তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(৯) হুমায়ূন আহমেদ

আমার একটু শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা দরকারকোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি আপা‘ 

আচ্ছা, আমি বলে দেবব্যবস্থা করে দেবেআপা, আপনার অনেক মেহেরবানীএখন পানিটা খাই। 

তিথির নীল তোয়ালে

নুরুজ্জামান এক নিঃশ্বাসে সরবতের গ্লাস শেষ করে বরফের টুকরা চিবাতে 

তিথির নীল তােয়ালে৩ 

লাগলদাঁত দিয়ে বরফ ভাঙার কচকচ শব্দ হচ্ছেভদ্রমহিলা বললেন, আরেক গ্লাস এনে দেই

জ্বি আচ্ছা। 

আপনি একটা কাগজে আপনার নামঠিকানা লিখে দিন। ও একটা পাশ দিয়ে রাখবেআপনি সেক্রেটারীয়েটে ঢুকে ওর সঙ্গে দেখা করবেননিশ্চয়ই ব্যবস্থা করবে। 

কবে ? আগামীকাল দশটায় আসুন। 

জ্বি নাআগামীকাল আসতে পারব নাআগামীকাল টিভিতে আমার একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথাউনার নাম কামরুদ্দিনউনি আমাকে একটা 

অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে দিবেনপাতার বাঁশিআমি পাতার বাশি বাজাই। 

আচ্ছাতাহলে একটা কাগজে আপনার নামটাম লিখে দিনকোন টেলিফোন নাম্বার কি আছে যাতে আপনার সঙ্গে যােগাযােগ করতে পারে

জ্বি আছে। 

টেলিফোন নাম্বার লিখে রেখে যানআপনার সঙ্গে কথা বলে একটা এপয়েন্টমেন্ট করবে। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(৯) হুমায়ূন আহমেদ

আপা, তাহলে উঠিআরেক গ্লাস পানি খাবার কথা না? বসুন, পানি নিয়ে আসি। 

তৃষ্ণা চলে গেছে আপা। 

নুরুজ্জামান হাসছেভদ্রমহিলাও হাসছেনবিদায় নেবার সময় ভদ্রমহিলাকে পুরােপুরি হকচকিয়ে দিয়ে নুরুজ্জামান তাকে কদমবুসি করে ফেললনুরুজ্জামানের পকেট থেকে সানগ্লাস, চাবির রিং এবং ভাংতি পয়সা গড়িয়ে পড়ল। 

তিথি দুপুরে দুজনের জন্যে ভাত বেঁধেছিলসে আর নুরুজ্জামানজাফর সাহেব দুপুরে বাসায় খেতে আসেন নাকেনটিন থেকে একটা স্যাণ্ডউইচ আর কলা এনে খান| নুরুজ্জামান দুপুরে আসেনিএক গাদা ভাত ফ্রীজে ঢুকিয়ে রাখতে হয়েছেফেলতে মায়া লাগছে বলেই ফ্রীজে ঢুকিয়ে রাখাসে ভাল করেই জানে শেষ পর্যন্ত ফেলে দিতে হবেফ্রীজের ভাত গরম করলে কেমন শক্ত হয়ে যায়চিবানো যায় নানতলায় কোন ভিখিরী আসে নাকাজেই ভিখিরীকে ভাত দিয়ে দেয়ারও প্রশ্ন আসে নাফ্রীজের ঠাণ্ডা ভাত গরম করারও হয়ত কোন কায়দা আছেসে তা। 

জানে নামা নিশ্চয়ই জানেনতিথি ঠিক করে রেখেছে মাকে টেলিফোনে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করবেএটা আসলে তার একটা অজুহাতমাসঙ্গে কথা বলার অজুহাত। 

টেলিফোন সেই যে কাল রাতে নষ্ট হয়েছে এখনাে ঠিক হয়নিপাশের ফ্ল্যাট থেকে মাকে টেলিফোন করতে হবেনীলক্ষেত এক্সচেঞ্জেও জানাতে হবেঅফিসে যাবার সময় বাবাকে বলে দিলে তিনি একটা ব্যবস্থা করতেনবাবাকে বলার কথা তিথির মনে পড়েনি। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(৯) হুমায়ূন আহমেদ

একা একা ভাত খাওয়ার মত খারাপ ব্যাপার আর হয় নাএকমাত্র পশুরাই খাবার একা খেতে পছন্দ করেমানুষ পারে না। 

দুপুরে তিথি খানিকক্ষণ ঘুমুলোঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখল, টেলিফোন ঠিক হয়ে গেছেমারুফ কথা বলছেমারুফ বলছে শােন তিথি, পশুর সঙ্গে মানুষের সবচেবড় তফাৎ হল মানুষ দলবল নিয়ে খেতে পছন্দ করেপশু তার খাবার নিয়ে একা একা চলে যায়এমনভাবে খায় যেন কেউ দেখতে না পারে। 

তিথি বলল, পাখিদের বেলায় কি হয়

পাখিদের জন্যেও একই ব্যাপারশুধু খাঁচায় বন্দি পাখিদের একসঙ্গে খেতে হয় কারণ তাদের উপায় নেইক্রিং ক্রিং ক্রিং। 

তিথি বলল, ক্রিং ক্রিং শব্দ হচ্ছে কেন? মারুফ বলল, বুঝতে পারছি নাবােধহয় তােমাদের বাসায় কলিংবেল বাজছেদরজা খুলে দেব?” 

দরজা খােলার কোন দরকার নেইতুমি ঘুমুতে থাকযে এসেছে সে খানিকক্ষণ বেল বাজিয়ে চলে যাবে। 

ক্রিং ক্রিং ক্রিং। 

তিথির ঘুম ভাঙলকলিং বেল না, টেলিফোন বাজছেঘুমের ঘাের তার এখনাে কাটেনিসে জড়ানাে গলায় বলল, হ্যালাে। 

ওপাশ থেকে শায়লা বললেন, তােদের টেলিফোন নষ্ট নাকি? সকাল থেকে টেলিফোন করছি, লাইন পাচ্ছি না। 

টেলিফোন নষ্ট ছিল নাএখন ঠিক হয়েছেতুমি কেমন আছ?” ভালশােন, আমরা সিলেট যাচ্ছিকবে?” 

আজ রাতের ট্রেনে, সুরমা মেলতাের ছােট মামার চা বাগান দেখে আসিতুই যাবি?” 

অবশ্যই যাব।” 

তাহলে তাের কাপড়চোপড় গুছিয়ে এখানে চলে আয়আমি এক ঘণ্টা পরে গাড়ি পাঠিয়ে দেবআমার ঘরে পরার কয়েকটা শাড়ি সঙ্গে নিয়ে আসবি আর কাবার্ডের নিচে রাখা স্যাণ্ডেল জোড়া আনবি। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(৯) হুমায়ূন আহমেদ

ইটালীয়ান স্যাণ্ডেল

দিন থাকবে?ঠিক নেইচারপাঁচ দিন থাকতে পারিবাবাকে তাহলে এক সপ্তাহের ছুটি নিতে বলি ?ওর ছুটি নেয়ানেয়ির কি আছে?বাবা কি সঙ্গে যাচ্ছে না?” 

না। 

তুই মনে হয় আকাশ থেকে পড়লিবাবা একাএকা থাকবে

হ্যা থাকবেসে কচি খােকা নাতাকে ফিডিং বােতল দিয়ে দুধ খাওয়াতে হয় না” 

বাবা একা থাকবে আর আমরা দল বেঁধে বেড়াতে যাব ? হ্যাতাহলে মা তােমরা যাও, আমি যাব তুই যাবি না?” 

নাএবং মা আমার মনে হয় তুমি বাড়াবাড়ি করছআমি বাড়াবাড়ি করছি নাতুই বাড়াবাড়ি করছিসআমি তাের বাবাকে একটা কঠিন শিক্ষা দিতে চাচ্ছি তাের জন্যে পারছি না। 

কঠিণ শিক্ষা শুধু বাবার একার হবে কেন? তােমারও তো হওয়া উচিততুই কি বললি?রাগ করাে না, মাযার যা ইচ্ছা আমাকে বলে যাবে আর আমি রাগ করব না

মা শােন, চল আমরা সিলেট থেকে ঘুরে আসিঅনেক দিন ফ্ল্যাট বাড়িতেথেকে থেকে আমাদের মনটন ছােট হয়ে গেছেবাইরে ঘুরলে ভাল লাগবেবাবাও আমাদের সঙ্গে যাকতুমি তার সঙ্গে কথা বলাে না তাহলেই হলতুমি এমন ভাব করবে যেন বাবা একজন অপরিচিত মানুষ। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(৯) হুমায়ূন আহমেদ

আমার সঙ্গে চাল চালবি না তিথি।। 

আমি কোন চাল চালছি না মা।” 

আমি তাের বাবাকে এমন শিক্ষা দেব যে সে তার নিজের নাম পর্যন্ত ভুলে যাবেতার এত বড় সাহস, সে আমার গায়ে হাত তুলে ...। 

এখন দেখি একবারে আঁৎকে উঠলিতাের বাবা এলে তাকে জিজ্ঞেস করিস, তারপর তুই তাের বাবার হয়ে ওকালতি করিসতার আগে না। 

তিথি চুপ করে রইল, টেলিফোনের ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ পাওয়া যাচ্ছেতিথি কি করবে বুঝতে পারছে নাতিথি নরম করে ডাকল, মা। 

কি? ফ্রীজের ঠাণ্ডা ভাত কি করে গরম করতে হয় ? জানি নাচুপ করশায়লা টেলিফোন নামিয়ে রাখলেন। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *