পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(১০)-হুমায়ুন আহমেদ

নাভাবীকে নিয়ে তুমি যখন এলে তখন আমি ফ্রী পার্টিকেল প্রবলেম সলভ করছিলাম নিচে নামতে ইচ্ছা করল না। 

পাখি আমার একলা পাখিআমি সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললাম, প্রতিটি পরীক্ষায় ফার্স্ট হবার 

উপকারিতাটা কি তুই আমাকে বল তাে দেখি. বাবু বিস্মিত মুখে বলল, তােমার কথা কিছুই বুঝলাম নাঠিক কি জানতে চাচ্ছ বুঝিয়ে বল তাে। 

বুঝিয়ে বলার কিছু নেইকথার কথাচল খোজ নিয়ে দেখিবাবার কি অবস্থা ?” 

মা বাবার অবস্থা ভালইবাবা সামলে উঠেছেনডাক্তার সাহেব বললেন, হার্টের কিছু না। হঠাৎ ব্লাড প্রেসার সুট করেছে, তাই অবস্থা। 

বাবার কথা বলা সম্পূর্ণ নিষেধ, তবু তিনি ক্ষীণ গলায় আমাকে বললেন, এই কাজটা তুই কি করে করলি ? শাদা চামড়া দেখে সব ভুলে গেলি? কি আছে শাদা চামড়ায়? বল তুই, কি আছে

কিছু নেইসুন্দর চেহারা? কি হয় সুন্দর চেহারায় তুই বলকিছুই হয় না। 

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(১০)-হুমায়ুন আহমেদ

তাহলে কি মনে করে তুই এই কাজটা করলি ? কি জানিস তুই এই মেয়ে সম্পর্কে

বিশেষ কিছু জানি নামেয়ের বাবা উনি করেন কি

বলতে পারছি নাব্যবসাট্যাবসা করেন বােধহয়উনার নাম কি

নাম জানি নাকখনাে জিজ্ঞেস করিনিরূপাকে জিজ্ঞেস করে আপনাকে বলব। 

বাবা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। 

আমাদের বারান্দায় দুটি ইজিচেয়ার ছিলদুটি ইজিচেয়ারের একটি আমি আমার ঘরে নিয়ে এসেছিবিয়ের পর আমার শােবার ঘরের পরিবর্তনের মধ্যে এই পরিবর্তনটা হয়েছেআচ্ছা, আরেকটা পরিবর্তন হয়েছে ইজিচেয়ারের পাশে বড় একটা টেবিল ল্যাম্পএই টেবিল ল্যাম্প রূপাদের বাড়ি থেকে এসেছে। রূপার বাবা দেশে ফিরেই তাঁর কন্যার ব্যবহারী শাড়ি, গয়না, কিছু ফার্নিচার একটা পিক 

আপ ভর্তি করে পাঠিয়ে দিয়েছেনতার সঙ্গে আধ পৃষ্ঠার একটা চিঠিব্যক্তিগত চিঠিতাঁর কন্যাকে লেখাআমার পড়ার কথা না, পড়া উচিতও নাযেহেতু চিঠি দু দিন ধরে আমার টেবিলে পড়ে আছে কাজেই আমি পড়েছিমা রূপা, তােমার শাড়ি, গয়না, পাস বই, চেক বই পাঠালামছােট স্যুটকেসটায় কসমেটিকসতােমার ড্রেসিং টেবিলে যা পেয়েছি সবই দিয়ে দিয়েছি

কাজগুলি দ্রুত করতে হয়েছে, কারণ আমি আবার মাস তিনেকের জন্যে বাইরে যাচ্ছিবাড়ি তালাবন্ধ থাকবেচাবি তােমার রহমান চাচার কাছে থাকবেপ্রয়ােজনে তার কাছ থেকে নিতে পারতবে তাকে পাওয়া এক সমস্যাতােমার ব্যবহারী জিনিসপত্র তােমাকে পাঠিয়ে দিয়েছি, তার মানে এই নয় যে হুট করে তুমি যে কাণ্ডটি করেছ তা ক্ষমা করা হয়েছেতােমার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিল, তার থেকে বাঁচার জন্য বিয়েনামক ব্যপারটি ব্যবহার করেছ

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(১০)-হুমায়ুন আহমেদ

বিয়ে সমস্যা থেকে বাঁচার কোনাে ব্যবস্থা নয়তােমার মাও সমস্যা এড়াবার জন্যে আমাকে বিয়ে করে অনেক বড় সমস্যা তৈরি করেছিলেনআমি দুঃখিত হয়ে লক্ষ করছি, তােমার মা যেসব ভুল তারজীবনে করেছিল, তুমিও একে একে তাই করতে যাচ্ছতােমার মা এক একটা ভুল করত, আর সেই ভূলকে যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করবার হাস্যকর চেষ্টা করততুমিও হয়তাে তাই করবেযে ছেলেটিকে তুমি কেঁকের মাথায় বিয়ে করলে সে কেমন ছেলে আমরা পক্ষে বলা সম্ভব নয়তুমিই ভাল বলতে পারবেতার সঙ্গে দুদিনআমার দেখা হয়েছেসামান্য কথা হয়েছেআমার কাছে তাকে নির্বোধ বলে মনে হয়েছেকে জানে, হয়তাে নিবোধ ছেলেই তােমার কাম্য। 

ভাল থাক, এই শুভ কামনাসব বাবার মতাে আমিও তােমার মঙ্গল কামনাই করছিতােমার বাইশ বছরের জীবনে আমি তােমার প্রতি ভালবাসার কোনো অভাব দেখাইনিআমাকে তােমার অসহ্য বােধ হয়েছে জানার পর আমি তােমাকে অন্য জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিতােমার মামৃত্যুর পর আমি অনায়াসেআরেকটি বিয়ে করতে পারতামতা করিনিতােমার অযত্ন হবে, অবহেলা হবে, এই ভেবেই করিনিতুমি আমার সেই ভালবাসা তুচ্ছ করেছএই স্বভাবও তুমি পেয়েছ তােমার মাকাছ থেকেতােমার মা বেঁচে থাকলে হয়ত সে বলতরূপা, তুমি যা করেছ ভালই করেছআমি তা বলতে পারছি নাযাই হােক, শেষ কথাটি বলছিআমার বাড়ির দরজা তােমার জন্যে সব সময় খােলা থাকবে তােমার সব আশ্রয় নষ্ট হবার পর যদি ফিরতে ইচ্ছা করে ফিরতে পারবে। 

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(১০)-হুমায়ুন আহমেদ

তােমার বাবাপ্রথমে ভেবেছিলাম, রূপা ইচ্ছা করেই এই চিঠি টেবিলে ফেলে রেখেছে যাতে আমি পড়তে পারিসেই ধারণা ঠিক নারূপার স্বভাবই হচ্ছে এলােমেলাে অগােছালোগােসলখানায় গােসল করতে গিয়ে সে গলার হার খুলে রেখে এসেছিলমুনিয়া তাতে খুব হৈচৈ করছিলরূপা অবাক হয়ে বলেছে সামান্য ব্যাপার নিয়ে এত হৈচৈ কেন? মুনিয়া বলল, ঘরে তিনটা কাজের লােক, যদি চুরি হত? রূপা বলল, চুরি হলে কি আর করাএম্নিতেও তাে অনেক সময় হারায়হঠাৎ গলা থেকে খুলে পড়ে। 

দামী একটা হার হঠাৎ গলা থেকে খুলে পড়বে

দামী হার গলা থেকে খুলে পড়তে পারবে না এমন কোনাে আইন তাে নেই মুনিয়ামানুষ পর্যন্ত হারিয়ে যায়, আর সামান্য গলার হার| মুনিয়ার ধারণা, এসব হচ্ছে রূপার চালবাজি কথাআমি জানি চালবাজি কথা

সে যা ভাবছে তাই বলছেমন রেখে কথা বলার বিদ্যা এখনাে বােধহয় শিখে উঠতে পারেনি। 

আমি ইজিচেয়ারে বসে আছিহাতে গতকালকের পত্রিকাপত্রিকা রেখেছিপড়ার জন্যে নামুখ আড়াল করে রাখার জন্যেমুখ আড়াল করে আমি রূপার কথা শুনছি। 

রূপা লাবণ্যের সঙ্গে লুডু খেলতে খেলতে কথা বলছেভাঙা ভাঙা কথা, যা একমাত্র ছােটদের সঙ্গেই বলা যায়| লাবণ্য সােনা, এই নাও চার চাললামওয়ান টু থ্রী ফোরতােমার দুই হয়েছে, তুমি দুই চালবেউহু, তুমি উল্টোদিকে চলেছসব খেলার নিয়ম আছেযে খেলার 

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(১০)-হুমায়ুন আহমেদ

যে নিয়ম সেই খেলা সেই ভাবে খেলতে হয়উল্টো খেলা যায় নাআমি কি বলছি তুমি কি বুঝতে পারছ লাবণ্য?” 

পারছি” 

ভেরি গুড়ছােটরা খুব সহজে জটিল জিনিস বােঝেবড়রা বুঝতে চায় নাবুঝিয়ে দিলেও ভাব করে যে বােঝেনিছােট থাকাই ভালতাই না ?” 

তুমি কি ছােট থাকতে চাও? চাই” 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *