পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(২১)-হুমায়ুন আহমেদ

হেলেন অব ট্রয় খুব সম্ভব ভুরু কুঁচকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকবেমেয়েরা সহজে গলায় দড়ি দেয় না

পাখি আমার একলা পাখিভাবীর সংগে আমার খুব কথা বলার শখএকদিন যদি কথা বলার জন্যে আপনাদের বাসায় যাই উনি কি রাগ করবেন?” 

রাগ করতে পারে নাতবে মানুষদের খুব সহজে রাগিয়ে দিতে পারেআচ্ছা সুমি যাইতাের মনে হয় দেরি হয়ে যাচ্ছে। 

‘আবার কবে আসবেন?” 

দেখিএমন খারাপ করে সেজেছিস কেন? কুৎসিত লাগছেতােকে তেলাপােকার মতাে লাগছে। 

সুমি রাগ করল নাহাসলসুমির সংগে এই একটা দিকে রূপার মিল আছেরূপার মতাে সেও রাগ করে নাআমি অনেকবার চেষ্টা করে দেখেছিরাগাতে গেলে হাসে

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(২১)-হুমায়ুন আহমেদ

যাই সুমি?| আচ্ছা যানচা খাওয়াতে পারলাম না, কিছু মনে করবেন নাতােকে কুৎসিত লাগছে এটা ঠিক না, ভালােই লাগছেঠাট্টা করে বলেছিলাম। 

সুমি চুপ করে রইলআর অপেক্ষা করার কোনাে মানে হয় নানাটকীয় ভঙ্গিতে অবশ্যি বলতে পারি, বিয়ে কোথায় হচ্ছে আমাকেও নিয়ে চলবিয়ে বাড়িতে যতাে বেশি লােক নিয়ে যাওয়া যায় ততােই ভালএকজনকে দাওয়াত করলে পুরাে ফ্যামিলী নিয়ে যেতে হয়যিনি দাওয়াত করেছেন তাঁর যেন আক্কেল 

গুড়ুম হয়ে যায়আমি সিগারেট ধরাতে ধরতে বললাম, সুমি। 

আমাকেও সংগে নিয়ে চল্অনেকদিন বিয়ে খাওয়া হচ্ছে না।’ আপনার কি মাথাটা খারাপ হয়ে গেল? বাসায় যান তাে। 

আচ্ছা যাচ্ছি, কথা বলে যতাে সময় নষ্ট করলি এর মধ্যে এক কাপ চা খাইয়ে ফেলতে পারতিস” 

বসুন তা হলেদেখি ব্যবস্থা করা যায় কিনাআমাদের অবশ্যি এম্নিতেও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবেবাবা এখনাে ফিরেন নিউনি ফিরলেই রওনা হব। 

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(২১)-হুমায়ুন আহমেদ

আমি বসলামবসার ঘরটাকে এরা মােটামুটি আস্তাবল বানিয়ে রেখেছেবিশাল এক খাট পাতাখাটের উপর ময়লা তােষককোন চাদর নেইকেউ বােধহয় সকালে মুড়ি খেয়েছেতােষকে এবং মেঝেতে মুড়ি পড়ে আছেমেঝেতে তিন জায়গায় খবরের কাগজের তিনটা পাতাটেবিল একটা আছেসেই টেবিলে আধ খাওয়া চায়ের কাপে ভন ভন করে মাছি উড়ছেরাতের বেলা মাছি উড়ার কথা না, কিন্তু বাড়িতে উড়ছে

চায়ের জন্যে অপেক্ষা করতে করতেই সুমির বাবা এসে পড়লেনএই কয়েকদিনে তিনি আরাে বুড়াে হয়ে পড়েছেনতাঁর আরেকটা দাঁত পড়ে গেছেতিনি আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বললেন, কে

জ্বি আমি, আমার নাম রঞ্জুকোন রঞ্জু?সফিকের বন্ধুআচ্ছ, সফিকের বন্ধুহারামজাদা আছে কোথায় তুমি জান ?জ্বিনাদেখা হবে তার সাথে? বুঝতে পারছি না। 

দেখা হলে বলবে বাসায় যেন না আসেবাসায় এলে জুতিয়ে হারামজাদার আমি ..

সফিক কি নতুন কিছু করেছে ? বই লিখেছে জান না?শুনেছিসেই মহান সাহিত্য আবার আমাকে উৎসর্গ করা হয়েছেলেখা আমার 

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(২১)-হুমায়ুন আহমেদ

পরম পূজনীয় বাবাকে ... আরে ছাগল, বাপের উপর ভক্তিতে গলে যাচ্ছিসবাপ সংসার টানতে টানতে ভারবাহী পশু হয়ে গেছে সেদিকে খেয়াল নেই? তােকে ডাক্তার বানাতে গিয়ে যে পথের ফকির হয়েছি সেদিকে খেয়াল আছে রে হারামজাদা? চাকরি পেয়েছে, চাকরি করবে নাসাহিত্য করবেকরাচ্ছি তােমাকে সাহিত্যজুতিয়ে আমি তােমার হাড়ি ভেঙ্গে দেবসাহিত্য কত প্রকার কি কি হাড়ে হাড়ে বুঝবে

উনি ভেতরে ঢুকে গেলেনসুমি চায়ের কাপ হাতে ঢুকল এবং বলল, খুব তাড়াতাড়ি চা খেয়ে চলে যানবাবার মেজাজ আকাশে উঠে গেছেবিয়ের উপহার কিনতে গিয়েছিলেন, পকেটমার হয়েছে। 

তােদের তাহলে আর বিয়েতে যাওয়া হচ্ছে না। 

মনে হয় না। 

বাসায় ফিরলাম রাত সাড়ে এগারােটায়রূপা ফেরেনিলাবণ্যও ফেরে নিমুনিয়া একবার ফিট হয়েছেতার মাথায় বর্তমানে পানি ঢালা হচ্ছে। 

লাবণ্যর বাবার মামা, যিনি নারায়নগঞ্জের মােজা কারখানার ম্যানেজার তাঁর ঠিকানা পাওয়া গেছেবাবুকে বলা হচ্ছে সেখানে গিয়ে লাবণ্যর বাবার ঠিকানা জোগাড় করতেবাবু বিস্মিতএরকম অদ্ভুত প্রস্তাব কেউ যে তাকে করতে পারে তাই সে ভাবতে পারছে না। 

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(২১)-হুমায়ুন আহমেদ

আমাকে নারায়ণগঞ্জে যেতে বলছ?মুনিয়া ক্ষীণ স্বরে বলল, হ্যাদশ দিন পর আমার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, এখন আমি যাব নারায়ণগঞ্জ ?হঁ্যাফাজলামী কথা আমার সঙ্গে না বললে ভাল হয়

মুনিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার মেয়ের কোন খোঁজ নেই এটা কি কোন ফাজলামী কথা

আমাকে যে নারায়ণগঞ্জ যেতে বলা হচ্ছে এটাই ফাজলামী কথা, কারণনারয়ণগঞ্জ কোথায় তাই আমি জানি না| আমি বললাম, কোন সমস্যা নেই, আমি যাব নারায়ণগঞ্জমুনিয়া, তুই কান্নাকাটি বন্ধ কর তােযা ভাত আনআমি ভাত খেয়েই রওনা হব। 

ভাত খেতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। 

আচ্ছা, ভাত খাব না, ভাল করে এক কাপ চা বানিয়ে আনচা খেয়ে রওনা দি। 

নারায়ণগঞ্জ যেতে হল নালাবণ্যর বাবা টেলিফোন করলেনজানা গেল বিশেষ কাজে আটকা পড়েছেন বলে তিনি লাবণ্যকে দিয়ে যেতে পারেন নিভােরবেলা নিয়ে আসবেনমুনিয়ার মুখে হাসি ফিরে এল। 

রাত একটার মতাে বাজে

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(২১)-হুমায়ুন আহমেদ

আমি বারান্দায় অলস ভঙ্গিতে হাঁটাহাঁটি করছিভাব করছি যেন কিছুই হয়নিভাবুক ধরনের একজন মানুষ ঘুমুবার আগে নৈশ ভ্রমণের একটা অংশ সারছেনভঙ্গিটাকে আরাে জোরদার করার জন্য গুনগুন করে গান গাওয়া যায় কিংবা শিস দেয়া যায় অবশ্যি তার এখন প্রয়ােজন নেইকেউ আমাকে লক্ষ্য করছে নাবাড়ি নিঝুম

সবাই ঘুমিয়ে পড়েছেকোনাে কিছু চিন্তা না করে মানুষ কি হাঁটাহাঁটি করতে পারে? একটা মানুষ হেঁটে যাবে কিছুই ভাববে নাতার মাথা থাকবে ফাঁকা, আমার মনে হয় এটা খুবই অসম্ভব একটা ব্যাপারমানুষ সারাক্ষণই ভাবেতার মস্তিষ্ক কখনাে বিশ্রাম নেয়নামস্তিষ্কের বিশ্রাম গ্রহণের কোনাে ক্ষমতা নেই। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *