উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(২১)-হুমায়ুন আহমেদ

বাথটাব ভর্তি পানিআমি গলা ডুবিয়ে পানিতে শুয়ে আছিআমার হাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট। 

তুমি কি এখন নিয়মিত সিগারেট খাচ্ছ ? উড়ালপঙ্খি

তা খাচ্ছিদিনে এক প্যাকেটের বেশি শেষ হচ্ছেতবে খুব শিগগিরই ছেড়ে দিব আমি কোনাে কিছুই বেশিদিন ধরে রাখি নাবেশির ভাগ মানুষের স্বভাব পুরনাে জিনিস ধরে রাখামানুষ কিছুই ফেলতে পারে নাএই জন্যে মানুষকে বলা হয় The collector. আমি অনেকক্ষণ কথা বললামএখন কথা বন্ধ আমি মেডিটেশনে যাচ্ছিগােসল করতে আমার দেরি হয় এই কারণেআমি আধঘণ্টার মতাে মেডিটেশন করিপানিতে শবাসন হয়ে শুয়ে থাকিমাথা থেকে সব চিন্তাভাবনা দূর করে দেই। 

মুহিব ঝিম ধরে চেয়ারে বসে আছেবাথরুম থেকে কোনাে শব্দ আসছে মুহিবের ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছেসােফাটাকে খুবই আরামদায়ক মনে হচ্ছেমনে হচ্ছে, এই সােফা তৈরি হয়েছে ঘুমুবার জন্যেসে চেষ্টা করছেজেগে থাকার জন্যেকিন্তু জেগে থাকতে পারছে নাচোখের পাতা ভারী। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(২১)-হুমায়ুন আহমেদ

তার ঘুম ভাঙলচায়ের কাপে চামচের শব্দ শুনেচোখ মেলে দেখে নােরা কার্পেটে বসে আছেতার হাতে কফির কাপকফির পােড়া পােড়া গন্ধে ঘর করছে। 

নােরা বলল, তুমি কতক্ষণ ঘুমিয়েছ জানাে? মুহিব বলল, না। 

আমি বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি তুমি ঘুমাচ্ছ কাজেই তােমাকে আর জাগাই নিতুমি তেতাল্লিশ মিনিট ধরে ঘুমাচ্ছগভীর ঘুম। 

সরি। 

সরি কেন ? সরি বলার মতাে কোনাে কাণ্ড তুমি কর নিতবে আমারপরিকল্পনা নষ্ট করে দিয়েছতােমার উপর আজ কোনাে হিপনােসিস প্রক্রিয়া চালানাে যাবে নাযে মানুষ গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠেছে তাকে হিপনােটাইজ করা যায় নাআরেক দিন হাতে সময় নিয়ে চলে এসাে। 

কবে আসব

যেকোনােদিনসন্ধ্যার পরে এসােআজ সন্ধ্যায় আসব ? আজ নাআজ আমি বাড়িতে থাকব না। 

মুহিব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেএইমাত্র গােসল করার কারণেই হােক বা যেকোনাে কারণেই হােক কী সুন্দর যে মেয়েটাকে লাগছে! হালকা গােলাপি রঙের একটা টাওয়েল দিয়ে নােরা মাথার চুল ঢেকে রেখেছেটাওয়েলটাকে মনে হচ্ছে নােরার শরীরের অংশ| নােরা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, তােমার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তুমি আবারও ঘুমিয়ে পড়ছতােমার চোখ ছােট হয়ে আসছেদয়া করে এখন বিদেয় হওগাড়ি নিয়ে যাওতুমি যেখানে যেতে চাও গাড়ি তােমাকে নিয়ে যাবে

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(২১)-হুমায়ুন আহমেদ 

সত্যি সত্যি মুহিবের ঘুম পাচ্ছেতার কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে নাসােফাতে হেলান দিয়ে এই ঘরেই ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছা করছেমুহিব অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ালনােরা বলল, তােমার যে বন্ধু Death Wish করছে আমি আজ দিনের মধ্যে কোনাে এক সময় তাকে গিয়ে দেখে আসব| মুহিব বলল, আমি কি তােমার গাড়িটা আজ সারাদিন আমার সঙ্গে রাখতে পারি

পারআমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি। 

মুহিব মুগ্ধ চোখে নােরার দিকে তাকিয়ে আছেযে লাল কার্পেটের উপর নােরা বসে আছে সেই কার্পেটটাকেও মুহিবের এখন নােরার শরীরের অংশ বলে মনে হচ্ছেএরকম হচ্ছে কেন

হারুন কুণ্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে আছেবাঁশের আগা থেকে ছাতা নামিয়ে তার মুখের উপর ধরা হয়েছে রােদ আটকাবার জন্যেচাওয়ালা জতু মিয়া হারুনের মাথার চুলে বিলি করে দিচ্ছেহারুনের পায়ের কাছে কেরােসিনের টিন এবং টিনের পাশে পিরিচে চারটা দেয়াশলাইকেরােসিনের টিন এবং দেয়াশলাইয়ের মাহাত্ম্য কেউ বুঝতে পারছে না, কারণ পােস্টার এখনাে লাগানাে হয় নি

তারপরেও পথচারীদের কেউ কেউ কৌতূহলী হয়ে তাকে দেখছেহারুনের কাছ থেকে দশবার গজ দূরে গাছের ছায়ায় সফিক একা বসে সিগারেট টানছেতার মুখ দেখেই বােঝা যাচ্ছে মেজাজ খুব খারাপ| মুহিব সফিকের দিকে এগিয়ে গেলসফিক বলল, ওদের কাণ্ডজ্ঞান দেখেছিস আড়াইটা বাজে কারাে কোনাে খোঁজ নেই! খাওয়াদাওয়া তাে করতে। 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(২১)-হুমায়ুন আহমেদ

মুহিব বলল, এখনাে খান নি

সফিক রাগী গলায় বলল, খাব কীভাবে? ফাইভস্টার থেকে খাওয়া আসবেপকেটে শেষ সম্বল ষাইট টাকা ছিলএক প্যাকেট বেনসন কিনে ফেলেছিতুই খেয়েছিস

মুহিব বলল, নাসফিকের রাগ সঙ্গে সঙ্গে পড়ে গেলমুহিব বলল, আমি আপনাদের জন্যে খাবার নিয়ে আসিকোথেকে আনবি ? আমার চেনা একটা রেস্টুরেন্ট আছেবাকি দেয় ? হ্যা, দেয়। 

তাহলে এক কাজ কর, আটদশ জনের মতাে খাবার নিয়ে আয়পরে দেখা যাবে সবাই এক এক করে উদয় হচ্ছে কেউ খেয়ে আসে নিহারুনের জন্যে এক বাটি স্যুপ আনতে পারবি ? ওর তাে জ্বর এসেছেভালাে জ্বরএকটা থার্মোমিটারও নিয়ে আসিসসঙ্গে ভাংতি টাকাপয়সা আছে

আছে। 

দুটাকার বাদাম কিনে দিয়ে যাবাদাম খেয়ে আগে ক্ষিধাটা নষ্ট করিনাড়িভুড়ি হজম হয়ে গেছেএখন পেটের চামড়া হজম হওয়া শুরু হয়েছে। 

মুহিব গরম সিঙাড়া এবং ডালপুরি কিনে আনলসঙ্গে তেঁতুলের চাটনি পেঁয়াজ কাটা কাচামরিচ সিঙাড়া এত গরম যে জিভ পুড়ে যাওয়ার মতাে অবস্থাসফিক আনন্দিত গলায় বলল, এত কিছু আনার তাে দরকার ছিল নাচট করে কিছু মুখে দিয়ে কাজে বের হয়ে যা এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করা যাবে নাবিভিন্ন জায়গায় যে যাবি রিকশা ভাড়া আছে

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(২১)-হুমায়ুন আহমেদ

আমার সঙ্গে গাড়ি আছেগাড়ি আছে মানে? কার গাড়ি ? গান করেন যে নােরা উনার গাড়ি বলিস কী! গাড়ি ম্যানেজ করলি কীভাবে ? হারুনের ব্যাপারটা বললামবিভিন্ন জায়গায় যেতে হবেএইসব শুনে..

সফিক আনন্দিত গলায় বলল, ভালাে ম্যানেজ করেছিস তােউনি আসবেন। 

বলেছেন আসবেনকবে আসবেন ? আজই আসার কথা। 

বলিস কী! পাবলিক অপিনিয়ন তাে দেখি এখনই তৈরি হওয়া শুরু হয়েছেনােরার মতাে গায়িকার দেখতে আসা সহজ ব্যাপার নাএকজন স্টিল। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *