ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন নিবেন কিভাবে

পা মানব দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । ডায়াবেটিস রোগের কারণে পায়ে নানা প্রকার অসুবিধা দেখা দিতে পারে । স্নায়ুতন্ত্রের অকার্যকারিতা ও রক্ত সরবরাহের অসুবিধার কারণে পায়ের অনুভূতিশক্তি কমে যায় এবং পায়ে আঘাত লেগে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে । এর ফলে পায়ে পচনশীল ঘা হতে পারে, ফলশ্রুতিতে পা কেটে ফেলতে হয় । সকল ডায়াবেটিস রোগীকে তাই পায়ের বিশেষ যত্ন নিতে হয় ।ডায়াবেটিস রোগীর

পায়ের যত্নের তিনটি মূল নীতি

  • পায়ে যেন কোন ক্ষত না হয় বা কোন আঘাত না লাগে
  • পা যেন সকল সময় পরিস্কার ও শুকনা থাকে
  • পায়ে কোন অসুবিধা দেখা দিলে বা সংক্রামক রোগ হলে অবহেলা না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী ।

পায়ের অসুবিধা এড়াতে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিতঃ

  • খালি পায়ে হাঁটবেন না । নরম ও পরতে আরাম লাগে এমন জুতো পরে হাঁটবেন মোজা না পরে কখনোই খালি পায়ে জুতো পরবেন না ।
  • পায়ে অত্যধিক গরম পানি ঢালবেন না ।
  • পায়ে যেন কোন আঘাত না লাগে বা ক্ষত না হয় । পায়ের রঙের কোন পরিবর্তন চোখে পড়লে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন ।
  • নিয়মিত পায়ের বাড়তি নখ কাটাবেন, নখ কাটার সময় বিশেষভাবে সাবধানতা অবলম্বন করবেন, যাতে আঙ্গুলে আঘাত না লাগে ।
  • পায়ের কড়া নিজে কাটবেন না । ময়লা বা ভিজে মোজা পরবেন না ।
  • রক্ত চলাচলের জন্য রোজ নিয়মিতভাবে পায়ের ব্যায়াম করবেন না ।
  • প্রতিদিন ভালভাবে পা ধুয়ে শুকনা কাপড় দিয়ে পা মুছে ফেলবেন । পায়ের দুই আঙ্গুলের মাঝের জায়গা যেন ভিজে না থাকে ।
  • ভালভাবে দেখার জন্য আয়না ব্যবহার করতে বা অন্যের সাহায্য নিতে পারেন ।

দাঁত ও মাড়ির যত্ন :

মাড়ির যত্ন না নিলে মাড়িতে ঘা হয়, ধীরে ধীরে দাঁত মাড়ি থেকে আলাদা হয়ে হয়ে যায় এবং অবশেষে দাঁতটি পড়ে যায় বা ফেলে দিতে হয়  –  রোগটির নাম মড়িওডেন্টাল রোগ বা মাড়ির রোগ । ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মাড়ির এই ঘা বেশী হয় এবং দাঁতের সাহায্যে খাদ্য চিবিয়ে খাওয়ার শক্তি কমে যায় । অনেক ক্ষেত্রে দাঁতের মধ্যে ক্ষয় রোগ বা ডেন্টাল ক্যারিজ হতে পারে, যা দাঁতকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয় । মাড়ির ঘা থাকলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ অসুবিধা হয় এবং অনেক সময় ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস হতে পারে ।

দাঁত ও মাড়ির যত্নের জন্য :

  • নিয়মিত সকালে নাস্তার পর ও রাতে ঘুমাবার আগে দুইবার পরিস্কার করা প্রয়োজন । দাঁত ও মাড়ি পরিস্কার করার জন্য উপযুক্ত মাধ্যম হচ্ছে টুথব্রাশ ও টুথপেষ্ট, তবে নিমের ডালকেও ব্রাশের মতো করে কেটে নিয়ে দাঁত ও দাঁতের মধ্যবর্তী স্থান থেকে খাদ্যকণা বের করে পরিস্কার করা যায় ।
  • দাঁত ব্রাশ করার পর অন্তত এক মিনিট আঙ্গুলের সাহায্যে মাড়ি মালিশ করা প্রয়োজন, তাতে মাড়ির রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং মাড়ি শক্ত ও মজবুত হয় ।
  • দাঁতে কখনো গর্ত বা কালো দাগ দেখা দিলে এবং মাড়ি থেকে সামান্য আঘাতে রক্ত বের হলে অবহেলা না করে ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নেওয়া ভালো ।
  • পান, সুপারি এবং সেই সাথে জর্দা, চুন এবং ধূমপান মাড়ির রোগকে আরও বেশী ত্বরান্বিত করাতে পারে । সুতরাং ঐ সমস্ত অভ্যাস ডায়াবেটিক রোগীদের অবশ্যই ছেড়ে দেওয়া উচিত ।
  • নিয়মিত দাঁত ও মাড়ির যত্ন নিলে এই সমস্ত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব, তবে প্রতি বৎসর একবার দাঁত ও মুখ পরীক্ষা করালে প্রাথমিক অবস্থাতেই রোগ ধরা পড়তে পারে এবং সহজ চিকিৎসায় তা নিরাময় করা যেতে পারে ।

প্রস্রাব পরীক্ষার নিয়ম :

বেনেডিক্টস সলিউশন দিয়ে প্রস্রাব পরীক্ষা প্রয়োজনঃ

১) বেনেডিক্টস সলিউশন  (কোয়ালিটেটিভ)

২) টেষ্ট টিউব

৩) টেষ্ট টিউব হোল্ডার

৪) ড্রপার

৫) ৫ মিলি লিটার মাপের চামচ

৬) স্পিরিট ল্যাম্প বা যে কোন চুলার আগুন ।

নিয়মঃ  একটি টেষ্ট টিউবে ৫ মিলি লিটার মাপের এক চামচ বেনেডিক্টস সলিউশন (কোয়ালিটেটিভ) নিয়ে তাতে ৮ ফোটা প্রস্রাব মেশান । একটু নাড়াচাড়া করুন এবং ফুটিয়ে নিন (মনে রাখবেন, ৫/৭ বার যেন ফুঠে ওঠে) । প্রস্রাবের শর্করা থাকলে রঙের পরিবর্তন হবে । প্রস্রাব শর্করামুক্ত থাকলে রঙের কোন পরিবর্তন হবে না । রঙ নীল থাকবে, যা বেনেডিক্টস সলিউশন রঙ ।

বিশেষ স্ট্রিপ দিয়ে প্রস্রাব পরীক্ষাঃ

গ্লুকোটেষ্ট, মেডিটেষ্ট, ইউরিষ্টিক্স, ডায়াষ্টিক্স প্রভৃতি প্রস্রাব পরীক্ষা স্ট্রিপ দিয়েও সহজে প্রস্রাব পরীক্ষা করা যায় ।

নিয়মঃ  বোতল থেকে একটা স্ট্রিপ বের করুন এবং সাথে সাথে বোতলের ছিপি বন্ধ করুন । কাঠির এক প্রান্তে যে অংশটুকুতে ঔষধ লাগানো আছে (পরীক্ষণ ভাগ) সে অংশটুকু প্রস্রাবে ডুবিয়ে উঠিয়ে নিন । ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে পরীক্ষণ ভাগের রং বোতলের বাহিরের গায়ে লাগানো রঙের চার্টের সাথে মিলিয়ে দেখুন এবং প্রস্রাবে শর্করার পরিমাণ জেনে নিন । প্রস্রাবে শর্করা না থাকলে রঙের কোন পরিবর্তন হবে না । প্রত্যেক কাঠির বাক্সের সাথে একটা নির্দেশিকা থাকে, প্রস্রাব পরীক্ষার সময় নির্দেশিকাটি ভাল করে পড়ে নিন ।

নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা করুন এবং ফলাফল প্রস্রাব পরীক্ষার বইতে লিখে রাখুন ।

নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষার সুবিধা :

  • আপনার রোগের অবস্থা আপনি বুঝতে পারবেন ।
  • দায়িত্ব নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনি আরও আগ্রহী হয়ে উঠবেন ।
  • রোগের অবস্থা বুঝে ঔষধের পরিমাণ ঠিক করে নিতে পারবেন । প্রাথমিকভাবে নিজেই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভালভাবে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন ।

শুধু প্রস্রাব পরীক্ষা করে নিজেই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভালভাবে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন, যদিও ডাক্তারের পরামর্শ মতো মাঝে মাঝে রক্তের শর্করার (গ্লুকোজ) পরিমাণ পরিমাপ করতে হবে ।

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *