অনেক সময় তারা ফোনে ডিস্কোর সঙ্গেও কথা বলেছে। আবার কখনও ডিস্কো আমাকে ফোন করে বলেছে, আমি ডিস্কো বলছি। অমুককে ডেকে দাও। লােকটার গলা আমার চেনা হয়ে গেছে। খুব ভদ্র, মার্জিত কণ্ঠস্বর। মনে হবে যেন কোনাে অমায়িক সজ্জন ভদ্রলােক।
‘আপনি এসব কথা আগেও বলেছেন আমাকে।
‘হ্যা। ওলসন ভারি শ্বাস ছাড়লেন। ইদানিং চন্দ্রিকা যে কণ্ঠস্বরে ডিস্কোর সঙ্গে কথা বলত, আমার মনে হতাে মেয়েটা ওকে হুমকি দিচ্ছে। গতকাল রাত্রেও যে ভাবে চাবি হারানাের কথা বলে শীগগির ডুপ্লিকেট চাবি পাঠাতে বলছিল, আমার মনে হচ্ছিল যেন ধমকাচ্ছে। আমার এটা কিন্তু অবাক লেগেছে। চন্দ্রিকার আগের কণ্ঠস্বর এবং ইদানিংকার কণ্ঠস্বর এক ছিল না কর্নেল সরকার।
কর্নেল একটা চুরুট ধরিয়ে বললেন, ‘সম্ভবত আপনার কথা ঠিক। কিন্তু ডিস্কো কী এতই বােকা যে সে চন্দ্রিকাকে তার ঘরে খুন করতে লোক পাঠাবে ? ইচ্ছে করলে সে বাইরে যে-কোনও জায়গায় চন্দ্রিকাকে খতম করতে পারত।
ওলসন শুধু বললেন, তা ঠি।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১০
কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘চলি মিঃ ওলসন। আশা করি, আর পুলিশ। আপনাকে জেরা করছে না ?
ওলসন হাসবার চেষ্টা করে বললেন, নাহ। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। কেউ ফোন করে চন্দ্রিকা সম্পর্কে খবর নিয়েছিল কি মিঃ ওলসন ?
ওলসন নড়ে উঠলেন। হ্যা, হ্যা। একটু আগে কে ফোন করে জিজ্ঞেস করছিল, চন্দ্রিকা খুন হয়েছে সত্যি কি না ?
নাম বলেনি ? ‘
নাহ। ওর কোনও প্রেমিক হবে। এ বাড়ির খানকিদের প্রেমিকরাও এই ফোনে ওদের খবর নেয়। নরকে পড়ে আছি কর্নেল সরকার। আমার মৃত্যু যত শীগগির হয়, বেঁচে যাই। এ বয়সে যাবই বা কোথায় ?
কর্নেল হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, দুঃখিত মিঃ ওলসন। ভুলে গিয়েছিলাম। কোনও প্রশ্ন করবেন না এখন। চন্দ্রিকার হারানাে পার্সটা আমি উদ্ধার করেছি। এটা আপনি রাখুন। ডিস্কো ফোন করলে তাকে এটার কথা জানাবেন। এটা ফেরত নিতে বলবেন। তারপর ওর লােকের হাতে দিয়ে দেবেন। কিন্তু আমার কথা বলবেন না যেন।
আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কর্নেল তার কিটব্যাগ থেকে পার্সটা বের করে ওলসনের হাতে গুঁজে দিলেন। চাপাস্বরে ফের বললেন, পুলিশকেও জানাবেন না যেন। আপনার নিরাপত্তার জন্যই বলছি।…..
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললাম, ‘পার্সটার ভেতরে সেই অদ্ভুত চিরকুটটা
কর্নেল হাসলেন। ওটা আমি বের করে রেখেছি, ডার্লিং! এই দেখ।
চিরকুটটা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ল আমার। বললাম, “এটা কিসের কোড বলে মনে হচ্ছে আপনার ?
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১০
‘এখনও কিছু ভাবিনি এ সম্পর্কে।
‘চন্দ্রিকা রায়ের সঙ্গে রাঙাটুলির সম্পর্ক আছে। এ ব্যাপারে কী ভাবছেন বলতে আপত্তি আছে ?
কর্নেল বললেন, ‘শুরুতেই রহস্য এত বেশি জট পাকালেই সমস্যা। বােধবুদ্ধি গুলিয়ে যাবে। কাজেই একটা করে সূত্র ধরে এগােনােই ভাল। হুঁ, তুমি সঠিক রাস্তা জিমেই চলেছ। আমার ঘরে না বসলে আমার মাথা খােলে না।
সানি ভিলার তিনতলার ড্রয়িং রুমে ঢুকেই কর্নেল টেলিফোন তুললেন। ডায়াল করে সাড়া এলে বললেন, ‘মিঃ ডিস্কো ?…..সে কী! রং নাম্বার ?…জাস্ট আ মিনিট! আট আ মিনিট! রাঙাটুলির হরনাথ সিংহ এই নাম্বারটা আমাকে দিয়ে বলেছেন…
লেছেন, চন্দ্রিকা রায়ের কলকাতার গার্জেনকে এই নাম্বারে পাওয়া যাবে।…বুঝতে পারছেন না? আপনার নামটা প্লিজ…সরি মিঃ ডিস্কো…ডিস্কো নন আপনি ? কিন্তু এ থিয়েটারের ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জিও তাে….না, না। আমি পুলিশ নই।…রং নাম্বার ?
সত্যি বলছেন ? ঠিক আছে। তা হলে ছাড়ছি। কিন্তু হরনাথবাবু, ইন্দ্রজিত্ত্বাবু দুজনেই তাে…হ্যা, হঁ্যা। ভুল হতেই পারে। ধন্যবাদ। রাখছি। তবে আমার নাম্বারটা নিয়ে রাখুন প্লিজ।’…
কর্নেল নাম্বার বলে ফোন রেখে হাসতে হাসতে বললেন, ‘ডিস্কোই বটে। কথাগুলাে শুনতে চায়। কিন্তু রং নাম্বার বলতে ছাড়ছে না। যাক গে, বােম টিপে দিলাম। খেলাটা শুরু হয়ে যাক।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১০
বললাম, একটা ব্যাপার ভাবতে আমার খারাপ লাগছে।
কী সেটা? , চন্দ্রিকা আমাদের গাড়িতে পার্সটা ফেলে না গেলে হয়তাে খুন হতাে না। নিশ্চয় বাইরের লােককে দরজা খুলত না। কিংবা ডিস্কোর লােকের পাল্লায় পড়ত না।
কর্নেল নিভে যাওয়া চুরুট ধরিয়ে বললেন, সে কী করত বলা কঠিন জয়ন্ত ! কিন্তু আপাতদৃষ্টে ওলসনের ধারণার ফেসভ্যালু আছে। তার মানে, ডিস্কো ডুপ্লিকেট চাবি নিশ্চয় পাঠিয়েছিল। যার হাতে পাঠিয়েছিল, তার খোঁজ যতক্ষণ না পাচ্ছি কীভাবে চন্দ্রিকা খুন হয়েছে বলা যাবে না।
শুধু একটা বিষয় স্পষ্ট। খুনী চন্দ্রিকার ফ্ল্যাটে ঢুকে চন্দ্রিকার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেছে। এটা চন্দ্রিকার আত্মরক্ষার লড়াই ছাড়া কিছু নয়। তবে খুন করার পর সে চন্দ্রিকার আসবাবপত্র তন্নতন্ন খুঁজেছে। সবখানে রক্তের ছাপ সেটা বলে দিচ্ছে।
‘এই চিরকুটটাই খুঁজেছে সম্ভবত। ‘সম্ভবত।’ বলে কর্নেল চোখ বুজে দাড়িতে আঁচড় কাটতে থাকলেন।
কর্নেল! একটা ভাইটাল প্রশ্নে আপনি মন দিচ্ছেন না এখনও। বললা!
কী এমন ঘটেছিল যে আমাদের গাড়িতে পার্স ফেলে গিয়েছিল চন্দ্রিকা ? এমন একটা ভুল কী করে হতে পারে ? হ্যা, মানসিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত আপনি দিয়েছেন। কাজেই
কর্নেল চোখ খুলে বললেন, ‘সে বলছিল, পথে দুটো মস্তান ওর পেছনে লেগেছে।
‘তারা যারাই হােক, নিশ্চয় জানত চন্দ্রিকার পার্সে ওই চিরকুটটা আছে।
কর্নেল হাসলেন। অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে লাভ নেই, ডার্লিং। আপাতত আমি ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি এবং ডিস্কোর দিকে তাকিয়ে আছি। সূত্র তাদেরই কাছে আছে।
ওয়েট অ্যান্ড সি।এ বেলা কর্নেল আমাকে বাড়ি ফিরতে দিলেন না। তার সঙ্গেই লাঞ্চ খেতে হলাে। তার কথামতাে আমার কাগজের অফিসে জানিয়ে দিতে হলাে, একটা মার্ডারকেসের রােমাঞ্চকর এবং এক্সক্লসিভ স্টোরির পেছনে লড়ে যাচ্ছি। কাজেই
অফিসে যেতে দেরি হতে পারে।
Read More