এই গাছ সম্পর্কে একটাই তথ্য দিতে পারছি। এর পােড় এবং কলা পাহাড়িরা সবজি হিসেবে আগ্রহ করে খায়। আকাশমুখী এই থোড় দেখতে অপূর্ব এক ফুলের মতো। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখার মতো।আমার শৈশবের একটি বছর কেটেছে আমবাগানের ভেতর।
বাবার পােস্টিং হয়েছে দিনাজপুরের জগদ্দলে। আমরা থাকি জগদ্দলের এক পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে। সেই বাড়ি আমবাগানের ভেতর। কী প্রকাণ্ড সব আমগাছ দুয়া ও কলামিনী বৃক্ষরাজির আশ্রয়ে আমাদের বড় হয়ে ওঠা। শৈশবের অতি আনন্দময় স্মৃতির একটি হচ্ছে, বড়মামা আমাকে কাঁধে নিয়ে আমগাছে উঠে গেছেন। আমি এক হাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে আছি, অন্য হাতে পাকা আম পাড়ার চেষ্টা করছি। অম্লবৃক্ষে কথা বলতে গিয়ে নানান কারণেই নাকি বােধ করছি। লন্টালজিয়া কোনাে কাজের কথা না, মূল কথায় আসি।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৬)-হুমায়ুন আহমেদ
সম্রাট বাবর ছিলেন তরমুজ ভক্ত। তরমুজ তাঁর জন্মভূমির ফল। দিল্পির সিংহাসনে থাকা অবস্থায় তার জন্মভূমি খােরশাল থেকে নিয়মিত তরমুজ আসত। দিল্লির আশেপাশে তরমুজ চাষের ব্যাপক উদ্যোগ তিনি নিয়েছিলেন। তার আত্মজীবনী বাবরনামা তরমুজ বিষয়ে নানান কথা থাকবে এটাই স্বাভাবিক, সেখানে হঠাৎ যদি বঙ্গদেশীয় ফল আয় সম্পর্কে উস দেখি তখন খানিকটা অবাকই হই। সম্রাট বাবর কাঁচা আমের শরবতের মহাভক্ত ছিলেন। এই পানীয় বিষয়ে তিনি উজ্জ্বাস প্রকাশ করে গেছেন। কাঁচা আমের শরবতের রেসিপি বাবরনামা–য় আছে। কৌতুহলী পাঠক সেই রেসিপিতে শরবত বানিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন।
আমরা বঙ্গবাসী। আমের প্রতি দুর্বলতা সম্ভবত আমাদের স্ক্রিনেই’ লেখা । আমাদের শৈশবের লেখাপড়ায় রুই হয় আম দিয়ে— “অ তে অগর। অজগর আসছে ধেয়ে। আ–তে আম। আমটি আমি খাব পেড়ে।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৬)-হুমায়ুন আহমেদ
ছড়া মুখস্থ করার সময়েও সেই আম ।
আম পাতা জোড়া জোড়া
মারৰ চাবুক চড় ঘােড়া।’ রবীন্দ্রনাথ শৈশবে প্রথম যে কবিতাটি লিখেছিলেন সেখানেও আম‘ ছিল। বেশির ভাগ পাঠকই হয়তাে কবিতাটি জানেন। যারা জানেন না তাদের জন্যে আমত্ব দুধে ফেলি তাহাতে কদলী দলি সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে হাপুস হুপুস শব্দ, চারিদিক নিস্তব্ধ পিপিড়া কাঁদিয়া যায় পাচ্ছে।
নার বচনেও আম— আমের বহুর বান কাঠালের বছর ধান থেকে বাদ না বায়ু হাল তার দুঃখে সকাল।। আমাদের নুহাশ পল্লীতে সরটা ম্নি প্রজাতির আমগাছ আছে। একটি বিশেষ প্রজাতির উল্লেখ করছি, পাঠকরা সুনে আনন্দ পাবেন। এই বিশেষ প্রজাতির আমের নাম কাক দেশান্তরী’। এই আম এতই টক যে, কাক খেলে মনের দুঃখে দেশান্তরী হয়।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৬)-হুমায়ুন আহমেদ
VÍCNA
C e stata Mangifera indica Linn. শনিবার Anacardiaceae. আমের রসায়ন ১, আমে আছে ভিটামিন A, B, C এবং 0; আছে asorbic acid. & Carotenoid pigments. U. Glycosides, 4 pensnidin, 3–galactoside. 8. UDP–glucosepyrophosphorylase,
ADP–glucosepyrophosphorylase,
UDP— glucose fructose-b–phosphate. Q. Nucleoside diphosphate kinase.
Ethylgaliato, Phenol, Starch. ভেষজ ব্যবহার
বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৬)-হুমায়ুন আহমেদ
আমাশয় : কুচি আমপাতার জল সামান্য গরম করে দিনে দুই বা তিন চামচ করে খেলে আমাশয় সারবে। কোনাে কোনাে বইতে আমপাতার সঙ্গে জার্মপতি মেশাতে বলা হয়েছে। । পােড়া ঘায়ে : আমপাতা আগুনে পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে সেই দুই ঋয়ে মাখলে যা যান।
চুল পড়া বন্ধ করতে :কটি আমের আঁটি খেলে পানিতে ভোতে হবে।
সেই পানি চুলের গােড়ায় লাগালে চুল পড়া বন্ধ হবে। পা ফাটায় : যাদের পায়ের গােড়ালি ফাট, তারা যদি সেখানে আমগাছের
আঠার প্রলেপ দেন তাহলে ফাটা বন্ধ হবে। নখকুনি : মখকুনির মতাে বিরক্তিকর রােগে যারা কষ্ট পাচ্ছেন, তারা আমগাছের আঠা নখের গােড়ায় দিয়ে দেখতে পারেন। দাঁত সুরক্ষা : বাজার ভর্তি নানান ধরনের টুথপেস্ট। টুথপেস্ট বাদ দিয়ে কচি আমের পাতায় দাঁত মেজে দেখেছেন কখনাে? বলা হয়ে থাকে দাঁত সুরক্ষায় এর কোনাে বিকল্প নেই। খুশকি : খুশকির একটি মহৌষধ হলাে, কচি আমের আঁটি এবং হরীতকী দুধে বেটে মাথায় দেয়।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৬)-হুমায়ুন আহমেদ
রক্তপিন্ত্রে (হেমােপটোসিসে) : মিষ্টি পাকা আম এর চমৎক্কার ওষুধ। . ডায়াবেটিস : আমের নতুন পাতা শুকিয়ে গুড়া করে খেতে হবে। এতে রক্তে
সুগারের পরিমাণ কমবেই। । বদহজমে : কাঁচা আম এবং কচি আমের আঁটি খেলেই হবে।
অসুখবিসুখ নিয়ে অনেক কথা হলাে, এবার অন্য প্রসঙ্গ। সােমধারী‘ শব্দটি শুনেছেন? এটি অসাধারণ একটি পানীয় । প্রাচীন ভারতের সাহিত্যে সােমধারার বর্ণনা আছে। পানীয়টির রেসিপি জানিয়ে দিচ্ছি।
সােমধন্য উপকরণ : একটা ল্যাংড়া বা হিম সাগর আম, এক বাটি গরম
প্রস্তুত প্রণালি : আমি দুধ একসঙ্গে মেশান। চামচ দিয়ে ফেটিয়ে নিন। এবার খেয়ে ফেলুন। সহজ রেসিপি না ?
এবার অনাধরনের একটি রেসিপি দিচ্ছি। আম দিয়ে ককটেলের রেসিপি। এই রেসিপির আবিষ্কারক আমার বন্ধু প্রতীক প্রকাশনীর মালিক আলমগীর রহমান। রেসিপির নামকরণ করেছি আমি। Bengal green mango gling. পৃথিবী বিখ্যাত কিছু ককটেলের মধ্যে একটি হলাে Singapore Sling. আমার নামকরণ মৌলিক না, Singapore Sling-এর ছায়া আছে। থাকুক কিছু ছায়া, ক্ষতি কী ?
বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৬)-হুমায়ুন আহমেদ
Bengal green mango sling দুই অংশ ভদকা। পাঁচ অংশ কাচা আমের শরবত । পুদিনা পাতা। বিট লবণ। একসনে মিশিয়ে আঁকাতে হবে। কিছুক্ষণ রাখতে হবে ডিপ ফ্রিজে। গ্লাসে ফেলে পরিবেশনের আগে গ্লাসের মুখে লবণ মাখিয়ে নিতে হবে। ভদকার অভাবে জিন ব্যবহার করা
যেতে পারে। ‘আমের কথা ফুরালাে নটে গাটি মুড়ালাে।
ফুল চক চক –
বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৬)-হুমায়ুন আহমেদ
চৈনিক ভূপর্যটক ইউয়েন সাঙ্গ সপ্তম শতাব্দীতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাঁর বর্ণনা | ‘শংগা নদী পার হয়ে ৬০০ লি পথ অতিক্রম করে উপতি হলাম পর্ধনে (উত্তর বাংলাদেশ, বগুড়া)। যায় চারশ‘ লি আয়তনের এই রাজ্যটিতে বসতি ঘন। অনেক পুকরিনি। মাটি দোআঁশ। ফলে শস্য পর্যাণ্ড। বিশাল কাঁঠাল ফল এখানে সমাদৃত। এর ভেতরে পায়রার ডিমের মতাে ছোট হরিদ্রাভ ফল সুগন্ধে ভরপুর।
এটি ডাল ও পুঁড়ি উভয় স্থানেই ধরে।” কাঁঠাল আমাদের স্বদেশী গাছ। রামায়ণ এবং প্রাচীন গ্রন্থ আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র সংহিতায় কাঁঠালের উল্লেখ আছে। রামের অই ভরত ভরদ্বাজ মুনির অতিথি হয়ে মুনির বিশাল ফলের বাগান দেখে মুগ হলেন। সেই ফলবাগানে আছে ‘শ্বিন বিত্ত্বা : কপি পনসা–বীজপুরকাঃ আমলােকণে বড়ু চুতাচ ফলভূষিতাঃ
অর্ধ ; বেল, কৎবেল, কাঁঠাল, বাতাবিলেবু, আম প্রভৃতি নানান ফলজ বৃক্ষে বাগান পরিপূর্ণ। আবার শ্রীরাম যেখানে নির্বাসিত জীবনযাপন করলেন সেই পঞ্চবটি বনও ছিল— চল, কদম, কাঁঠাল গাহে পরিপূর্ণ।
[আমিরুল আলম খান, ভারত বিচিত্রা চিটাগাং কলেজিয়েট স্কুলে যখন পড়ি (১৯৫৭ সন}, তখন আমাদের ক্লাস টিচার ছিলেন বড়ুয়া স্যার। তিনি কাঁঠালের ইংরেজি শিখালেন। কাঁঠাল Jack Fruit, আমি বললাম, সার Jack মানে কী?
বৃক্ষকথা-পর্ব-(১৬)-হুমায়ুন আহমেদ
স্যার বললেন, Jack মানে শিয়াল। কাঁঠাল শিয়ালরা খেতে পছন্দ করে বলেই এর নাম Jack fruit, অনেকদিন পর জানলাম— Jack মানে শিয়াল না, আমজনতা। সাধারণ মানুষ। কাঁঠাল হলাে সাধারণ মানুষের ফল। বিত্তবানদের ঘরে এর প্রবেশ নিষেধ। ঢাকার পাঁচতারা কোনো হােটেলে ফল হিসেবে কাঁঠাল
দিতে দেখি না। মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের পাঁচতারা হােটেলে কাঁঠালের মতােই যে ফল (ডুরান্ট) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।