দেবী উপন্যাস -পর্ব-(২২)-হুমায়ুন আহমেদ

নীলু জবাব দিল নাবল, ঠিক না?” 

হ্যাতােমাকে প্রথম দিন দেখেই...‘ 

সে চুপ করে গেল। নীলুর চোখে জল এল। 

নীলু, আজ যদি তােমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই, তাহলে তােমার আপত্তি আছে?” 

নীলু ছােট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলল জবাব দিল নাসে মুখ ঘুরিয়ে বসেছিলসে তার চোখের জল তাকে দেখাতে চায় নাদেবী 

বল নীলু, আপত্তি আছে?আমাকে আটটার মধ্যে বাড়ি ফিরতে হবেআটটার আগেই আমরা বাড়ি ফিরবএস উঠি‘ 

সে নীলুর হাত ধরলভালবাসার স্পর্শ, যার জন্যে তরুণীরা সারা জীবন প্রতীক্ষা করে থাকে। 

রানু আজ অসময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলঘুম যখন ভাঙল তখন দিন প্রায় শেষআকাশ লালচে হতে শুরু করেছেসে বারান্দায় এসে দাঁড়ালনিচের বারান্দায় বিলু হাঁটছে একাএকারানুর কেমন জানি অস্বস্তি বােধ হতে লাগল যেন কোথাও কিছুএকটা অস্বাভাবিকতা আছে, সে ধরতে পারছে নানিচে থেকে বিলু ডাকল, রানু ভাবী, চা খেলে নেমে এস, চা হচ্ছে‘ 

চা খাব না। 

আস না বাবা! ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার বলবকুইকরানু নেমে গেলতার মাথায় সূক্ষ্ম একটা যন্ত্রণা হচ্ছেকিছুই ভালাে লাগছে বমিবমি ভাব হচ্ছে । 

বারান্দায় নীলুর বাবাও ছিলেনওপর থেকে তাঁকে দেখা যায় নিতিনি নরম স্বরে বললেন, এখন তুমি কেমন আছ মা

জ্বি, ভালাে। 

আমি আনিস সাহেবকে বলেছি বড় একজন ডাক্তার দেখাতেপিজির একজন প্রফেসর আছেন, আমার আত্মীয়, তাঁকে আমি বলে দেখতে পারিতুমি আলাপ করাে আনিসের সাথে, কেমন

জ্বি, করব‘ 

বিলু বলল, বাবা, ঘরে গিয়ে তুমি চা খাওতােমার ঠাণ্ডা লেগে যাবেআমরা দুই জন বাগানে বসিভদ্রলােকে চলে গেলেন সঙ্গেসঙ্গে। 

রানু বলল, নীলু কোথায়? ওর এক বন্ধুর বাড়ি গেছে‘ 

বন্ধুর বাড়ি যাওয়া এমন কোনাে ব্যাপার নয়, তবু কেন জানি রানুর বুকে ধক করে একটা ধাক্কা লাগলভোতা এক ধরনের যন্ত্রণা হতে লাগল মাথায়। বিলু বলল, রানু ভাবী, তােমাকে একটা গােপন কথা বলছিটপ সিক্রেট, কাউকে বলবে না‘ 

, বলব নাইভেন নীলু আপাকেও নয়কারণ কথাটা তাকে নিয়েইঠিক আছে, কাউকে বলব না‘ 

নীলু আপা ডুবেডুবে জল খাচ্ছেআজকে সকালে টের পেয়েছিতাই নাকি?‘ 

হ্যানীলু আপার ট্রাঙ্ক ঘাঁটতে গিয়ে আবিষ্কার করেছিজনৈক ভদ্রলােক দারুণ সব রােমান্টিক চিঠি লিখেছে নীলু আপাকেখুব লদকালদকি‘ 

 বিলু হাসলরানু কিছু বলল নাতার মাথার যন্ত্রণাটা ক্রমেই বাড়ছে। 

দু একটা চিঠি পড়ে দেখতে চাও?‘না, নাঅন্যের চিঠি‘ 

আহ্, পড় না, কেউ তাে জানতে পারছে নাআমরা ব্যাপারটা টপ সিক্রেট রাখব, তাহলেই তাে হলাে। 

না বিলু, আমি চিঠি পড়ব নাপড়ব না বললে হবে নাপড়তেই হবেদাঁড়াও আমি নিয়ে আসছিযে আলাে আছে তাতে দিব্যি পড়তে পারবে‘ 

বিলু ঘর থেকে চিঠি নিয়ে এলরানু চিঠিটি হাতে নিয়ে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলবিলু অবাক হয়ে বলল, কী হয়েছে

না, কিছু হয় নিরকম করছ কেন?মাথা ধরেছেবড় মাথা ধরেছে। 

প্যারাসিটামল এনে দেব? তুমি চিঠিটা পড়ে আমাকে বল ভদ্রলােক সম্পর্কে তােমার কী ধারণা। 

রানু চিঠি পড়লবিলু বলল, বল, তােমার কী মনে হয়? রানু কিছু বলল নাএক হাতে মাথার চুল টেনে ধরলতােমার কী হয়েছে? বড় শরীর খারাপ লাগছেআমি এখন যাই‘ 

চা খাবে না?নাবিলু, নীলু কখন ফিরবে বলে গেছে

নাসন্ধ্যার আগেআগেই ফিরবে বােধহয়তােমার কি শরীর বেশি খারাপ লাগছে?‘ 

হ্যাতা হলে যাও, শুয়ে থাক গিয়ে‘ 

রানু উপরে উঠে এলঘর অন্ধকার বাতি জ্বালাতে ইচ্ছে হলাে নাশুয়ে পড়ল বিছানায়আনিস আজ ফিরতে দেরি করবেতার অফিসে কীসব নাকি ঝামেলা হচ্ছেরানু ডাকল, জিতু জিতু মিয়াকেউ সাড়া দিল নাজিতু কি বাসায় নেই? জিতুজিতুকোনাে উত্তর নেইজিতু মিয়া ইদানীং বেশ লায়েক হয়েছেরানু কিছু বলে না বলেই হয়তাে বিকেলে খেলতে গিয়ে সন্ধ্যা পার করে বাড়ি ফেরেবকাঝকা তার গায়ে লাগে না। 

রান্নাঘরে খুটখুট শব্দ হচ্ছেইঁদুরনিশ্চয়ই ইঁদুরতবু রানু বলল, কে?” খুটখুট শব্দ থেমে গেলইঁদুর ছাড়া আর কিছু নয়, কিন্তু সেই গন্ধটা আবার পাওয়া যাচ্ছেকড়া ফুলের গন্ধরানুর ইচ্ছে হলাে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েরানু দুর্বল গলায় ডাকল, জিতু, জিতু মিয়াআর ঠিক তখন কেএকজন ডাকল, রানুরানুএই ডাক রানুর চেনাএই জীবনে সে অনেক বার শুনেছেতবে এটা কিছু নয়প্রফেসর সাহেব বলছেন, অডিটরি হেলুসিনেশনআসলেই তাই। এ ছাড়া আর কিছু নয়। 

রানুরানুকে? তুমি কে?‘ 

রানুর মনে হলাে কেউএকজন যেন এগিয়ে আসছেতার পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছেছােট্টছােট্ট পা নিশ্চয়ইহালকা শব্দপায়ে কি নূপুর আছে? নূপুর বাজছে

রানু চোখ বন্ধ করে ফেললসব সত্যি নয়, চোখের ভুলরানু দুর্বল গলায় বলল, তুমি কে

আমাকে তুমি চিনতে পারছ না?” 

কিশােরীর গলায় মৃদু হাসি শােনা গেলতাকাও রানুতাকালেই চিনবেআমি চিনতে চাই না‘ 

তােমার বন্ধু নীলুর খুব বিপদ, রানুএক দিন তােমার যে বিপদ ঘটতে যাচ্ছিল, তার চেয়েও অনেক বড় বিপদ। 

দরজায় ধাক্কা পড়ছেজিতু এসেছে বােধহয়রানু তাকাল, কোথাও কেউ নেইফুলের গন্ধ কমে আসছেজিতু মিয়া বাইরে থেকে ডাকল, আম্মা, আম্মারানু উঠে দরজা খুলল। 

আপনের কী হইছে

কিছু হয় নি। 

রানু এসে শুয়ে পড়লতার গায়ে প্রচণ্ড জ্বরসে বিছানায় ছটফট করতে লাগলকখন আসবে আনিস? কখন আসবে

নিচে গিয়ে দেখে আয় তাে নীলু ফিরেছে নাকি‘ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *