তেঁতুল
ভার মহৌষধ। তেঁতুল ভেজানাে পানি শরবত করে নিয়মিত খেলে কোলেস্টরলের মাত্রা কমে আসে। পেটে গ্যাস হলেও তেঁতুল পানি কাজ করে। কিডনির সমস্যায় হাত-পা ফুলে গেলে তেঁতুল পানি খেলে আরাম হয় ।
সর্দি গর্মিতে (Sunstroke) বা ‘লু লাগলে তেঁতুল পানি অত্যন্ত উপকারী। বীজ
তেঁতুল বীজ যৌনশক্তিকে প্রবল করে বলে বলা হয়ে থাকে। শিবকালী চিরঞ্জীব বনৌষধিতে বলেছেন, এই বীজ বার্লির মতাে করে খেলে ডায়াবেটিস কমে।
বাজনা।গাছের নাম বাজন। গাজীপুর অঞ্চলে এই গাছ প্রচুর দেখা যায়। গা-ভর্তি বড় বড় কাটা। দেখতে কিতকিমাকার। নুহাশ পল্লীতে বড় বড় বেশ কয়েকটা বাঞ্জনা পাছ ছিল। গাছের কোনােরকম প্রণীণ কোথাও খুঁজে পাই নি বলে একটা গাছ রেখে বাকিগুলি কেটে ফেলতে বসলাম। কর্মচারীদের মাথায় প্রায় আকাশ ভেঙে পড়ল । তারা বলল এই গাছের বীজ ভাঙলে অতি সুঘ্রাণের তেল তৈরি হয়। ঐ তেলে মুড়ি মেখে খাওয়া আর অমৃত পাওয়া না–কি একই। আমি খেয়ে দেখেছি। “ওয়াক খু’র কাছাকাছি।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৭)-হুমায়ুন আহমেদ
যাই হােক, বাজনা গাছের বােটানিক্যাল নাম Zanthoxylur tirariella {Pennst] Alston, পরিবার Rutaceae, বাজনা পাছ কোনাে কোনাে অঞ্চলে বজরঙ নামেও পরিচিত । নেপালে এই গাছ অনেক দেখেছি। ফুলের রঙ সবুজাভ সাদা গাছ ভর্তি করে যখন ফুল ফোটে, মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। এই গাছ শ্রীলঙ্কায় আছে, বার্মায় আছে। শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এই ফলের কালাে বীজু মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়।
বাজনা গাছের কায়ন বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। শিবকালীর বইয়ে এই গাছ সম্পর্কে কিছু লেখা নেই। ভেষজ গুণ হলো, এর ক্ষল মধুর সঙ্গে বেটে খেলে বাত রােগ সার। শেকড়ের বাকল মূত্রকৃচ্ছুতায় উপকারী।
কাকড়ার চোখ
কাঁকড়ার চোখ গাছটার ইংরেজি নাম। কারণ গাঙ্গুের ফল অবিকল কাঁকড়ার চোখের মতাে। টকটকে লালের এক কোণে কালাে ফেঁটা। সাইজেও কাঁকড়ার চোধের সাইজ। সঙ্গত কারণেই ইংরেজরা গাছের নাম দিয়েছেন কাকড়ার চোখ। বােটানিক্যাল নাম Abrus precatorius. পরিবার ফেবেসী।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৭)-হুমায়ুন আহমেদ
বাংলায় এই গাছের নাম কুঁচফল গাছ। ঐ যে গান— কুঁচবরণ কন্যা তাহার মেঘবরণ কেশ।’ সােনার দোকানির কাছে এই গাছের ফলের খুব কদর। কারণ রতির হিসাব এই গাছের ফলের ওজন থেকে এসেছে। সােনা পাচ রতি–এর অর্থ সােনার পরিমাণ পাঁচটা কুঁচ ফলের ওজনের সমান।
তিন প্রজাতির কুঁচফল দেখা যায়। লাল বীজ, বীজের মাথায় কালাে চোখ Abrus precatorious Linn,
কালাে বীজ। বীজের মাধ্যায় সাদা চোখ Abrus pulchallus wall. সাদা বীজ, কালাে চোখ Abrus fruticulous wall. নুহাশ পল্লীতে অনেক উঁচ গাছ আছে, তবে সবই লাল বীজ কালাে চোখ ।
ত্রিপুরার উদ্ভিদ বিজ্ঞানী প্রশান্ত কুমার ভট্টাচার্য কুঁচগাছকে বিষাক্ত পাই হিসেবে আলাদা করেছেন (বিষাক্ত গাছ থেকে সাবধান, বিদ্যাপ্রকাশ, আগরতলা।} তিনি বলছেন এই গাছের বীজ, পাতা, মূল সবই বিষাক্ত।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৭)-হুমায়ুন আহমেদ
কুরুবীজে থাকে প্রচণ্ড বিষাক্ত টকএলবুমিন এব্রিন। তার সঙ্গে থাকে গ্লোবিওলিন এবং প্রেটিস । পাতা এবং মূলে থাকে বিষাক্ত অ্যালকায়েড় , গ্লাইক্রিরহিজিল।
অর্ধেকটা কুঁচবীজ খেলেই গরু এবং ঘােড়ার মতাে প্রাণী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যারা যায়।
ঔষধি গাছ হিসেবে এর ব্যবহার চরক এবং শুশ্রুতের নিদান তত্ত্বে উল্লেখ করা হয়। লােকজ ব্যবহার গ্রামবাংলায় গর্ভপাতে এই গাছের বীজ ব্যবহার করা হয় বলে ঔষধি গাছের স বইয়ে পেয়েছি। ব্যবহারের পদ্ধতি কী বুঝতে পারছি না। বলা হয়েছে অর্ধেকটা
বীজ থেতাে করে ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে গর্ভপাত ঘটে। বীজ নিশ্চয়ই খাওয়ানাে হয় না। বিষাক্ত এব্রিনের কারণে খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাে মৃত্যু হবার কথা।
জটিল মাথাব্যথায় কুঁচফল গুড়া করে নস্যির মতাে টানলেই কঠিন মাথাব্যথা সারবে। বমি করাতে কুঁচের মূল বেঁটে এককাপ গরম পানিতে গুলে খেলেই বমি হবে। টাকের চিকিৎসায় কুঁচফল (সাদা কুঁচ) বেটে প্রলেপ দিতে হবে। প্রলেপ দেবার আগে ডুমুর পাতা দিয়ে টাক ঘষে নিতে হবে। গােড়া ক্রিমিতে একটা কুঁচ থেতলিয়ে এক কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে হেঁকে সেই পানি খেলেই আরাম হবে।
বৃক্ষকথা-পর্ব-(৭)-হুমায়ুন আহমেদ
আমার মতে, কুঁচ নিয়ে কোনাে চিকিৎসায় না যাওয়াই ভালো। কী দরকার খামাখা বিপদ ডেকে আনার হাতের কাছে যদি অ্যান্টি এব্রিন সেরাম ইনজেকশন না থাকে, তাহলে বীজের এব্রিন বিপদ ডেকে আনবে।
কুঁচ গাছ নিয়ে মজার লোক বিশ্বাসের একটা গল্প দিয়ে শেষ করি।
কুঁচগাছের পাতা বশীকরণে ব্যবহার হয়। যাকে বশ করতে হবে, তাকে তরকারির সঙ্গে কুঁচের পাতার রস বা কুঁচপাত্তা খাইয়ে দিতে হবে। যে খাবে সে না-কি জীবনের জনে বশ হবে।
নিসিন্দা
সতিনের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্কের উদাহরণ হিসেবে নিসিন্দা বৃক্ষের কথা চলে আসে
‘নিম তিত, নিসিন্দা তিতা, তিতা পানের ধর (খয়ের)
তাররা চেয়ে অধিক তিতা
দুই সতিমের ঘর। বাংলাদেশের সব জায়গায় এই গাছ আছে। তবে বইপত্রের বর্ণনার সঙ্গে বাংলাদেশের নিসিন্দা গাছ মিলে না। বলা হয়েছে নিসিন্দা ছােট আকৃতির পত্রঝরা গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ (ঔষধি গাছগাছড়া, এবিএম জাওয়ায়ের হােসেন, গ্রন্থনা)। আমি নুহাশ পল্পীতে দেখেছি বিশাল গাছ। এই গাছের পাতা ঝরে পড়তেও দেখি নি। বাংলাদেশে শীতপ্রধান দেশ থেকে আসা গাছের পাতাই শীতের সময় ঝরে যায়। নিসিন্দা পুরােপুরি বাংলাদেশের বৃক্ষ। শীতকালে এর পাতা ঝরবে কোন দুঃখে।
এমন কি হতে পারে নুহাশ পল্লীর চারটা নিসিন্দা গাছ বিশেষ কোনাে কারণে পাতা ঝরায় না ? ডএ কে ভট্টাচার্য তার ভারতীয় ভেষজ গ্রন্থে লিখেছেন নিসিন্দা উচ্চতায় মাত্র তিন ফুট হয়। শরৎকালে পাতা ঝরে যায়।
পাতা ঝরাবিষয়ক বিতর্ক আপাতত হাঁড়িচাপা থাকুক, অন্য প্রসঙ্গে আলােচনা চলুক। নিসিন্দার বােটানিক্যাল নাম— Videx negund Linn. বােটানিক্যাল নাম negundo আমাকে ধাঁধায় ফেলেছে। নামটির মূলে আছে ইউরােপের মাপল জাতীয় গাছ, যে গাছের রস মিষ্টি । এই মিষ্টি রস থেকে শ্যাপল সুগার তৈরি হয়।