সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৬

‘আপনি গিয়েছিলে? ‘খ। আমার জানার ইচ্ছে ছিল গতরাতের সেই মেয়েটিই কিনা। যদি সে না। , ৩ হলে আমার কিছু করার নেই। তাে গিয়ে দেখি, সে-ই। মুখটা মনে ছিল। তুমি তাে জানাে, মানুষের মুখ সম্পর্কে আমার নিজস্ব কিছু তত্ত্ব আছে। চন্দ্রি আর মুখে বিপন্নতা লেখা ছিল। কিন্তু সেটা এতদুর গড়াবে ভাবতে পারিনি।

কর্নেল সমগ্র ১ম খণ্ড 

৩ ফ্যাটের চাবি তাে পার্সে। ‘মাে পার্স। চেপে যাও। । ‘ফটে ঢুকল কী করে চন্দ্রিকা? . .. … | ‘ 

সেবেই হােক, ঢুকেছিল। তারপর খুনী ওকে জবাই করেছে। হ্যা, আক্ষরিক আ পাই। কর্নেল তেমনই নির্বিকার মুখে বললেন। “তােমাকে বলেছিলাম, 

কলগার্লদের জীবন সবসময়ই বিপন্ন। কেন বিপন্ন সেটা একটু চেষ্টা করলেই বুঝতে পারবে। এক্ষেত্রে পুলিশের বক্তব্য অবশ্য একটু অন্যরকম। চন্দ্রিকাকে খুন করা হয়েছে ডাকাতির উদ্দেশ্যে। আজকাল নাকি ফ্ল্যাটে ডাকাতি এবং খুন যে ভাবে হচ্ছে, সেভাবেই। কারণ ওলসনের বাড়ির কলগার্লদের গার্জেন ডিস্কোর কাছে চন্দ্রিকা ছিল এক দুর্মূল্য সম্পদ। 

‘ডিস্কো কে? 

‘এখনও তাকে দেখিনি। জানি না কে সে। জানতেও চাই না। ডিস্কো ইজ ডিস্কো। দ্যাটস্ অল। 

‘চন্দ্রিকার পার্সের ভেতর শেই কাগজটা— ‘নাে পার্স! কর্নেলের চোখে ভৎসনা ফুটে উঠল। কথাটা বলে উঠে গেলেন জানালার কাছে। পর্দা তুলে উঁকি দিয়ে নিচের রাস্তা দেখতে থাকলেন। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৬

কিছুক্ষণ পরে সরে এসে ইজিচেয়ারে বসলেন কর্নেল। সহাস্যে বললেন, ‘পুলিশের জিপে হালদারমশাই আসছেন। ভাবা যায়? চিন্তা করাে ডার্লিং! ভদ্রলােক নিজেই চৌত্রিশ বছর পুলিশে চাকরি করেছেন। রিটায়ার করে ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলেছেন। অথচ পুলিশ ওঁকে সহ্য করতে পারে না এবং উনিও পুলিশকে সহ্য করতে পারেন না। সম্পর্কটা প্রায় সাপে-নেউলে বলা চলে। অথচ এতদিন পরে এই একটা ঘটনায় সাপ-নেউলের চমৎকার গলাগলি। দেখা যাক, এই গলাগালি থেকে চন্দ্রিকা হত্যার কোনও সূত্র বেরিয়ে আসে নাকি! 

ঘণ্টা বাজলে ষষ্ঠীচরণ গিয়ে দরজা খুলে দিল। তারপর প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে কে হালদার নস্যির কৌটো হাতে হাসিমুখে ঘরে ঢুকলেন। তাঁর পিছনে এক পুলিশ অফিসার। হালদারমশাই ধপাস করে বসে এক টিপ নস্যি নিয়ে বললেন, ‘গুপ্তসায়েবরে জিগান, কী কইছিলাম? 

পুলিশ অফিসার গম্ভীরমুখে বললেন, কর্নেলসায়েব কি ডি সি ডি ডি লাহিড়িসায়েবের ফোন পেয়েছেন? | কর্নেল বললেন, ‘অরিজিৎ বলছিল, আপনি যােগাযােগ করবেন। জয়ন্ত, আলাপ করিয়ে দিই। ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর মিঃ অশােক গুপ্ত। আমার স্নেহভাজন বন্ধু। জয়ন্ত চৌধুরী। দৈনিক সত্যসবেক পত্রিকার সাংবাদিক। 

অশােক গুপ্ত নমস্কার করে বললেন, কাগজে নামটা দেখেছি। একটা অনুরােধ জয়ন্তবাবু। যদি কাগজে কিছু লেখেন, এমন কিছু লিখবেন না যাতে আমাদের তদন্তে ব্যাঘাত ঘটে। 

বললাম, কিছুই লিখব না। আমাদের কাগজের ক্রাইম-রিপাের্টার আছে। সে আপনাদের ভার্সানই লেখে। কাজেই যা লেখার সে-ই লিখবো …. 

আবার একদফা কফি এল। হালদারমশাইয়ের জন্য তিন ভাগ দুধ মেশানাে কফি আনতে ষষ্ঠী ভােলেনি। চুমুক দিয়ে হালদারমশাই সন্তোষ প্রকাশ করে বললেন, 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৬

‘ফার্স্ট ক্লাস! এবার অশােকবাবু কইবেন, নাকি আমি স্টার্ট করব? কর্নেলস্যার কী 

ন?’ 

কর্নেল বললেন, আপনারটা আগে শুনে নিই। | প্রাইভেট ডিটেকটিভ তাঁর স্বভাবসিদ্ধ মিশ্র ভাষায় যা শুরু করলেন, তার সারমর্ম এই : 

হালদারমশাই মাঝে মাঝে কাগজে তাঁর এজেন্সির বিজ্ঞাপন দেন। গত সপ্তাহে দিয়েছিলেন। কদিন আগে চন্দ্রিকা রায় তাঁর অফিসে গিয়েছিল। তাকে নাকি প্রায়ই একটা অচেনা লােক টেলিফোন করে জ্বালাতন করছে। কী একটা অদ্ভুত কথা বলছে, যার মাথামুণ্ডু বােঝা যায় না। আগের দিন চন্দ্রিকা নিউ মার্কেটে গিয়েছিল। ভিড়ের ভেতরে কেউ তাকে ফিসফিস করে একই কথা বলে ওঠে।

কে বলল, চন্দ্রিকা খুঁজে পায়নি। কিন্তু ভীষণ ভয় পেয়ে চলে আসে। হালদারমশাই চন্দ্রিকার কেসটি যথারীতি গুরুত্বসহকারে হাতে নেন। চন্দ্রিকার বাসস্থানের কাছে অর্থাৎ ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ওই বাড়ির সামনে ফুটপাতে পুরাে একটা দিন ওত পেতে থাকেন এবং নিজস্ব গােয়েন্দা-পদ্ধতিতে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, বাড়িটা কলগার্লদের ঘাঁটি। চন্দ্রিকাও একজন কলগার্ল। তবে সেটা কোনও ব্যাপার নয়। চন্দ্রিকা তাঁর ক্লায়েন্ট। 

উল্লেখ করা দরকার, হালদারমশাই কেস পেলে যা করেন, অর্থাৎ ছদ্মবেশ ধরেই এত পাততে গিয়েছিলেন। ভবঘুরে ফুটপাতবাসীর ছদ্মবেশ। গত পরশু শুক্রবার। বিকেলে ফের যান উনি। সেই সময় সেজেগুজে চন্দ্রিকা বেরুচ্ছিল। তার পিছু নেন। চন্দ্রিকা পার্ক স্ট্রিটের মােড়ে গিয়ে দাঁড়ায়। হালদারমশাই ভেবেছিলেন, সে খদ্দের ধরার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৬

কিন্তু কিছুক্ষণ পরে একটা সাদা গাড়ি এসে থামে এবং ম্রিকা তাতে চাপে। ভবঘুরে টাইপ নােংরা পােশাকপরা লােককে কোনও ট্যাক্সি ড্রাইভারই নেবে না। কাজেই গাড়ির নাম্বার টুকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় গােয়েন্দাকে। পরদিন শনিবার মােটর ভেহিকলস্ ডিপার্টমেন্টে চেনা লােকের সাহায্যে গাড়ির মালিকের নাম-ঠিকানা যােগাড় করেন। তারপর সেই ঠিকানায় চলে যান। গিয়েই একটু অবাক হন। 

এ পর্যন্ত শুনেই কর্নেল হঠাৎ বলে উঠলেন, ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জির বাড়ি?” হালদারমশাই চমকানাে গলায় বললেন, ‘অ্যাঁ? আপনি জানেন? ‘সৌরভ নাট্যগােষ্ঠীর ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি। গতকাল সন্ধ্যায় তাঁরই নাটক ‘পরগাছা দেখতে গিয়েছিলাম। সঙ্গে জয়ন্তকে নিয়ে গিয়েছিলাম? চন্দ্রিকা গ্রাম্য যুবতীদের 

লে অভিনয় করছিল। 

আমি কর্নেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমিও হালদারমশাইয়ের মতাে এলে উঠলাম, অ্যাঁ!” 

কর্নেল একটু হেসে বললেন, হ্যাঁ। যাই হােক, তারপর কী হলাে বলুন দারমশাই? 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৭

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *