ইন্দ্রজিত্ত্বাবু সায় দিলেন। তারপর লম্বা শ্বাস ছেড়ে বললেন, আমার দ্বিতীয় ভুল, ডিস্কো ফোনে আমাকে চন্দ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতেই হুমকি দিত, সেই কথাটা খুলে আপনাকে বলিনি। শুধু বলেছিলাম, ওলসন হাউসে যেতে কেউ যকি দিচ্ছে। আমার জানানাে উচিত ছিল, চন্দ্রিকার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক। জানাইনি।’
আপনার গ্রুপে অভিনয় করে একজন কলগার্ল। আপনি এটুকু অবশ্য বলেছিলেন। ইন্দ্রজিৎবাবু আস্তে বললেন, হ্যা। কিন্তু বলিনি—আসলে লজ্জাবশতই বলতে পারিনি, চন্দ্রিকা অভিজাত ঘরের মেয়ে। নিজের স্বামীকে খুন করে প্রাণ বাঁচানাের জন্যই শয়তান ডিস্কোর আশ্রয় নিয়েছিল।
কর্নেল সরকার! চন্দ্রিকা সাংঘাতিক মেয়ে ছিল, এটা যেমন সত্য, তেমনি এ-ও সত্য, তার স্বামী রথীন bধুরীও ছিল একজন নরপিশাচ। হৃদয়হীন, স্বার্থপর, বর্বর। চন্দ্রিকাকে রথীনই প্রথম পাপের পথে ঠেলে দেয়। তার জীবনের এই শােচনীয় পরিণতির জন্য এই দায়ী।
‘ডিস্কো কে? ইন্দ্রজিত্যাবু তাকালেন। দৃষ্টিটা ক্রুর মনে হলাে। বললেন, জানি না। আপনি এবার তাকে খুঁজে বের করুন। আমি নিজের হাতে তাকে শাস্তি দেব।”
চন্দ্রিকা তার কোনও পরিচয় দেয়নি? না। কারণ চন্দ্রিকা কখনও তাকে দেখেনি। ডিস্কো আড়ালে থেকে সব চালায়। আপনি হরনাথ সিংহকে চেনেন ? হরনাথ সিংহ? ইন্দ্রজিৎবাবু আস্তে উচ্চারণ করলেন কথাটা। থা। রাঙাটুলির হরনাথ সিংহ। ‘মাই গুডনেস!’ নড়ে বসলেন ইন্দ্রজিৎবাবু। চন্দ্রিকার স্বামী ছিল রাঙাটুলির লােক। চন্দ্রিকাদের বাড়িও তাে সেখানে। চন্দ্রিকা আমাকে বলেছিল।
চন্দ্রিকার সঙ্গে কোথায় কী করে আপনার পরিচয় হয়েছিল ? ‘পার্ক স্ট্রিটের একটা বারে। মুনলাইট বার। বারের একজন অ্যাংলাে ওয়েটার সাকো আমার সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেয়। ওই বারে কলগার্লরা যায়। তাে থম আলাপেই চন্দ্রিকা থিয়েটারে অভিনয়ের সুযােগ দিতে অনুরােধ করেছিল।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১২
কর্নেল ষষ্ঠীচরণকে ডেকে কফি আনতে বললেন। তারপর বললেন, হরনাথ পরে কথা চন্দ্রিকা আপনাকে বলেনি কখনও। মনে করে দেখুন। মার। মনে পড়ছে না।
একটু পরে কর্নেল বললেন, চন্দ্রিকার পার্সে অ্যাডভােকেটের কার্ড পাওয়ার অর্থ বােঝা গেল সম্ভবত। মার্ডার চার্জ ছিল চন্দ্রিকার নামে।
“হ্যা। সে প্রায় বছর সাত-আট আগের কেস। তবে ডিস্কো প্রভাবশালী লােক। কেস থেকে তাকে বাঁচায়।
‘ডিস্কোর সঙ্গে চন্দ্রিকার কীভাবে পরিচয় হয় আপনি জানেন ? ‘জানি না। চন্দ্রিকা খুলে কিছু বলেনি।
আপনি কি জানেন, চন্দ্রিকা ইদানিং ডিস্কোকে ব্ল্যাকমেল করত কি না ? ‘ বলেনি আমাকে। ওই যে বললাম, ওর হাত থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল।
এই সময় ফোন বাজল। কর্নেলের ইশারায় ফোন তুলে সাড়া দিলাম। কোনও মেয়ে জানতে চাইছে, ফোনের নাম্বার এই কি না। বললাম, হ্যা। বলুন, কাকে চাই ?
জবাব এল, এখানে কথা বলুন। তারপর পুরুষকণ্ঠে কেউ বলল, হ্যালাে! ‘কাকে চাই বলুন? ‘কর্নেল নীলাদ্রি সরকারকে।
কে বলছেন আপনি? ‘ডিস্কো। ঝটপট ফোনের মাউথপিসে হাত চাপা দিয়ে কর্নেলকে বললাম, ডিস্কো।
কর্নেল ফোন নিয়ে বললেন, বলুন মিঃ ডিস্কো ! …আমাকে চেনেন তাহলে? কিন্তু দুপুরে তখন তাে…ও! পরে খোঁজ নিয়ে পরিচয় পেলেন ? ধন্যবাদ।.বলেন কী! ওলসনসায়েব…ঠিক আছে। প্রাণের ভয়ে বুড়ােমানুষ আমার নাম করেছেন। পার্স পেয়েছেন তাে ?..না, না।
ধন্যবাদ দেওয়ার কী আছে?…..হা মিঃ ডিস্কো! চন্দ্রিকার খুনী আপনি নন।…..নিশ্চয়! আই মাস্ট ফাইন্ড আউট…..জাস্ট আ মিনিট! কালরাত্রে আপনি কার হাত দিয়ে ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবি…..ও মাই গড! সে কী! কোথায় ?…ঠিক আছে। …হ্যা, বুঝতে পারছি। হ্যালাে! হ্যালাে! হ্যালাে!
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১২
বুঝলাম, লাইন কেটে গেল। কর্নেল ফোন রেখে গম্ভীর মুখে বললেন, যাই হােক, ডিস্কোর সঙ্গে এতক্ষণে যােগাযােগ হলাে। তখন ফোনে ওর ডামি নাকি কথা বলেছিল। বুঝলে জয়ন্ত? অবশ্য এ-ও ডিস্কোর ডামি কি না বলা কঠিন। তবে অদ্ভুত ঘটনা, যে লােকটিকে দিয়ে ডিস্কো ডুপ্লিকেট চাবি পাঠিয়েছিল, তার ডেডবডি পাওয়া গেছে বেলেঘাটার কাছে ক্যানেলে। শট ডেড।
চমকে উঠে বললাম, তা হলে ওলসনসায়েবের ধারণাই পরােক্ষে সতিস যে চাবি এনেছিল, সেই…’ | ইন্দ্রজিত্যাবু ক্রুদ্ধ স্বরে বলে উঠলেন, ‘ফোনটা আমাকে দেওয়া উচিত ছিল কর্নেল সরকার।
ষষ্ঠী কফি নিয়ে এল। কর্নেল বললেন, কফি খান ইন্দ্রজিৎবাবু! উত্তেজিত হয়ে লাভ নেই।
কফি খেতে খেতে ইন্দ্রজিৎবাবু বললেন, চন্দ্রিকার পার্সটা শয়তান ডিস্কোকে . ফরত দেওয়া ঠিক হয়নি। তারপর ভীষণ গম্ভীর হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ ঘরে
তা ঘনিয়ে এল। কর্নেল চোখ বুজে ইজিচেয়ারে হেলান দিয়েছিলেন। ওই যায় কফিতে দিব্যি চুমুক দিচ্ছিলেন। ইন্দ্রজিৎবাবু কফি শেষ করে ঘড়ি দেখে, ললেন, ‘উঠি। আবার যােগাযােগ করব। ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ির সঙ্গে পয়েন্টমেন্ট আছে। কর্নেল সরকার! আপনি ডিস্কোকে আমার মুখােমুখি দাঁড় লাতে পারলে আমি খুশি হব।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১২
কর্নেল শুধু বললেন, ‘দেখা যাক। ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি দ্রুত বেরিয়ে গেলেন। আমার কেন যেন মনে হলাে, ভদ্রলোেক এ নাটকের নােক নন।….
দ্বিতীয় স্তর এ যাবৎ কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের সঙ্গে থেকে অনেক জটিল রহস্যের উন্মােচন খেছি। কিন্তু কখনও নিজেকে জড়িয়ে ফেলিনি। আমি থেকেছি নিছক দর্শকের
কায়। কিন্তু এবার নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলাম। আসলে আমার গাড়িতে পার্স ফেলে গিয়ে চন্দ্রিকাই আমাকে যেন জড়িয়ে গেছে তার শশাচনীয় মৃত্যুর সঙ্গে।।
জিৎ ব্যানার্জি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে কর্নেল আমার দিকে তাকিয়ে বলে লন, ‘ডার্লিং! আমার ধারণা, তােমার মগজে প্রচুর পরগাছা গজাতে শুরু হে। উপড়ে ফেলল।
সবার চেষ্টা করে বললাম, ওপড়ানাে শক্ত। মাথা ঝিমঝিম করছে। বরং ছাদে গিয়ে বসবে চলাে। আমার ছাদের বাগানটিকে হালদারমশাই খাদ্যান নাম দিয়েছেন। শুনােদ্যানে কিছুক্ষণ কাটালে মগজ শূন্য হবে। ওপরে লাল আকাশ। ওঠো ।।
বাড়িতে থাকলে কর্নেল তার ছাদের বাগানে দুবেলা কাটান। অদ্ভুত কিম্ভুত সব লের পরিচর্যা করেন। উনি যখন থাকেন না, তখন কাজটা ষষ্ঠী চমৎকারভাবে । সে বলে, আমি গাঁ-গেরামের মানুষ দাদাবাবু। শউরে হওয়া আমার উচিত ।
Read More