নিতুর স্কুল ছুটি। সারাটা দিন বাড়িতেই থাকতে হয়। মা বারণ করেছে বাইরে বের হতে। নিতুর বন্ধু ঝুমা আর নয়ন ছুটি পেয়ে বেড়াতে গেছে নানাবাড়ি। এখন সে কার সঙ্গে খেলবে? কী করবে এখন? বাড়ির উঠানে একটা নিমগাছ আছে। বাবাকে বলে একটা দোলনা টানিয়ে নিয়েছে। নিতু একা একা দোলনায় বসে দোল খায়। নিতুর কথা বলতে ইচ্ছে হয়। নিমগাছকে বলে,
নিতু- ‘নিম গাছ বন্ধু, কেমন আছো?’
নিমগাছ- ‘আছি বেশ, এই যে তোমাকে দোল দিচ্ছি,
বিশুদ্ধ অক্সিজেন দিচ্ছি, ছায়া দিচ্ছি। এই আমার ভালো থাকা, পরমানন্দ।’
নিতু- ‘আচ্ছা, সে না হয় বুঝলাম, ভোগে নয়, ত্যাগেই তোমার সুখ। একটা প্রশ্ন জাগে মনে, সেদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে মা আমায় খাইয়ে দিল তোমার পাতার রস চিপে, কি বিচ্ছি তিতা বাবা রে।’
নিমগাছ- ‘বন্ধু, মানুষের কল্যাণে ভালোবাসার প্রথম পরীক্ষা যে। কত রোগবালাই বিদায় নেবে, মুখে আসবে রুচি, থাকবে নাকো কিরমি।’
নিতু- ‘সেজন্য মাস্টার মশাই সেদিন বললেন পাঠদানে। পাতারা এভাবে থাকে সারি সারি
কারণ কি জানতে পারি?’
নিমগাছ- ‘বুঝলে না, এ যে বন্ধুত্বের প্রতীক।’
নিতু- ‘একসঙ্গে ঝরে পড়া?’
নিমগাছ- ‘বন্ধুর জন্য ভালোবাসা।’
নিতু- ‘আমিও তোমাদের মতো হতে চাই।
সঙ্গে নিবে তাই?’
নিমগাছ- ‘আগে আমিত্ব ছাড়ো।’
নিতু দৌড়ে যায় মায়ের কাছে। মাকে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ও মা, আমিত্ব মানে কী গো?’
মা বলেন, ‘আমিত্ব মানে, এটা আমার, সেটা আমার, সব সময় আমার আমার করার নামই হলো আমিত্ব। শুধু নিজের কথা ভাবলেই হবে না। অন্যের কথাও ভাবতে হবে। মনে রাখবে, অন্যের সুখ ও কল্যাণের মধ্যে তোমার সুখ ও কল্যাণ লুকিয়ে আছে। নিজের জন্য ও অন্যের জন্য ভালো কিছু করতে চাইলে আগে আমিত্ব ত্যাগ করতে হবে। মহৎ কাজগুলো কোনো বিনিময় ছাড়াই করতে হয়।’ নিতু বলল, ‘আমি অন্যের জন্য কিছু করতে চাই। কোনো বিনিময় ছাড়া। ঠিক যেমনটি করে নিমগাছটি আমাদের জন্য অনেক কিছু দিচ্ছে, বিনিময় ছাড়া।’