দেবী উপন্যাস – শেষ পর্ব-হুমায়ুন আহমেদ

 নীলুর বাবার সঙ্গে কিছুক্ষণ আগেই তার কথা হয়েছেভদ্রলােক জিজ্ঞেস করেছেন, “কি, এত দেরি 

যে?যার মেয়ের এত বড় বিপদ, সে রকম স্বাভাবিক থাকবে কী করে

আনিস বলল, ওরা তাে কিছু বলল না!ওরা কিছু জানে নাআমি জানি, বিশ্বাস করআমি জানিআমাকে কী করতে বল? আমি বুঝতে পারছি নাআমি কিছু বুঝতে পারছি নাজিনিসটা কি তুমি স্বপ্নে দেখেছ?‘ 

নাকিন্তু আমি দেখেছিদেবী

কী দেখেছ?আমি সেটা তােমাকে বলতে পারব না। 

তুমি যদি চাও আমি নিচে গিয়ে ওদের বলতে পারি, কিন্তু ওরা বিশ্বাস করবে রানু চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলওর শরীর অল্পঅল্প করে কাঁপছেআনিস বলল, নাকি মিসির আলি সাহেবের কাছে যাবে? উনি কোনােএকটা বুদ্ধি দিতে পারেনযাবে?‘ 

রানু কাঁপা গলায় বলল, তুমি নিজে কি আমার কথা বিশ্বাস করছ?” 

তঁা, করছি। 

একতলার বারান্দায় বিলু বসেছিলওদের নামতে দেখেই বিলু বলল, ভাবী, নীলু আপা এখনাে ফিরছে নাবাবা খুব দুশ্চিন্তা করছেন। 

রানু কিছু বলল নাতােমরা কোথায় যাচ্ছ ভাবী

রানু তারও কোনাে জবাব দিল নারিকশায় উঠেই সে বলল, আমাকে ধরে রাখ, খুব ভালাে লাগছে‘ 

আনিস তার কোমর জড়িয়ে বসে রইলরানুর গা শীতল রানু খুব ঘামছেজ্বর নেমে গেছে। 

রানু চোখ বড়বড় করে বলল, আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না, তাই না?” 

মিসির আলি চুপ করে রইলেনআগে আপনি বলুনআপনি কি আমার কথা বিশ্বাস করছেন?” 

বিশ্বাসও করছি না, আবার অবিশ্বাসও করছি নাতুমি নিজে যা সত্যি বলে মনে করছ, তাবলছতবে আমি এত সহজে কোনাে কিছু বিশ্বাস করি না‘ 

কিন্তু যদি সত্যি হয়, তখন?মিসির আলি সিগারেট ধরিয়ে কাশতে লাগলেনবলুন, যদি আমার কথা সত্যি হয়যদি মেয়েটা মারা যায়

মিসির আলি শান্ত স্বরে বললেন, ঠিক এই মুহূর্তে কী করা যায়, তা তাে বুঝতে পারছি নামেয়েটি কোথায় আছে, তা তাে তুমি জান নানাকি জান

না, জানি নাছেলেটির নামধামও জান না?” 

ছেলেটি দেখতে খুব সুন্দর আমার রকম মনে হচ্ছেএই শহরে খুব কম করে হলেও দশ হাজার সুন্দর ছেলে আছেআমরা কিছুই করব না?” 

পুলিশের কাছে গিয়ে বলতে পারি একটি মেয়ে হারিয়ে গেছে এবং আশঙ্কা করা যাচ্ছে দুষ্ট লােকের খপ্পরে পড়েছেকিন্তু তাতেও একটা মুশকিল আছে, ২৪ ঘণ্টা পার না হলে পুলিশ কাউকে মিসিং পারসন হিসেবে গণ্য করে না। 

রানু আবার বলল, কিছুই করা যাবে না?। 

মিসির আলি গম্ভীর মুখে সিগারেট টানতে লাগলেনতিনি লক্ষ্য করলেন রানুর চোখমুখ শক্ত হয়ে উঠেছেসে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। 

রানু, তুমি যদি লােকটির কোনাে ঠিকানা কোনােভাবে এনে দিতে পার, তাহলে একটা চেষ্টা চালানাে যেতে পারে‘ 

ঠিকানা কোথায় পাব?” 

তা তাে রানু আমি জানি নাযেভাবে খবরটি পেয়েছ, সেইভাবেই যদি পাও। 

রানু উঠে দাঁড়ালমিসির আলি সাহেব বললেন, যাচ্ছ নাকি?হ্যা, বসে থেকে কী করব

নীলুদের সব টি ঘরে আলাে জ্বলছেরাত প্রায় এগারটা বাজেনীলুর বাবা পাথরের মূর্তির মতাে বাগানের কাছে দাঁড়িয়ে আছেনরানুদের ঢুকতে দেখে এগিয়ে এলেন কিন্তু কিছু বললেন নারানু মাথা নিচু করে তিনতলায় উঠে গেল । নীলুদের ঘরে ঘনঘন টেলিফোন বাজছেদুটি গাড়ি এসে থামলমনে হয় ওঁরা খুঁজতে শুরু করেছেনপুলিশের কাছে নিশ্চয়ই লােক গিয়েছেনীলুর বাবা অস্থির ভঙ্গিতে বাগানে হাঁটছেন। 

ছােট্ট একটি ঘর। কিন্তু দু পাওয়ারের একটি বাতি জ্বলছে ঘরেচারদিক ঝলমল করছেলােকটি একটি চেয়ারে বসে আছে নীলু লােকটির মুখ দেখতে পাচ্ছে না, কারণ লােকটি বসে আছে তার পেছনেঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকাবার কোনাে উপায় নেই নীলুর নাইলনের চিকন দড়ি তার গা কেটে বসে গেছেচারদিকে কোনাে সাড়াশব্দ নেইমাঝেমাঝে দূরের রাস্তা দিয়ে দ্রুতগামী ট্রাকের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছেনীলু থেমেথেমে বলল, আপনি কি আমাকে মেরে ফেলবেন?” 

কেউ কোনাে জবাব দিল না

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *