তাদের অনেক ঔষধি বিজ্ঞানই অনুমান নির্ভর বলে আমার ধারণা। একটা উদাহারণ দেই। ভেষজবিদদের সবাই আনারস খাবার পরে দুধ খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ করেছেন। তাদের ধারণা দু’য়ে মিলে মহা বিষ তৈরি হয়, যাতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
আমি অনেকবার সম্পর্কে শংকা এবং ভীতি থেকে ভেষজবিদরা এই বিধান দিয়েছেন বলে আমার এইসবই ভ্রান্ত ধারণা।
গাছের নাম বরুন, সূর্যের নাম বরুন আবার শতভিষা নক্ষত্রের নামও বরুন । বরুন হিন্দুদের এক দেবতা, বর প্রার্থনা করলেই যিনি বর দেন। বরুন এমনই দেবতা
যার কাছে অন্য দেবতারাও বর প্রার্থনা করেন—
‘দেবার প্রার্থয়ন্তে বরান ইতি বরুনঃ অর্থ, যার কাছে দেবতারা বর প্রার্থনা করেন তিনিই বরুন।
গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম গ্রিক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ক্রিটেভাসের নাম থেকে 47462– Crataeva nurvala Buch-Ham পরিবার হলাে Capparidaceae, মাঝারি আকারের বহু শাখাযুক্ত বৃক্ষ। বাকলের রঙ ধূসর। শীতে সব পাতা ঝরে যায়। মার্চ–এপ্রিলে নতুন পাতা আসে। ফুল প্রথমে হয় সাদা, তারপর হয় হলুদ। সবশেষে হালকা লাল। গােলাকার ফল। ফুল এবং ফল সবজি হিসেবে
অনেক জায়গায় রান্না করা হয়। বেসন দিয়ে ভাজা বক ফুল খেয়েছি। বরুন ফুল। এখনাে খাওয়া হয় নি । দেখি এবছর খাওয়া যায় কিনা। নুহাশ পল্লীর বরুন গাছ অনেক বড় হয়েছে। এই বছরে ফুল ফোটার কথা । বরুন গাছের রসায়ন গাছের ছালে আছে Saponin এবং টেনিন।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(১১)-হুমায়ুন আহমেদ
শিকড়ে আছে Lupeol, Bsitosterol এবং varonof
PGT W glucocapparin, beta-sitosterol, triacontane, triacontanol, cetyl 4* ceryl alcohol.
পাতায় আছে1–stachydrine
বরুন গাছের কাঠ দিয়ে দেয়াশলাই–এর কাঠি তৈরি হয়।
ভেষজ ব্যবহার বরুন গাছের ছাল কিডনি এবং ব্লাডারের মহৌষধ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিডনিতে এবং ব্লাডারে পাথর হতে দেয় না। বর্তমানের আধুনিক বিজ্ঞান এই কথা বলছে। আয়ুর্বেদ শতেও বলা হয়, কাণ্ড এবং মূলের ছাল পাথুরী রােগ নিবারক।
মেছে রােগটি ছত্রাকের কারণে হয় এবং সহজে এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। বরুন গাছের ছাল ছুগলের দুধে ঘষে প্রতিদিন মেহেতায় লাগালে মেছে সারবে ।
গেঁটে বাতে গাঁটে গাঁটে ব্যথা হলেও বরুন পাতা পানিতে সেদ্ধ করে খেলে সেঁটে বাতের ব্যথা এবং ফোলা দুইই কমবে।
অর্শরােগে আক্রান্ত ব্যক্তি যখন ব্যথায় খুবই কষ্ট পাবে, তখন বরুন পাতা সেদ্ধ পানিতে তাকে গোসল করালে ব্যথা–বেদনা কিছুই থাকবে না।
নবম দশকের শেষে বাংলাদেশে বৃন্দ নামে একজন ভেষজবিদ জন্মেছিলেন। তার বিখ্যাত গ্রন্থ সিদ্ধযােগ-এ তিনি বরুন বৃক্ষের ছালের অনেক ব্যবহার দেখিয়েছেন। তার একটি হলো, ফোড়ায় বরুন গাছের ছাল বেটে লাগালে সঙ্গে সঙ্গে আরমি হবে।.
বৃক্ষকথা-পর্ব-(১১)-হুমায়ুন আহমেদ
তৈলাকুচা
এক ভােরবেলায় জনৈক ভদ্রলােককে দেখলাম ভ্রু কুঁচকে নুহাশ পল্লীর ঔষধি বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার হাতে কলম এবং একটা নােটক। মাঝে মাঝে নােটবুকে কী সব লেখা হচ্ছে। আমি আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেলাম। দ্রলােক হতাশ গলায় বললেন, আসল গাছটাই তাে আপনার এখানে নেই!
আমি বললাম, আসল গাছ কোনটা? আসল গাছ হলাে বিশ্বী’। কী বাগান করলেন যেখানে বিম্বী নেই। আমি বললাম, নামটা প্রথম শুনলাম ।
দ্রলােক বললেন, বিশ্বী হলাে আমাদের দেশের তেলাকুচী । যার ফলের নাম মাকাল ফল। এখন চিনেছেন ?
মাকাল গাছ আসল গাছ ।
অবশ্যই। ডায়াবেটিসের যম। তেলাকুচার তিনটা পাতা নিবেন। আগুনের তাপে একটু গরম করে দুপুরে খাবার পর খাবেন। আপনার ডায়াবেটিস যদি না সারে, আমার একটা কান কেটে তেলাকুচা গাছের কাছে পুতে দিয়ে যাব।
আমি বললাম, সেখান থেকে কর্ণগাছ বের হবার কোনাে সম্ভাবনা কি আছে?
দ্রলােক বললেন, আমি শিক্ষক মানুষ। নিজে রসিকতা করি না। অন্য যখন করে, সেটাও পছন্দ করি না । তেলাকুচা গাছ সম্পর্কে যা বলেছি ঠিকই বলেছি। বইপত্র পড়ে দেখবেন। গাছ বিষয়ে কিছু জানেন না, বাগান বানিয়ে বসে আছেন!
বৃক্ষকথা-পর্ব-(১১)-হুমায়ুন আহমেদ
ভদ্রলােক চলে যাবার পর আয়ুর্বেদাচার্যের বই খুললাম। সেখানে সত্যি সত্যি লেখা—
‘অনেক সময় আমরা মন্তব্য করি, তেলাকুচার পাতার রস খেলাম, আমার ডায়াবেটিসের সুফল কিছুই হলাে না। একটা বিষয়ে যােগে ভুল হয়ে গিয়েছে। এই রােগ তাে আর একরকম দোষে জন্ম নেয় না। এক্ষেত্রে তেলাকুচার পাতা ও মুলের রস তিন চামচ করে সকালে ও বৈকালে একটু গরম করে খেতে হবে । এর দ্বারা রােগী তিন–চার দিনে সুস্থতা বােধ করবেন।
(19512 CTORIA 17 Coccinia indica cogn. তেলাকুচা Cucurbitaceae পরিবারের গাছ।
লতানাে গাছ। বাংলার ঝােপঝাড়ে অযত্নে অবহেলায় বড় হয়। এর ফুল উজ্জ্বল লালবর্ণের। চকচক করতে থাকে। পাখিরা এই ফল আগ্রহ করে খায় । ভয়ঙ্কর তিতা বলে মানুষের খাওয়ার অযােগ্য। মাস্টার সাহেবরা এই ফল গালাগালি করতে ব্যবহার করেন। কোনাে ছাত্র যদি দেখতে সুন্দর হয় কিন্তু পড়াশুনায় হয় গাধা তাহলে তাকে শুনতেই হবে— ব্যাটা মাকাল ফল!
প্রাচীন কবিরা প্রণয়িনীর রূপ বর্ণনায় এই ফল ব্যবহার করেন। বিম্বো শব্দটি ওষ্ঠ বিষের মতাে তুলনায় অনেকবার ব্যবহার হয়েছে। সংস্কৃত কবি লিখলেন—
বিধনৈ বিষৈ ঔজ্ঞা ফলমিতি ভ্ৰমাৎ। | তেলাকুচার রসায়ন সম্পর্কে বলি— তেলাকুচার পাকা ফলে আছে Carotenoids. $1264 SICE Glycoside, Cucurbitacin B, Beta amyrin 4* Lupeol.
গাছটির মূলে আছে Luped acetate, Bata amgrin acetate এবং Beta sistosterসে. মূলে আরাে পাওয়া গেছে নতুন ধরনের Saponin, গাছের কাজে We Protein, Fat, Carbohydrates, Minerals, Vitamin C, Sterols, Beta sitosterol, Phenolic compounds, Triterpenoids, Beta–amyrin, Beta amyrine acetate, Lupeol RE 9 Glycosidic alkaloids.
তেলাকুচার মতাে গাছ নিয়ে এত গবেষণা যে হয়েছে তা জেনেছি ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আধুনিক গবেষকরা বলছেন, এই গাছ ডায়াবেটিস সার তে সম।