তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(১৩) হুমায়ূন আহমেদ

এরা জোকের মত লেগে 

থাকেনা কিনে উপায় নেই। 

তিথি মারুফকে বলল, এই, ফুলওয়ালীর হাত থেকে আমাকে বাঁচাও তােঅসহ্য লাগছেশাড়ি ধরে টানছে, গায়ে হাত দিচ্ছে। 

তিথির নীল তোয়ালে

মারুফ পেছন ফিরে ফুলওয়ালীর দিকে তাকিয়ে হাসলকিছু বলল নাফুলওয়ালী এতে আরাে উৎসাহ পেলযদিও তার বাড়তি উৎসাহের প্রয়ােজন ছিল না। 

তিথি বলল, মারুফ তুমি কি দয়া করে একটা রিকশা নেবে? এই ভিড়ে আমি হাঁটতে পারছি না। 

আর একটুএই রােড়ের শেষ মাথা পর্যন্ত গিয়েই রিকশা নেব। 

এখন নিতে অসুবিধা কি?” 

কোন অসুবিধা নেইএরকম ভিড়ের রাস্তায় তাে আর হঁটব নাশেষ হাঁটা হেঁটে নিচ্ছিএই দেশের ভিড়েরও যে এমন সৌন্দর্য আছে তা আগে লক্ষ্য করিনি। 

কি সৌন্দর্য? আমি তাে কোন সৌন্দর্য দেখছি নাআমি শুধু দেখছি লােকজন এসে আমার ঘাড়ে পড়ে যাচ্ছে। 

মারুফ বলল, শুধু যে লােকজন আমাদের ঘাড়ে পড়ে যাচ্ছে তা নাআমরাও লােকজনদের ঘাড়ে পড়ে যাচ্ছি এবং নির্বিকার ভঙ্গিতেই পড়ছিএসো এখন রিকশা নেয়া যাক। 

ফুলওয়ালী মেয়েটা নেইএতক্ষণ পেছনে পেছনে এসে হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেলতিথি ভেবে রেখেছিল ফুলওয়ালীকে পাঁচটা টাকা দেবেমেয়েটা এতক্ষণ যখন লেগেছিল তখন আরেকটু কেন থাকল না

মারুফ বলল, তুমি এইখানে পঁাড়াও আমি ওপাশ থেকে রিকশা ঠিক করে নিয়ে আসি। 

আমিও যাই তোমার সঙ্গে? না নাতুমি গেলে হবে না। মেয়েছেলে সঙ্গে দেখলেই বেশি ভাড়া চাইবেঅল্প কয়েকটা টাকা বাঁচাবার জন্যে এত কষ্ট করার দরকার কি? অল্প কয়েকটা টাকাইবা শুধু শুধু দেব কেন?” 

মারুফ রাস্তা পার হল, সে সাবধানী চোখে রিকশা খুঁজছেযে কোন একটা রিকশা নিলেই হয় নারিকশাওয়ালা দেখে বিচারবিবেচনা করে ভাড়া ঠিক করতে হয়রিকশাওয়ালা এখানে মানুষ না, ইনজিনযে ইজিন গাড়ির বনেটের ভেতর ঢাকা থাকে না, চোখের সামনে দেখা যায়এমন একটা ইনজিন খুঁজে বের করতে হবে যে ক্লান্ত না হয়ে দীর্ঘ সময় প্যাডেল ঘুরাবেযার কৌতূহল প্রায় থাকবেই 

নাযে পেছনে ফিরে তাকাবে নাপেছনে কি কথাবার্তা হচ্ছে তা শােনার চেষ্টা করবে না| তিথি দাঁড়িয়ে আছে তাে দাঁড়িয়েই আছেমারুফের রিকশা আর ঠিক হচ্ছে নাসামান্য একটা রিকশা ঠিক করতে কারাের এতক্ষণ লাগে

রােদ কড়া হয়ে উঠেছেআলাে চোখে লাগছেতিথি তার হ্যাণ্ডব্যাগ খুললআছে সানগ্লাসটা আছেসাধারণত দেখা যায়, যেদিন সানগ্লাসটার সবচেবেশি দরকার সেদিনই সেটা আনা হয় নামারুফ মনে হয় শেষ পর্যন্ত রিকশা ঠিক করতে পেরেছেতিথি সানগ্লাস পরে অপেক্ষা করছে। 

রিকশার হুড ফেলামারুফের হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। অন্যসময় সিগারেটের ধোঁয়ার পাশে বসতে খারাপ লাগেআজ লাগছে নাএমন কি সিগারেটের কটু গন্ধটাও ভাল লাগছে। 

মারুফ বলল, তিথি শােনখুব মন দিয়ে শােনআমার জরুরী কথাগুলি আমি এখন বলব। 

রিকশায় বসে বলার দরকার কি? কোথাও গিয়ে বসি, তারপর বলনা, রিকশাতেই শােনজরুরী কথা চলন্ত অবস্থাতে শােনাই ভাল। 

পঁড়াও, সিগারেটটা শেষ করে নিইতারপর বলি। 

তিথি লক্ষ্য করল, মারুফকে কেমন যেন চিন্তিত লাগছেজরুরী কথা সে কি বলবে তা তিথি আঁচ করতে পারছেএই কথার জন্যে তাকে চিন্তিত হতে হবে কেন

তিথি শােন শুনছি। 

আমার হাতে সময় খুব অল্পরিকশাতেও বেশি সময় তােমার সঙ্গে থাকতে পারব না, আবার দেশেও বেশি দিন নেইবুঝতে পারছ

পারছি। 

যে স্কলারশীপ নিয়ে যাচ্ছি সেটাও গরীবি ধরনের স্কলারশীপটাকা জমিয়ে যে একবার দেশে আসব সে উপায়ও নেইকাজেই দেশ ছেড়ে বাইরে থাকব প্রায় চার বছরের জন্যেএই সময়টা আমার জন্যে অল্প সময় নাআনেকখানি সময়। 

তো বটেই। 

আমি চাই যে, যাবার আগে বিয়ে করে তারপর যাবযাতে আমার স্ত্রী আমি যাবার তিনচার মাসের ভেতর আমার সঙ্গে জয়েন করতে পারে। 

আইডিয়া ভালসবচেভাল হয় সে যদি একসঙ্গে তােমার সঙ্গে যেতে পারত। 

সেটা অবশ্যই ভাল হত কিন্তু প্রথম কথা হচ্ছে এই মুহূর্তে আমার কাছে একটা বাড়তি টিকেট কেনার টাকা নেইকারণ আমার নিজের টিকেটই নিজেকে কিনতে হচ্ছে” 

ওরা টিকেট কেনার টাকা দিচ্ছে না

নাপেঁৗছার পর ওরা টিকেটের টাকাটা রিইম্বার্স করবে, তার আগে নাআচ্ছা। 

মারুফ আরেকটা সিগারেট ধারতে ধরাতে বলল, তিথি, এখন আমি আমার বক্তব্যের শেষ অংশে চলে এসেছি মন দিয়ে শোন। 

শুনছি। 

আমাকে বিয়ে করলে করতে হবে চার থেকে পাঁচদিন সময়ের মধ্যেলােকজনকে খবর দিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে ফরম্যাল বিয়ে করব সেটা সম্ভব নাবুঝতে পারছ

পারছি। 

বিয়ের কথা বলার জন্যে একশবার তােমার বাবামার সঙ্গে দেখা করা, তাদের বুঝানো তাও সম্ভব নাপুরাে ব্যাপারটা তােমাকেই ম্যানেজ করতে হবেতুমি তােমার বাবামা, আত্মীয়স্বজন সবাইকে বলে ঠিকঠাক করে রাখবেএকজন কাজীকে খবর দিয়ে রাখবেআমি যাব আর বিয়ে করে চলে আসবএটা কি সম্ভব হবে?’ 

তিথি বলল, হবেতুমি এত টেন্স হয়ে থেকো না তােতােমাকে দেখে মনে হচ্ছে কি ভয়াবহ সর্বনাশ হয়ে গেছেসব ব্যবস্থা আমি করে রাখবতােমাকে কিছু ভাবতে হবে না। 

মারুফ বলল, আর ধর, তােমার বাবামা, আত্মীয়স্বজন এরা যদি রাজি না হল তাহলে আমরা কোটে বিয়ে করবকি বল

কেউ অরাজি হবে নাআমি যা বলব তাই হবে। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *