বহুব্রীহি পর্ব (২১)- হুমায়ূন আহমেদ

বইটির দ্বিতীয় চ্যাপ্টারের শিরােনামরসিকতা মেয়ে মানুষএখানে লেখক বলছেন আমাদের একটি ধারণা আছে মেয়েরা রসিকতা পছন্দ করেধারণা সঠিক নয়

বহুব্রীহিমেয়েরা রসিকতা একেবারেই পছন্দ করে নাকারণ কখনাে কোন মেয়েকে রসিকতা করতে দেখা যায় নাকেউ যদি মেয়েদের সঙ্গে রসিকতা করে তাহলে মেয়েরা তার সম্পর্কে নিম্নলিখিত ধারণা পােষণ করেএই ধারণা পাচশত মেয়েদের মাঝ থেকে জরীপের মাধ্যমে নেয়া। 

শতকরা হিসাব 

ধারণা লােকটা ফাজিল লােকটা চালবাজ লােকটা বােকালােকটা চালাক 

বাকি তিন ভাগ মহিলা কোন রকম মন্তব্য করতে রাজি হননিকাজেই প্রিয় পাঠক আপনি যাই করুন মেয়েদের সঙ্গে রসিকতা করবেন নাযদি করতেই হয় খুব সহজ রসিকতা করবেন যা কোমলমতি শিশুরাও ধরতে পারে

যে সব রসিকতা বুঝতে বুদ্ধির প্রয়ােজন ভুলেও সে সব রসিকতা করবেন নানিম্নে রসিকতার কিছু নমুনা দেয়া গেলএইসব রসিকতা করা যেতে পারে। 

বহুব্রীহি পর্ব (২১)- হুমায়ূন আহমেদ

স্ত্রী স্বামীকে বলছেন, ওগাে পাশের বাসার ভদ্রলােক কত ভালঅফিসে যাবার সময় রােজ তাঁর স্ত্রীকে চুমু দিয়ে যানতুমি রকম কর না কেন? স্বামী অবাক হয়ে বললেন, আমি কি করে করব? আমি কি ভদ্র মহিলাকে চিনি

মন্তব্য: জরীপে দেখা গেছে শতকরা ২৫ ভাগ মহিলা এই রসিকতা বুঝতে পারে না তবু হাসেকাজেই একটু সাবধান থাকা ভালপ্রসঙ্গত উল্লেখ্য যৌন বিষয়ক রসিকতা মেয়েরা না বুঝলেও খুব পছন্দ করে। 

শিক্ষক জিজ্ঞেস করছেন সম্রাট শাজাহান কোথায় মারা গেছেন? ছাত্র বলল, ইতিহাস বইসত্ত্বর পৃষ্ঠায়। 

মন্তব্যঃ এই রসিকতা শতকরা ৭৮ ভাগ মহিলা বুঝতে পারেনযারা বুঝতে পারেন নাতাঁরা সাধারণত অবাক হয়ে বলেন, সত্ত্বর পৃষ্ঠায় মারা গেছে? আপনি তাহলে বলতে চাচ্ছেন সতুর নাম্বারটা আনলাকি? 

এক পাগলের খুব বই পড়ার নেশাসব বই সে পড়ে না শুধু নাটকের বই পড়েপড়তে পড়তে নাটকের যাবতীয় বই সে পড়ে শেষ করে ফেললআরাে বই চায়উপায় না দেখে তখন তাকে একটা টেলিফোন ডিরেক্টরি ধরিয়ে দেয়া হলসে মহানন্দে দিন দশেক ধরে তাই পড়ছেতাকে জিজ্ঞেস করা হলকেমন লাগছে পড়তে

বহুব্রীহি পর্ব (২১)- হুমায়ূন আহমেদ

পাগল বলল, অসাধারণতবে চরিত্রের সংখ্যা বেশীমনে রাখতে একটু কষ্ট হচ্ছেমন্তব্যঃ এই রসিকতা কোন মহিলাই ধরতে পারেন না তবে সবাই খুব হাসেনকেন হাসেন এটা একটা রহস্যদেখা গিয়েছে অনেক মহিলা হাসতে হাসতে হিস্টিরিয়াগ্রস্তের মত হয়ে যানকাজেই এই রসিকতা করার আগে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করা ভাল৷ 

মহিলাদের সঙ্গে রসিকতা করার সময় পাঞ্চ লাইনে যাবার আগেই উচ্চ স্বরে হাসা শুরু করা উচিত। যাতে মহিলারা বুঝতে পারেন কোথায় হাসতে হবেমনসুর যখন বইয়ের এই অংশে তখন মিলি ঢুকলসে ডাক্তারকে বাসায় নিয়ে যেতে এসেছেকারণ হার্বিশ ঘন্টা পার হয়েছে সােবাহান সাহেব তিন কাপ পানি ছাড়া কিছুই খাননিতার শরীরের তাপ নেমে এসেছেচোখ হয়েছে লালচেআগে নিজেই বসে বসে লিখতেন এখন তাও পারছেন না। 

মিলি মনসুরের পাশের চেয়ারে বসতে বসতে ফুফিয়ে কেঁদে উঠলমনসুর হতভম্বমিলি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, খুব খারাপ খবর আছেআপনি আমার সঙ্গে চলুন। 

সােবাহান সাহেব কোন কিছু না খেয়ে ১৬৬ ঘন্টা পার করেছেনমােটামুটি হাসি তামাশা হিসেবে যার শুরু হয়েছিল তার শেষটা সে রকম রইল নামনসুর ঘােষণা করেছে আর বার 

ঘন্টার ভেতর যদি কিছু খাওয়ানাে না যায় তাহলে হাসপাতালে নিয়ে ফোর্স ফিডিং করা উচিতরক্তে ইলেকট্রোলাইটে পরিমাণ কমে গেছে। 

বহুব্রীহি পর্ব (২১)- হুমায়ূন আহমেদ

একমাত্র ফরিদকেই পুরাে ব্যাপারটায় আনন্দিত মনে হচ্ছেতার ছবির কাজ এখনাে শুরু হয়নিকারণ চিত্রনাট্যে শেষ মুহূর্তে একটা রদ বদল করা হয়েছেফরিদ ঠিক করে পুরাে দৃশ্যটি একটা গানের উপর করা হবেগানটা এমন যার সঙ্গে ক্ষুধার কোন সম্পর্ক নেইসেই গানও সিলেক্ট করা হয়েছেহলুদিয়া পাখি সােনার বরণ পাখিটি ছাড়িল কে

গানের সঙ্গে ছবির যদিও কোন সম্পর্ক নেই তবু ছবিটা এমন ভাবে করা হবে যে একটা সম্পর্ক দীড়িয়ে যাবেখুবই কঠিন কাজতবে জীবনের আনন্দতাে কঠিন কাজেইসহজ কাজ সবাই পারেকঠিন কাজ পারে কজনে? | ছবি নিয়ে মিলির সঙ্গে ছােটখাট ঝগড়ার মতও হলমিলি চোখ মুখ লাল করে এসে বলল, একটা মানুষ মরে যাচ্ছে আর তুমি আছ ছবি নিয়ে

ফরিদ বলেছে, জীবনটাই এরকম মিলি, কারাে জন্যে কোন কিছু আটকে থাকে নাLife goes on

মামা তুমি পাথরের তৈরী একজন মানুষতুই নেহায়েৎ ভুল বলিসনি” 

একটা মানুষ না খেয়ে মরে যাচ্ছে আর তুমি কিনা বানাচ্ছ ক্ষুধাহেমামা চক্ষু লজ্জারােতে একটা ব্যাপার আছেআছেনা

শিল্প সাহিত্যের কাছে চক্ষু লজ্জা কিছু নারে মা, শিল্প সাহিত্য চক্ষু লজ্জার অনেক উপরে। 

তুমি কিছু মনে করাে না মামাতােমার বুদ্ধি শুদ্ধিও কম‘ 

না আমি কিছুই মনে করছি নাস্বয়ং সক্রেটিসকে লােকে গাধা বলেছেআর্কিমিডিসকে ছােট বেলায় ডাকা হত সিকি বুদ্ধির মানুষ বুঝলি

মিলি জবাব না দিয়ে উঠে পড়েছেমামার সঙ্গে তর্ক করা অর্থহীন। 

বাড়ির কান্ডকারখানা দেখে সবচে বেশী হকচকিয়ে গেছে এমদাদসে কল্পনাও করতে পারেনি ত্যি ত্যি একটা মানুষ না খেয়ে এতদিন পার করে দেবেএরকম অবস্থায় কোন কথা বার্তাওতাে বলা যায় নাযে পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিল সেই পরিকল্পনা কোন কাজে আসছে না

বহুব্রীহি পর্ব (২১)- হুমায়ূন আহমেদ

নাতনীটার একটা ব্যবস্থা করা দরকারদেখে শুনে একটা বিয়ে দিয়ে দেয়াগ্রামের বাড়িতে তাকে রাখা এখন আর সম্ভব হচ্ছে নাকিছু গুড়া পাড়া ছেলে পেছনে লেগেছেএদের মতলব ভাল নাগত বষায় বদি শেখের বৌকে ধরে পাটক্ষেতে নিয়ে গেছেলজ্জায় এই ঘটনা বদি শেখ কাউকে বলেনিনা বললেও কারাের জানতে বাকি নেই

ঘটনার নায়করাই সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেএদেরই একজন পুতুলকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে এবং আকারান্তরে জানিয়েছে প্রস্তাবে রাজি না হলে পাটক্ষেতে যেতে হবে। এর পর আর গ্রামে থাকা সম্ভব নাএমদাদ নাতনীকে নিয়ে বলতে গেলে পালিয়েই এসেছেসে জানে ঘটনা শুনলে সােবাহান সাহেব একটা ব্যবস্থা করবেনই কিন্তু ঘটনা শুনানাের সময়ইতাে হল নানা খেয়ে মর মর 

অবস্থা। 

সব মন্দ জিনিষের একটা ভাল দিকও আছেসােবাহান সাহেবের এই অসুখের ফলে মনসুর নামের এই ডাক্তার ছেলেটার সঙ্গে পরিচয় হলএই ছেলে ঘন ঘন আসছেপুতুলের সঙ্গে এই ছেলের বিয়ে দেয়া কি একেবারেই অসম্ভব? পুতুল দেখতে তাে খারাপ না

চোখে কাজল টাজল দিলে মাশাআল্লাহ ভাল লাগে। তবে মেয়েটা হয়েছে বদযেটা করতে বলা হবে সেটা করবে না। 

একটু সেজেগুজে ডাক্তারের সামনে হাঁটাহাটি করলে কি কোন অসুবিধে আছে? এক কাপ চা এনে দিবেএক গ্লাস পানি আনবেযাবার সময় বলবে, ডাক্তার সাব ভাল আছেনআবার আসবেন! একটু ঢংঢং না করলে হয়? দুনিয়াটাই হচ্ছে ঢং ঢংয়ের। 

অবশ্যি এমদাদ চেষ্টার ত্রুটি করছে নাডাক্তারের সঙ্গে দেখা হলেই গল্প গুজব করছেএকটা সম্পর্ক পাতানের চেষ্টায় আছেকোনমতে একটা সম্পর্ক তৈরী করে ফেললে নিশ্চিন্তসেই সম্পর্কও করা যাচ্ছে নাডাক্তারকেও একটু বােকা কিসিমের বলে মনে হচ্ছেএটা একদিক দিয়ে ভালস্বামী হিসেবে বােকাদের কোন তুলনা নেই

বহুব্রীহি পর্ব (২১)- হুমায়ূন আহমেদ

যত বােকা তত ভাল স্বামীডাক্তারটা কত বােকা সেটাও ঠিক ধরা যাচ্ছে নাতবে এই বাড়ির মিলি মেয়েটির সঙ্গে বড় বেশি খাতিরএটা একটা সন্দেহজনক ব্যাপারএকটু লক্ষ্য রাখতে হবেগতকাল অবশ্যি ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে কিছু কাজ করা হয়েছেএইসব কাজ ঠান্ডা মাথায় করতে হয়এখন বয়স হয়ে গেছেমাথা আগের মত ঠান্ডা নাগতকাল ডাক্তারের সঙ্গে কথাবার্তা যা হল তা হচ্ছে 

এমদাদঃ এই যে ডাক্তার ভাই, শরীর ভাল? জিনহেন তাে আমারে? আমি এমদাদ। 

পাকুন্দিয়ার এমদাদআমার নাতনীটার শরীরটা খারাপভাবলাম একটু অষুধ 

আপনার কাছ থেকে নিয়ে যাইডাক্তারঃ কি অসুখ

এমদাদঃ মাথার যন্ত্রণাআরাে কি সব যেন আছেআমি নিয়ে আসবনে আপনের কাছে। 

দেখে শুনে যাই হােক একটা কিছু দিবেন। আপনের উপরে আবার খুব ভক্তিআপনাকে খুবই ভাল পায়এই কথায় ডাক্তার খানিকক্ষণ খুক খুক করে কাশলএটা খুব ভাল লক্ষণকাজেই কথাবাতা এই লাইনেই চালানাে ভালএমদাদ গলার স্বর খানিকটা নীচু করে বলল, মেয়েদের মন বােঝা বড় মুশকিল

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *