বাংলার কবি-সাহিত্যিকরা অবশ্যি কাঁঠাল নিয়ে মুগ্ধ। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত লাইন— তােমার যেখানে সাধ চলে যাও,আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব;
দেখিব কাঁঠাল পাতা ঝরিতেছে অবিরল ভােরের বাতাসে। রবীন্দ্র–সাহিত্যে ছায়াদায়িনী বৃক্ষ হিসেবে কাঁঠাল গাছের উল্লেখ আছে। তবে কাঁঠাল ফলের কোনাে বর্ণনা পড়েছি বলে মনে পড়ছে না।
কবি মাইকেল মধুসূদনই কাঁঠাল ফলের চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন—
কাঠাল, যার ফলে স্বর্ণকণা শশাতে শত শত ধনদের গৃহ যেন। কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus hetrophyllus. পরিবার Moraceae. Arto শব্দটি এসেছে গ্রীক থেকে। এর অর্থ রুটি। Cars অর্ধ ফল।
কাঠালের পাকা ফলে কী কী থাকে দেখা যাক। একশ গ্রাম ফলে থাকে—
শর্করা : ১৮.৮ গ্রাম আমিষ ১.৯ গ্রাম স্নেহজাতীয় পদার্থ : ০.৩ গ্রাম মাশ; ১.১ গ্রাম ক্যালসিয়াম :২০ মি. গ্রাম
ফসফরাস ; ৩০ মি. গ্রাম এছাড়াও আছে পটাশিয়াম, থায়ামিন, বাইবােফ্লাবিন, ভিটামিন এ এবং সি।
বৃক্ষকথা-(শেষ)-পর্ব-হুমায়ুন আহমেদ
কাঁঠালের বিচির খাদ্যগুণ বিষয়ে কিছু জানি না। আমি কাঁঠালের বিচি দিয়ে রান্না করা মুরগির মাংসের ঝোলের মহাভক্ত। ছােটবেলায় কাঁঠালের বিচির ভাজা অনেক খেয়েছি। খেতে বাদামের মতােই স্বাদু।
কাঁঠালের ভেষজ গুণ সম্পর্কে বলি। কাঁঠালের মূল উদরাময়ের মহৌষধ। কাঁঠালের আঠা ফোড়া পাকানােয় ব্যবহার করা হয়। কাঁঠালের পাতা না–কি সর্পবিষ নাশক। সর্পদংশনে পাতা কীভাবে ব্যবহার করা হয় সেই তথ্য পাই নি। নিশ্চয় পাতা বেটে মলমের মতো লাগানো হয়।
আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল। কাঁঠাল নিয়ে আরাে অনেক কিছু লেখা উচিত। নতুন কোনাে তথ্য দিতে পারছি না বলে লিখছি না। মায়ের কাছে খালার গল্প করার তাে কোনাে মানে হয় না। প্রেম কী বুঝানাের জন্য কাঠালের ব্যবহার আছে। এটা জানিয়ে কঁঠাল প্রসঙ্গে ইতি টানছি।
পীরিতি কী? পীরিতি হলাে কাঁঠালের আঠা।
‘পীরিতি কাঠালের আঠা লাগিলে যে আর ছাড়ে না …‘
বৃক্ষকথা-(শেষ)-পর্ব-হুমায়ুন আহমেদ
আমি আমার শৈশবের কিছু অংশ নানার বাড়িতে কাটিয়েছি । নানার বাড়ির পুরুষরা দেখি দুই শ্রেণীতে বিভক্ত— একশ্রেণীর সবাই আমার নানা । অন্যশ্রেণীর সবাই মামা। মামা শ্ৰেণীদের সঙ্গে হৈহুল্লোড় করে আমার দিন কাটে। একদিন মামা। শ্ৰেণীকে বেশ উত্তেজিত মনে হলাে। তারা জঙ্গলে ঢুকে বিশেষ এক গাছের ডাল । কেটে আনলেন। প্রতিটি ডালের নিচের অংশ খড় এবং কচুপাতা দিয়ে মুড়ে দেয়া। ইলে ধরার সুবিধার জন্যে। আমাদের সবার সঙ্গে একটা করে গাছের ডাল । ঘটনা। হচ্ছে, আমাদের ফুটবল টিম যাদের কাছে হেরেছে আজ তাদের ধাওয়া করা হবে এবং এই বিশেষ গাছের ডাল দিয়ে পেটানাে হবে। গাছের স্থানীয় নাম– চুতরা।
ফুটবল টিমকে পাওয়া গেল না। মাঝখান থেকে এই পাতা লেগে আমার সমস্ত শরীর ফুলে গেল । ভয়াবহ জ্বলুনি । কেউ যেন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। চুনের প্রান্সেপ, সরিষার তেলের প্রলেপ, কোনােকিছুই কাজ করছে না।
পাঠকরা নিশ্চয়ই এই গাছটি চিনতে পারছেন? ভদ্রসমাজে এর নাম বিছুটি। লতানাে চিরসবুজ গাছ। গাছ ভর্তি পশমের মতো সাদা লোম। গাছটার সংস্কৃত নাম বিষানী । বিছুটির একটি প্রজাতি জজ জমিতে জন্মে । এর নাম জলবিছুটি। জলবিছুটির বিষক্রিয়া না–কি ভয়াবহ।
বৃক্ষকথা-(শেষ)-পর্ব-হুমায়ুন আহমেদ
গাছটির বােটানিক্যাল নাম Traqia involvcrata Linn, সব বিছুটি ইউয়ারবিয়েসি গােত্রের।
বিষাক্ত রসায়নের মূলে আছে ভিটারপেন অ্যালকোহল, কিছু ফ্যাটি অ্যাসিড । ঔষধি ব্যবহার । চরক সংহিতায় বিছুটিকে উন্মাদ রােগের মহৌষধ বলা হয়েছে। কীভাবে
ব্যবহার হবে তা কিন্তু বলা হয় নি। যখন কুষ্ঠরােগের ওষুধ বের হয় নি, তখন গাছের মূল ছেচে প্রলেপ হিসেবে ব্যবহৃত হতাে। গ্রামে এখনাে পশুর ঘায়ের পােকা বের করতে বিছুটি গাছের রস প্রলেপ হিসেবে দেয়া হয় ।