তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(৮) হুমায়ূন আহমেদ

বাঁশি বাজাবতুমি বাঁশি বাজাতে জান?পাতার বাঁশি স্যারদুটা পাতা ভাজ করে ঠোটের ভেতর দিয়ে ...‘ 

নুরুজ্জামানজ্বী স্যার। 

তিথির নীল তোয়ালে

আমি এখন অত্যন্ত জরুরি একটা কাজ করছিআমার মন মেজাজও ভাল নেই তুমি যাও। 

জ্বী আচ্ছা স্যার। 

জাফর সাহেব লক্ষ্য করলেন, নুরুজ্জামান তার কথায় দুঃখিতও হল নাঅপমানিত বােধ করল নাহাসি মুখে উঠে দাঁড়ালসহজ গলায় বলল, স্যার বাসায় ফিরবেন কখন

কেন?” 

বাসায় ফেরার সময়টা জানা থাকলে এখানে চলে আসতাম তারপর আপনার সাথে একসঙ্গে গাড়িতে চলে যেতামগাড়িতে চড়ার মজাই অন্যরকম। 

আমি পাঁচটার সময় বাসায় যাবজ্বী আচ্ছা স্যারআমি চলে আসব। 

জাফর সাহেবের মাথা দপদপ করছেজ্বর এসে গেছে কিনা কে জানেবমি বমি ভাব হচ্ছেঅতিরিক্ত মেজাজ খারাপ হলে তঁার এমন বমি বমি ভাব হয়। 

নুরুজ্জামান বলল, স্যার যাইস্লীমালিকুমওয়ালাইকুম সালাম। 

জাফর সাহেব ফাইল সামনে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেনমেজাজ এতই খারাপ যে ফাইলের দিকেও তাকাতে পারছেন নাঅথচ পুরাে ফাইল আজ দিনের মধ্যেই দেখে দিতে হবে। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(৮) হুমায়ূন আহমেদ

ঝা ঝা রােদে নুরুজ্জামান হাঁটছেএমন ভাবে হাঁটছে যেন এই শহরটা তার খুবই পরিচিততার প্রচণ্ড ক্ষিধে পেয়েছেদুপুরে এখনো কিছু খাওয়া হয় নিএক হােটেলে খেতে বসেছিলদাম শুনে বুক ধড়ফড় শুরু হলএক পিস মাছ কুড়ি টাকাভাত ফুল প্লেট পাঁচ টাকা পরের হাফ দু টাকা ডাল এক বাটি পঁাচ টাকাএকবেলা খেতেই বত্রিশ টাকা

অসম্ভব ব্যাপারকাজেই এক কাপ চা খেয়ে সে বের হয়ে এসেছেচায়ের দামও নিল দুটাকাটাকাটা একেবারে পানিতে পড়ে গেছেএতটুক কাপে এক কাপ চা এর দাম দুটাকা, পাগলের দেশ নাকি ? টেলিফোন করতে গিয়েও পাঁচ টাকা নষ্ট হলফার্মেসী থেকে টেলিফোন করেছিলএরা কল প্রতি তিনটাকা নেয়পাঁচ টাকার একটা নোট দিলতারা নােটটা রেখে দিয়ে বলল, ভাংতি নাইআরেক সময় এসে আরেকটা টেলিফোন করে যাবেনএখন যানবিরক্ত করবেন না। 

নুরুজ্জামান একবার ভাবল বলে, টাকাটা দিন আমি ভাংতি করে দেইশেষ পর্যন্ত বলল নাএই লােকের মুখ দেখে মনে হচ্ছে বললেও লাভ হবে না।। 

নুরুজ্জামান এখন যাচ্ছে মৌচাকের দিকে। 

ভরদুপুরে কারাের বাসায় উপস্থিত হওয়া ঠিক না, কিন্তু খবর পাওয়া গেছেকামরুদ্দিন সাহেব বাসায় খেতে যানতাঁকে ধরার এইটাই উৎকৃষ্ট সময়। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(৮) হুমায়ূন আহমেদ

নুরুজ্জামান দুটা আনারস কিনলএই সময় আনারস পাবার কথা নাঢাকা শহরের ব্যাপারট্যাপার সবই অদ্ভুতআনারস পাওয়া যাচ্ছে। 

বাচ্চা কাচ্চার বাসা, খালি হাতে যাওয়া ঠিক না। 

কামরুদ্দিন সাহেব বাসাতেই ছিলেনদুপুরের খাওয়া শেষ করে পান মুখে দিয়েছেনতার দুপুরে কিছুক্ষণ ঘুমানাের অভ্যাস এই সময়ে দরজা খুলতে হলনুরুজ্জামান হাসিমুখে বলল, স্যার চিনতে পারছেন? আমি নুরুজ্জামান। 

কামরুদ্দিন বললেন, কি ব্যাপার? বলেছিলেন ঢাকায় এলে যেন দেখা করিএখন তাে একটু ব্যস্ত আছিতাহলে স্যার পরে আসি?আচ্ছা আসুন, পরে আসুন। 

আমাকে চিনতে পারছেন তাে স্যার? পাতার বাঁশিবলেছিলেন একটা ব্যবস্থা করে দিবেন। 

বাচ্চাকাচ্চার জন্যে দুটা আনারস এনেছিলাম। 

কামরুদ্দিন বিরক্তমুখে আনারস হাতে নিলেননুরুজ্জামান বলল, কবে আসব স্যার

আসুন, কাল আসুনবাসায় না, অফিসে আসুনবাসায় লােকজন আসা আমি পছন্দ করি নাদশটার দিকে অফিসে আসুন। 

টিভি ভবনে ?হঁ্যাগেটে পাশ থাকবেনাম যেন কি বললেন

নুরুজ্জামানমুহম্মদ নুরুজ্জামানপাতার বাশি কি সঙ্গে করে নিয়ে আসব স্যার

আনুন। 

তাহলে আজ স্যার যাইকাল দেখা হবেআমি ঠিক দশটার সময় চলে আসব স্যার। 

আচ্ছাকামরুদ্দিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেনআগামী কাল তিনি টিভি ভবনে যাচ্ছেন 

অন্য কাজ আছেএই লােক কিছুক্ষণ ঘােরাফেরা করে চলে যাবেতার কপাল ভাল হলে আর আসবে নাকপাল মন্দ হলে আবারও আসবেজীবন অস্থির করে দেবেকামরুদ্দিন সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ভাবলেন, নির্বোধ লােকের সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে এর কারণ কি?

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(৮) হুমায়ূন আহমেদ

 নুরুজ্জামান আবার হাঁটতে শুরু করেছেহাঁটতে তার ভাল লাগছেঢাকা শহরে হেঁটে বেড়ানাের আলাদা মজাকত কিছু আছে দেখারএত ব্যস্ত রাস্তায় এক গেঞ্জীগায়ে লােককে দেখা গেল ঘােড়ার পিঠে চড়ে চলে গেলদুবলাপাতলা ঘােড়া না, বেশ তরতাজা ঘােড়াশহরের রাস্তায় ঘােড়াটাকে মানাচ্ছে না, আবার গেঞ্জী গায়ে লোকটাকেও ঘােড়ার পিঠে মানাচ্ছে নাতারপরেও পুরো ব্যাপারটা মানিয়ে গেছেমনে হচ্ছে এই মুহূর্তে ঘোড়ার পিঠে এই মানুষটার দরকার ছিল। 

নুরুজ্জামান ঘড়ি দেখলদুটা ত্রিশতার ঘড়ি পাঁচ মিনিট ফাস্ট আছে। আসল সময় দুটা পঁচিশপিএ সাহেবের বাসায় কি চলে যাবে? ঠিকানা আছে, যাওয়া যায়দুপুর বেলা উপস্থিত হলে উনি কি রাগ করবেন? করতে পারেনকরাটাই স্বাভাবিকতবু চেষ্টা করতে দোষ কি? উনার বাসা কলাবাগানঐদিকে বাস যায় কিনা খোজ করতে হবেহেঁটে রওনা দেয়াটা ঠিক হবে নাবাসের কোন খোজ পাওয়া যাচ্ছে নাআজ নাকি বাস স্ট্রাইকনুরুজ্জামান হাঁটা শুরু করল। 

কলিংবেল টিপতেই একজন মহিলা দরজা খুলে দিলেন, নুরুজ্জামান বলল, স্লামালিকুম আপা। 

ওয়ালাইকুম সালামউনি তাে বাসায় নেই‘ 

আপা, আমি আপনার কাছে এসেছিআমার নাম নুরুজ্জামানআমি অতিথপুর গার্লস স্কুলের হেডমাস্টারআমি এক গ্লাস পানি খাব। 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(৮) হুমায়ূন আহমেদ

আপনি তাে ঘামে ভিজে জবজবা হয়ে গেছেনআসুন, ফ্যানের নিচে আসুন। 

নুরুজ্জামান বসার ঘরে বসলমহিলা তাকে পানি দিলেন না, এক গ্লাস সরবত এনে দিলেনসরবতের উপর বরফের টুকরা ভাসছেভদ্রমহিলা বললেন, এক্ষুনি খাবেন নাএকটু ঠাণ্ডা হয়ে নিন। 

 

তিথির নীল তোয়ালে-পর্ব-(৭) হুমায়ূন আহমেদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *