পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(৯)-হুমায়ুন আহমেদ

‘পুলিশে খবর দেয়া হয়েছিলপুলিশ ছেলের নাম শুনে পিছিয়ে গেছেপুলিশ বলছে, এখনাে তাে কিছু ঘটেনিঘটলে দেখা যাবেশুধুমাত্র সন্দেহের বশে তাে আমরা এ্যাকশন নিতে পারি নাএখন আপনি ভরসা। 

পাখি আমার একলা পাখিআপনার কি করে ধারণা হল অমি অসহায় তরুণীদের উদ্ধারের ব্রত নিয়েছি

তরুণীর নাম শুনলে আপনি খুব আগ্রহ করে এই ব্রত নেবেন বলে আমার ধারণা। 

কি নাম

তার নাম রূপা। 

আমি প্রথমে ভাবলাম এটা নিশ্চয়ই রূপার কঠিন কোনাে রসিকতার একটি। 

তারপর মনে হল রূপা তাে কখনাে রসিকতা করে নাঅন্যের রসিকতায় খিলখিল করে হাসে নিজে তাে কখনাে করে নারূপা তরল গলায় বলল, মনে হচ্ছে কথা 

শুনে পাথর হয়ে গেছেন

বুঝতে চেষ্টা করছি‘ 

শুনুন, খুব মন দিয়ে শুনুনআমার তালিকায় তিনটি নাম আছেআপনি হচ্ছেন দুনম্বরপ্রথমজনকে টেলিফোনে পাইনি, ওদের টেলিফোন নেইকাজেই আপনাকে টেলিফোন করলামআপনার সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য যে আপনাকে পেয়ে গেলামআপনি যদি রাজি না থাকেন, স্পষ্ট গলায় বলে দিনআমি তৃতীয়জনকে টেলিফোন করবো। 

ঠাট্টা করছেন ? না, ঠাট্টা করছি নাপ্রথমজনের নাম কি

প্রথমজনকে আপনি চেনেন নাপ্রথমজনের নাম জেনে কোনো লাভ নেইতৃতীয়জনকে চেনেন, কিন্তু তার নামটা বলতে চাচ্ছি নাআপনাকে চিন্তা করার জন্য আধঘণ্টা সময় দিলামযদি রাজি থাকেন তাহলে আধঘণ্টা পর আমাদের বসায় চলে আসবেন

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(৯)-হুমায়ুন আহমেদ

বিয়ে কি আপনাদের বাসায় হবে?” 

তা কি করে হয় ! আমাদের বাসার চারদিকে মস্তান ঘুরঘুর করছেসন্দেহ হলেই ককটেল ফোটাবেব্রাস ফায়ার করবে। 

সত্যি বলছেন?” 

এক রত্তি বানিয়ে বলিনিআপনি যদি রাজি থাকেন চলে আসুনআমি ইতিমধ্যে পুলিশকে টেলিফোন করছিপুলিশের এক এআইজি আছেন বাবার বন্ধুতাকে বলব চাচা, আমাদের বিয়ে দিয়ে দিন। 

আপনার বাবা? উনি কোথায়? বাবা ইংল্যাণ্ডেতার সাথে টেলিফোনে কথা হয়েছে“উনি কি রাজি ?” 

রূপা হাসতে হাসতে বলল, আমি তাে তাঁর কোনাে মতামত চাইনিঘটনা বলেছি এখন বলুন আপনি কি রাজি

আমি রাজি আছিএতাে চট করে রাজি হবেন নাআধঘণ্টা সময় নিনরাখি, কেমন

পুলিশের উপস্থিতিতে বিয়ে হল রূপাদের চাচার বাসায়বিয়ের পর পুলিশের

জীপে করেই আমরা বেরুলাম। 

রূপা বলল, এখন থেকে তােমাকে তুমি করে বলবশােন, আমার কিছু টুকিটাকি জিনিস কিনতে হবে, টুথব্রাশ, চিরুনি, ঘরে পরার শাড়ি তােমার কাছে কি টাকা আছে

অসুবিধা নেইআমার কাছে আছেনতুন স্বামীরা স্ত্রীর টাকায় কিছু কিনতে চায় না বলেই জানতে চেয়েছি” 

আমাকে নিয়ে তুমি সারাসরি তােমার বাসায় তুলবে?” 

অসুবিধা হবে না তাে? চিন্তা করে দেখঅসুবিধা হবে না‘ 

তােমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে অসুবিধা হবেতুমি বরং টেলিফোনে আগে কথা বলে নাওওরা খানিকটা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে থাক। 

টেলিফোন করার দরকার নেই। 

রূপাকে নিয়ে বাসায় উপস্থিত হলাম রাত আটটার দিকেরূপার বাবার বন্ধু এআইজি খালেকুর রহমান পুলিশের জীপে আমাদের নামিয়ে দিলেন। 

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(৯)-হুমায়ুন আহমেদ

রাত সাড়ে নটায় বাবার একটা মাইল্ড স্ট্রোক হলআমার বাসর রাত কাটল সােহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করে। 

আমি একা না, বাবুও সঙ্গে হাঁটছেতাকে অসম্ভব চিন্তিত মনে হচ্ছেঘন ঘন সিগারেট ধরাচ্ছেবড় ভাই হিসেবে সে আমাকে খানিকটা সমীহ করত, সামনে সিগারেট খেত নাআজ সে সব কিছুই বােধহয় মনে নেইতবে আমার ধারণা, বাবাকে নিয়ে সে যতটা না চিন্তিত তার চেয়েও বেশি চিন্তিত যে আজ রাতটা নষ্ট হলরাতটা কাজে লাগিয়ে অনেক কিছু সে নিশ্চয়ই পড়ে ফেলত নন নিউটোনিয়ান ফ্লো না কি যেন বলে ঐ সব। 

দাদা। 

‘ 

বিরাট ঝামেলা হয়ে গেল মনে হচ্ছেপড়াশােনার ক্ষতির কথা বলছিস?” 

সেই ঝামেলা তাে আছেইঅসুখবিসুখ, হাসপাতালবাসা ছােটাছুটিতার উপর তুমি আবার হুট করে বিয়ে করে ফেললেনিয়ে বাড়িতেও নিশ্চয় টেনশন থাকবে। 

তা কিছুটা থাকবে। 

বাবু সিগারেট ধারতে ধরাতে বলল, তুমি এই ঝামেলাটা আমার পরীক্ষার পরে করলেও পারতেমারাত্মক একটা ডিসটার্বেন্স হবে পড়াশােনায়ভাবী নিশ্চয়ই ছাদে ঘুরঘুর করবেমেয়েদের একটা টেনডেসিই থাকে ছাদে যাওয়াকারণে 

অকারণে ছাদে যাবে। 

আমি নিষেধ করে দেব। 

ইমমেডিয়েটলি কিছু বলার দরকার নেইকয়েকটা দিন যাকবাবার অবস্থা তােমার কি রকম মনে হচ্ছে

যাত্রা টিকে যাবেন বলে মনে হয়। 

বাবু শুকনাে মুখে বলল, সব কটা ঝামেলা পরীক্ষার আগে শুরু হলধর ভাল মন্দ কিছু যদি হয়, তাহলে এক মাস আর বই নিয়ে বসা যাবে নাআত্মীয়স্বজন... বিশ্রী অবস্থা হবে ... আজকের পুরাে রাতটা নষ্ট হলকাল দিনটাও নষ্ট হবে

পাখি আমার একলা পাখি-পর্ব-(৯)-হুমায়ুন আহমেদ

কাল দিনটা নষ্ট হবে কেন?” 

রাত দুটা থেকে ভাের সাড়ে সাতটা এই সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা না ঘুমালে দিনে পড়তে পারি নামাথা জাম হয়ে থাকেএখন বাজে তিনটাএক ঘণ্টা তাে চলেই গেলবিরাট সমস্যা। 

সমস্যা তাে বটেই। 

আমরা এখন কি করব? বাকি রাত হাসপাতালের বারান্দাতেই হাঁটাহাঁটি করে কাটাব?” 

বাবু বিরক্ত মুখে বলল, আমরা হাঁটাহাঁটি করে তাে বাবাকে কোন ভাবে হেল্প করতে পারছি নালাভটা কি হচ্ছে

তুই কি চলে যেতে চাচ্ছিস?” 

আমি চলে গিয়েই বা করব কি? বাসায় ফিরতে ফিরতে ধর রাত সাড়ে তিনটা বেজে যাবে ... তারপর কি আর রেস্ট নেবার সময় থাকবে

আমি বললাম, চল চা খেয়ে আসিহাসপাতালের আশেপাশে চায়ের দোকান সারা রাত খােলা থাকেবাবু বিরস মুখে বলল, চল| চা খেতে খেতে বাবু বলল, মুনিয়া বলছিল, তুমি যে মেয়েটিকে বিয়ে করেছ সে নাকি দারুণ রূপবতী। 

তুই এখনাে দেখিস নি ?

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *