দেবী উপন্যাস -পর্ব-(১৯)-হুমায়ুন আহমেদ

গুড়আমি কিন্তু শুধু তােমার চিঠির জবাব দিয়েছিঅন্য কারাের চিঠির জবাব দিই নিআমার কথা বিশ্বাস করছ তাে?‘ 

করছি‘ 

বেয়ারা চায়ের পট দিয়ে গেলছেলেটি বলল, দাও, আমি চা বানিয়ে দিচ্ছিঘরে বানাবে মেয়েরা, কিন্তু বাইরে পুরুষেরানিয়ম। 

নীলু লক্ষ্য করল, ছেলেটি তার কাপে তিন চামচ চিনি দিয়েছেনীলু এক বার লিখেছে সে চায়ে তিন চামচ চিনি খায়ছেলেটি সেটা মনে রেখেছেকী আশ্চর্য

চায়ে এত চিনি খাওয়া কিন্তু ভালাে না‘ 

নীলু কিছু বলল না। 

এর পর থেকে চিনি কম খাবেনীলু ঘাড় নাড়লতারা সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে রইলনীলু একবার বলল, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, উঠি?” 

ছেলেটি বলল, আরেকটু বস, আমি বাসায় পৌছে দেব, আমার সঙ্গে গাড়ি আছেনীলু আর কিছু বলল না। 

একটু দেরি হলে তােমাকে আবার বাসায় বকবে না তাে?নাহ্, বকবে নাআমি মাঝেমাঝে অনেক রাত করে বাসায় ফিরিসেটা ঠিক না নীলুশহর বড় হচ্ছে, ক্রাইম বাড়ছেঠিক না?” 

হ্যা, ঠিকদিন কী হলাে জান আমার পরিচিত এক মহিলার কান থেকে টেনে দুল নিয়ে গেছে, রক্তারক্তি কাণ্ড

দেবী উপন্যাস -পর্ব-(১৯)-হুমায়ুন আহমেদ

আমি বাইরে গেলে গয়নাটয়না পরি না‘ 

পরাই উচিতআচ্ছা নীলু, তুমি কি আজ তােমার বাবার সঙ্গে আমাকে আলাপ করিয়ে দেবে

আপনি যদি চান, দেবআমি নিশ্চয়ই চাইতুমি কি চাও?‘ 

চাইবলতে গিয়ে নীলুর চোখ ভিজে উঠলছেলেটিকে এখন কতনা পরিচিত মনে হচ্ছে! সে যদি এখন হাত বাড়িয়ে নীলুর হাত স্পর্শ করে, তাহলে 

কেমন লাগবে নীলুর? ভালােই লাগবেকিন্তু ছেলেটি অত্যন্ত ভদ্রসে এমন কিছুই করবে না। 

নীলু, আমি তােমার জন্যে একটা উপহার এনেছিলামকিন্তু তার আগে বল, তুমি কী এনেছ? তুমি বলেছিলে লাল টাই আনবেভুলে গেছ, না?‘ 

ভুলব কেন? আমি তােমার জন্যেই লাল টাই পরে এসেছিযদিও লাল রং আমার পছন্দ নয়আমার পছন্দ হচ্ছে নীল। 

নীল আমারও পছন্দ। 

তবে হালকা নীল, কড়া নীল নয়। 

নীলু এই প্রথম অল্প হাসলহাল্কা নীল তার নিজেরও পছন্দছেলেটি হাসতেহাসতে বলল, আমার সবচেঅপছন্দ হচ্ছে সবুজ রংকিন্তু দেখ, আজ 

সবুজ রংটাও খারাপ লাগছে না। 

তারা উঠে দাঁড়াল সাড়ে আটটার দিকেহেঁটেহেঁটে এল নিউমার্কেটের গেটেছােট্ট একটা হােন্ডা সিভিক সেখানে পার্ক করাছেলেটি ঘড়ি দেখে বলল, রাত কি বেশি হয়ে গেল নীলু?” 

না, বেশি হয় নিতােমার বাবা দুশ্চিন্তা নাকরলে হয়আমি চাই না আমার জন্যে কেউ বকা খাকঅবশ্যি একআধ দিন বকা খেলে কিছু যায়আসে না, কি বল?‘ 

দেবী উপন্যাস -পর্ব-(১৯)-হুমায়ুন আহমেদ

নীলু হাসলছেলেটিও হাসলমার্জিত হাসি। 

সরাসরি বাসায় যাবে, নাকি যাবার আগে আইসক্রীম খাবে? ধানমণ্ডিতে একটা ভালাে আইসক্রীমের দোকান দিয়েছে‘ 

আজ আর যাব নাঠিক আছে, চল বাসায় পৌঁছে দিই‘ 

ছেলেটি নীলুকে তাদের গেটের কাছে নামিয়ে দিলনীলুর খুব ইচ্ছে করছিল তাকে বসতে বলে, কিন্তু তার বড় লজ্জা করলবিলু নানান প্রশ্ন শুরু করবে। 

স্যার, ভেতরে আসব?‘ 

এসকী ব্যাপার?‘ 

মিসির আলি মেয়েটিকে ঠিক চিনতে পারলেন নাতিনি কখনাে তাঁর ছাত্র ছাত্রীদের চিনতে পারেন না। 

স্যার, আমার নাম নীলু, নীলুফার। 

, আচ্ছা। 

মিসির আলি পরিচিত ভঙ্গিতে হাসলেন কিন্তু নামটি তার কাছে অপরিচিত লাগছেএও এক সমস্যাকারাে নাম তিনি মনে রাখতে পারেন নাতার জ্ব কুঞ্চিত হলােনাম মনে না করতে পারার একটিই কারণমানুষের প্রতি তাঁর আগ্রহ নেইআগ্রহ থাকলে নাম মনে থাকত। 

স্যার, আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন? আমি সেকেন্ড ইয়ারেরএক দিন এসেছিলাম আমরা চার বন্ধু। 

হঁ্যাএসেছিলে তােমরামনে পড়েছেআজ কী ব্যাপার?মেয়েটি ইতস্তত করতে লাগলতার মানে কী? কমবয়েসী মেয়েদের তিনি এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করেনতরলমতি মেয়েরা মাঝেমাঝে অনেক অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা করে বসে। 

দেবী উপন্যাস -পর্ব-(১৯)-হুমায়ুন আহমেদ

তােমার কী ব্যাপার, বলস্যার, আমি ইএসপির টেস্টটা আবার দিতে চাইএক বার তাে দিয়েছআবার কেন?মিসির আলি বিস্মিত হলেনএই মেয়েটির মতিগতি তিনি বুঝতে পারছেন । 

স্যার, আমার মনে হয়, এবার পরীক্ষা করলে দেখা যাবেআমার ইএসপি আছে। 

রকম মনে হবার কারণ কী

মেয়েটি উত্তর নাদিয়ে দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপলক্ষণ ভালাে নয়মিসির আলি গম্ভীর গলায় বললেন, এখন আমি একটু ব্যস্ত আছিঅন্য এক দিন এস। 

মেয়েটি তবুও কিছু সময় দাঁড়িয়ে রইল। 

তুমি কি অন্য কিছু বলতে চাও? জ্বিনা স্যারআমি যাই স্নামালিকুমমিসির আলি গম্ভীর হয়ে বসে রইলেনমেয়েটিকে প্রশ্রয় দেয়া ঠিক হবে এরা সহজেই একটা ঝামেলা বাধিয়ে দিতে পারেরকম সুযােগ দেয়া ঠিক

বারটায় একটা ক্লাস ছিলমিসির আলি গিয়ে দেখলেন কোনাে ছাত্রছাত্রী নেইকোনাে স্ট্রাইক হচ্ছে কি? রকম কিছু শােনেন নিসামনে হয়তাে টার্ম পরীক্ষা আছেটার্ম পরীক্ষা থাকলে ছাত্ররা দল বেঁধে আসা বন্ধ করে দেয়মিসির আলি কুঁচকে খালি ক্লাসে মিনিট পাঁচেক বসে রইলেনগত রাতে অসুস্থ শরীরে এই ক্লাসটির জন্যে পড়াশােনা করেছেনঅবস্থা হবে জানলে সকাল 

সকাল শুয়ে পড়তে পারতেনছাত্ৰশূন্য একটি ক্লাসে তিনি খাতাপত্র নিয়ে গম্ভীর হয়ে বসে আছেন হাস্যকর দৃশ্যঅনেকেই করিডাের দিয়ে হাঁটবার সময় তাকে কৌতুহলী হয়ে দেখলপাগলটাগল ভাবছে বােধহয়মিসির আলি উঠে পড়লেন| আজকের দিনটিই শুরু হয়েছে খারাপভাবেএকটি কাজও ঠিকমতাে হচ্ছে নামিসির আলি ক্রমেই বিরক্ত হয়ে উঠতে লাগলেনতার কপালের মাঝখানে ব্যথা শুরু হলােএই উপসর্গটি নতুনব্লাডপ্রেশারট্রেশার হয়েছে বােধহয়ডাক্তার দেখাতে হবে। 

দেবী উপন্যাস -পর্ব-(১৯)-হুমায়ুন আহমেদ

তিনি বাড়ি ফিরলেন তিনটার দিকেএই অসময়েও বসার ঘরে কে যেন বসে আছেসমস্ত দিনটিই যে খারাপ যাবে, এটা হচ্ছে তার প্রমাণগ্রামের বাড়ি থেকে টাকাপয়সা চাইতে কেউ এসেছে নির্ঘাত। 

কে?জ্বি, আমি আনিস। 

আনিস সাহেব, আপনি এই সময়ে! অফিস নেই?ছুটি নিয়ে এলামব্যাপার কী? রানুর শরীরটা বেশি খারাপভাবলাম, আপনার সঙ্গে দেখা করে যাইভালােই করেছেনবসেন, চাটা দিয়েছে? জ্বি, চা খেয়েছিআপনার ভাই ছিলেন এতক্ষণ। 

বসুন, আমি কাপড় ছেড়ে আসি‘ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *