সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১১

লাঞ্চের পর সােফায় লম্বা হয়ে শচ্ছিলাম। কর্নেল একটা অর্কিডসংক্রান্ত বইয়ে কুঁদ হয়ে আছেন। কিছুক্ষণ পরে ডােরবেল বাজল। তারপর ষষ্ঠী এসে বলল, বাবামশাই! এক ভদ্রলােক এয়েছেন।

কর্নেল সমগ্র ১ম খণ্ড 

কর্নেল বইয়ের পাতায় চোখ রেখে বললেন, ‘নিয়ে আয়। 

যিনি এলেন, তাঁর বয়স চল্লিশের মধ্যেই। পরনে আলিগড়ি চুস্ত পাঞ্জাবি। একমাথা ঝাকড়া চুল। সুন্দর বুদ্ধিদীপ্ত চেহারায় বিপর্যস্ত ভাব। তাকে দেখে কর্নেল বলে উঠলেন, আসুন ইন্দ্রজিৎবাবু! আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। সাড়ে তিনটে অব্দি দেখে বেরােতাম এক জায়গায়। 

ইনিই সেই ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি ? পরগাছা’ নাটকের পরিচালক ? তারপরই মনে পড়ে গেল, মঞ্চের গাছের তলায় আধপাগলা লােকটির চরিত্রে এঁকেই তাে দেখেছিলাম। 

কর্নেল আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। একটু চুপ করে থাকার পর ইন্দ্রজিত্যাবু আস্তে বললেন, আমার নিজেকে অপরাধী লাগছে কর্নেল সরকার। খালি মনে হচ্ছে, আমারই বুদ্ধির দোষে চন্দ্রিকা মারা পড়ল। আপনাকে আমি আগে যদি সব কথা খুলে বলতাম। 

কী কথা ইন্দ্রজিৎবাবু ? ‘গতকাল সন্ধ্যায় আপনাকে আমার নাটক দেখার আমন্ত্রণ করেছিলাম। এর উদ্দেশ্য ছিল। চন্দ্রিকা বলেছিল, আমার দলে শয়তান ডিস্কোর চর ঢুকেছে। কিন্তু চন্দ্রিকা জানত না কে সেই চর। তাই ওকে আপনার কথা বলেছিলাম। আপনার চেহারার বিবরণও দিয়েছিলাম।

তখন ও বলল, ওদের বাড়িতে ওলসনসায়েবের কাছে আপনি যান। তার মানে, আপনাকে সে চেনে। তবে আপনাকে শুধু কর্নেলসায়েব বলেই চেনে। যাই হােক, গতরাতে ভাবলাম, থিয়েটার শেষ হলে আপনি গ্রিনরুমে আসবেন। কিন্তু এলেন না। 

‘যাইনি আপনার স্বার্থে। আপনিও বলেছিলেন, প্রকাশ্যে আপনার সঙ্গে যেন না মিশি। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১১

হা। তবু ভেবেছিলাম, আরও সব আমন্ত্রিত মানুষের ভিড়ে আপনিও আসবেন। ‘ঠিক আছে। তারপর কী হয়েছিল বলুন। সেটাই আমার জানা দরকার। 

‘আশ্চর্য ব্যাপার। থিয়েটার শেষ হওয়ার পর চন্দ্রিকাকে আর খুঁজে পেলাম না। গেস্টদের সঙ্গে গ্রিনরুমে কথাবার্তা না বলে তখনই বাইরে বেরিয়ে গিয়ে দেখি, চৰিকা সবে একটা ট্যাক্সিতে চাপছে। দৌড়ে গিয়ে বললাম, কী ব্যাপার ? চলে যাচ্ছ যে ? চন্দ্রিকা বলল, কর্নেলসায়েবের গাড়ি ফলাে করছি। তুমি চিন্তা করাে না। ওঁকে আমার এখনই মিট করা দরকার। বুঝলাম, প্রকাশ্যে আপনার সঙ্গে মিট করতে সেও যায়নি।

কর্নেল নিভে যাওয়া চুরুট ধরিয়ে বললেন, ‘এখন বুঝতে পারছি, সে ট্যাক্সি নিয়ে আমাদের গাড়ির পেছনে আসছিল। তারপর থিয়েটার রােডের একটা মােড়ে সম্ভবত 

মে আমাদের গাড়ি হারিয়ে ফেলে। তখন ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে আমাদের খুঁজতে শুরু করে। হ্যা ইন্দ্রজিৎবাবু! সে আমাকে খুঁজেও পেয়েছিল। সে লিফট চাইল। তখন বৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া তার পেছনে নাকি দুটো মস্তান লেগেছে।’ 

মস্তান লাগার ব্যাপারটা হয়তাে ঠিক নয়। আসলে সে আপনার সঙ্গে কথা বলতেই চেয়েছিল। 

‘কিন্তু কিছুই বলেনি চন্দ্রিকা। আলাপ করার কোনও হাবভাব তার মধ্যে লক্ষ্য করিনি। বরং তাকে খুব বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিল। 

ইন্দ্রজিৎবাবু অবাক হয়ে বললেন, আশ্চর্য তাে! 

আরও আশ্চর্য, সে তার পার্স গাড়িতে ফেলে ওলসন হাউসে ঢুকে গিয়েছিল। তখনও অবশ্য জোর বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু পার্সটা—’কর্নেল চোখ বুজে দাড়িতে হাত বুলিয়ে একটু পরে ফের বললেন, হ্যা। আসলে সে আমার জিম্মায় পার্সটা রাখতে চেয়েছিল। ‘পার্স ? ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি চমকে উঠে আবার বললেন, ‘পার্স?” 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১১

হা। ছােট্ট একটা পার্স। পার্সে ওর ফ্ল্যাটের চাবি ছিল। আরও চাবি ছিল দুটো। ফ্ল্যাটের চাবির ডুপ্লিকেট সে ডিস্কোর কাছে পাবে জানত। অন্য চাবি দুটোর ডুপ্লিকেট তার ফ্ল্যাটে থাকা উচিত। কাজেই চাবি খােয়া গেলেও তার অসুবিধা ছিল 

, তা হলে পার্সে এমন কী ছিল যে সেটা আপনার জিম্মায় রাখতে চেয়েছিল ? 

. কর্নেল চোখ খুলে বললেন, আপনি বুদ্ধিমান ইন্দ্রজিৎবাবু। 

‘পার্সটা আপনি হাতড়ে দেখেছেন নিশ্চয় ? ‘দেখেছি‘কিছু সন্দেহজনক জিনিস নেই ওটার মধ্যে ? 

কর্নেল হাসলেন। সন্দেহজনক? নাহ্। কিছু টাকা, একজন উকিলের একটা কার্ড, আর 

‘আর কী ? 

চাবি। “প্লিজ পার্সটা একটু দেখাবেন ? ‘ওটা ওলসনসায়েবকে দিয়েছি। ডিস্কোকে উনি ফেরত দেবেন। 

ইন্দ্রজিৎবাবু ভুরু কুঁচকে তাকালেন। একটু পরে বললেন, ‘পাসটা হাতছাড়া করা ঠিক হয়নি আপনার। 

‘কেন বলুন তাে ? . ওটার মধ্যে এমকিছু সন্দেহজনক জিনিস থাকতে পারে, যা আমার চোখ এড়িয়ে গেছে। 

‘তা-ই বুঝি ? : হ্যা। কারণ আপনারই মতে, পার্সটা আপনার জিম্মায় রাখাই চন্দ্রিকার উদ্দেশ্য ছিল। তার ওই একটাই অর্থ হয়। ‘আবার বলছি, আপনি বুদ্ধিমান ইন্দ্রজিত্ত্বাবু। 

আমি বললাম, “কিন্তু স্টেজে অভিনয়ের সময় চন্দ্রিকা পার্স কারুর কাছে রেখেছিল নিশ্চয় ? 

কর্নেল তুম্বাে মুখে বললেন, ‘ছােট্ট একটা পার্স সে পােশাকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেও অভিনয় করতে পারে স্টেজে। তাই না ইন্দ্রজিৎবাবু ?

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১২

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *