উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৯)-হুমায়ুন আহমেদ

পত্রিকায় ছাপা হয়েছেসে খারাপ লিখবে নালেখাটা ভালাে হয়েছেসমস্যা হলাে পােস্টারটা হাতে লেখা হবে না কম্পিউটারে কম্পােজ করে সেঁটে দেয়া হবে সেটা নিয়েউড়ালপঙ্খিএকদল বলছে, হাতে লেখা উচিতহাতে লেখার মধ্যে একটা পার্সোনাল টাচ থাকেব্যাপারটা রিয়েলিস্টিকও হবেবেকার মানুষ কম্পিউটার কম্পােজের টাকা পাবে কোথায় ?

আরেক দলের ধারণা কম্পিউটার কম্পােজ হওয়া উচিতপােস্টার একটা থাকবে না, কয়েকটা থাকবেহাতের লেখা পােস্টারের চেয়ে কম্পিউটার কম্পােজ ভালােহার্ড ফ্যাক্ট গােটা গােটা হরফে লেখা থাকবেকোনাে কেলিওগ্রাফি নাবাস্তব সত্যলেখাটা হলাে— 

আমার নাম হারুনঅররশিদনা, আমি বাগদাদের খলিফা হারুনঅররশিদ না আমি বেকার হারুনগত পাঁচ বছর অনেক চেষ্টা করেও কোনাে ব্যবস্থা করতে পারছি না জীবনের প্রতি তীব্র ঘৃণা জন্মে গেছেআমি প্রতিবাদ হিসেবে গায়ে আগুন জ্বেলে আত্মাহুতি দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিআমার মৃত্যুতে কারােরই কিছু যাবে আসবে না

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৯)-হুমায়ুন আহমেদ

তাহলে কাজটা কেন করছি ? প্রতিবাদ জানানাের জন্যে করছিদেশের মানুষদের বেকার সমস্যার ভয়াবহতার দিকে দৃষ্টি ফেরাবার জন্যে করছিহয়তাে একটি প্রাণের বিনিময়ে হলেও সবাইকে একটা খবর পৌছাতে পারবআমার মতাে হাজার হাজার যুবকের অবস্থার দিকে একটু নজর দিনএকটু ভাবুনআত্মাহুতির তারিখ জুলাই, রাত বারােটা এক মিনিটআপনার যদি কাজ না থাকে, চলে আসুন। 

প্রেসক্লাবের সামনেআত্মাহুতির সময়টা নিয়েও মতভেদ তৈরি হয়েছেএকদল বলছে, রাত বারােটা এক মিনিট ভালাে সময়মধ্যরাতএকটি দিনের শেষ, আরেকটা দিনের শুরুআরেকদল বলছেরাত বারােটা এক মিনিটে ঘটনা ঘটলে পত্রিকায় নিউজ ধরানাে যাবে নাপত্রিকায় নিউজ রাতে হলে সন্ধ্যা টার মধ্যে কার্য সমাধা করতে হবে। 

এক পর্যায়ে সফিক মহাক্ষিপ্ত হয়ে বলল, আমার ধারণা তােদের সবার মাথা খারাপ হয়ে গেছেহারুনকে তাে আমরা সত্যি সত্যি আগুনে পুড়তে দেব নাকাজেই রাত বারােটা এক মিনিটও যা, রাত তিনটাও তাতােরা এমনভাবে কথা বলছিস যেন সে সত্যি সত্যি গায়ে আগুন দেবে

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৯)-হুমায়ুন আহমেদ

আমরা কাজটা করছি মিডিয়া অ্যাটেনশনের জন্যেকাজেই রাত বারােটা এক মিনিট ফাইনালএই বিষয়ে আর কথা হবে নাএখন মূল বিষয়ে চলে আয়, আমরা হারুনের পাশে কেরােসিনের টিন, দেয়াশলাই এইসব রাখব কিনা। 

তৈয়ব বলল, নাএতে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যাবেমনে হবে আমরা ড্রামা তৈরির চেষ্টা করছি| সফিক বলল, ড্রামা তাে করতেই হবেপাবলিসিটির জন্য ড্রামা দরকারযারা হারুনকে দেখতে আসবে তারা ধাক্কার মতাে খাবেযে আগুন দিয়ে নিজেকে পুড়াতে চাচ্ছে সে শুধু মুখের কথা বলছে না, একটিন কেরােসিন পর্যন্ত কিনে এনেছে ..

আলােচনা হৈচৈ তর্ক বিতর্ককোনাে কিছুতেই হারুনের মন নেইসে মােটামুটি মূর্তির মতােই বসে আছেতাকে সিগারেট দেয়া হয়েছিলসে বলেছে না। 

মহসিন বলেছে, সিগারেট খেতে সমস্যা কোথায় ? তুই তাে অনশন করছিসআগুন দিয়ে নিজেকে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে ফেলবিসেই ঘটনা যখনঘটার কথা তখন ঘটবেঘটনা ঘটার আগে তুই তাের ইচ্ছামতাে খাওয়া দাওয়া করবি চা দিয়ে একটা সিগারেট খা। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৯)-হুমায়ুন আহমেদ

 তুই আমাদের সঙ্গে রেগে রেগে কথা বলছিস কেন ? আমরা কী করলাম ? হারুন চুপ করে আছেমহসিন বলল, তাের কি জ্বর নাকি ? চোখ লাল তারও কোনাে জবাব নেইহারুনের ব্যাপারটা বােঝা যাচ্ছে নাএমন কী ঘটনা ঘটল যে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দিতে হবে?

কোনাে মেয়ের সঙ্গে প্রেমফ্রেম থাকলে চিত্ত তরল থাকেহঠাৎ হঠাৎ উদ্ভট কিছু করতে ইচ্ছে করে হারুনের এরকম কিছুও নেইবিয়েও করে নি যে বেকার স্বামীকে নিয়ে স্ত্রী ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান করছেতার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শ্বশুরবাড়ির জ্ঞানী লােকজনবেকারদের দলে হারুনের অবস্থা ভালাে

সে তার নিজের বাড়িতে থাকেতার আলাদা ঘর আছেহারুনের বাবা রিটায়ার্ড এসপিমাই ডিয়ারটাইপ মানুষহারুনের কোনাে বন্ধুবান্ধব বাড়িতে উপস্থিত হলে তিনি চোখ সরু করে তাকান নাবরং হাসি মুখে বলেনএসাে এসােবলাে দেখি কী খবরইয়াং ম্যানদের দেখলেই শরীরে কেমন যেন ইয়াং ভাব চলে আসেবৃদ্ধদের এই কারণেই সবচেবেশি সময় কাটানাে উচিত তরুণদের সঙ্গেসেটা কখনাে হয়ে উঠে নাতরুণরা বৃদ্ধ পছন্দ করে না। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৯)-হুমায়ুন আহমেদ

 বেকার তরুণদের মধ্যে হারুন হয়তােবা অতি অল্প কিছু ভাগ্যবানদের একজন যার জন্মদিন পালন করা হয় আত্মীয়স্বজনরা বাড়িতে গিজগিজ করতে থাকেবাইরের বাবুর্চি এসে মােরগপােলাও রান্না করেহারুনের বাবা অত্যন্ত আনন্দিত ভঙ্গিতে ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে ঘােরাঘুরি করেনসুযােগ পেলেই ছােটবেলায় হারুন কেমন ছিল, কী করত খুবই আগ্রহের সঙ্গে সেই গল্প করেনহারুনকে নিয়ে আমি একটা ছড়া বানিয়েছিলাম ছড়াটা বললেই ক্ষেপে যেতকান্নাকাটিভাত খাওয়া বন্ধ টাইপ ক্ষেপাঅথচ খুবই নির্দোষ ছড়া— 

হারুন ঘাড় ধরে মারুনচড় থাপ্পর কিল ঘুসি 

মার খেলেই হারুন খুশিপ্রতি জন্মদিনে এই ছড়াটা আমি একবার করে বলি এবং তার রিঅ্যাকশন লক্ষ করিআট বছর পর্যন্ত সে কাঁদতআট বছর থেকে বারাে বছর পর্যন্ত রেগে যেতআমাকে মারতে আসতবারােপর থেকে বিরক্ত হওয়া শুরু করেছে। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(১৯)-হুমায়ুন আহমেদ

ধরনের পারিবারিক অবস্থার একটি ছেলে হঠাৎ একদিন বলবেগায়ে আগুন জ্বালিয়ে দিবতা হয় নাকোথাও কোনাে একটা সমস্যা হয়েছেসমস্যাটা বােঝা যাচ্ছে না। 

মুহিবের উপর দায়িত্ব পড়েছে শশাবিজনেসের লােকজনের সঙ্গে যােগাযােগ করাতারা যেন একবার এসে এক মিনিটের জন্যে হলেও হারুনকে দেখে যানবিবৃতি দেনআমরা পাশে আছিহারুনের জন্যে আমাদের সহানুভূতি আছেমুহিবের হাতে বিশাল এক তালিকা ধরিয়ে দেয়া হয়েছেসেখানে ফিল্মের লােক আছে, নাটকের লােক আছে, গানের শিল্পীরা আছেএদের মধ্যে 

মুহিব চেনে মাত্র চারজনকেনােরাকে চেনেসে গায়িকা এবং তার যথেষ্টইনামডাক আছেনােরাকে বুঝিয়ে বললে সে শুধু যে আসবে তা না, হারুনেরপাশে সারাদিন বসে থাকতে বললে সারাদিন বসে থাকবে| নােরা যেহেতু গান করে সে নিশ্চয়ই অন্য গানের শিল্পীদেরও চেনে

তার মাধ্যমে অন্যদের কাছে যাওয়াপাখি দিয়ে পাখি শিকার| নাটকের লােকজনদের মধ্যে জাহিদ হাসানের এক ফুপাতাে ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় আছেতাকে নিয়ে বাসায় যাওয়া যাবেভাগ্য ভালাে হলে জাহিদ হাসানের স্ত্রী মৌ বাসায় থাকবেনদুজনকেই বলা যাবেমেয়েদের মন নরম 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *