একটি প্রবন্ধের বই আছে। কেউ সেই বই পড়েনা।
আমার বাড়ি ভাড়া নেওয়ার ইচ্ছা তােমার কেন হল? শুনেছি আপনি ভাড়া খুব কম নিতেন। এ্যাডভান্সের ঝামেলা ছিল না। তাছাড়া বাড়িটাও আমার পছন্দ হয়েছে।”
‘তুমি কি ব্যাচেলার? ‘জ্বিনা। আমার দু‘টি বাচ্চা আছে। ‘দেশের সমস্যা নিয়ে কি তুমি ভাব? ‘আপনার কথা বুঝতে পারলাম না।
এই যে দেশে অসংখ্য সমস্যা এই সব নিয়ে কখনাে ভাব? কোন সমস্যার কথা বলছেন? সব রকম সমস্যা। ‘জ্বি–না,ভাবিনা। ‘তুমি একজন লেখক মানুষ, তুমি এই সব নিয়ে ভাব না? তুমি কি রকম লেখক? ‘খুবই বাজে ধরণের লেখক। ‘তুমি এখন যেতে পার। তােমাকে বাড়ি ভাড়া দেব না।
দেবেন না? ‘না। তােমাকে আমার পছন্দ হয় নি। আপনাকেও আমার পছন্দ হয় নি। তবে আপনার বাড়ি পছন্দ হয়েছিল। ‘আমাকে পসুল না হবার কারণ?
আপনি হচ্ছেন এক শ্রেণীর পয়সাওয়ালা অকর্মন্য বৃদ্ধ যারা দেশের সমস্যা নিয়ে ভাবে এবং মনে করে এই ভাবনার কারণে সে অনেক বড় কাজ করে ফেলছে। এক ধরণের আত্মতৃপ্তি পায়। আসলে আপনার এইসব চিন্তা ভাবনা অর্থহীন এবং মূল্যহীন। আপনার যা করা উচিত তা হচ্ছে–রগরগে থ্রীলার পড়া। মাঝে মাঝে দান দক্ষিণী করা যাতে পরকালে সুখে থাকতে পারেন। ইহকাল এবং পরকাল দু’টিই ম্যানেজ করা থাকে বলে।
বহুব্রীহি পর্ব (৮)- হুমায়ূন আহমেদ
‘অভদ্র ছােকরা। ঔপ। ঔপ।
আপনি খুব বেশি রেগে যাচ্ছেন। আপনার প্রেসার ট্রেসার নেইতাে? প্রেসার থাকলে সমস্যা হয়ে যেতে পারে। . বহিষ্কার। বহিষ্কার। এই মুহূর্তে বহিষ্কার।
সােবাহান সাহেব প্রচন্ড চিৎকার করতে লাগলেন। মিলি বারান্দায় ছুটে এল। চোখ বড় বড় করে বলল, কি হয়েছে?
এই ছােকরাকে ঘাড় ধরে বের করে দে। ফাজিলের ফাজিল, বদের বদ। মিলি কড়া গলায় বলল, আপনি বাবাকে কি বলেছেন?
আনিস অবস্থা দেখে পুরােপুরি হকচকিয়ে গেছে। কিছু একটা বলতে গিয়েও সে বলতে পারল না। মিলি বলল, প্লীজ আপনি এখন কথা বলে আর ঝামেলা বাড়াবেন না। চলে যান।
আনিস গেট পার হয়ে চলে যাবার পর সােবাহান সাহেব বললেন, কাদের বাসায় আছে? মিলি বলল, আছে।। ‘কাদেরকে বল ঐ ছােকরাকে ধরে আনতে। ‘বাদ দাও না বাবা। আর কেন? ‘যা করতে বলছি কর। ‘ভদ্রলােক কে? ‘আমাদের নতুন ভাড়াটে।
‘তােমার কথা বুঝলাম না বাবা।
‘তিনতলার ঘর দু’টা তার কাছে ভাড়া দিয়েছি। ছােকরাকে আমার পছন্দ হয়েছে। ছােকরার মাথা পরিষ্কার।
কাদের আনিসকে আনতে গেল। সােবাহান সাহেব নিজেই দোতলার ছাদে উঠলেন ঘর দুটির অবস্থা দেখার জন্যে। অনেক দিন তালাবন্ধ হয়ে আছে। পরিস্কার টুরিস্কার করানাে দরকার।
দু’টি ঘর। একটা বাথরুম, রান্নাঘর। ছােট পরিবারের জন্যে খুব ভালই বলতে হবে। ঘর দু’টির সামনে বিশাল ছাদ। ছাদে অসংখ্য টব, টবে ফুলের চাষ হচ্ছে। মিলির শখ।
বহুব্রীহি পর্ব (৮)- হুমায়ূন আহমেদ
মিনু ছাদে উঠে এলেন। তার মুখ থমথমে। কিছুক্ষণ আগে মিলির কাছে তিনি বাড়ি ভাড়া দেবার খবর শুনেছেন। রাগেতার গা জ্বলে যাচ্ছে। ‘তুমি নাকি ছাদের ঘর দু’টি ভাড়া দিচ্ছ?” ‘হ্যা। ‘কাকে দিলে? নামটা মনে আসছেনা। ফাজিল ধরনের এক হােকরা। ‘বাড়ি ভাড়া দেয়া কি খুব দরকার ছিল?
‘তাহলে, বাড়ি ভাড়া দিলে কেন? ‘আমার দরকার ছিল না, কিন্তু ঐ ফাজিলের দরকার ছিল। ‘তুমি হুট করে একেকটা কাজ কর আর সমস্যা হয়!‘
সােবাহান সাহেবের মেজাজ চট করে খারাপ হয়ে গেল। তিনি থমথমে গলায় বললেন, আমি সমস্যার সৃষ্টি করি? | মিনু চুপ করে গেলেন। সােহান সাহেব চাপা গলায় বললেন, আমার জন্য কারাের কোন সমস্যা হােক তা আমি চাই না।
এই বলেই তিিন নীচে নেমে গেলেন। মিনু গেলেন পেছনে পেছনে।
একতলার বারান্দায় আনিস দাঁড়িয়ে আছে। কাদের তাকে নিয়ে এসেছে। আনিস খানিকটা শংকিত বােধ করছে। বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আবার ডেকে আনার অর্থ সে ঠিক ধরতে পারছে না। সােবাহান সাহেব তার কাছে এসে দাঁড়ালেন এবং শুকনাে গলায় বললেন, এসেছ?
আনিস বলল, জ্বি। আপনি ডেকে পাঠিয়েছিলেন।
সােবাহান সাহেব বললেন, তােমাকে বাড়ি ভাড়া দেয়া হবে না এটা বলার জন্যে ডেকে পাঠিয়েছি।
বহুব্রীহি পর্ব (৮)- হুমায়ূন আহমেদ
সেতাে একবার বলেছেন। ‘আবার বললাম, আবার বলায় তাে দোষের কিছু নেই।‘ ‘জ্বি না নেই। দ্বিতীয়বার বলাটা ভাল হয়েছে। এখন কি আমি যেতে পারি? ‘হাঁ যাও। ‘স্নামালিকুম।
আনিস গেটের বাইরে বেরুতেই মিনু বললেন, কাদের যা ভদ্রলােককে ডেকে নিয়ে আয়। কাদের সােবাহান সাহেবের দিকে তাকাল। তিনি কিছু বললেন না। মিনু বলল, দাঁড়িয়ে আছিস কেন যা। কাদের বিমর্ষ মুখে বের হল। বড় যন্ত্রণায় পড়া গেল।
আনিস বড় রাস্তা পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। কাদের সেখানেই তাকে ধরল, নিপ্রাণ গলায় বলল, আপনেরে বুলায়।
আনিস বলল, ঠাট্টা করছ? ‘জিনা৷ আবার যাইতে বলছে।
আবার যাব?” ‘যাইতে ইচ্ছা না হইলে যাইয়েন না। আমারে খবর দিতে কইছে খবর দিলাম। যাওন না যাওন আফনের ইচ্ছা।
বহুব্রীহি পর্ব (৮)- হুমায়ূন আহমেদ
‘নাম কি তােমার? ‘আমার নাম মােহাম্মদ আব্দুল কাদের। সৈয়দ মােহাম্মদ আব্দুল কাদের। ‘সৈয়দ নাকি।
ঞ্জি। বােগদাদী সৈয়দ। ‘বলকি? বােগদাদী সৈয়দ যখন খবর নিয়ে এসেছে তখন তো যেতেই হয়।
আনিস তৃতীয়বারের মত নিরিবিলি বাড়ির বারান্দায় এসে উঠল। সােবাহান সাহেব তার দিকে না তাকিয়েই বললেন, কাদের ভদ্রলােককে তিনতলার ঘর দুটার চাবি এনে দে।
আনিসবলল, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার। অনেক ধন্যবাদ। রাত আটটার মত বাজে।
মিলি বিরক্ত মুখে খাতা কলম নিয়ে বসে আছে। তার সামনে চার পাঁচটা বই। আগামীকাল সকাল নটায় তার টিউটোরিয়েল ক্লাস। এসাইনমেন্টের কিছুই এখনাে করা হয়নি। বিষয়টাই মাথায় ঢুকছে না। এর আগের টিউটোরিয়েলে বি মাইনাস পেয়েছে। এবার মনে হচ্ছে সি মাইনাস হবে।