দেবী উপন্যাস -পর্ব-(৯)-হুমায়ুন আহমেদ

রানুরা উঠে দাঁড়ালমিসির আলি ভারি গলায় বললেন, আবার দেখা হবেরানু কিছু বলল নাআনিস বলল, আমরা তাহলে যাই

আচ্ছা, ঠিক আছে। 

মিসির আলি ওদের রিকশা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এলেনওরা রিকশায় উঠবার সময় তিনি হঠাৎ বললেন, রানু, যে তােমার পা জড়িয়ে ধরেছিল, ওর নাম কী

ওর নাম জালালউদ্দিনকি করে জানলে, ওর নাম জালালউদ্দিন?‘ 

রানু তাকিয়ে রইল, কিছু বলল নামিসির আলি সাহেব বললেন, ঠিক আছে, পরে কথা হবে। 

রিকশায় ওরা দুই জনে কোনাে কথা বলল নাআনিসের এক বার মনে হলাে, রানু কাঁদছেসে সিগারেট ধরিয়ে সহজ স্বরে বলল, দ্রলােককে তােমার কেমন লাগল রানু?’ 

ভালােবেশ ভালাে লােকউনি আসলে কী করেন? উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পার্টটাইম টীচারক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রি পড়ানখুব জ্ঞানী লোেক। 

দেবী উপন্যাস -পর্ব-(৯)-হুমায়ুন আহমেদ

ইউনিভার্সিটির টীচাররা এমন রােগা হয়, তা তাে জানতাম নাআমার ধারণা ছিল তারা খুব মােটাসােটা হন‘ 

রানু শব্দ করে হাসলআনিস বলল, আজ বাইরে খাওয়াদাওয়া করলে কেমন হয়?” 

শুধুশুধু টাকা খরচতােমার গিয়ে রান্না চড়াতে হবে নাচল না, কিছু পয়সা খরচ হােককোথায় খাবে?আছে আমার একটা চেনা জায়গানানরুটি আর কাবাব কি বল?” 

মিসির আলি সাহেব দেখলেন তার ঘরের সামনে চারটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছেকোনাে টিউটোরিয়েল ক্লাস আছে নাকি? আজ বুধবার, টিউটোরিয়েল ক্লাস থাকার কথা নয়। তবে কে জানে হয়তাে নতুন রুটিন দিয়েছেতিনি এখনাে নােটিস পান নি। 

এই, তােমাদের কী ব্যাপার?মেয়েগুলাে জড়সড় হয়ে গেলকি, তােমাদের সঙ্গে কোনাে ক্লাস আছে? জ্বিনা স্যার। 

তাহলে কি? কিছু বলবে

স্যার, নােটিসবাের্ডে আপনি একটা নােটিস দিয়েছিলেন, সেই জন্যে এসেছি‘ 

কিসের নােটিস? তিনি ভুরু কোঁচকালেনমেয়েগুলাে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। 

কী নােটিস দিয়েছিলাম?স্যার, আপনি লিখেছেনকারাে এক্সট্রাসেন্সরি পারসেপশনের ক্ষমতা আছে কি না আপনি পরীক্ষা করে বলে দেবেন

দেবী উপন্যাস -পর্ব-(৯)-হুমায়ুন আহমেদ

মিসির আলি সাহেবের সমস্ত ব্যাপারটা মনে পড়লমাস দুয়েক আগে রকম একটা নােটিস দিয়েছিলেন ঠিকইকিন্তু এই প্রথম চার জনকে পাওয়া গেল, যারা উৎসাহী এবং সব কটি মেয়ে। মেয়েগুলাে রােগাতার মানে কি অকল্টের ব্যাপারে রােগা মেয়েরাই বেশি উৎসাহী? তিনি মনেমনে একটা নােট তৈরি করলেন এবং তৎক্ষণাৎ তার মনে হলাে বিষয়টি ইন্টারেস্টিংএকটা সার্ভে করা যেতে পারে। 

এস তােমরাঘরে এসতােমরা তাহলে জানতে চাও তােমাদের ইএসপি আছে কি না?‘ 

মেয়েগুলাে কথা বলল না যেন একটু ভয় পাচ্ছেমুখ সবারই শুকনাে বস তােমরাচেয়ারে আরাম করে বস‘ 

ওরা বসলমিসির আলি সাহেব একটা সিগারেট ধরালেননিচু গলায় বললেন, সব মানুষের মধ্যেই ইএসপি কিছু পরিমাণ থাকেটেলিপ্যাথির কথাই ধরতােমাদের নিজেদেরই হয়তাে বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছেসহজ উদাহরণ হচ্ছে, ধর, এক দিন তােমাদের কারাে মনে হলাে আজ অমুকের সাথে দেখা হবেযার সঙ্গে দেখা হবার কথা মনে হচ্ছে, সে কিন্তু এখানে থাকে নাথাকে চিটাগাংকিন্তু সত্যিসত্যি দেখা হয়ে গেলকি, হয় না রকম?” 

মেয়েগুলাে কথা বলল নাএর মধ্যে এক জন রুমাল দিয়ে কপাল মুছতে লাগলমেয়েটি ঘামছেনার্ভাস হয়ে পড়ছে মনে হয়নিশ্চয়ই ব্লাডপ্রেশার বেড়ে গেছেমিসির আলি বিস্মিত হলেননার্ভাস মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন, এই বিষয়ে চর্চা এখনাে বিজ্ঞানের পর্যায়ে পড়ে না। বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই অনুমানের ওপরতবে আমেরিকায় একটি ইউনিভার্সিটি আছে ডিউক ইউনিভার্সিটিওরা কিছুকিছু এক্সপেরিমেন্টাল কাজ শুরু করেছেমুশকিল হচ্ছে, ফলাফল সবসময় রিপ্রডিউসিল নয়।’

দেবী উপন্যাস -পর্ব-(৯)-হুমায়ুন আহমেদ

মিসির আলি সাহেব ড্রয়ার খুলে দশটি চৌকো কার্ড টেবিলে বিছালেনহাসিমুখে বললেন, পরীক্ষাটি খুব সহজএই কার্ডগুলােতে বিভিন্ন রকম চিহ্ন আছেযেমন ধর ক্রস, স্কয়ার, ত্রিভুজ, বিন্দুকোনটিতে কী আছে সেটা অনুমান করতে চেষ্টা করবেদুই এক বার কাকতালীয়ভাবে মিলে যাবেতবে ফলাফল যদি স্ট্যাটিসটিক্যালি সিগনিফিকেন্ট হয়, তাহলে বুঝতে হবে তােমাদের ইএসপি আছে। এখন এস দেখি, কে প্রথম বলবে? তােমার কী নাম

নীলুফারহা নীলুফার, তুমিই প্রথম চেষ্টা করযা মনে আসে তা-বল‘ 

আমার কিছু মনে আসছে না। 

তাহলে অনুমান করে বল। 

মেয়েটি ঠিকমতাে বলতে পারল নাতার সঙ্গীরাও নামিসির আলি হাসতেহাসতে বললেন, নাহ্, তােমাদের কারাে কোনাে ইএসপি নেই ওরা যেন তাতে খুশিই হলােমিসির আলি গম্ভীর গলায় বললেন, না থাকাই ভালােআধুনিক মানুষদের সব থাকতে নেইএতে অনেক রকম জটিলতা হয়। 

কী জটিলতা?আছে, আছেবলুন না স্যার। 

মিসির আলি লক্ষ্য করলেন, নীলুফার নামের মেয়েটিই কথা বলছেস্পষ্ট সতেজ গলা। 

অন্য আরেক দিন বলবআজ তােমরা যাওনীলুফার বলল, এমন কিছু কি স্যার আছে, যা করলে ইএসপি হয়

লােকজন বলে, প্রেমে পড়লেও এই ক্ষমতাটা অসম্ভব বেড়ে যায়আমি ঠিক জানি নাতােমরা যদি কেউ কখনাে প্রেমে পড়, তাহলে এস, পরীক্ষা করে দেখব‘ 

কথাটা বলেই মিসির আলি অপ্রস্তুত বােধ করলেনছাত্রীদের এটা বলা ঠিক হয় নিকথাবার্তায় তার আরাে সাবধান হওয়া উচিতরকম হালকা ভঙ্গিতে কথা বলা ঠিক হচ্ছে না

দেবী উপন্যাস -পর্ব-(৯)-হুমায়ুন আহমেদ

স্যার, আমরা যাই? আচ্ছা ঠিক আছে, দেখা হবে‘ 

মিসির আলি নিচের টীচার্স লাউঞ্জে চা খেতে এলেনবেলা প্রায় তিনটালাউঞ্জে লােকজন নেইপলিটিক্যাল সায়েন্সের রশিদ সাহেব এক কোণায় বসেছিলেনতিনি অস্পষ্ট স্বরে ডাকলেন, এই যে মিসির সাহেব, অনেক দিন পর মনে হয় এলেন এদিকে চা খাবেন?‘ 

কে যেন বলছিল, আপনি নাকি ভূতেধরা সারাতে পারেনঠিক নাকি?‘জ্বিনাআমি ওঝা নইরাগ করলেন নাকি? আমি কথার কথা বললামনা, রাগ করব কেন

আচ্ছা মিসির আলি সাহেব, আপনি ভূত বিশ্বাস করেন

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *