কলকে সৌভাগ্য বাদাম বৃক্ষ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ নাম শুনলেই মনে আসে ক্রিকেটের কথা। মনে হয় অপূর্ব সুন্দর দ্বীপের দেশে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। সেইসব দ্বীপে অপূর্ব একটি বৃক্ষ আছে, যার নাম Lucky nut tree, সাদা বাংলায় সৌভাগ্য বাদাম বৃক্ষ।
সৌভাগ্য বাদাম বৃক্ষের বীজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে এসেছে বাংলায়। বৃক্ষের নতুন নাম হয়েছে কলকে। কারণ ফুলটা দেখতে আমাদের দেশের কঞ্চির মতাে । হলুদ বর্ণের চমৎকার ফুন্স ফোটে। ফুলের নাম কলকে ফুল।
অতি দূরের এই গাছ এদেশে কী করে চলে এল তা নিয়ে গবেষকরা নানান কথা বলেন। এ দল বলেন, জলদস্যরা এনেছে। এই তথ্য আমার কাছে গ্রহণযােগ্য মনে হয় না। জলদস্যুরা এসেছে ডাকাতি করতে । নিজ দেশের ফুলের বীজ দেশে দেশে ছড়ানাের মহান দায়িত্ব তাদের ছিল না।
আরেক দল গবেষক বলছেন, এই ফুলের বীজ খ্রিষ্টান পাদ্রীরা এনেছেন। তারা গির্জার চারপাশে এই বীজের গাছ তৈরি করে শােভা বর্ধনের চেষ্টা করেছেন। এই যুক্তি গ্রহণযােগ্য।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৬)-হুমায়ুন আহমেদ
অতি দূর দেশের এই গাছের গােত্রেরই কিছু প্রজাতি কিন্তু ভারতবর্ষেই ছিল। তাদের সংস্কৃত নাম করবীরক। বাংলায় করবী। বেদ, চরক, সুশ্রুত, নিঘুন্টি গ্রন্থাদিতে করবীর উল্লেখ আছে। রাজ নিঘুন্টিতে চার রকমের করবীর কথা বলা হয়েছে শ্বেত–রক্ত-পীত–কৃষ্ণ। নুহাশ পল্লীতে রক্তকরবী এবং পীতকরবী আছে। বাকি দুটি নেই। কোথাও আছে এমন শুনি নি।
কলকে প্রসঙ্গে ফিরে আসি। এর বােটানিক্যাল নাম Thevetia geruviana Merr. fo Apocynaceae.
কলকে বা পীত করবীর রসায়নে যাওয়া যাক ? এর ছালে আছে Glycapsicles 4 lupeol acetate
মূলেও আছে Glycosides. তবে এই glycosides, হালের glycosides না।
G W Glycosides of qvercetin-4–methyl ethen. 101 c–amyrin, B–amyrin 4 cardiac glycosides. কলকের বীজে আছে কিছু ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন, lingleic 6.3%, palritic
17.1%, stearic 11,8%, arachidic 0.4%, clic 64.3%URF Glycosides.
বাংলার মেয়েরা কলকে ফুলের বীজ চেনে। তাদের জীবন যখন শুকায়ে যায়, তারা আশ্রয় নেয় কক্ষের বীজের কাছে। বিষাক্ত এই বীজ প্রাণ হন্তারক।
অনেক দুখিনী পত্নীবালা কক্ষের বীজ খেয়ে দুঃখ জুড়িয়েছে।
যাক দুঃখকথা। এর ভেষজ গুণ কী আছে দেখা যাক । মূলের ছাল : জ্বর কমায়। গায়ে মাখলে চর্ম রোগ দূর হয়। অর্বদে (টিউমার কাজ করে। তবে মনে রাখতে হবে, ছালও বীজের মতােই বিষাক্ত।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৬)-হুমায়ুন আহমেদ
পাতা : বিরেচক এবং বমনকারক। মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই বিষাক্ত। । ফুল এবং বীজ : তীব্র বিষ। অল্প মাত্রায় গর্ভস্রাবকারক, বাত রােগ নাশক। এ ফুল : হৃৎপিণ্ডের বল কারক। ফুলের মধু খেতে ভালাে এবং শরীর বল কারক।
এই গাছের যত ঔষধি শই থাকুক, এর থেকে একশ হাত দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়। তারপরেও এই গাছকে সৌভাগ্য গাছ কেন বলা হয় কে জানে! দক্ষিণ আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানরা বিশ্বাস করে, ভােরবেলা ঘুম ভেঙেই কলকে গাছের ফুল এবং ফল দেখা মহাসৌভাগ্যের ব্যাপার। তাদের ঘরের জানালার কাছে এই গাছ থাকবেই। জানালা খুললেই দেখা পাওয়া যাবে সৌভাগ্যের।
তেঁতুল
‘টকের ভয়ে ঘর ছাড়লাম তেঁতুল তলে বাস’। সুন্দর প্রবচন না ।
তেঁতুল আমাদের সংস্কৃতির অংশ অতি প্রাচীনকাল থেকেই। ছােটবেলায় নানুজালের কাছ থেকে গল্প শুনেছি ।
লাউয়ের ভিতর বইসা বুড়ি পাকা তেঁতুই খায়
একখান ঠেলা দেওগে দেখি কদুর দূরে যায়। তেঁতুল নিয়ে খনার বচনটিও মনে করিয়ে দেই? তাল, তেঁতুল, কুল তিনে করে বংশ নির্মূল ।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৬)-হুমায়ুন আহমেদ
ভারতে এই তাে কিছুদিন আগেও আমগাছের আম খাওয়া হতাে না, যদি না সেই আমগাছের তেঁতুল গাছের সঙ্গে বিয়ে না হতাে। তেঁতুল গাছ নিয়ে কত না রহস্য! এই গাছে ভূত থাকে। খারাপ ধরনের হিংসুটে ভূত । ভালাে ধরনের ভূত কোন গাছে থাকে তা অবশ্যি বলা নেই। মনে হয় বেল গাছে।
তেঁতুল গাছের নিচে ঘুমুলে হিংসুটে ভূতরা ক্ষতি করে। নলিনীকান্ত চক্রবর্তীর লেখা ত্রিপুরার গাছপালায় বলা হয়েছে, তেঁতুলের নিচে ঘুমুলে কুষ্ঠরােগ হয়। তেঁতুল তলায় বাস করলে বুদ্ধি কমে— এটিই লােক বিশ্বাস। এই নিয়ে বিখ্যাত গল্প আছে । মহাকবি কালিদাসের বুদ্ধি এতই বেশি ছিল যে তার কথাবার্তা বেশির ভাগ মানুষই বুঝত না। মহর্বিপদ দেখে কালিদাস কিছুদিন তেঁতুল তলায় বাস করে বুদ্ধি কমালেন।
কালিদাসকে জড়িয়ে তেঁতুল গাছের বিখ্যাত ধাধার উকুর কি পাঠকদের জানা আছে।
কহেন কবি কালিদাস, শিতকালের কথা
এক লক্ষ তেঁতুল গাছে কয় কক্ষ পাতা ? মেয়েরা অতি আগ্রহে তেঁতুল খায়, তারা কি জানে সংস্কৃতে তেঁতুলের নাম ‘যমদূতিকা’ অর্থাৎ যমের দূত।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৬)-হুমায়ুন আহমেদ
তেঁতুলের ইংরেজি নাম Tamarind. পারস্য দেশীয় গাছ Tamar Hind থেকে এসেছে Tamarind. পারস্য দেশে এই গাছ এসেছে ভারতবর্ষ থেকে তা Hind থেকেই বুঝা যাচ্ছে। তেঁতুল গাছের প্রজাতিসূচক নাম Intaca বলে দেয় এই গাছ
ভারতের। যদিও অনেকেই বলছেন, এই গাছের আদি নিবাস মধ্য আফ্রিকা।
তেঁতুল মাঝারি আকৃতির গাছ হলেও এর একটি প্রজাতি বিশাল হয়। শ্রীলঙ্কায় একটা গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে, যার গুড়ির বেড় ৪২ ফুট। গাছটি
–কি দুইশ‘ বছরের পুরনাে।
তেঁতুলের বােটানিক্যাল নাম lamarindus indica L. পরিবার Leguminosae.
এবার তেঁতুলের রসায়ন । এতে আছে প্রচুর aিrtaric Acid, Thalic Acid, Oxalic Acid 4 Polysaccharide.
আমি যখন নর্থ ডেকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পলিমার কেমিস্ট্রির ওপর Ph.D করছি, তখন আমাকে তেঁতুলের বীজ থেকে Water Solabu Polymer আলাদা করে বেশ কিছু কাজ করতে হয়েছিল। বাংলাদেশের তাঁতিরা তেঁতুলের বিচির পলিমার দিয়েই তাদের সুতায় মাড় দেন। ভেষজ ব্যবহার পাতা . সর্দি, হাঁচি, নাক দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়ায় তেতুলের কাঁচা পাতা সিদ্ধ করে
সেই পানি খেতে হবে । অর্শ রােগে পাতা সিদ্ধ পানি এবং পুরনাে তেঁতুল ভেজা পানি খেলে সারবে। . আমাশা, মুখের ঘা। ফল
রক্তে কোলেস্টরল বেড়ে গেলে ধমনীগুলাের স্থিতিস্থাপকতা কমে।