বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

ঘৃতকুমারী Liliaceae পরিবারভুক্তরসায়ন এলােইন হলাে ঘৃতকুমারীর প্রধান রাসায়নিক উপাদান। এলােইনের প্রধান উপাদানগুলি হলাে কার্বালাইন, আইসাে বার্বালাইন, বিটা বার্বালাইন এবং এলাে এমােভিন।বৃক্ষকথাএলােইন ছাড়াও আরাে যেসব গুরুত্বপূর্ণ যৌগের সনি পাওয়া গেছে

সেসব হচ্ছে ফ্লাভােনয়েডস, অক্সানথ্রোইনােনস, কুমারিন, এমিনাে অ্যাসিড, ক্টেরল, ট্রাইটারপেন, ম্যালিক এবং ফরমিক অ্যাসিডগাছটিতে কিছু উদ্বায়ী তেল এবং অক্সনও আছেব্যবহার পশ্চিমা দেশে ঘৃতকুমারী নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং এখনাে হচ্ছে । ঘৃতকুমারীর ঔষধি গুণ সম্পর্কে তাদের কথা বলা যাক। 

ঘৃতকুমারীর পাতার রস ক্ষত এবং পুড়ে যাওয়া অতি দ্রুত সারায়এই রস পেপটিক আলসার, ডায়াবেটিস এবং অ্যাজমার ওষুধবস ঘন করে খেতে হবেঘৃতকুমারীর রস ঘন করে যে বস্তু তৈরি হয় তার আয়ুর্বেদিক নাম মুসাব্বির। মেয়েদের ঋতুজনিত সমস্যা এবং লিউকোরিয়াতে মুসার অত্যন্ত 

উপকারী। টেকোদের জন্য সুসংবাদঘৃতকুমারী ব্যবহারে টেকো মাথায় চুল গজায়প্রাচীন ভেষজবিদদের কথা নয়, পশ্চিমা গবেষকদের কথা (Coldrman and Coldman, 1996)যার টেকো মাথার অধিকারী, তারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। 

মৃত্যুফুল 

নাম শুনলেই চমকাতে হয়। না জানি কী ভয়ঙ্কর ফুল । অথচ এই ফুল আমাদের গ্রামেগঞ্জে, শহরের বাড়ির টবে সারা বছর ফুটে থাকে। আমাদের অতি পরিচিত এই ফুলের নাম ‘নয়নতারাপ্রাচীন গ্রিসের অধিবাসীরা এই ফুলের নাম দিয়েছিল মৃত্যুফুল। কারণ তাদের একটা নিয়ম ছিল, যে সব শিশু মারা যাবে তাদের গলায় পরিয়ে দিতে হবে নয়নতারার মালা। অর্থাৎ মৃত্যুফুলের মালা। 

বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

অবাক কাণ্ড ইচ্ছে, জার্মানিতে একই ফুলের নাম অমরত্বের পুল (Flower of immortality}, আরেক নাম শতন্তু (Certochio}, শত নাম কেন হলো বুঝতে পারছি না। বাংলা নয়নতারার সঙ্গে শতমূর মিল আছে। ঝােপড়ি ধরনের গাছে যখন অসংখ্য ফুল ফোটে, তখন মনে হয় অসংখ্য চোখ তাকিয়ে আছে। শত নাম কি সেখান থেকে এসেছে? 

ইংরেক্সিতে এই ফুলের নাম Periwinkle, কবি Wordsworth-এর কবিতায় Pertwinkle উঠে এসেছে। 

‘Through primerose tufts in that sweet bower 

The fair periwinkle trailed its wreaths.গাছটির বােটানিক্যাল নাম Vinca r8s9a Linn, পরিবার Apocynaceae 

নয়নতারার ফুলে পাঁচটি পাপড়ি থাকেপাপড়ির রঙ গোলাপিবাংলাদেশে গােলাগি ছাড়াও সাদা এবং লাল রত্রের নয়নতারাও দেখা যায়ইউরােপে আমি দেখেছি নীল রঙের নয়নতারা। 

নয়নতারার ঔষধি ব্যবহার তার পাছা এবং মূলেগাছের রসে ৭০টির মতাে 

ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। বিদেশী বিজ্ঞানীরা নয়নতারা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। লিউকোমিয়া একটি ভয়াবহ ব্যাধিপ্রাচীন আয়ুর্বেদশাস্ত্রীরা এর নাম দিয়েছেন রক্তবাহী ব্যাধিতারা নয়নতারা গাছের রস পানের বিধান তখনি দিয়েছেনআধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হলে তাদের বিধান ঠিক ছিল। 

ডায়াবেটিসে নয়নতারার পাতা (সাদাফুল)কে অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে বলা হয়েছে। ভােরবেলা খালি পেটে দু’টা পাতা চিবিয়ে খেলে রােগ থাকবে নিয়ন্ত্রণে। যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সকাল বিকাল হেঁটে কুল পাচ্ছেন না, তারা এই চিকিসা করে দেখতে পারেন। 

বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

বকফুল 

বাংলা নাম বকফুল, ইংরেজি নাম Bakful । অকুত না? ঝাকড়া গল্পলের গী, দ্রুত বাড়ে। দ্রুত ফুল দেয় । যখন ফুল ফোটে, মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। ফুল দেখতে বকের ঠোটের মতাে, তাই নাম বকফুলদৃষ্টিনন্দন এই ফুলের আরো ব্যবহার আছেকুমড়া ফুলের মতাে এই স্কুলের বড়া খাওয়া হয়অতি স্বাদুআমার পছন্দের খাবারের তালিকায় বকফুলের বড়া আছেফুল ফোটে সেটের নভেম্বরেনুহাশ পল্লীর একটি গাছে অবশ্যি গরমকালেও ফুল ফুটতে দেখেছিহয়তাে এই গাছ বৃক্ষ জগতের নিয়মকানুন মানে না। 

নুহাশ তীতে সাদা এবং লাল দু’ধরনের বকফুল আছে। লাল বকফুলের গাছে এখনাে ফুল ফোটে নি। ফুল দেখতে কেমন (এবং খেতে কেমন} বলতে পারছি না। বৃক্ষবিশারদরা বলছেন এই গাছের আদিবাসি থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডে এই গাছের নাম খই কাঙথাইরা এই গাছের শুধু যে ফুল খায় তানা, গাছের পাতাও সবজির মতাে খায়। 

সাধারণত দেখা যায় মানুষ যে সব গাছের পাতা সবজি হিসেবে ব্যয়, গরু হুগল সে সব পাতা খায় নাবকফুল গাছ তার ব্যতিক্রমএর পাতা গরু ছাগলের খুব পছন্দ। সুরার গাছপালা সইতে নলিনীকান্ত চক্রবর্তী লিখছেন, গাছের কচি ডাল ও পাতা উত্তম পত্ৰখাদ্যজাভাতে পথখাদ্যের জনে এই গাছের চাষ করা হয় । 

বকফুলের কাণ্ড নরমঅনেক দেশে দ্রুত বর্ধনশীল এই গাছ কাগজের মণ্ড তৈরিতে ব্যবহার করা হয়কাগজের মণ্ড তৈরিতে আমরা বাঁশ ব্যবহার করি বিকল্প চিন্তা কি করা যায় না?

বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৪)-হুমায়ুন আহমেদ

99104 Fif th Sesbania grandiflora. Sesbaniaft আরবি থেকে নেয়া। গােত্রের নাম Leguminosae. রসায়ন বকফুলের গাছে এবং বীজে আছে ক্যামফেয়ােল, ভিটামিন সি এবং স্যাপােনিন। 

পাতায় প্রায় ৩৩ শতাংশ প্রােটিন, প্রচুর খনিজ লবণ এবং ভিটামিন আছে। 

ভেষজ ব্যবহার 

সর্দি-কাশি : সর্দি যদি জমে কঠিন হয়ে যায়, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট শুরু হয়, তখন বকফুলের রস ১ চা-চামচ করে দিনে দুই থেকে তিনবার খাওয়াতে হবে। গুটিবসন্তে ; গুটিবসন্তে বকফুলের রসের ব্যাপক ব্যবহার ছিল। পৃথিবী থেকেই গুটিবসন্ত উঠে গেছে, কাজেই বকফুলের এই ভেষজ ব্যবহার এখন অর্থহীন। মেজাল এলার্জিতে ; আমরা নাকের এলার্জিতে নানা ধরনের নেজাল ড্রপ ব্যবহার করিবিকল্প চেষ্টা হিসেবে বকফুলের রস নাকে টেনে দেখা যেতে ** পারেপ্রাচীন বৈদ্যরা এমন বিধান দিয়েছেন। 

লাকী আৰু .. $জারী :

ওলট কম্বল শয়তানের তুলা 

ওলট কম্বলের ইংরেজি নাম Devils cotton শয়তানের তুলানামকরণের শানেনজুল থাকা উচিতআমি অনেক চেষ্টা করে শয়তানের তুলার সঙ্গে গাছের কোনো সম্পর্ক বের করতে পারি নিএলট কম্বলের তাও একটা অর্ধ পাওয়া যায়, এর জীবকোষ দেখে মনে হবে কম্বল কেটে তৈরি হয়েছে। 

ছােট অবস্থায় গাছটা দেখতে স্থলপদ্মের মতােখুব যে বড় হয় তাও না। ৭ থেকে ফুট। এই গাছের গােড়া কেটে পানিতে পচতে দিলে পার্টগাহের মতাে আঁশ পাওয়া যায়

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *