফোন করেছে । আমি ‘স্টুপিড‘ বলে গালি দিতে চাচ্ছিলাম। শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলিয়েছি। তুই তাের বন্ধুকে বলে দিস— সে যেন কখনাে ছুটির দিনে দশটার আগে টেলিফোন না করে।
উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৭)-হুমায়ুন আহমেদ
জি আচ্ছা, বলে দেব । | তুই আবার আমার কথায় রাগ করছিস না তাে? বেকার যুবকরা অতিরিক্ত সেন্টিমেন্টাল হয়। তারা ধরেই নেয় পৃথিবীর সবাই তাদেরকে অপমান করার জন্যে ব্যস্ত হয়ে আছে। তুই বরং এক কাজ কর, নাস্তা খেয়ে তাের বন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বল। ঘটনা কী জান। নিশ্চয়ই কোনাে সমস্যা আছে, নয়তাে ভাের ছটায় কেউ টেলিফোন করে না।
মুহিব টি–পট থেকে কাপে চা ঢালল । চায়ের কাপ হাতে নিয়ে নিজের ঘরে চলে যাওয়া, বিছানায় পা ছড়িয়ে ছুটির দিনের মতাে চা খাওয়া। চা খেতে খেতে এক ফাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা পড়া যেতে পারে। বৃষ্টির পানিতে কাগজটা প্রায় গলন্ত অবস্থায় চলে গিয়েছিল। সেটা শুকানাে হয়েছে। শক্ত কাগজে পেস্ট করা হয়েছে। একবার লেমনেট করার চিন্তাও এসেছিল। জীবনের প্রথম চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা যত্ন করে রেখে দেয়া হলাে।
উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৭)-হুমায়ুন আহমেদ
তােফাজ্জল বলল, কিরে তুই উঠে যাচ্ছিস কেন? ঘরে বসে চা খাব । ঘরে বসে চা খাবার দরকার পড়ল কেন ? সিগারেট ধরেছিস ?
মিথ্যা বলার দরকার নেই। ধরলে ধরেছিস। সামান্য সিগারেট নিয়ে মিথ্যা বলা ঠিক না। ছােট মিথ্যা থেকে শুরু হয় বড় মিথ্যা। ইংরেজিতে একটা প্রবচন GTICS – You start by cutting grass, you end up by killing man. আচ্ছা যা, ঘরে গিয়ে সিগারেট খেতে খেতে আরাম করে চায়ে চুমুক দে। সিগারেট দিয়ে সকালের চার কোনাে তুলনা নেই। পাঁচ বছর আগে সিগারেট ছেড়েছি, এখনাে স্মৃতি আছে। কিছুই বলা যায় না কোনাে একদিন সিগারেট ধরে ফেলতে পারি ।
May be today is the day. | মুহিব ভেবেই পাচ্ছে না বড় ভাইজান আজ এত কথা বলছেন কেন ? টাকা হারানাের শােকে ? টেনশনে একেকজন মানুষ একেক রকম আচরণ করে। মুহিবের মেজো ভাই মােফাজ্জল ঝিম মেরে বিছানায় পড়ে যায় । তার তখন ড্রপ বিট হয়। এবং সে বিড়বিড় করে বলে— Oh God, save me please. তার ধারণা, তার বেহেশত হবে টেনশন ফ্রি একটা জায়গায়।
উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৭)-হুমায়ুন আহমেদ
বেহেশতে তার হুরপরী, সরাবন তহুরা কিছুই লাগবে না। শুধু শুয়ে থাকার জন্যে নরম বিছানা লাগবে । শব্দ হয় না এরকম এসি লাগবে। আর লাগবে টেনশন ফ্রি মন।
মােফাজ্জল বারান্দায় তার যমজ দুই মেয়েকে শাস্তি দিতে নিয়ে এসেছে। ক খ দু’জনকে মুখােমুখি বসানাে হয়েছে। দু’জনের গালে কষে থাপ্পড় লাগানাে হয়েছে। এরা কেউ কাঁদছে না। দু‘জন দু‘জনের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। এদের এই এক অদ্ভুত ব্যাপার! যে শাস্তি দেয় এরা তার উপর রাগ করে
। এক বোেন অন্য বােনের উপর রাগ করে। ফোস ফোস করতে থাকে। মুহিব। এসে বারান্দায় দাড়াল। মােফাজ্জল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বলল, মুহিব, এক কাজ করতাে, এই দুই শয়তানীর গালে কষে দুই থাপ্পড় দে।
উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৭)-হুমায়ুন আহমেদ
মুহিব বলল, কেন ? প্রশ্ন করবি না । থাপ্পড় দিতে বলছি থাপ্পড় দে।
বলে নিজেই এসে থাপ্পড় দিল। ক উল্টে পড়ে গেল। আবার নিজে নিজেই উঠে বসে খ–এর দিকে তাকিয়ে ফোস ফোস করতে লাগল । মুহিব নিজের ঘরে ঢুকে গেল। সব বাবা–মা’রই সন্তান পালনের নিজস্ব টেকনিক আছে। এই টেকনিকে বাধা দেয়ার দরকার নেই। সংসার তার নিজস্ব গতিতে চলুক। কেউ বাচ্চাদের থাপ্পড় দিয়ে বড় করবে। আবার কেউ আদর দিয়ে বড় করবে। ফাইনাল প্রােডাক্ট কী হবে তা কেউই জানে না।
মুহিব বিছানায় পা এলিয়ে বসেছে। সারাদিনে সে কী করবে না করবে একটু ভেবে নেয়ার ব্যাপার আছে। সফিক ভাইয়ের সঙ্গে যােগাযােগ করতে হবে । সিরিয়াস কিছু নিশ্চয়ই হয়েছে। সিরিয়াস কিছু না হলে তিনি ভােরবেলায় টেলিফোন করার মানুষই না। দলের কেউ কি মারা গেছে ? সফিক ভাইয়ের মামার বাড়িতে কি কোনাে সমস্যা হয়েছে ? পুলিশ এসেছে। পুলিশ তাদের খুঁজছে ? পুলিশ বড় ধরনের কোনাে সমস্যা করতে পারবে না। মহসিনের মেজো চাচা পুলিশের ডিআইজি।
উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৭)-হুমায়ুন আহমেদ
পুরােপুরি দুই নম্বরি মানুষ। পুলিশের লাইনে দু‘নম্বরি মানুষের ক্ষমতা থাকে বেশি। মহসিন যদি সত্যি সত্যি কাউকে খুন করে তার ডিআইজি চাচাকে বলে, চাচা, খুন করে ফেলেছি। উনি বলবেন— কিছু দিনের
জন্যে গা ঢাকা দে, ইন্ডিয়া চলে যা। দেখি কী করা যায়।
মহসিনের এই ডিআইজি চাচা অতি ধার্মিক মানুষ। একবার হজ করেছেন, দু‘বার উমরা হজ করেছেন। নামাজের কারণে কপালে দাগ পড়ে গেছে। তিনি যখন ডিউটিতে যান আর্দালির সঙ্গে জায়নামাজ থাকে। তার খাকি শার্টের পকেটে থাকে আকিক পাথরের তসবি। ডিউটিতে ফাঁক পেলে তসবি টানেন। মুহিব একবার মহসিনের সঙ্গে তার মেজো চাচার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল । তিনি খুব আদর–যত্ন করেছেন।
তসবি টানতে টানতে পুলিশি ক্ষমতার অনেক গল্প করেছেন— বুঝলে বাবারা, সব কিছু পুলিশের হাতে। মনে কর B খুন করেছে C–কে। পুলিশ ইচ্ছা করলে A–কে খুনের মামলায় ফাসিয়ে ফাসিতে ঝুলিয়ে দিতে পারে। পুলিশ এমন পঁাচ খেলবে যে শেষের দিকে A মনে করবে খুন সে–ই করেছে। হা হা হা। তাহলে একটা ঘটনা বলি শােন, আমি তখন টাঙ্গাইলের এস.পি...
মাগরেবের ওয়াক্ত পর্যন্ত তিনি তাদের একের পর এক গল্প বলে গেলেন। তাদের দু‘জনকে উনার ইমামতিতে মাগরেবের নামাজ পড়তে হলাে।