সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৫

 এ যাবৎ কখনও রাস্তাঘাটে সে বা রাতে কোনও একলা মেয়েকে গাড়িতে লিফ্ট দেওয়ার সৌভাগ্য বা রাগ্য হয়নি, যদিও গল্পে এসব অনেক পড়েছিসৌভাগ্য মানে, গল্পে এসব ক্ষেত্রে লেমের সুযােগ এসে যায়দুর্ভাগ্য মানে, অনেক সময় নাকি লিষ্ট দিতে গিয়ে সংগতিক ব্ল্যাকমেলের পাল্লায় পড়তে হয়। | কিন্তু মেয়েটিকে কর্নেল কলগার্ল বলে সনাক্ত করেছেন, এমন কি বাড়িটাও

কর্নেল সমগ্র ১ম খণ্ড 

সে! এজন্যই কেমন অস্বস্তি হচ্ছিল। গাড়ির আলােয় কয়েক ৩ যে মুখ দেখেছি সেই মুখে সৌন্দর্য ও বিপন্নতার ছাপ ছিল। সুন্দরীমেয়েরা কেন নষ্ট হয়ে যায়, এ ধরনের সামাজিকনৈতিক প্রশ্নও আমাকে উত্ত্যক্ত কহিল।

| গাড়ি গ্যারাজে ঢুকিয়ে পেছনের জানালার কাচ তুলছিলামসেই সময় গ্যারাজের আলাের ছটায় চোখে পড়ল ব্যাকসিটে একটা ছােট্ট পার্স পড়ে আছে। একটু চমকে ঠেছিলাম দেখামাত্র। পার্সটা তুলে নিলাম। আমার হাত কাঁপছিল কথা অস্বীকার খি না। পার্সটা নিশ্চয়ই সে ইচ্ছে করে ফেলে যায়নি। মানসিক চাঞ্চল্য, আর 

ও এই ভুলের কারণ হতে পারে। | শাদামি রঙের হাল্কা পার্সটা নিয়ে আমার দোতলার ফ্ল্যাটে ঢুকলাম, তখন আমার WH্য প্রচণ্ড উত্তেজনা টগবগ করছিল। মেয়েদের পার্স আমার কাছে সবসময় হলের বস্তু। সেই কৌতুহলে রােমান্টিকতা থাকা স্বাভাবিককিন্তু এক্ষেত্রে তেনাই আমাকে ক্রমশ নার্ভাস করল| পার্স খুলতেই প্রথমে চোখে পড়ল একটা নেমকার্ডতারপর তিনটে অবির একটা রিং। কিছু খুচরাে পয়সাপার্সের ভেতরে একপাশের খোঁদলেন শ’দেড়েক কর নােটঅন্যপাশের খোঁদলে খুদে আয়না, লিপস্টিক এইসব টুকিটাকি সাধনা।

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৫

জিনিসগুলাে টেবিলে রাখছিলাম। আমার এই কাজটা অশালীন বলা চলেকিন্তু 

কর উত্তেজনাটা আমাকে ভূতগ্রস্ত করেছিল। আরও খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার লি সময় /২ . করলাম তলার দিকে ইঞ্চি তিনেক লম্বা জিপ। জিপ টেনে খুলে দেখি, ভেতরে একটা পুরনাে হলদেটে কাগজের চিরকুট। তাতে লেখা আছে : TL-2. R-3. 1-1. R-4  পরপর কয়েকটা সিগারেট টানার পর প্রথমেই মাথায় এল, পার্সে চাবি থাকায় মেয়েটি তার ফ্ল্যাটে ঢুকতে পারছে না। 

এত রাতে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে গিয়ে পার্স ফেরত দিতে আমার আপত্তি ছিল না, কিন্তু কর্নেলের মুখে ওই বাড়ির কথা শােনার পর সেটা সম্ভব নয়। | নেমকার্ডটা তুলে নিলাম। পুরনাে কার্ড। ওতে একজন অ্যাডভােকেটের নামঠিকানা ছাপানাে আছে। অলক সেনগুপ্ত। ঠিকানা শ্যামবাজার এলাকারই কোনও গলির

মেয়েটি কি কখনও কোনও মামলায় ফেঁসেছিল ? কর্নেল বলছিলেন, সম্প্রতি ওই বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়ে কলগার্লদের গ্রেফতার করেছিল। এই মেয়েটি যদি কলগার্ল হয়, সে গ্রেফতার হয়ে থাকলেও ছাড়া পেয়েছে। তার আইনজীবীর কার্ড হতেও পারে। কার্ডটা জরাজীর্ণ হওয়ায় অনেক ব্যাখ্যা সম্ভব। তবে এ নিয়ে এখন মাথা ঘামানাের মানে হয় না। 

. রাঙাটুলির রায়সায়েবের সেই ‘চিচিং ফাঁক’ চিরকুটের মতাে এই অদ্ভুত চিরকুটটা নিয়ে মাথা ঘামানাের দায় বরং বৃদ্ধ রহস্যভেদীর ওপর চাপানাে যেতে পারে। আপাতত আমার দুশ্চিন্তা, মেয়েটি তার ফ্ল্যাটে ঢুকতে পারছে না। আমার এখন কী করা উচিত। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৫

অতএব অগতির গতি আমার ফ্রেন্ড-ফিলসফার-গাইডকেই রিং করলাম। কয়েকবার চেষ্টার পর সাড়া পেলাম। সংক্ষেপে ব্যাপারটা বললাম। কর্নেল বললেন, ‘ওর ফ্ল্যাট খুলে দেওয়ার লােক ওবাড়িতে আছে। তুমি খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়াে। ঘুম না এলে পালের ভেড়া গুনতে শুরু করবে। পুরনাে এবং অব্যর্থ ওষুধ। আর শােননা, তুমি পার্স ফেরত দিতে যেও না। আমাকে সকালে দিয়ে যেও। আমিই দিয়ে আসব। তােমারও আমার সঙ্গে যেতে ইচ্ছে করবে। ঠিক আছে। যাবে। গুড নাইট!… 

পালের ভেড়া গােনার চেষ্টা করিনি। ঘুম না এলে আমার অভ্যাস দুর্বোধ্য বিষয়ের বই পড়া এবং বােঝবার চেষ্টা করা। এই চেষ্টা থেকেই ঘুম অনিবার্যভারে এসে যায়। তবে এদিন ঘুম ভেঙেছিল প্রায় নটায়। তাড়াহুড়াে করে ব্রেকফাস্ট সেরে কর্নেলের বাড়ি পৌঁছুতে সাড়ে নটা বেজে গেল। 

. ‘আকাশ ঝকঝকে নীল। রাস্তাঘাট শুকনাে। বৃষ্টির পর বাতাসে শেষ শরতের স্বাভাবিক স্নিগ্ধতা ফিরে এসেছে। কর্নেল পার্সটা হাতে নিয়ে ঠিক এভাবেই মার্জিত ভাষায় কছুক্ষণ ঋতুবন্দনা করে গেলেন। কলকাতায় যদিও সঠিক ঋতু পরিবর্তন টের পেতে সময় লাগে, কর্নেলের ছাদের বাগানে দাঁড়ালে নাকি কিছু লক্ষণ থেকে অবস্থা আঁচ করা যায়। কাজেই রাঙাটুলি আজ ভােরবেলা থেকেই তাঁকে খুব মহে।

চুপচাপ সিগারেট টানছিলাম। বিরক্ত হয়ে বললাম, পার্সটা খুলে দেখবেন না কর্নেল হঠাৎ চাপাস্বরে বলে উঠলেন, ‘চেপে যাও ডার্লিং! ভুলে যাও গতরাতে কোনও মেয়েকে লিফট দিয়েছ। এক মিনিট। পার্সটা আমি লুকিয়ে রেখে আসি। | অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কর্নেল পার্সটা সত্যি পাশের ঘরে কোথাও রেখে এলেন। ষষ্ঠী কফি দিয়ে গেল। কর্নেল বললেন, কফি খাও। নার্ভ চাঙ্গা করাে। তারপর বলছি। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৫

‘কিছু বুঝছি না। আপনার সবসময় শুধু হেঁয়ালি। 

এই সময় ফোবাজল। কর্নেল সাড়া দিয়ে বললেন, ‘হালদারমশাই নাকি?….. এনে কী। আপনার কাছে গিয়েছিল? আপনি সিওর? ….. বুঝেছি। … চলে সুন। জয়ন্ত এখানে আছে। … হ্যাঁ, ঠিক আছে। রাখছি। চলে আসুন। বললাম, ‘প্রাইভেট ডিটেকটিভ ভদ্রলােক নিশ্চয় কোনও কেস হাতে পেয়েছেন? কর্নেল হাসলেন। পেয়েছিলেন। কিন্তু পা বাড়িয়ে পুলিশের ধমক খেয়ে হটে সেন। এখন সেই পুলিশই ওঁকে সাধছে। একটু অপেক্ষা করাে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের প্রিয় গােয়েন্দা ভদ্রলােক পুলিশের গাড়িতেই এসে পড়বেন। 

“প্লিজ কর্নেল! আর হেঁয়ালি করবেন না। কর্নেল কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘গত রাতে সেই কলগার্ল চন্দ্রিকা রায় খুন হয়েছে। প্রচণ্ড চমকে উঠলাম। সে কী! কোথায়? কী ভাবে? ‘নিজের ফ্ল্যাটের ভেতরে। কর্নেল নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন। “ভাের ছটায় uর ওলসন ফোন করে আমাকে জানান, চারতলার ফ্ল্যাটে একটি মেয়ে খুন 

ছে। সেজন্য পুলিশ তাঁর ওপর ঝামেলা করছে। আমি যেন ওঁকে সাহায্য করতে এ যাই।’

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৬

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *