কাঁচাবেলের শরবত কঁচা বেল কুট আধসের পানিতে সেদ্ধ করে এক পােয়া হলে নামিয়ে ছেকে নিয়ে তাতে মিছুরি মেশান এবং জাল দিন।
পরে ঠান্ডা করে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে পান করুন। পাকাবেলের শরবত এ দেশের অনেক মানুষ খুবই আগ্রহের সঙ্গে খান। তাদের কাছে বেলের নানান গুনাগুণের কথা শােনা যায়। প্রাচীন ভেষজ বিজ্ঞান এই কথা বলে না। তাদের সকল প্রশংসা কঁচাবেলের।
বেলের স্থান হয়েছে ব্রিটিশ ফার্মাকেপিয়ায়। বাংলাদেশ জাতীয় আয়ুর্বেদিক ফর্মুলারীতে ১৯৯২ ৩৮টি ঔষুধের উপাদান হিসেবে বেলের বিভিন্ন অংশের ব্যবহার রয়েছে। ১৯টিতে বেলঠ, ৯টিতে বেলপাতা, ১৭টিতে মূল এবং ১টিতে বেল ছাল ব্যবহার করা হয়েছে। (সূত্র : ঔষধি উদ্ভুিদ, ডাঃ সামসুদ্দিন আহামেদ।
আধুনিক বিজ্ঞান বলছে কঁচা বেল ফল রানীক্ষেত রােগের ভয়ঙ্কর ভাইরাস ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে | মনে রাখতে হবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের কোনাে অস্ত্র নেই।।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৪)-হুমায়ুন আহমেদ
বেলের রয়েছে হাইপােগ্লাইসেমিক ক্ষমা। অর্থাৎ রক্তে চিনির পরিমাণ কমানাের ক্ষমতা। অম্লনালির পরজীবী নষ্ট করার ক্ষমতা।
ব্যক্তিগতভাবে বেল আমার পছরে ফল না । কাচাবেল খাওয়ার তাে প্রশ্নই ওঠে না। ছােটবেলায় আগুনে পুড়িয়ে কঁাচাৰেল খেয়েছি এই স্মৃতি আছে। খেয়ে মহা আনন্দ পেয়েছি এমন স্মৃতি নেই। তবে গাজীপুরে বিশাল আকৃতির কিছু বেল পাওয়া যায়, যার স্বাদ এবং গন্ধ তুলনাহীন।
এবার ভেষঞ্জ ব্যবহারের দিকে যাওয়া যাক। ঘামের দুর্গন্ধ দূরে মােটা মানুষরা প্রচুর ঘামেন। তারা যদি বেল পাতার রস পানিতে মিশিয়ে গায়ে মাখেন, তাহলে দুর্গন্ধ দোষ কাটবে। পরীক্ষিত।
সর্দি জ্বর। ভারতের পশ্চিম অঞ্চলের টোটকা চিকিৎসা। এক চামচ পাতার রস খেলে সর্দি, জ্বর এবং জ্বরভাবের সমাপ্তি। শােথ রােগ। হাত-পা ফুলে গেলে বেল–পাতার রস মধু দিয়ে খাওয়ার বিধান অতি প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৪)-হুমায়ুন আহমেদ
আন্ত্রিক ক্ষত রােগ (আলসার) বেলওঁঠ বার্লির সঙ্গে মিশিয়ে সেদ্ধ করে শেলে আর্মিক ক্ষত সারে।
অন্দ্রিা এবং ডিপ্রেসন কেলের মূলের ছালচূর্ণ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অনিদ্রা রােগ সারে এবং উদাসীন ভাব দূর হয়।
বেলপাতার একটি বিশেষ ব্যবহার আগে বলেছি– পাঠ্যবইয়ে বেলপাতা রেখে দিলে বিদ্যা অর্জন হয়। জ্ঞান হয়।
আধিভৌতিক এই বিষয়ের সাধারণ ফর্মুলাও আছে। প্রতিদিন তিনটা বেলপাতা ঘিয়ে ভেজে খােলে স্মৃতিশক্তি ও মেধা বাড়ে। এটা না-কি পরীক্ষিত। আমি পরীক্ষাটা করি নি। স্মৃতিশক্তি ও মেধা যা আছে তাতেই খুশি আছি। তবে ইদানীং পুরুলাে বন্ধুদের নাম ভুলে যাচ্ছি। ঘিয়ে ভাজা বেলপাতা খেয়ে দেখতে হবে, নাম মনে পড়ে কি–না।
বিয়েবাড়িতে বিপুল খাওয়া-দাওয়া হয়েছে। পােলাও, রেই, খাসির রেজালা, সবশেষে দৈ–মিষ্টি। পানের খিলি সাজ্জানাে আছে। সর্বশেষ আইটেম একটা আৰু মিষ্টি পান মুখে দিয়ে বিয়েবাড়ির খাওয়ার আয়ােজন সুবিধা হয় নি এই নিয়ে আলােচনা।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৪)-হুমায়ুন আহমেদ
বিয়েবাড়িতে অন্তুি পানের খিলি আমরা অনেকদিন থেকেই খালি। কেউ নিষেধ করছে না। প্রাচীন আয়ুবের্দশান্ত্রীর আশেপাশে থাকলে সমস্যা হতো। তারা তেড়ে আসতেন— করছ কী! করছ কী! পানের মধ্যম নিরা খেয়ে ফেল। অধ্যম শিৰা বিষৎ পরিত্যাজ্য।
একটা পান পাতা হাতে নিয়ে দেখুন। এয় আছে সাতটা শিরা। আয়ুবেদ বলছে, মধ্যম শি বিষ। যেহেতু বিষের কাছেই থাকে অমৃত, বাকিটা অমূত। সাতটা শিরার কারণে পানের আরেক নাম সম্প্রশিরা। মধ্যম শিরার বিষয়টি গ্রামবাংলায় এখনাে মানা হয়। গ্রামের ললনাদের দেখেছি, অতি যত্নে পান থেকে মধ্যম শিল্প আলাদা করেন।
পাল আমাদের সংস্কৃতির অ। প্রাচীন বইপত্র থেকে জানা যা, সাড়ে তিন হাজার বছর ধরে আমরা এই বন্ধু চিৰাচ্ছি। সাধারণ মানুষ যেমন চিবাচ্ছে, রাজা-বাদশারাও চিবালে। মেটিয়াবুরুজ দুর্গে বন্দি অবস্থায়ও নওয়াব ওয়াজেদ আলি খাল পান থেতেন, মুচ্চা গুঁড়া এবং ফরী দিয়ে। আমার জন্যে অবশি পানের সঙ্গে সুপারি এবং চুনই যথেষ্ট।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৪)-হুমায়ুন আহমেদ
পানের অদ্ভুত সব ব্যবহার আমি নিজের চোখে দেখেছি। এর একটা বলি, লাগরিক পাঠকরা মজা পাবেন। নজর লাগা‘ বলে একটি বিষয় প্রচলিত আছে। নবজাতকের উপর যদি নজয় লাগে, সে চিৎকার করে কাঁদবে। খাওয়া–দাওয়া বন্ধু করে দেবে। তখন তার ভিট’ পােড়াতে হবে। কাজটা করা হবে দু‘টা পান পাতা দিয়ে। সরিষার তেল মাখিয়ে পান পাতা দুটা শিশুর মাথা থেকে পা পর্যন্ত টানতে হবে এবং টলাির সময় যাদের নজর লেগেছে বলে সন্দেহ করা হয় তাদের নাম বলতে হবে। এরপর পান পাতা আগুনে পােড়াতে হবে। যদি ঠাণঠাশ শব্দ হয় তাহলে বুঝতে হবে, নয় লেগেছিল, এখন নজর কাটল।
শিশুদের পেট ফাপায় পানের বোটার ব্যবহার বাংলাদেশের সব মা-ই জানেন বলে আমার ধারণা। কয়েকদিন আগে আমার কনিষ্ঠ পুত্র নিষাদ পান বোটা চিকিৎসার ভেতর দিয়ে গেছে। আমি খুব কাছ থেকে এই চিকিৎসা পদ্ধতি দেবে চমৎকৃত হয়েছি।
পানের রসায়ন বিষয়ে বলি। পান পাতায় আছে অ্যালকালয়েড় মারানি, ট্যানিল, ইওজনস, ট্যানিল ও ডায়াসাটস। এই সঙ্গে সামান্য বিটা ক্যারােটিন। ফিনােলিক কম্পাউন্ড Chavicol, Hydroxy Chavicolও পান পাতায় আছে।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৪)-হুমায়ুন আহমেদ
পান Piperaceae পরিবারভুক্ত। বােটানিক্যাল নাম Piper bette Linn. ব্যবহার। । মাথার উকুলে ; পানের রস মাথায় মাখলে উকুনের উৎপাত শেষ। একবেলা
মাখলেই হবে। নখকুনি রোগ ; নখের কোণ বড় হয়ে যাওয়া রােগের নাম নখকুনি। পানের রস গরম করে দিনে কয়েক দফা নখের কোণে দিলে নখকুনি রােগ সারে। নখের বৃদ্ধিও কমে । দাদ : পানের রস ঘষে কয়েকদিন মাখলেই আরােগ্য লাভ হয়। ফোড়া : পানের সােজা পিঠে ঘি মাখিয়ে ফোড়ায় বসালে ফোড়া পাকে ফোড়া পাকার পর উল্টো পিঠ ফোড়ায় বসালে পুঁজ বের হয়ে আসে। পারে অ্যান্টিসেপটিক গুণ আছে বলে ফোড়া বিষাক্ত হতে পারে না।