এশা কি বাসায় আছে? জানি না। আতাউর অস্বস্তির সঙ্গে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে।শামা বলল, আপনি দ্রুত মন ঠিক করুন। এতক্ষণ রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলা যায় না। দেখুন না সবাই তাকাচ্ছে আমাদের দিকে। তুমি কি যেতে বলছ ? আমি কিছুই বলছি না। যা বলার আপনিই বলছেন। চল যাই। দু’টা রিকশা ঠিক করুন। একটায় আমি যাব, পেছনে পেছনে আপনি। যাবেন।
তােমার মা কিছু মনে করবেন নাতাে ? শামা জবাব দিল না। তার খুবই বিরক্তি লাগছে। বাইরের বারান্দার কাঠের চেয়ারে আতাউরকে বসিয়ে শামা ঘরে ঢুকল। আশ্চর্য ব্যাপার বাসা খালি! সুলতানা তার ঘরে দরজা ভেজিয়ে শুয়ে আছেন। এশা নেই, মন্টু নেই। কাজের মেয়েটা বাথরুমে কাপড় ধুচ্ছে। সদর দরজাও খােলা। যে কেউ দরজা খুলে টিভি ভিসিআর নিয়ে চলে যেতে পারত।
সুলতানা মেয়েকে দেখে উঠে বসলেন। শামা বলল, মা শরীর খারাপ? সুলতানা বললেন, সামান্য গা গরম।
তােমাকে বিছানা থেকে নামতে হবে না। শুয়ে থাক। এশা কোথায় ? মন্টু কোথায় ?
মন্টু কোচিং সেন্টারে। সন্ধ্যাবেলায় আসবে। এশা কখন আসবে কিছু বলে যায় নি।
দুপুরের খাবার কী ? ডাটা দিয়ে চিংড়ি মাছ । আর কিছু নেই ?
ডাটা দিয়ে চিংড়ি মাছতাে তাের পছন্দ। ভাজা ভুজি কিছু কর নি ?
ডাল আছে। ঘরে কি বেগুন আছে মা?
বেগুন আছে। বেগুন ভাজা খাবি ?
হুঁ। তােমাকে বেগুন ভাজতে হবে না। কাজের মেয়েটাকে বলে দাও। আর একটু আলু ভাজিও করতে বল। দুপুরে একজন গেস্ট খাবে।
শামা জবাব না দিয়ে হাসল। সুলতানা গেস্টের ব্যাপারটায় গুরুত্ব দিলেন । শামার বান্ধবীদের কেউ কেউ হঠাৎ এসে পড়ে বলে— ভাত খাব। তেমনই কেউ হবে। সুলতানা বললেন, আগে খবর দিয়ে রাখলেতাে গােশত রান্না করতাম।
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১২)- হুমায়ূন আহমেদ
শামা বলল, আমার এক হাজার টাকা তুমি আজ আমাকে দেবে। দুপুরে খাবার পর আমি উপহার কিনতে যাব। ভয় নেই একা যাব না, দুপুরে যে গেস্ট আমার সঙ্গে খাচ্ছে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাব। আর বাসায় ফিরব না। বিয়ে বাড়িতে চলে যাব। সারা রাত থেকে পরদিন ফিরব।
আজ রাতেই বিয়ে ? | হ্যা। আজ ১৭ তারিখ না ? কোনাে সমস্যা নেই মা। বাবার কাছ থেকে পারমিশন নেয়া আছে।
উপহার কিনেই বিয়ে বাড়িতে যাবার কোনাে দরকার নেই। বাসায় ফিরবি, তাের বাবাকে বলে তারপর যাবি। তাের বাবা তােকে পৌছে দিয়ে আসবে।
আমাকে বাসায় ফিরতেই হবে ?
অবশ্যই। তাের বাবার সঙ্গে দেখা না করে গেলে সে কী হৈচৈটা করবে বুঝতে পারছিস না? বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হবে। তুই তাের বাবাকে চিনিস ?
আমার ধারণা বিকেলে না ফিরলে বাবা খুশিই হবেন। যাই হােক, মা তুমি কাজের মেয়েটাকে ইন্সট্রাকসন দিয়ে দাও। দেখি তােমার জ্বরের অবস্থা। জ্বর আছে। তুমি শুয়ে থাক। বিছানা থেকে নামবে না।
আতাউর চুপচাপ বারান্দায় বসে আছে। এ বাড়িতে হঠাৎ এসে সে যতটা অস্বস্তি বােধ করবে বলে ভেবেছিল ততটা অস্বস্তি বােধ করছে না। বরং ভাল লাগছে। এ বাড়ির বারান্দাটা সুন্দর । বাড়ির সামনে অনেক গাছপালা থাকায় রাস্তা থেকে কিছু দেখা যায় না। সে বসে আছে বাইরের বারান্দায় অথচ তার কাছে মনে হচ্ছে সে বাড়ির ভেতরেই বসে আছে। তাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না, সে সবাইকে দেখছে। শামা বারান্দায় এসে দাঁড়াল। আতাউর সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। শামা বলল, আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন কেন ?
আতাউর বলল, বুঝতে পারছি না কেন। মনে হয় অভ্যাস বলে।
শামা বলল, এখন বাজে প্রায় দু‘টা। চা না খেলে হয় না? হয়। আমার চায়ের তেমন অভ্যাসও নেই। এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দাও।
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১২)- হুমায়ূন আহমেদ
আমাদের বাসায় ফ্রিজ নেই। বাড়িওয়ালা চাচার বাসায় আছে। আমি ঠাণ্ডা পানি এনে দিচ্ছি। আপনি খেয়ে চুপচাপ আধঘণ্টার মতাে বসে থাকতে পারবেন ?
হ্যা পারব। শােন ঠাণ্ডা পানি লাগবে না। নরম্যাল পানি দিলেই হবে।
আপনি আধঘণ্টা বসে থাকবেন। আধঘণ্টার মধ্যে আমি গােসল সারব। তারপর আপনি আমার সঙ্গে ভাত খাবেন।
না না ভাত খাবার দরকার নেই।
দুপুরবেলা আপনি এসেছেন, আর আমি আপনাকে ভাত না খাইয়ে ছেড়ে দেব ? অসম্ভব। আপনি আমার সঙ্গে ভাত খাবেন তারপর আমি আপনাকে নিয়ে বের হব।
কোথায় যাবে?
আমার এক বান্ধবীর আজ বিয়ে। তার জন্যে গিফট কিনব। আপনি সঙ্গে থাকবেন। তারপর আপনি আমাকে ঐ বান্ধবীর বাসায় পৌছে দেবেন। বান্ধবীর বাড়ি উত্তরায়। পারবেন না?
পারব। আমার কাণ্ডকারখানা কি আপনার কাছে খুব অস্বাভাবিক লাগছে ? না।
মা এখনাে জানে না যে আপনি এসেছেন। মাকে আমি এখনাে কিছু জানাই নি। আপনাকে যখন খাবার জন্যে ভেতরে ডাকব তখনি মা প্রথম দেখবে এবং বিরাট একটা ধাক্কার মতাে খাবে। তার মনও খুব খারাপ হবে।
মন খারাপ হবে কেন ?
মন খারাপ হবে কারণ আজ দুপুরে খাবার আয়ােজন খুব খারাপ। মা আপনাকে দেখে কি চমকানিটাই না চমকাবে! এটা ভেবেই আমার ভাল লাগছে।
তুমি মানুষকে চমকে দিয়ে মজা পাও? হ্যা খুব মজা পাই। পত্রিকা দেব ? বসে বসে পত্রিকা পড়বেন ? কিছু দিতে হবে না। তুমি গােসল করে আস।
এর মধ্যে যদি এশা চলে আসে তাহলে এশাকে অবশ্যি বলবেন আপনার কথা যেন মা’কে কিছু না বলে। বলতে পারবেন না ?
পারব।
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১২)- হুমায়ূন আহমেদ
বাথরুমে ঢােকার মুখে সুলতানা মেয়েকে ধরলেন। বিস্মিত গলায় বললেন, তুই কার সঙ্গে কথা বলছিলি ?
শামা সহজ গলায় বলল, আমিতাে আগেই বলেছি। আমার গেস্ট। দুপুরে খাবে।
পুরুষ মানুষ তাের গেস্ট মানে ? পুরুষ মানুষ আমার গেস্ট হতে পারে না?
সুলতানা চাপা গলায় বললেন, হাসবি না শামা। রঙ্গ রসিকতাও করবি না। এই ছেলে কে ?
আমার পরিচিত।
কোন সাহসে তুই তাকে নিয়ে বাসায় উপস্থিত হলি ?