‘হঃ! হালদারমশাই সােজা হয়ে বসলেন। কতকটা তা-ই মনে হয়েছিল চন্দ্রিকার।
আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, চাই চিচিং ফাঁক নয় তাে?” প্রাইভেট ডিটেকটিভ নড়ে উঠলেন। কী কইলেন? কী কইলেন ?
কর্নেল চোখ কটমটিয়ে তাকালেন আমার দিকে। বললাম, “চাই চিচিং ফাঁক কথাটা কেউ আচমকা বলে উঠলে চীনে ভাষা মনে হতেও পারে, কর্নেল!
হালদারমশাই বারকতক বিড়বিড় করে কথাটা আওড়ে খি-খি করে একচোট হাসলেন। তারপর একটিপ নস্যি নিয়ে বললেন, চন্দ্রিকা কইছিল চ্যাংচুংচিংচাঁ করে কী যেন বলে লােকটা। তাে জয়ন্তবাবু কী কইলেন য্যান ? চিচিং ফাঁক?’ ফের খি খি করে হাসতে লাগলেন উনি। কর্নেল হাসছিলেন না। গম্ভীরমুখে বললেন, আর কোনও ফ্যাক্ট আছে কি আপনার হাতে ?
হালদারমশাই গম্ভীর হয়ে চাপাস্বরে বললেন, চন্দ্রিকা কইছিল, সে একটা অফিসে চাকরি করে। পরে জানলাম, এটা মিথ্যা কথা। তবে আমারে একটা অ্যাড্রেস দিছিল। যদি হঠাৎ তার কোনও বিপদ হয় হয়, সেই অ্যাড্রেসে আমারে যােগাযােগ করতে হইব। করুম এবার। তার আগে অ্যাড্রেসটা দেখাই।
প্যান্টের পকেট থেকে ছােট্ট নােটবই বের করে উনি পাতাটা খুঁজে বের করলেন। তারপর কর্নেলকে দিলেন নােটবইটা। আমি কর্নেলের দিকে ঝুঁকে গিয়ে ঠিকানাটা দেখে খুব অবাক হয়ে গেলাম।
ঠিকানাটা রাঙাটুলির!
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৮
নামটা আমার অপরিচিত। হরনাথ সিংহ। তবে ঠিকানা দেখেই আমি উত্তেজিতভাবে বলে উঠলাম, কর্নেল ! চিচিং ফাঁক রহস্যের সঙ্গে চন্দ্রিকার খুনের একটা লিংক পাওয়া যাচ্ছে যেন ?
কর্নেল আমার কথায় কান দিলেন না। হালদারমশাইকে নােটবইটা ফেরত দিয়ে বললেন, “আপনি রাঙাটুলি যাবেন তাহলে ?
হালদারমশাই বললেন, ‘হঃ! আই মাস্ট গাে। আমার ক্লায়েন্ট। টাকা খাইছি তার থনে। দিস ইজ মাই মর্যাল ডিউটি কর্নেলস্যার? ‘ফি দিয়েছিল চন্দ্রিকা ? কত ? ‘ফাইভ হান্ড্রেড।
বলেন কী! হালদারমশাই অবাক হয়ে বললেন, ক্যান ? আমার মিনিমাম ফি কর্নেলস্যার। তবে আমি অরে ইনসিস্ট করি নাই। নিজেই জিগাইল ফিয়ের কথা। দিয়াও দিল।
‘আপনার হাতে আর কোনও ফ্যাক্ট আছে হালদারমশাই ? মাথা জোরে নেড়ে হালদারমশাই বললেন, নাহ্। কিন্তু একটা কথা। আপনি অশােকবাবুরে ডিস্কোর কথা জিগাইলেন। হু ইজ দ্যাট ম্যান কর্নেল স্যার ?
‘জানি না। তার নাম শুনেছি। সে-ই নাকি ওলসন হাউসের কলগার্লদের গার্জেন।
‘ডিস্কো। গােয়েন্দা ভদ্রলােক আবার একচোট হাসলেন। তারপর আর একটিপ, নস্যি নিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেন, ‘আমার নেক্সট আইটেম ডিস্কো।
কর্নেল বললেন, সাবধান হালদারমশাই ! ডিস্কোকে আপনার লিস্টে রাখবেন । বরং আপাতত আপনি রাঙাটুলির কোনও হরনাথ সিংহকে নিয়েই থাকুন।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৮
হালদারমশাই তড়াক করে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর অভ্যাসমতাে যাই গিয়া’ বলে হন্তদন্ত বেরিয়ে গেলেন। ‘
বললাম, একটা কথা মাথায় ঢুকছে না। ডিস্কোর মতাে লােক যার গার্জেন, সে কেন প্রাইভেট ডিটেকটিভের সাহায্য নিতে গিয়েছিল ?
কর্নেল উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, সেটা আমারও মাথায় ঢুকছে না জয়ন্ত!
বলে উনি পাশের ঘরে চলে গেলেন। একটু পরে পােশাক বদলে কাধে একটা কিটব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে এলেন। চলাে জয়ন্ত! হালদারমশাইয়ের কথা শােনার পর আবার একবার ওলসন হাউসে যাওয়ার দরকার বােধ করছি। এক মিনিট। ইন্দ্রজিৎবাবুকে ফোনে পাই নাকি দেখি।
কর্নেল ফোন ডায়াল করে সাড়া পেয়ে বললেন, ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জির সঙ্গে কথা বলতে চাই।…বেরিয়েছেন ? কখন ? … কিছু বলে যাননি? …..ঠিক আছে। ফিরলে বলবেন কর্নেল সরকার ফোন করেছিলেন’….
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -৮
গাড়িতে যেতে যেতে বললাম, চন্দ্রিকার পার্সটা আপনি খুলে দেখলেন না। ওর ভেতর একটুকরাে কাগজে কোড ল্যাংগুয়েজে কী সব লেখা আছে। ফোনে আপনাকে বলেছিলাম।
কর্নেল একটু হেসে বললেন, পার্সটা নিয়েই যাচ্ছি। ‘সে কি ? ‘ও নিয়ে চিন্তা কোরাে না ডার্লিং। মেয়েদের পার্স সম্পর্কে বেশি চিন্তা করা ঠিক নয়।
বিরক্ত হলেও কিছু বললাম না। কিছুক্ষণ পরে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে একটা বাড়ির সামনে কর্নেলের নির্দেশে গাড়ি থামালাম। বাড়ির সামনে একটা পুলিশভ্যান দাঁড়িয়েছিল। বাড়ির দরজাটা পাশের একটা সংকীর্ণ গলির দিকে। সামনের অংশটায় কয়েকটা দোকান। সেগুলাে এখন খুলে গেছে। টিভি ইলেকট্রনিক গ্যাজেট এবং পুরনাে গ্রামােফোন রেকর্ডের দোকান, টেলারিং শপ ইত্যাদি।
গলিতে ঢুকলে বাড়ির দরজা থেকে এক পুলিশ অফিসার এসে কর্নেলকে অভ্যর্থনা জানালেন। সহাস্যে বললেন, আপনি চলে যাওয়ার পরই বডি মর্গে চলে গেছে।’
Read More