চশমা সঙ্গে নিয়ে বাথরুমে ঢােকা উচিত ছিল। এমন তাে না যে বাথরুমে চশমা রাখার জায়গা নেই। বেসিনে রাখা যেত। তবে একবার বেসিনে রেখেছিলাম। বেসিন থেকে পড়ে চশমার গ্লাস ফ্রেম থেকে বের হয়ে এসেছিল। সরি, আপনাকে আটকে রেখেছি। কিছু মনে করবেন না।ভদ্রলােক আগের মতােই লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতে লাগলেন। শামার খুবই মজা লাগছে। কোনাে বয়স্ক মানুষকে এইভাবে সিড়ি বেয়ে উঠতে সে আগে কখনাে দেখে নি। হড়বড় করে অকারণে এত কথা বলতেও শশানে নি। ভদ্রলােক এমনভাবে কথা বলছিলেন যেন শামাকে তিনি অনেকদিন থেকে চেনেন।
হ্যালাে কে ? শামা, গলা চিনতে পারছিস না? আমি মুত্তালিব। তােদের বাড়িওয়ালা চাচা । এই বাড়ির টেলিফোন নাম্বার আপনি কোথায় পেলেন ? ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। Where there is a will, there is a way. তুই কি অবাক হয়েছিস ?
তাের গলাতে আমি চিনতে পারছি না। চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলছিস কেন? একটা জিনিস খেয়াল রাখবি, টেলিফোনে কথা বলার সময় যতটা সম্ভব মিষ্টি গলায় কথা বলবি। কারণটাও ব্যাখ্যা করি। টেলিফোন কনভারসেশনের পুরােটাই অডিও। মুখ দেখা যাচ্ছে না— গলার স্বরটাই ভরসা। কাজেই সেই স্বরটা মিষ্টি হওয়া বাঞ্ছনীয়। কি আমার কথায় লজিক খুঁজে পাচ্ছিস ?
শামা কিছু বলল না। সে স্বস্তিবােধ করছে। কারণ মুত্তালিব চাচার গলা স্বাভাবিক। তিনি হাসি মুখে কথা বলছেন। কোনাে খারাপ সংবাদ থাকলে তিনি
এমন হাসিমুখে কথা বলতেন না।
হ্যালাে শামা ? হ্যা শুনছি। এই টেলিফোন নাম্বার কী করে জোগাড় করলাম সেটা বলি। কী জন্যে টেলিফোন করেছেন সেটা আগে বলুন।
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৫)- হুমায়ূন আহমেদ
স্টেপ বাই স্টেপ বলি। তুই এতাে ছটফট করছিস কেন ? মনে হচ্ছে পাবলিক টেলিফোন থেকে টেলিফোন করছিস তাের পেছনে লম্বা লাইন। সবাই তােকে তাড়া দিচ্ছে। শােন শামা, হ্যালাে হ্যালাে...
শুনছি।
আমি করেছি কী শােন্। প্রথমে এশাকে বললাম, তােমার বােনের ডায়েরি ঘেটে দেখ তার কোনাে বান্ধবীর নাম্বার লেখা আছে কিনা। সে একজনের নাম্বার দিল। তৃণা মেয়েটার নাম। আমি তৃণার বাসায় টেলিফোন করে এই বাড়ির নাম্বার নিলাম। বুঝেছিস ?
বুঝলাম। আপনার অনেক বুদ্ধি। এখন বলুন টেলিফোন করেছেন কেন ?
টেলিফোন করেছি এটা বলার জন্য যে, বাসায় চলে আয়। আমি তােদর এখানকার ঠিকানা নিয়ে গাড়িও পাঠিয়ে দিয়েছি। এতােক্ষণে গাড়ি পৌঁছে যাবার কথা।
বাসায় চলে আসব ?
তাের বাবার শরীর খারাপ। বাথরুমে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। এখন ভাল । কিছুক্ষণ আগেও বিছানায় শুয়ে ছিল। এখন দেখে এসেছি বিছানায় বসা। লেবুর সরবত খাচ্ছে। সেকেন্ডে সেকেন্ডে শামা, শামা, করছে। এই জন্যেই আমার মনে হয় তাের চলে আসাটা ভাল হবে।
শামা হতভম্ব গলায় বলল, চাচা আপনি কী বলছেন?
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৫)- হুমায়ূন আহমেদ
আপসেট হবার কিছু নেই। তাের বাবা ভাল আছে। ডাক্তার এসে দেখে গেছে। বলেছে চিন্তার কিছু নেই। প্রেসার সামান্য বেশি। প্রেসার কমানাের ওষুধ দেয়া হয়েছে। সিডেটিভ দেয়া হয়েছে। আমি যতদূর জানি এখন নাক ঢেকে ঘুমুচ্ছে।
চাচা আমি আসছি। | তাের কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই টেনশনে মরে যাচ্ছিস। টেনশন করার মতাে কিছু হয় নি। এভরি থিঙ্ক ইজ আন্ডার কন্ট্রোল। তাের মা শুরুতে খুব ভয় পেয়েছিল। এখন সামলে উঠেছে। তুই বরং এক কাজ কর বাবাকে দেখে তারপর আবার বিয়ে বাড়িতে চলে যা। সাপ মরল লাঠি ভাঙল না। Snake is dead, stick in tact— হা হা হা।
এত হাসছেন কেন? হাসির কী হল ?
তাের টেনশন দেখে হাসছি। ভুল বললাম। টেনশন দেখতে পারছি না। শুধু ফিল করছি।
আমার টেনশন করাটা কি হাস্যকর ?
হ্যা, হাস্যকর। ছােটখাট ব্যাপারে যদি এত টেনশন করিস বড় ব্যাপারগুলি কীভাবে সামাল দিবি ?
চাচা আমি রাখি।
এখন টেলিফোন রেখে কী করবি ? গাড়িতে এখনাে পৌছে নি। ততক্ষণ কথা বল।
চাচা, আমার কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৫)- হুমায়ূন আহমেদ
শামা টেলিফোন রেখে দ্রুত নিচে নেমে গেল। মুত্তালিব চাচার গাড়ি এখনাে আসে নি। গাড়ির ড্রাইভার যদি বাসা চিনে আসতে না পারে ? আচ্ছা সে কি আতাউরকে টেলিফোন করে আসতে বলতে পারে না ? আতাউর তাকে বেবীটেক্সি করে পৌঁছে দেবে। এতে নিশ্চয়ই দোষের কিছু নেই।
শামা আতাউরের নাম্বার ডায়াল করল। টেলিফোন আতাউরই ধরল। আগের বারের মতাে অন্য কেউ ধরল না। শামাকে নানান ভনিতা করে আতাউরকে চাইতে হল না।
শামা হ্যালাে বলতেই আতাউর বলল, এশা তােমার খবর কী? দেখলে আমি কেমন গলা চিনি ? আমার সঙ্গে একবার মাত্র কথা বলেছ আর আমি গলা মুখস্থ করে রেখে দিয়েছি।
শামা হকচকিয়ে গেল । এশা–প্রসঙ্গটা তার মাথায় একেবারই ছিল না। অথচ থাকা উচিত ছিল। সে বােকা না, সে বুদ্ধিমতী।
এশা, হ্যালাে বলেই চুপ করে গেলে কেন ? কোথেকে টেলিফোন করছ ? আমাদের বাড়িওলা চাচার বাসা থেকে করছি। আপনি কেমন আছেন ?
ভাল আছি। তােমার বুদ্ধি মতাে দোকানটায় গিয়েছিলাম। তােমার আপা বুঝতেই পারে নি যে পুরাে ব্যাপারটা সাজানাে।
আমারতাে মনে হচ্ছে আপনি একটু বেহায়া টাইপ। আপার সঙ্গে হুড়হুড় করে বাসায় চলে এলেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করলেন। আশ্চর্যতাে! কাজটা খুবই বেহায়ার মতাে করেছি কিন্তু আমার একটুও খারাপ লাগছে ।
মাই গড, আপনি যেভাবে কথা বলছেন তাতেতাে মনে হচ্ছে আপনি আপার প্রেমে পড়ে গেছেন!
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৫)- হুমায়ূন আহমেদ
তুমি যেভাবে কথা বলছ তাতে মনে হচ্ছে প্রেমে পড়াটা অপরাধমূলক।
অবশ্যই অপরাধমূলক। যে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিকঠাক তার প্রেমে পড়াটা অপরাধ।
অপরাধ কেন ? বিয়ে ঠিকঠাক হওয়া মেয়ের প্রেমে পড়া মানে লাইসেন্স করে প্রেমে পড়া। তুমিতাে খুবই গুছিয়ে কথা বল।
আমি গুছিয়ে কথা বলি টেলিফোনে। সামনাসামনি আমি একেবারেই কথা বলতে পারি না। আচ্ছা শুনুন, আপা কি আপনাকে মাকড়সার ধাঁধাটা জিজ্ঞেস করেছে ?
মাকড়সার কোন ধাধা ?