দেয়াল শেষ পর্ব- হুমায়ূন আহমেদ

চড়নদার লাগবে কেন? আমি তােক নিয়ে যাব। তােকে আমি চড়নদারের সঙ্গে ছাড়ব না।দেয়াল

আমি তােমাকে নেব না। প্রয়ােজনে একা যাব, কিন্তু তােমাকে নেব না। চড়নদারটা কে ? আমাদের মাস্টার ? 

হতে পারে। সম্ভাবনা আছে। উনি যদি আমার সঙ্গে না যান, তাহলে একাই যাব। 

তাের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, তাের চিকিৎসা দরকার। 

অবন্তি বলল, ঠিক বলেছ। যেদিন মাথা পুরােপুরি খারাপ হবে সেদিন ছাদ থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ব। ঠিক কোন জায়গাটায় লাফিয়ে পড়ব তাও ঠিক করে রেখেছি। একদিন তােমাকে দেখাব। 

সরফরাজ খান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। অবন্তি বলল, পান দিব? পান খাবে ? বেশি করে জর্দা দিয়ে পান খেয়ে আরাম করে ঘুমুতে যাও। তােমার ঘুম দরকার। 

সরফরাজ খান অনেক ঝামেলা করে অবন্তির মা’র চিঠি খাম থেকে বের করলেন। স্টিম দিয়ে গাম নরম করা, ব্লেড দিয়ে খামের মােড়ক খােলা। নানান ঝামেলা। 

অবন্তি যেন কিছুতেই টের না পায় যে খাম খােলা হয়েছিল। 

অবন্তির মা’র চিঠি। 

হ্যালাে, প্রিটি! 

তােমার শিক্ষকের স্কেচের হাত খুব ভালাে শুনে আনন্দিত হয়েছি। তবে তাকে দিয়ে নগ্ন পােট্রেট করানাের কিছু নেই। 

দেয়াল শেষ পর্ব- হুমায়ূন আহমেদ

সে পিকাসাে না, মনেট না। সাধারণ গৃহশিক্ষক। তার সামনে কেন নিজেকে প্রকাশ করবে ? 

তাকে বিয়ে করলে ভিন্ন কথা। তখন সারাক্ষণ তার সামনে নেংটো হয়ে ঘুরবে, তখন দেখবে–ছবি আঁকা দূরে থাক, তােমার স্বামী ফিরেও তাকাচ্ছে না। মনে রেখাে, চোখে যা দেখা যায় তা দ্রুত তার রহস্য হারায়। চোখে যা দেখা যায় 

, যেমন মন, অনেক দিন রহস্য ধরে রাখে । | তােমার দাদাজানের বিষয়ে আমি এই মুহূর্তে একটি কঠিন সাবধানবাণী উচ্চারণ করছি। এই সাবধানবাণী নিয়ে হেলাফেলা করবে না। তােমার দাদাজানের মতাে সেক্স স্টারভড় বৃদ্ধেরা রূপবতী নাতনিদের প্রতি তীব্র লালসা পােষণ করে। তারা যে-কোনাে সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটায়। তুমি শুনলে নিশ্চয় চমকে উঠবে, আমি এই জাতীয় ঘটনার ভুক্তভােগী। আমার পুরাে জীবন যে এলােমেলাে হয়ে আছে অতীতের ভয়ংকর ঘটনা তার একটা কারণ। আমি চাই না আমার মেয়ের জীবন এলােমেলাে হােক। 

ইতি 

ইসাবেলা পুনশ্চ তােমার গৃহশিক্ষকের আঁকা যে পােট্রেটে তুমি 

অভিভূত তা আমাকে পাঠাও। ইসাবেলার চিঠি হাতে অনেক রাত পর্যন্ত সরফরাজ বসে রইলেন। তাঁর ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা করতে লাগল । কিছুক্ষণ পর পর শরীর কেঁপে উঠতে লাগল। বিছানায় শুতে গেলেন শেষরাতের দিকে। আধাে ঘুম আধাে জাগরণে মনে হলাে, বাড়িভর্তি বিড়াল। মিউ মিউ শব্দ করে অস্থির করে তুলছে। 

হাফেজ জাহাঙ্গীর ফজরের নামাজ শেষ করে দিঘির ঘাটে বসে আছেন। তাঁর হাতে নীল রঙের ঘুটির তসবি। তিনি একমনে তসবি টানছেন। তার বসার জন্যে উলের আসন দেওয়া হয়েছে। তিনি যেখানে বসেছেন তার এক ধাপ নিচে আগরদানে আগরবাতি জ্বলছে। হাফেজ জাহাঙ্গীর আগরবাতির গন্ধ কখনাে পছন্দ করেন না। তার নাক জ্বালা করে। তারপরেও তাকে বাস করতে হয় আগরবাতি চারপাশে নিয়ে। 

দেয়াল শেষ পর্ব- হুমায়ূন আহমেদ

আজ ভালাে কুয়াশা হয়েছে। কুয়াশার কারণে সূর্য দেখা যাচ্ছে না। ভাদ্র মাসের ভােরে আবহাওয়া এমনিতেই কিছুটা শীতল থাকে। কুয়াশার কারণে আজ অন্যদিনের চেয়েও আবহাওয়া শীতল। হাফেজ জাহাঙ্গীরের শীত লাগছে। গায়ে একটা সুজনি দিতে পারলে হতাে। সমস্যা হচ্ছে সুজনি আনার কথাটা কাউকে বলতে ইচ্ছা করছে না। 

হাফেজ জাহাঙ্গীরের সার্বক্ষণিক সঙ্গী নুরু তাঁর পাশেই আছে। মাথা নিচু করে খেলাল দিয়ে দাঁত খোঁচাচ্ছে। তাকে বললেই সে আগরদান নিয়ে যাবে, সুজনি এনে গায়ে জড়িয়ে দেবে। এক বাটি খেজুর গুড়ের চা এনে সামনে রাখবে। হাফেজ জাহাঙ্গীর ছােট্ট নিঃশ্বাস ফেললেন। এই মুহূর্তে তার কাউকে কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না। 

নুরু বলল, ছােট হুজুর, খবর পাইছেন আইজ পুসকুনিত জাল ফেলব ? 

জাহাঙ্গীর হা-সূচক মাথা নাড়লেন। আজ দিঘিতে জাল ফেলা হবে, এই খবর তিনি পেয়েছেন। মাছ ধরা দেখার জন্যেই তিনি ফজরের ওয়াক্ত থেকে দিঘির ঘাটে বসে আছেন। 

নুরু উৎসাহের সঙ্গে বলল, আমার মন বলতাছে আইজ গুতুম ধরা পড়ব। 

দেয়াল শেষ পর্ব- হুমায়ূন আহমেদ

জাহাঙ্গীর বললেন, সবই আল্লাহর হুকুম। উনার হুকুম হইলে ধরা পড়ব। উনার হুকুম বিনা কিছু হবে না। 

‘গুতুম’ হলাে এই দিঘির সবচেয়ে বড় মাছের আদরের নাম। এই মাছের সাড়াশব্দ অনেকবার পাওয়া গেছে, এখনাে কেউ তাকে দেখে নি। সবার ধারণা, গুতুম গজার মাছ। একমাত্র গজার মাছই দৈত্যাকৃতির হয়। 

নুরু বলল, চা খাবেন ? চা এনে দিব ? 

জাহাঙ্গীর বললেন, না। বলেই খুব অবাক হলেন। তাঁর চা খেতে ইচ্ছা করছে অথচ তিনি বলেছেন, না। এর মানে কী? নুরু বলল, উরস-বিষয়ে আপনার হুকুম কী জানলে সেইমতাে ব্যবস্থা নিতাম। 

জাহাঙ্গীর হাতের তসবি নামিয়ে রেখে বললেন, কোনাে হুকুম নাই। বড় খানা কয়বার হবে ? একবারই হবে। আসরের নামাজের পরে বড় খানা। গরু কয়টা জবেহ হবে ? উরস উপলক্ষে যে কয়টা এসেছে সবই জবেহ হবে। 

চৌদ্দটা গরু এখন পর্যন্ত আছে, আরও আসবে ইনশাল্লাহ। সব একদিনে জবেহ করলে বিরাট বিপদ হবে। 

কী বিপদ ? একসঙ্গে এত রান্না করা যাবে না। 

জাহাঙ্গীর বললেন, উরস নিয়া তােমার সঙ্গে আলাপের কিছু নাই। আল্লাহপাক একেকজনকে একেক দায়িত্ব দিয়া পৃথিবীতে পাঠান। তােমাকে ফুটফরমাসের দায়িত্ব দিয়ে পাঠায়েছেন। বুঝেছ ? জি। ফজরের নামাজে তােমাকে সামিল হতে দেখি নাই। এর কারণ কী ? ঘুম ভাঙতে দেরি হয়েছিল। কাজা পড়েছি। 

দেয়াল শেষ পর্ব- হুমায়ূন আহমেদ

জাহাঙ্গীর বললেন, গত রাতে এশার নামাজেও তুমি শামিল হও নাই। কে কী করে বা করে না তা আমি জানি। এখন আমার সামনে থেকে বিদায় হও। আজ সারা দিন যেন তােমার চেহারা না দেখি । 

নুরু মুখ শুকনা করে উঠে গেল। 

জাল ফেলা হলাে সকাল নটায়। হুলস্থুল ব্যাপার। সবাই এসে দিঘির ঘাটে ভিড় করেছে। জাহাঙ্গীর দেখলেন নিষেধ অমান্য করে নুরুও ঘাটে এসেছে। প্রতি তিন মাসে একবার জাল বাওয়া হয়। জাল বাওয়ার দৃশ্য সে কারণেই আনন্দময়। বাড়তি আকর্ষণ ‘গুতুম’। গত এক বছর ধরে গুতুম ধরা পড়বে এমন অপেক্ষা। 

জাল টানা শেষ হলাে বারােটার দিকে। জাল এখনাে পানির নিচে। প্রধান জেলে এসে হাফেজ জাহাঙ্গীরকে ফিসফিস করে বলল, গুতুম আটক হয়েছে। 

হাফেজ জাহাঙ্গীর বললেন, গুতুম ধরা পড়েছে এ তাে ভালাে সংবাদ। কানাকানি করছ কেন ? মাছ তােললা, দেখি কী সমাচার। 

মাছ ধরার সময় মহিলা মাদ্রাসার কেউ বা জেনানামহলের কেউ থাকে না। আজ সবাই ছুটে এসেছে। কঠিন পর্দার কথা মনে হয় সাময়িকভাবে ভুলে গেছে। কিছু কিছু অনিয়ম উপেক্ষা করতে হয়। হাফেজ জাহাঙ্গীর তা-ই করছেন। 

গুতুমকে ডাঙায় তােলা হয়েছে। বিস্ময়কর এক দৃশ্য! দানবাকৃতির এক কাতল মাছ। কাতল মাছের মাথা শরীরের তুলনায় বড় হয়। এর মাথা ছােট । ঘাড়ের কাছের খানিকটা অংশ সােনালি। হাফেজ জাহাঙ্গীর পর পর তিনবার বললেন, সােবাহানআল্লাহ! আল্লাহপাকের তরফ থেকে এমন চমৎকার নিয়ামত পাঠানাের জন্যে দুই রাকাত নফল নামাজ পাঠ করা হলাে। | হাফেজ জাহাঙ্গীরের নির্দেশে মাছ ওজন করে হুজরাখানার গেটে দুই ঘণ্টার জন্যে রাখা হলাে। অনেকেই এই মাছ দেখতে চাইবে। তারা দেখবে। 

দেয়াল শেষ পর্ব- হুমায়ূন আহমেদ

মাছের ওজন মাপা হয়েছে। এক মণ তিন সের। এই মাছ বিষয়ে সাপ্তাহিক ময়মনসিংহ বার্তায় ছবিসহ খবর প্রকাশিত হয়। 

খতিবনগর হুজরাখানায় অদ্ভুত কাতল 

(বিশেষ সংবাদদাতা প্রেরিত) খতিবনগর হুজরাখানায় এক মণ তিন সের ওজনের এক দৈত্যাকৃতি কাতল মাছ ধরা পড়েছে। এমন বৃহৎ কাতল স্মরণাতীতকালে কেউ দেখেছে এমন নজির নাই। খতিবনগরের আশি বয়স বর্ষীয়ান বৃদ্ধ হেকমত আলি বলেন তাঁর কৈশােরে তিনি হাওর থেকে ধৃত এমন কাতল দেখেছেন। হুজরাখানায় ধৃত কাতলের মতাে সেই কাতলেরও নাকি গলা ছিল হরিদ্রা বর্ণের এবং মাথা ছিল শরীরের তুলনায় অপুষ্ট ।। 

হুজরাখানার বর্তমানে গদিনসীন পীর হাফেজ জাহাঙ্গীর খতিৰি এই মাছ হুজরাখানার ভক্তদের খাওয়ানাের নির্দেশ দিয়েছেন। হুজরাখানা সূত্রে জানা যায়, ভৈরবের বিখ্যাত মনা বাবুর্চির উপর এই মাছ রান্ধনের দায়িত্ব পড়েছে। অদ্য বৃহস্পতিবার নৈশভােজে হুজরাখানার তরফ থেকে ভক্তদের জন্যে মাছ ভাত এবং মাষকলাইয়ের ডালের আয়ােজন করা হয়েছে। 

এশার নামাজের পর রাতের খানা। হাফেজ জাহাঙ্গীর ফরজ নামাজ শেষ করে সুন্নত নামাজে যাবেন, এইসময় তার কাছে খবর গেল ঢাকা থেকে তার স্ত্রী মায়মুনা এসেছেন। তিনি একা। তার সঙ্গে কেউ নেই। হাফেজ জাহাঙ্গীর বললেন, সােবাহানাল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ। তিনি অনেক কষ্টে সুন্নত নামাজ শেষ করলেন। তার ছুটে যেতে ইচ্ছা করছে। ইচ্ছা করলেই তা সম্ভব না। আল্লাহপাক মায়মুনাকে উপস্থিত করেছেন। তাঁর দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে হবে। শুকরানা নামাজ পড়তে হবে। কোনাে কিছুতেই তাড়াহুড়া করা যাবে না। আল্লাহপাক মানবসমাজের তাড়াহুড়া পছন্দ করেন না বলেই পবিত্র কোরান শরিফে বিরক্ত হয়ে বলেছেন, “হে মানব সমাজ! তােমাদের বড়ই তাড়াহুড়া।’ 

অবন্তির কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীতে এমন কিছু জায়গা অবশ্যই আছে যা কখনাে বদলাবে না। খতিবনগর হুজরাখানা তার একটি। সব আগের মতাে। এমনকি গন্ধও আগের মতাে। মনে হচ্ছে কারও বয়সও বাড়ে নি। 

| সালমা তাকে দেখে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে অবন্তির গােসল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। হুজরাখানার নিয়ম হলাে বাইরে থেকে আসা কোনাে মহিলা হুজরাখানার জেনানামহলে ঢােকার আগে সিনান করবে। পাকপবিত্র হয়ে আল্লাহপাকের নিরানব্বই নাম জপ করে জেনানামহলে ঢুকবে। এতে মহিলাদের সঙ্গে আসা দুষ্ট জ্বিন জেনানামহলে ঢুকতে পারবে না। 

দেয়াল শেষ পর্ব- হুমায়ূন আহমেদ

অতি অল্পসময়ে সালমা হুজুরাখানার যাবতীয় খবর দিয়ে ফেলল। তার গল্পের বড় অংশ জুড়েই রইল দৈত্যাকৃতির কাতল মাছ। 

সালমা বলল, মাছ মনে হয় না স্বাদ হবে। বেশি বড় মাছ স্বাদ হয় না। তা ছাড়া মানুষের নজর লাগে। অবন্তি বলল, মাছ স্বাদ হােক বা না-হােক, আমি মাছ খাব না। আমি মাছ খাই না। গন্ধ লাগে । সালমা বলল, ছােট হুজুর হাফেজ জাহাঙ্গীরও আপনার মতাে মাছ খান না। উনি মাছ খান না অন্য কারণে। কী কারণে? 

আমাদের নবিজি মাছ খেতেন না। এইজন্যে হাফেজ সাহেবও মাছ খান না। তবে আজ মনে হয় খাবেন। বড় মাছ, এইজন্যে খাবেন ? উনি সবাইরে মাছ খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন। দাওয়াত দিলে মেহমানদের সঙ্গে খানা খেতে বসতে হয় ।। 

জুলেখা বিবি অবন্তিকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তিনিও আগের মতােই আছেন। একটা টকটকে লাল রঙের শাড়িতে তাকে কোনােরকমে ঢেকে রাখা হয়েছে। তার তিনজন দাসীর একজন পায়ের আঙুল টানছে। 

জুলেখা বিবি বললেন, চেহারা দেখাইতে আসছ, না জন্মের মতাে আসছ ? অবন্তি বলল, চেহারা দেখানাের জন্যে এসেছি। চেহারা দেখলাম। এখন বিদায় হও। আচ্ছা চলে যাব। 

জুলেখা বিবি হঠাৎ গা থেকে শাড়ি ফেলে নগ্ন হয়ে গেলেন। দাসী দু’জন শাড়ি দিয়ে গা ঢাকার জন্যে ব্যস্ত হয়ে গেল। জুলেখা বিবি বললেন, গরমে শইল পুইড়া যাইতেছে। শাড়ি শইল্যে দিবা না। আর যে মেয়ে নিজের স্বামী ছাইড়া অন্যত্র বাস করে সে পশুর সমান। পশুর সামনে কোনাে লজ্জা নাই। এখন বুঝেছ ? 

মেহমানরা সবাই দস্তরখান বিছিয়ে বসেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই খানা দেওয়া হবে। হাফেজ জাহাঙ্গীরের জন্যে অপেক্ষা। তিনি হুজরাখানায় একা বসে আছেন। বিশেষ কোনাে নামাজে বসেছেন। বিশেষ নামাজের সময় বাতি নেভানাে থাকে। এবং তিনি থাকেন একা। আজ হুজরাখানার বাতি নেভাননা। তিনি ছাড়া আর কেউ হুজরাখানায় উপস্থিত নেই। 

দেয়াল শেষ পর্ব- হুমায়ূন আহমেদ

অতিথিরা যখন খাবারের জন্যে অস্থির তখন হাফেজ জাহাঙ্গীর দর্শন দিলেন। অতিথিদের দিকে তাকিয়ে লজ্জিত গলায় বললেন, আমি বিশেষ শরমিন্দা। যে মাছ খাওয়ার জন্যে আমি আপনাদের দাওয়াত দিয়েছি, সেই মাছ খাওয়াতে পারছি না। কারণ কিছুক্ষণ আগে আমি বাতেনি খবর পেয়েছি যে, মাছ রান্নার সময় মাছে বিষ দেওয়া হয়েছে। ভৈরবের মনা বাবুর্চি এই কাজ করেছে। সে পলাতক আছে । আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি মাছের সব সালুন গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। আপনারা এতক্ষণ অপেক্ষা করেছেন, আর এক ঘণ্টা যদি অপেক্ষা করেন তাহলে খাসি জবেহ করে খাসির সালুন দিয়ে আপনাদের খানা দিব। এখন আপনাদের বিবেচনা। 

অতিথিরা কেউ কোনাে শব্দ করলেন না। 

হাফেজ জাহাঙ্গীরের সঙ্গে অবন্তির দেখা হলাে অনেক রাতে। অতিথিরা খাওয়াদাওয়া শেষ করে চলে যাওয়ার পর। অতিথিরা খাসির সালুনের জন্যে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মাছের অভাবে তাদের তেমন কষ্ট হলাে না।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *