বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৪)- হুমায়ূন আহমেদ

মীরার ঘরে হচ্ছে নাছাদে এদের প্রকাও একটা কামরা আছেসেখানে হচ্ছেবৃষ্টি বিলাসতুই বাড়িতে আগে এসেছিস

হা এসেছিমাত্র একবার এসেছিএত প্রকাণ্ড বড়লােকের বাড়িতে বারবার আসা যায় নাএত বড় বাড়িতে নিজেকে সব সময় পর পর লাগেতবে আমরা সবাই এক সঙ্গে আছিতাে আমাদের লাগছে না। 

সবাই এসে গেছে

তুই আর টুনি তােরা দুজন বাদ ছিলিএখন বাকি শুধু টুনিমনে হয় সে আসবে নাবাসা থেকে ওকে ছাড়বে নাটুনি খুবই ভুল করলবাসর ঘরে ভিডিও ফিট করাতেই আমাদের শেষ নাআরাে অনেক ফান হবেআমাদের সােসিওলজির শাহানা ম্যাডামও এসেছেনউনি প্রথম আলগা আলগা ঘুরে বেড়াচ্ছিলেনএখন আমাদের দলে ভিড়ে গেছেন ভিডিও ক্যামেরা ফিট করার 

তদারকি তিনিই করছেন। 

সেকী! বিয়ে বাড়িতে গেলে সব মেয়ের মাথাই খানিকটা হলেও আউলা হয়উনার সবচেবেশি আউলা হয়েছে। 

ভিডিও ক্যামেরা বসানাের লােক চলে এসেছেতার নাম তাহেরতাকে দেখে মনে হচ্ছে সে লজ্জায় মুখ তুলতে পারছে নাএতগুলাে মেয়ের পাশে সে খুবই অস্বস্তিবােধ করছেকেউ কিছু বললেই চমকে উঠছে। একবারতাে হাত থেকে ক্যামেরাও ফেলে দিল। 

শাহানা ম্যাডাম বললেন, তাহের ক্যামেরাটা ফিট করছ কোথায় ? খাটের মাথায় ? তাহের হাসূচক মাথা নাড়লম্যাডাম বললেন, ফিল্ড অব ভিশন কি রেখেছ ? শুধু খাটটা কভার করলেই হবেযা ঘটনা সব খাটেই ঘটবেঅডিও রেকর্ডারের কী করেছ

বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৪)- হুমায়ূন আহমেদ

ভিডিওর সঙ্গেই অডিও আছে। 

ক্যামেরাটা গাদাফুল দিয়ে খুব ভালােমতাে ঢেকে দাও যেননা বােঝা না যায় ক্যামেরাসব ঠিকঠাক হলে একটা টেস্টরান করবে। 

তাহের আবারাে হাসূচক মাথা নাড়ল। 

তৃণা বলল, এখন আমাদের দরকার নকল দাড়ি গোঁফফর এভরি বডিস ইনফরমেশনমীরাকে আমি অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছিসে বাসর ঘরে ঢােকার আগে নকল দাড়ি গোঁফ পরে ঘােমটা দিয়ে থাকবেতার স্বামী ঘােমটা খুলে দাড়ি গোঁফওয়ালা স্ত্রী দেখে যে কাণ্ডটা করবে আমাদের ভিডিওতে তা ধরা থাকবে| যূথী বলল, মীরা কি জানে তার বাসর ঘরে ভিডিও ক্যামেরা বসানাে হয়েছে

তৃণা বলল, আমরা এই জন ছাড়া কেউ জানে নাবাইরের মানুষের মধ্যে শুধু মীরার মা জানেন। 

শামা বিস্মিত হয়ে বলল, উনি কিছু বলেন নি

খালা কিছুই বলেন নিউনি বরং সবচেবেশি মজা পাচ্ছেনপ্রথম মেয়ের বিয়েতে সবচেবেশি ফান পায় মেয়ের মাএক লাখ টাকা বাজি উনি 

মেয়ের বাসর ঘরের ভিডিও দেখতে চাইবেন। 

শাহানা ম্যাডাম বললেন, মেয়েরা তােমরা খেয়াল রেখাে কোনাে ছেলে যেন এদিকে না আসেতিন তলার ছাদ আউট অব বাউন্ড ফর এভরিবডি । 

তৃণা বলল, মিঃ হুক্কা কি আসতে পারবেন ? না হুক্কাও আসতে পারবেন নাশামা বলল, হুক্কা কে

তৃণা বলল, মীরার দূর সম্পর্কের ভাইআমরা নাম দিয়েছি হুক্কাসে তার চশমা খুঁজে পাচ্ছে না। তার ধারণা আমরা চশমা লুকিয়ে রেখেছিবারবার আসছে আমাদের কাছে। 

হুক্কা নাম কেন

বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৪)- হুমায়ূন আহমেদ

ফানি টাইপ ক্যারেক্টর, এই জন্যে হুক্কা নাম দেয়া হয়েছেএকসময় মীরা হুক্কার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলকিন্তু হুক্কা সাহেব পাত্তাই দেন নিআমরা ঠিক করেছি হুক্কা সাহেবকেও একটু টাইট দেব। 

শামা এক কোণায় বসে বাসর ঘরের ফুল সাজানাে দেখছেগাদাফুল আর বেলিফুল এই দুরকমের ফুল মশারি স্ট্যান্ড থেকে ঝুলছেবিছানায় থাকছে শুধু গােলাপশাহানা ম্যাডাম এখন গােলাপের কাটা বাছছেনটুনিও চলে এসেছেজবরজং সাজে সেজেছেটুনিকে দেখে সবাই হৈহৈ করে উঠলযূথী বলল, এই তােকেতাে একেবারে বিহারিদের মত লাগছেমনে হচ্ছে তুই মােহাম্মদপুরের পাকিস্তান কলােনিতে থাকিসহাওয়াই মিঠাইওয়ালা শাড়ি তুই পরলি কী মনে 

সবাই হাে হাে করে হেসে উঠলশামা লক্ষ করল তার কিছুই ভাল লাগছে নিজেকে আলাদা এবং একলা লাগছেমনে হচ্ছে এদের কারাে সঙ্গেই তার কোনাে যােগ নেইতার যােগ অন্য কোথাওঅন্য কোনােখানেতার চোখ কেন জানি জ্বালা করছেমাথাও ভার ভার লাগছেবাথরুমে ঢুকে চোখে মুখে পানি দিলে হয়ত ভাল লাগবেতিনতলায় নিশ্চয়ই বাথরুম আছেকাউকে জিজ্ঞেস করে জানতে হবে বাথরুমটা কোথায়কাউকে জিজ্ঞেস করতেও ইচ্ছা হচ্ছে নাতার ইচ্ছা করছে বাসায় চলে যেতে। 

আতাউরকে টেলিফোন করে বললে কেমন হয়, ফিসফিস করে বলাএই শােন আমার শরীরটা ভাল লাগছে নাতুমি একটা বেবীটেক্সি নিয়ে চলে এসতােআমাকে বাসায় নিয়ে যাও। 

বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৪)- হুমায়ূন আহমেদ

মানুষটাকে তুমি করে সে কি কখনাে বলতে পারবে ? মনে হয় নাবিয়ের পরেও হয়ত আপনি আপনি করেই বলবে। 

তৃণা শামার কাছে এগিয়ে এসে বলল, তাের কী হয়েছে ? শামা বলল, কিছু হয় নি। 

কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়েছেতােকে দেখে মনে হচ্ছে তাের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় একশ কিলােমিটার বেগে ঝড় বয়ে যাচ্ছেকেমন জবুথবু হয়ে বসে আছিসসমস্যা কী

কোনাে সমস্যা নেই। 

সমস্যা অবশ্যই আছেবলতে চাইলে বলতে পারিসউড়া উড়া শুনছি তাের বিয়ে ঠিক হয়েছে

তুই নিজের মুখে আমাদের বলছিস না কেন ? কেন আমরা উড়া উড়া শুনব ? ছেলে পছন্দ হয় নিতাইতাে ? বল হা বা না

শামা চুপ করে রইলতৃণা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, এরেঞ্জড ম্যারেজে রকম হবেবাবা মা ধরে বেঁধে এক বান্দর নিয়ে আসবেহাসি মুখে সেই বান্দরকে বিয়ে করতে হবেবাকি জীবন সেই বান্দর গলায় ঝুলে থাকবেতাকে আর গলা থেকে নামানাে যাবে না। 

এখানে শামা কে ? শামা চমকে তাকালবাড়ির কোনাে বুয়াই হবেতাকে খুঁজছেশামা কে ? শামা ? শামা কাঁপা গলায় বলল, আমি শামাকী হয়েছে ? দোতলায় যান আফাআপনের টেলিফোন। 

শামা ভেবেই পেল না, কে তাকে বাড়িতে টেলিফোন করবেএই বাড়ির টেলিফোন নাম্বার সে নিজেই জানে নাটেলিফোনে কি কোনাে খারাপ সংবাদ অপেক্ষা করছে ? আজ কি শনিবার ? শনিবারটা শামার জন্যে খুব খারাপশনিবার মানেই কোনাে না কোনাে খারাপ সংবাদ আসবেই। 

বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৪)- হুমায়ূন আহমেদ

শামা বলল, টেলিফোন কোন ঘরে

বুয়া বিরক্ত গলায় বলল, টেলিফোন সব ঘরে আছেআপনে দোতলায় চলেন। 

সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় শামা দেখল হলুদ ব্লেজার পরা এক ভদ্রলােক সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠছেনবেঁটে খাট মানুষ, মাথাভর্তি চুলবিরক্তিতে তাঁর চোখ কুঁচকে আছে, তবে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার মধ্যে ছেলেমানুষি আছেলাফিয়ে লাফিয়ে উঠছেনযেন সিঁড়ি বেয়ে ওঠাও একটা খেলাভদ্রলােকের চেহারাতেও ছেলেমানুষি আছেখুব অল্প সংখ্যক মানুষই পৃথিবীতে জন্মায় যাদের দিকে একবার তাকালে আর চোখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছা করে নাএই ভদ্রলােক সেরকমবাসে এই ভদ্রলােকের পাশে বসলে কোনাে মেয়েই অস্বস্তি বােধ করবে 

ভদ্রলােক শামাকে দেখে চট করে দাড়িয়ে পড়লেনগম্ভীর গলায় বললেন, এক্সকিউজ মিআপনি কি মীরার বান্ধবীদের একজন

জি। 

আমি আমার চশমা তিনতলার খাবার টেবিলে রেখে বাথরুমে হাত মুখ ধুতে গিয়েছিলামহাত মুখ ধুয়ে এসে দেখি চশমাটা নেইআমার মাইওপিয়া আছেচশমার পাওয়ার থ্রি ডাইওপটারআমার খুবই অসুবিধা হচ্ছেএর মধ্যে সিঁড়িতে দুবার হোঁচট খেয়েছিআমার ধারণা মীরার বান্ধবীরা মজা করার জন্যে চশমা লুকিয়ে ফেলেছেএটা ঠিক নাআপনি মীরার বান্ধবীদের একজনআপনি কি চশমাটা খুঁজে পাবার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করবেন ? আপনি কি জানেন চশমাটা কার কাছে

জি না। 

প্রথম ভুলটা আমিই করেছি

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *