বাংলা সাহিত্যের সর্বত্রই উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন বিশিষ্ঠ প্রবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও আপসহীন কথাসাহিত্যিক শেখ আজিজুর রহমান (শওকত ওসমান)। পশ্চিম বঙ্গের হুগলী জেলার সবর সিংপুর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ও গুলজান বেগমের জেষ্ঠ্য সন্তান ছিলেন শওকত ওসমান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সংস্কৃতি, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি বিষয়গুলো অত্যন্ত সুনিপণভাবে তাঁর সাহিত্যকর্মে ফুটিয়ে তুলেছেন।
- বিশিষ্ট লেখক শেখ আজিজুর রহমান (শওকত ওসমান) জন্মগ্রহন করেন – ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি।
- যে প্রতিষ্ঠান হতে তিনি শিক্ষা জীবন সম্পন্ন করেন – কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে (বাংলাতে এম. এ. সম্পন্ন করেন)।
- তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস – জননী (১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হয়)
- ‘পল্লী জননী দরিয়া বিবি, সন্তানকে মানুষ করার জন্য ইয়াকুবের শয্যাসঙ্গিনী হয় এবং ইয়াকুবের ঔরসে গর্ভে সন্তান এলে ঐ সন্তানকে দরিয়া বিবি সামাজিক কটুকথা সহ্য করেও অসীম মমতায় পালন করে’ উক্ত বিষয়গুলো যে উপন্যাসে লক্ষ্যণীয় – শওকত ওসমানের ‘জননী’ উপন্যাসে।
- তাঁর রচিত ‘জননী’ উপন্যাসে উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে – দরিয়া বিবি, আজহার, ইয়াকুব, মোনাদি প্রমুখ।
- যে গন্থ রচনার জন্য শওকত ওসমানকে আদমজি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয় – ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাসের জন্য (১৯৬৬ সালে)।
- তাঁর রচিত শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হয় – ক্রীতদাসের হাসি।
- ‘ক্রীতদাসের হাসি’ তাঁর যে শ্রেণীর উপন্যাস – প্রতীকাশ্রয়ী উপন্যাস (১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়)।
- বাগদাদের খলিফা হারুন-অর-রশিদের অত্যাচারী শাসনামল এবং ক্রীতদাস তাতারি ও বাঁদি মেহেরজানের প্রণয়ে বাধা সৃষ্টি প্রভৃতি বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে – ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাসে।
- ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাসে ক্রীতদাস তাতারি ও বাদশা হারুন-অর-রশিদ চরিত্র যে দুটি রূপক অর্থে দেখানো হয়েছে – ক্রীতদাস তাতারির হাসি (বাঙ্গালির স্বাধীনতার প্রতীক) এবং বাদশা হারুন-অর-রশিদ (আইয়ুব খানের শাসনের প্রতীক)।
- তাঁর রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে – জাহান্নাম হইতে বিদায় (১৯৭১), দুই সৈনিক (১৯৭৩), নেকড়ে অরন্য (১৯৭৩), এবং জলাঙ্গী (১৯৮৬)।
শওকত ওসমান এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম
- ‘জাহান্নাম হইতে বিদায়’ উপন্যাসটি যে পত্রিকায় প্রকাশিত হয় – ‘দেশ’ নামক পত্রিকায় (কলকাতা অবস্থানকালে লেখা)।
- তাঁর রচিত অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে – সমাগম (১৯৬৭), চৌরসন্ধি (১৯৬৮), রাজা উপখ্যান (১৯৭১), পতঙ্গ পিঞ্জর (১৯৮৩), আর্তনাদ (১৯৮৫), রাজপুরুষ (১৯৯২), রাজসাক্ষী (১৯৮৫) প্রভৃতি।
- ‘সংস্কৃতির চড়াই উৎরাই’ শওকত ওসমানের যে শ্রেণীর রচনা – প্রবন্ধ (১৯৮৫)।
- তাঁর অন্যান্য প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে – মুসলিম মানসের রূপান্তর, হপ্তম পষ্ণম, ভাষা ভাবনা, নষ্ঠতান অষ্ঠভান, তিন মির্জা প্রভৃতি।
- তাঁর যে গল্প গ্রন্থের জন্য তিনি ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন – ঈশ্বরের পতিদ্বন্দ্বী (১৯৯১ সালে)।
- ‘জন্ম যদি তব বঙ্গে’ গল্পগ্রন্থটি তাঁর যে শ্রেণীর রচনা – মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক।
- তাঁর অন্যান্য গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – পিজরা পোল, প্রস্তর ফলক, নেত্রপথ, জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প, উভশৃঙ্গ প্রভৃতি।
- ‘আমলার মামলা’ এবং ‘ তস্কর ও লস্কর’ বিখ্যাত নাটক দুটির রচয়িতা – শওকত ওসমান।
- তাঁর অন্যান্য নাটকের মধ্যে রয়েছে – কাকরমণি, পূর্ণ স্বাধীনতা চূর্ণ স্বাধীনতা, বাগদাদের কবি প্রভৃতি।
- ‘ওটেন সাহেবের বাংলো’ তাঁর যে শ্রেণীর রচনা – শিশুতোষ গল্প।
- মৌলবাদের আগুন নিয়ে খেলা, মুজিবনগর, স্বদেশের সন্ধানে, অস্তিত্বের সঙ্গে সংলাপ, গ্রন্থগুলো লেখকের যে শ্রেণীর রচনা – স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ।
- তাঁর রচিত ‘ বনি আদম’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – দৈনিক আজাদ পত্রিকায় (১৯৪৬ সালে)।
- এক ভন্ড পীরের কাহিনী নিয়ে রচিত ‘মোজেজা’ শওকত ওসমানের যে শ্রেণীর রচনা – নকশাধর্মী গল্প।
- শওকত ওসমানকে ‘অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ’ নামে অবিহিত করেছেন – হুমায়ুন আজাদ।
- মুক্তিযুদ্ধকালিন এদেশের নর-নারীর উপর পাক বাহিনীর নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের করুন বিবরণ স্থান পেয়েছে – শওকত ওসমানের ‘নেকড়ে অরণ্য’ নামক উপন্যাসে।
- তাঁর রচিত অসমাপ্ত আত্নজীবনী মূলক গ্রন্থের নাম – রাহনামা (পরিসমাপ্তি করতে পারেন নি)।
- বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি যে যে পুরস্কার লাভ করেন – আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৬), একুশে পদক (১৯৮৩), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১) প্রভৃতি।
- বাংলা সাহিত্যের অমর এই কথাসাহিত্যিক পরলোক গমন করেন – ১৯৯৮ সালের ১৪ মে।