তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(১৭) হুমায়ূন আহমেদ

 মা দিয়ে নাম শুরু হলে ছেলে হবে হৃদয়বানদুধটা খেয়ে শেষ কর গ্লাস হাতে নিয়ে বসে আছ কেন

তিথির নীল তোয়ালেজাফর সাহেব এক চুমুকে দুধ শেষ করলেনতাকে এখন খুব আনন্দিত বলে মনে হচ্ছেতিথি বলল, তুমি কিন্তু এখনাে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও নি। 

তুই আবার কি প্রশ্ন করেছিস?” 

এই যে বললাম আমি যদি আমার পছন্দের একটা ছেলেকে বিয়ে করি তুমি রাগ করবে কিনা। 

‘রাগ করব কেন?বিয়েটা যে খুব তাড়াতাড়ি হওয়া দরকার সেটা কি বুঝতে পারছ?না তাড়াতাড়ি হওয়া দরকার কেন?” 

বিয়ে করে তারপর যেতে চায়যাতে চলে যাবার কিছুদিনের মধ্যেই আমি ওর কাছে চলে যেতে পারিএখন বুঝতে পারছ ?” 

পারছিভালই হল কাল সিলেট গিয়ে তাের মাকে নিয়ে আসিব্যবস্থা ট্যাবস্থা করুকছেলের আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গেও আমার কথা বলা দরকারমামুনকে বললে কি তার বাবাকে নিয়ে আসতে পারবে না

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(১৭) হুমায়ূন আহমেদ

মামুন না বাবা মারুফসরিমারুফ। ওকে বল যেন ইমিডিয়েটলি ওর বাবাকে খবর দিয়ে নিয়ে আসে‘ 

ওকে বলতে পারব না বাবাএখন দেশের বাড়িতে গেছে আত্মীয় স্বজনসবার কাছ থেকে বিদায় নিবে। 

আসবে কবে? ‘তাওতাে বলতে পারছি নাদুতিন দিন নিশ্চয়ই লাগবে। 

জাফর সাহেব উৎসাহের সঙ্গে বললেন নাে প্রবলেম তুই চিঠি লিখে দেনুরুজ্জামান গাধাটা চিঠি নিয়ে ওর বাড়িতে চলে যাকওতাে বসেই আছে। 

ওর বাড়ির ঠিকানা জানি না বাবাতাহলেতাে প্রবলেম হয়ে গেলকোন প্রবলেম নেইতুমি নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাওকাল কি আমরা সিলেট যাচ্ছি?হা যাচ্ছি। 

সকালের ট্রেনে চলে যেতে পারলে হততাের মাসঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আলাপ করা দরকারএখন কি টেলিফোনে কথা বলব

এখন টেলিফোনে কথা বলার দরকার নেইঅনেক রাত হয়ে গেছেএত রাতে টেলিফোন করলে মা রাগ করবেতাছাড়া আমরা হঠাৎ উপস্থিত হয়ে মাকে তো সারপ্রাইজ দেবইআগে ভাগে কথা বলে সেই সারপ্রাইজ নষ্ট করা ঠিক নাবাবা তুমি শুয়ে পড়। 

জাফর সাহেব শুয়ে পড়লেনতিথি রান্নাঘরে ঢুকে চা বানালতার ক্লান্তি হঠাৎ করে কেটে গেছেএখন কিছুক্ষণ বারান্দায় বসে থেকে চা খাওয়া যায়আজ  

আকাশে চঁাদের অবস্থাটা কি কে জানে

চাটা চমৎকার হয়েছেকাপ শেষ হবার পর মনে হল বিরাট মগভর্তি এক মগ চা বানালে ভাল হতঅনেকক্ষণ ধরে খাওয়া যেতটেলিফোন বাজছেএত রাতে কে টেলিফোন করবে? আজে বাজে কল না তাে ? ইদানিং গভীর রাতে দুষ্ট প্রকৃতির কিছু লােকজন টেলিফোন করে বিরক্ত করে। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(১৭) হুমায়ূন আহমেদ

তিথি ভয়ে ভয়ে বললাে, হ্যালাে। 

পাশ থেকে মারুফ বলল, তিথি জেগে আছ? সেকি তুমি দেশে যাও নি?” 

কেন?” 

যাবার জন্যে ব্যাগ গুছিয়ে ঘর থেকে বের হয়েই দেখি পিতাজীরিকশা থেকে নামছেন

কে নামছেনআমার বাবাআচ্ছাউনি কি এখন ঢাকায়?হ্যা ঢাকায়কোথায়? তােমার এখানে? ‘া আমার এখানেইদিন থাকবেন বলতাে?” 

কয়েকদিন নিশ্চয়ই থাকবেনকেন বলতাে?” 

তিথি আনন্দিত ভঙ্গিতে বলল, আমি বাবাকে সব কথা বললামবাবা উনার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেনভালই হয়েছে উনি এখন ঢাকায়তুমি কি কাল ভােরে তাকে আমাদের এখানে নিয়ে আসবে? আমরা এক সঙ্গে সকালে নাশতা খাবমারুফ চিন্তায় পড়ে গেলবাবাকে নিয়ে হঠাৎ এই সমস্যা হবে সে বুঝতে পারে নিএকটা মিথ্যা ঢাকতে এখন পরপর অনেকগুলি মিথ্যা বলতে হবেপ্রতিটি মিথ্যাই খুব গুছিয়ে বলতে হবেযেন যুক্তিতে কোন খুঁত না থাকে। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(১৭) হুমায়ূন আহমেদ

হ্যালাে কথা বলছ না কেন? নিয়ে আসতে পারবে সকালে?পারারতাে কথাতবে আমি নিশ্চিত নানিশ্চিত না কেন

বাবা এসেই অকারণে আমার সঙ্গে ঝগড়া করলেননিতান্ত ফালতু বিষয় নিয়ে হৈ চৈরাগারাগিআমি নাকি ছমাস ধরে তার চিঠির কোন জবাব দিচ্ছি নাশেষ পর্যন্ত চিন্তিত হয়ে তাঁকে চলে আসতে হয়েছে। 

চিন্তিত হওয়াটাই তাে স্বাভাবিকতুমি মাস চিঠি দেবে না আর উনি চিন্তিত হতে পারবেন না ?। 

অবশ্যই চিন্তিত হতে পারবেন তবে তার মানে এই না যে তিনি রিকশাওয়ালার সামনে আমাকে গাধা বলবেন। 

তিথি হাসতে হাসতে বলল, উনার স্বভাবও দেখি আমার বাবার মতআমার বাবাও রেগে গেলে এমন গালাগালি করেনতবে তার রাগ অবশ্যি বেশিক্ষণ থাকে

বাবার রাগ ভাদ্র মাসের বৃষ্টির মত ক্ষণ স্থায়ী। 

আমার বাবারটা স্থায়ীআমার উপর রাগ করেই রাতে ভাতটাত না খেয়ে ঘুমুতে গেছেনঘুম আসছে নাপেটে প্রচণ্ড ক্ষিধে ঘুম আসার কথা নাএপাশ ওপাশ করছেনতিনি তাঁর ব্যাগ গুছিয়ে মাথার কাছে রেখে দিয়েছেনএটা হচ্ছে বিশেষ এক লক্ষণ বাবা ফজরের নামাজ পড়েই বাসা ছেড়ে চলে যাবেন। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(১৭) হুমায়ূন আহমেদ

বল কি ? আমি প্রাণপন চেষ্টা করব উনাকে আটকে রাখতেযদি পারি তাহলে অবশ্যই সকাল আটটার মধ্যে তােমাদের বাসায় এনে উপস্থিত করবযদি না পারি তাহলে আমি নিজেই আসবতাতে কাজ হবে

হা হবেতােমাকে যে জন্যে টেলিফোন করেছিলাম সেটাইতাে বলা হয় নিকি জন্যে টেলিফোন করেছ ?চার লাইনের কবিতা শুনাতে চেয়েছিলাম শােনাওথাক এখন নাকাল সকালে যখন আসব তখন শােনাব। 

না এক্ষুণী শুনাওনিঝুম রাতের জ্যেৎস্না এসে স্মৃতির ভাড়ার লােটে 

ফাগুন হাওয়ায় সিঁদকাঠিটা বুকের মধ্যে ফোটে হৃদয় ফেটে কাব্য ঝরে ব্যথার শােনিত পারা রূপকথা নয়, রূপকথা নয়, এই জীবনের ধারা। 

জাফর সাহেব আটটার আগেই অফিসে চলে যানআজ সাড়ে টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেনছেলের বাবা আসবে তাঁর সঙ্গে কথা বলা দরকারকি কি বলবেন তাও গুছিয়ে রেখেছেনতিনি বলবেন, ছেলে চলে যাবে মেয়ে একা থাকবে এটা তার পছন্দ নাদুজন এক সঙ্গেই যাকটিকিটের টাকা তিনি দেবেনএটা কোন ব্যাপার। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(১৭) হুমায়ূন আহমেদ

তঁার ক্ষিধে লেগেছেএখনাে নাশতা করেন নিমেহমানদের সঙ্গে নিয়ে নাশতা করবেন এই ভেবে রেখেছেন। 

তিথি বলল, তুমি খেয়ে নাও বাবাতারা বােধহয় আসবেন নাআসবে না কেন?

বাবা আর ছেলের মধ্যে রাগারাগি হয়েছেমনে হয় বাবার রাগ ভাঙ্গানাে যাচ্ছে তুমি খেয়ে নাও। 

ওরা যদি এসে দেখে আমরা নাশতা টাশতা খেয়ে বসে আছি সেটা কি একটা নিতান্তই অনুচিত কাজ হবে না?

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *