অগ্যিস বাবামশাই ছাদে বাগানখানা বাইনেছিলেন। পেরানটা শান্ত হয় সেখানে লে। ষষ্ঠী গ্রামের মানুষ বলেই গাছপালার প্রতি ওর হয়তাে নাড়ির টান।
সে কফির পেয়ালা নিতে এসে বলল, আপনারা বেরুবেন নাকি? ”
কর্নেল উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘বেরুব। মা তাইলে আপনাদের শীগগির বেরুলেই ভাল হয়। সাড়ে চারটে বাজে। বাগানে। – নিতে হবে। নেট হয়ে যাচ্ছে।র্নেল হাসতে হাসতে বললেন, ‘নেট হলেও ক্ষতি নেই। গতরাত্রে খুব বৃষ্টি :
‘ওরে হতভাগা! আমরা বাগানের দিকেই বেরুচ্ছি।কর্নেল পা বাড়িয়ে বললেন, ‘ঘণ্টাখানেক পরে আবার কফি চাই কিন্তু।
ওপরে গিয়ে শেডের তলা থেকে খুরপি আর কিসের একটা প্যাকেট নিলেন কর্নেল। আমি একটা বেতের চেয়ার নিয়ে গিয়ে খােলা জায়গায় বসলাম। চন্দ্রিকার ফ্ল্যাটের পাশে ছাদের বাগানটার কথা মনে পড়ে গেল। ওলসন হাউসের ছাদে ওই বাগানটা কি চন্দ্রিকাই করেছিল? প্রশ্নটা না করে পারলাম না।
কর্নেল একটা বিদঘুটে গড়নের ক্যাকটাসের কাছে হাঁটু দুমড়ে বসলেন। বললেন, ‘চন্দ্রিকা এখনও তােমার পিছু ছাড়েনি দেখছি!
একটু চটে গিয়ে বললাম, কী আশ্চর্য! আপনার ছাদের বাগানে এসে ওই বাগানটার মনে পড়া কি স্বাভাবিক নয়? | ‘স্বাভাবিক। কর্নেল গর্বিত ভঙ্গিতে বললেন, ‘তাই বলে আমার বাগানের সঙ্গে তুলনা কোরাে না ! জয়ন্ত! এখানে পৃথিবীর কত দুর্গম অঞ্চল থেকে আনা বিচিত্র সব প্ল্যান্ট আছে তুমি তাে ভালই জানাে। যাই হােক, কলকাতার একটা সুন্দর বিকেলকে খুনখারাপির ভাবনা দিয়ে নােংরা কোরাে না।’
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৩
সিগারেট ধরিয়ে চুপচাপ টানতে থাকলাম। কিন্তু বারবার গতরাতের দৃশ্যটা ভেসে উঠে আমাকে উত্তেজিত করছিল। কলগার্ল হােক, মানুষ তাে ! কে তাকে অমন নৃশংসভাবে খুন করল ? এ খুনের উদ্দেশ্য কী ?
আগাগােড়া কাহিনীর আকারে ঘটনাগুলাে পর-পর সাজানাের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু বারবার সব এলোেমলাে হয়ে যাচ্ছিল। কোনও পূর্ণাবয়ব পারম্পর্যময় কাহিনী গড়ে তােলা অসম্ভব মনে হচ্ছিল। শুধু একটা ব্যাপার স্পষ্ট, চন্দ্রিকার পার্সে লুকোনাে চিরকুটে লেখা কথাগুলাে যদি কোনও রহস্যময় কোড হয়, সেটাই তার মৃত্যুর একমাত্র কারণ। ডিস্কোর পাঠানাে লােকটাকে গুলি করে মেরে খুনী চন্দ্রিকার ফ্ল্যাটের চাবি হাতিয়েছিল।
তারপর চন্দ্রিকার ফ্ল্যাটে এসে তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছে। চন্দ্রিকা চিৎকার করে কারও সাহায্য চায়নি কেন? খুনী তার চেনা লােক কি না, এ-ও একটা পয়েন্ট। তবে এখন মনে হচ্ছে, এই চিরকুটটা হাতানােই তার উদ্দেশ্য ছিল। | ষষ্ঠী কফি এনেছিল।কফি খেতে খেতে আবার চিন্তাগুলাে ফিরে এসেছিল। আবার এলােমেলাে ঘটনার ঝড় আমাকে অস্থির করে ফেলল।
হঠাৎ একটা পয়েন্ট মাথায় এসে গেল। খুনী থিয়েটার থেকে চন্দ্রিকাকে বৃষ্টির মধ্যে অনুসরণ করে এসে । বাড়ির কাছাকাছি অপেক্ষা করছিল কি? তা হলে আমার গাড়ির পিছনে তার গাড়ি ছিল। তারপর সম্ভবত আড়ি পেতে সে সব শােনে এবং ডিস্কোর পাঠানাে লোকটার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। লােডশেডিং এবং বৃষ্টি তার সুযােগ করে দিয়েছিল।
স্পষ্ট দেখা যায়, বর্ষাতিপরা একটা লােক।প্রশ্নটা কর্নেলের কাছে তুললাম। উনি সেই কাগজের প্যাকেট থেকে একটা ফুলগাছের গােড়ায় কিছু ছড়াচ্ছিলেন। আমার কথা শুনে অবাক চোখে তাকালেন।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৩
কি সর্বনাশ! তুমি মারা পড়বে দেখছি। না—তার মানে, তুমি পাগল হয়ে যাবে বলতে চাইছি। সাবধান ডার্লিং! কক্ষনাে রহস্য নিয়ে ছেলেখেলা করতে নাই।‘ছেলেখেলা কেন বলছেন?
হা। রহস্য নিয়ে অহেতুক চিন্তাভাবনা করাটাই ছেলেখেলা। রহস্য ফর্দাফাই নিতে হলে অবশ্য একটা থিওরি গড়ে তােলা দরকার। তারপর তথ্য হাতড়াতেয়। তথ্য থিওরির সঙ্গে না মিললে নতুন থিওরি গড়াে। কিন্তু তােমার কোনও থিওরিই নেই। আছে শুধু বিক্ষিপ্ত কিছু তথ্যকে কেন্দ্র করে গড়া নিছক একটুকরাে
রণা। অথচ একটু তলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবে, আমাদের সামনে একটা বিশাল কালাে পর্দা টাঙানাে । পর্দার আড়ালে অনেক কিছু ঘটছে। কিন্তু কিছুই বোেঝ যাচ্ছে না। কর্নেল খুরপি রাখতে গেলেন শেডে। আপাতত কোনও থিওরি গড়ে তােলা অসম্ভব, জয়ন্ত।
তাই এই কেসে আমি শুধু তথ্য আর ঘটনার দিকে লক্ষ্য ‘খছি। যাই হােক, একটু পরে আমরা বাইরে বেরুব। আরও তথ্য পেতে চাই হে প্রচুর ছােটাছুটি করতে হবে। তােমার মতিগতিথেকে বুঝেছি, তুমি তাতে পা নও। কর্ণেল তাঁর জোরালো অট্টহাসিটি হাসলেন সাড়ে ছটা বাজে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললাম, কোথায় যাবেন?
শ্যামবাজার এরিয়ায়। চন্দ্রিকার সেই অ্যাডভােকেটের কাছে নাকি?” ‘হ্যা’ ‘ওর কার্ডটা আপনি রেখে দিয়েছেন তা হলে?
নাহ্। টুকে রেখেছি ঠিকানাটা। সার্কুলার রােডে পৌঁছলে কর্নেল ফের বললেন, ঠিকানাটা ডিস্কোরও দরকার হয় কি না জানতে চেয়েছি। তাই কার্ডটা পার্সেই ‘মেখেছিলাম।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৩
সারা পথ ট্রাফিক জ্যাম। কর্নেলের কাছে কলকাতার অলিগলি প্রায় যাকে বলা চলে নখদর্পণে। পাঁচমাথার মােড় পেরিয়ে বাগবাজারে, তারপর কর্নেলের নির্দেশে একটা গলি রাস্তায় ঢুকলাম। তখন সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। গলিটায়
কোনওক্রমে দুটো গাড়ি পরস্পরকে পেরিয়ে যেতে পারে। একটা লােক অলক। সেনগুপ্তের বাড়ি দেখিয়ে দিল। এমন এঁদো গলিতে বিশাল বনেদি বাড়ি দেখে তাক লেগে গেল। গেটের অবস্থা অবশ্য ভাঙাচোরা। নামেই গেট। কোনও কপাট বা গরাদ দেওয়া আগড় নেই। সামনে একটুকরাে খােলা জায়গা। সেখানে গাড়ি দাঁড় নিলাম। | গাড়ি থেকে বেরুতেই সামনের বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে থাকা এক বৃদ্ধ
এলােক উঠে দাঁড়ালেন। পরনে ফতুয়া আর ধুতি। উনিশ শতকের প্রতীক লা যায়। সিঁথি করে আঁচড়ানাে চুল। হাতে একটা ছড়ি দেখতে পেলাম। একটু বুড়িয়ে হাঁটেন মনে হলাে। কর্নেল নমস্কার করলে উনি বিনীতভাবে নমস্কার করে বললেন, ‘কোথেকে আসা হচ্ছে মশাইদের? ‘আমরা অলকবাবুর সঙ্গে কথা বলতে চাই। আপনিই কি ‘আজ্ঞে, ঠিকই ধরেছেন। আসুন! ভেতরে আসুন।
Read More