তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(১৯) হুমায়ূন আহমেদ

কিছুদিন এই ভাবে থাকার পর লােকলজ্জার ভয়েই হােক কিংবা মেয়েদের কারণেই হােক আবার তোমরা একত্রে থাকা শুরু করতে পারবে। 

তিথির নীল তোয়ালে

শায়লা এটা চায়?” 

সে যা চায় তা ভয়াবহসে চায় ডিভাের্সতারতাে এম্নিতেই মাথা গরমউকিল ডেকে এনে হুলুস্থুল কাণ্ড ! বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাকে এটাতে রাজি করিয়েছি” 

আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে

শায়লা তােমাকে একটা চিঠি দিয়েছেচিঠি আমার সঙ্গেই আছেচিঠিটা পড়চিঠিতে সব লেখা আছেআমি নিজেও পড়েছিউচিত হয়নি, তবু পড়লাম। 

সম্বােধন হীন চিঠিইংরেজিতে লেখাজাফর সাহেবের মনে হল তিনি অপরিচিত কোন মেয়ের লেখা চিঠি পড়ছেনতার পা কাঁপতে লাগলশায়লা এসব কি শুরু করেছেশুরুর লাইনটি হল – 

I always longed for Love, never got it... আমি সবসময় ভালবাসার জন্যে তৃষ্ণিত ছিলাম, কখনো তা পাইনিতুমি আমার জীবনে রােবট স্বামী হিসেবে এসেছআমাদের দুজনের মধ্যে সামান্যতম মিলও ছিনাআমি বেড়াতে পছন্দ করি, তুমি ঘরে বসে থাকতে পছন্দ করআমি গাভালবাসি গান শুনলে 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(১৯) হুমায়ূন আহমেদ

তােমার মাথা ধরে যায়তােমার সঙ্গে থেকে থেকে আমার নিজের জীবনটাও রােবটের মত হয়ে গেছেতুমি আমাকে বদলে দিয়েছআমি তােমাকে বদলাতে পারি নিবরং আমি তােমার মধ্যে ক্রোধ ঘৃণা এইসব নিম্নস্তরের আবেগ তৈরী করেছি যা বেড়ে বেড়ে এখন এই পর্যায়ে এসেছে যে তুমি আমার গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা করছ নাগায়ে হাত তােলার ব্যাপারটি যে এবারই প্রথম ঘটেছে তা নাআগেও ঘটেছেতােমার মনে নেইসেই সময় তুমি রাগে ন্ধ হয়ে থাকএমন রাগের মুহূর্তে মানুষ স্মৃতি শূন্য হয়ে ড়েসে কি রে 

করে তা সে বলতে পারে নাপ্রচণ্ড রাগ তােমার আগে ছিল নাযতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছেআমার জন্যেই যে বাড়ছে তাও আমি বুঝতে পারছিআমিতাে নির্বোনইকোনকালে ছিলাম নাবিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত তুমি কখনাে আমাকে ভালবেসেছ বলে আমি মনে করি নাতুমি আমাকে হ্য করে গিয়ে এই পর্যন্ত। এখন তাও পারছ না। পরে কি হবে ভাবতেও আমার ভয় হচ্ছে । কাজেই আমি মনে করি “আর কখনােই আমরা একত্রে বাস করব 

” এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত দু’জনের জন্যেই মঙ্গল জনক হবে। যে ফ্ল্যাট বাড়িতে আমরা বাস করছি তুমি নিশ্চয়ই জান সে ফ্ল্যাট বাড়ি আমার টাকার কেনা। আমার বাবা আমাকে যে টাকা দিয়েছেন সেই টাকায়। কাজেই এ বাড়িতে তােমার কোন অধিকার থাকার কথা না। তুমি অন্য কোথাও চলে যাবে। আমাদের টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করার তােমার প্রয়ােজন নেই। আমার যা আছে তা দিয়ে আমি আমার মেয়েদের নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারব। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(১৯) হুমায়ূন আহমেদ

সাইদুর রহমান বললেন, চিঠি পড়েছ

শায়লার সঙ্গে আমার অনেক কথা হয়েছেসেই সব আর তােমাকে বলতে চাচ্ছি নাতােমার কিছু বলার আছে কি না বল। 

নাবেশ আমি তাহলে উঠবযাবার আগে এক কাপ চা খেয়ে যাবেন বলেছিলেনদিতে বলিনা থাকচিঠিটা টেবিল থেকে পড়ে গেছেতুলে রাখএই চিঠি অন্যের হাতে 

যাওয়া ঠিক নাতিথি দুপুরে বাবার কাছে এসে দেখে জাফর সাহেব গম্ভীর মুখে বসে আছেনতিথি বলল, কি হয়েছে বাবা

জাফর সাহেব চোখ তুলে তাকালেনমনে হল মেয়েকে চিনতে পারছেন নাতিথি বলল, তােমার কি হয়েছে বাবা? কিছু হয়নিআমি ছবি নিয়ে এসেছিকিসের ছবি?পাসপাের্ট সাইজ ছবি। 

আচ্ছা, আচ্ছাচল যাই ... ট্রেনের টিকিট করেছ? না, টিকিট করা হয়নিকখন করবে? শরীরটা ভাল লাগছে নাযেতে ইচ্ছে করছে নাতুমি যাবে না? জাফর সাহেব ইতস্ততঃ করে বললেন, এক কাজ করতুই চলে যা। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(১৯) হুমায়ূন আহমেদ

আমি একা যাব? হ্যাফাস্ট ক্লাসে যাবিদরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকবিঅসুবিধা কি? গাধাটাকে সঙ্গে করে নিয়ে যা। 

তুমি সত্যি যাবে না

ঠিক করে বল তাে তােমার কি এর মধ্যে মাসঙ্গে কোন কথা হয়েছে

আমার দিকে তাকিয়ে বলঅন্যদিকে তাকিয়ে বলছ কেন? কথা হয়েছে মাসঙ্গে?‘ 

জাফর সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত গলায় বললেন, না, কোন কথা হয়নিচল যাইদুটার সময় অফিস বন্ধ করে দেয়। 

তােমাকে অন্য রকম লাগছেকি হয়েছে বল তাে?কিছু হয়নিকিছু হয়নি। 

পাসপাের্ট অফিসের কাজ সেরে জাফর সাহেব বললেন, চল, তাের সঙ্গে খানিকক্ষণ ঘুরিআজ আর অফিসে ফেরত যাব না। 

তিথি বিস্মিত হয়ে বলল, আমার সঙ্গে কোথায় যাবে

তােরা কোথায় কোথায় বেড়াতে যাস তা তাে জানি নাতুই আমাকে কোথাও নিয়ে যাতার আগে চল কোথাও খেতে যাই‘ 

তুমি তাে দুপুরে কিছু খাও না। ‘আজ খাবখিদে লেগেছেচাহনীজ খাবে?” 

তুমি সত্যি তাহলে সিলেট যাবে না? নাতুই যাগাধাটাকে সাথে করে নিয়ে যাতুমি একা একা থাকবে ? এক দিনেরই তাে ব্যাপার। তাের তাে চলেই আসবিআমিও থেকে যাই। মাকে টেলিফোন করে আসতে বলি। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(১৯) হুমায়ূন আহমেদ

টেলিফোন করলে আসবে নাতােকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবেআমাকে যেভাবে সব গুছিয়ে বললি, তাের মাকেও সেইভাবে বলবিতারপর সঙ্গে করে নিয়ে আসবিনুরুজ্জামান গাধাটাকে খবর দেয়া দরকারগাধাটা এখন আছে কোথায়

দিনে কোথায় থাকে তা তাে বাবা জানি নাজিজ্ঞেসও করিনিরাতে ফিরে আসেহাতে করে দুটা আনারস ঝুলিেেয় আনেভাত খায় নাআনারস খায়। 

বলিস কি! সত্যি বাবা। 

তিথি মিট মিট করে হাসছেতিথির হাসি হাসি মুখের দিকে আনন্দ এবং বিস্ময় নিয়ে জাফর সাহেব তাকিয়ে আছেনবিস্ময়ের কারণ হল, তার মেয়ে যে এত সুন্দর করে হাসে তা তিনি আগে কখনাে লক্ষ্য করেন নিঅন্য মেয়ে দুটি কেমন করে হাসে কে জানে? এরাও কি তিথির মত সুন্দর করে হাসে

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *