আপার একটা মাকড়সার ধাঁধা আছে। ঐ ধাঁধাটা সে সবাইকে জিজ্ঞেস করে। আপনাকেও জিজ্ঞেস করবে। আপনার বুদ্ধি টেস্ট করার জন্যে জিজ্ঞেস করবে। ধাধার উত্তর দিতে না পারলে আপার মন খারাপ হবে। সে ভেবেই নেবে আপনার বুদ্ধি কম।আমি পারব না। এম্নিতেই আমার বুদ্ধি কম। ধাধার বুদ্ধি আরাে কম।
মাকড়সার ধাঁধাটা আপনি পারবেন। কারণ আমি উত্তরটা শিখিয়ে দিচ্ছি। উত্তরটা হলাে মাকড়সা দু‘রকমের সুতা দিয়ে জাল বানায়। এক রকমের সুতা থাকে আঠা লাগানাে। আরেক রকমেরটায় আঠা থাকে না। যে সুতায় আঠা লাগানাে থাকে না মাকড়সা তার ওপর দিয়ে হাঁটে বলে সে জালে আটকে যায়
আমিতাে কিছুই বুঝতে পারছি না তুমি কী বলছ।
আপনিতাে ধাঁধাটা জানেন না, শুধু উত্তরটা জানেন, এইজন্যে কিছু বুঝতে পারছেন না। বুঝতে না পারলেও ক্ষতি নেই। উত্তরটা জেনে রাখুন। আচ্ছা শুনুন আমি রাখি।
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৬)- হুমায়ূন আহমেদ
শামা টেলিফোন নামিয়ে ঘর থেকে বের হলাে। আর তখনি তার সব বান্ধবীরা সিঁড়ি দিয়ে নামল। বান্ধবীদের সঙ্গে মিঃ হুক্কা আছেন। শাহানা ম্যাডামও আছেন। সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। মিঃ হুক্কা কঠিন গলায় বলল, এক্সকিউজ মি, আপনার বান্ধবীরা বলছে, আপনি আমার চশমা আপনার হ্যান্ড ব্যাগে লুকিয়ে রেখেছেন। কাজটা ঠিক করেন নি। জোক ভাল— But not at the expense of some one.
শামা বলল, আমি আপনার চশমা লুকিয়ে রাখি নি।
তৃণা বলল, তাের হ্যান্ডব্যাগ খুলে দেখিয়ে দে না হ্যান্ডব্যাগে কিছু নেই। এত কথার দরকার কী ?
তৃর্ণ মুখ চেপে হাসছে। শামার বুক ধ্বক করে উঠল। সে এখন পুরােপুরি নিশ্চিত তার হ্যান্ডব্যাগে দ্রলােকের চশমা আছে। তৃণা এক ফাঁকে লুকিয়ে রেখেছে।
শামা হ্যান্ডব্যাগ খুলে চশমা বের করল। তার চোখে পানি এসে যাচ্ছিল। সে অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে বলল, I am sorry,
ভদ্রলােক চশমা নিতে নিতে বললেন—কিছু কিছু অপরাধ আছে শুধু সরিতে কাটা যায় না। যাই হােক, আমি আপনার সরি গ্রহণ করছি। আপনাকে একটা ছােট্ট উপদেশ দেবার ইচ্ছা ছিল। দিচ্ছি না, কারণ আমার মনে হয় না আপনার
সঙ্গে আমার আবারাে দেখা হবে।
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৬)- হুমায়ূন আহমেদ
রাত ন‘টা। এতক্ষণে মন্টু দুটা চ্যাপ্টার পড়ে ফেলতে পারত। এখনাে সে বই নিয়ে বসতেই পারে নি। একবার বসেছিল, বই খােলার আগেই টপ করে দেয়াল থেকে একটা টিকটিকি বইয়ের ওপর পড়েছে। টিকটিকি বইয়ের ওপর পড়া খুব অলক্ষণ। সে বই বন্ধ করে উঠে পড়েছে। অলক্ষণের সময় পার করে সে আবার। পড়তে বসবে।
তাছাড়া মনও বসছে না। বাবার জন্য খুব অস্থির লাগছে। বড় আপা অবশ্যি চলে এসেছে। অস্থির ভাবটা এখন অনেকখানি কমেছে। আপা মেয়ে মানুষ। সে কীইবা করবে! তারপরেও মন্টুর মনে হয়, আপা ঘরে থাকা মানেই অনেক কিছু। মন্টু একটু পর পরই দরজা ধরে দাঁড়াচ্ছে বাবাকে দেখেই চলে যাচ্ছে। তার ওপর দিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে একের পর এক ঝামেলা যাচ্ছে। তাকেই ডাক্তার ডেকে আনতে হয়েছে। চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে স্যুপ আনতে হয়েছে। তাকেই অষুধ আনতে হয়েছে।
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৬)- হুমায়ূন আহমেদ
আবদুর রহমান সাহেব খুব বিব্রত বােধ করছেন। তার লজ্জাও লাগছে। সবাইকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়ার লজ্জা। তিনি পরিবারের প্রধান। তার কর্তব্য সবাইকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখা। বড় মেয়েটা শখ করে বান্ধবীর বিয়েতে গিয়েছিল। তাকে চলে আসতে হয়েছে। মেয়েটার মনটা নিশ্চয়ই খুব খারাপ।
শামা বলল, বাবা স্যুপটা খাও। ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
স্যুপ থেকে মুরগি মুরগি গন্ধ আসছে। ভাতের মাড়ের মতাে একটা জিনিস। তার ওপর লতাপাতা ভাসছে। দেখেই অভক্তি লাগছে। তারপরও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি এক চুমুক স্যুপ মুখে দিলেন।
শামা বলল, স্যুপটা খেতে ভাল লাগছে না ? তিনি বললেন, খারাপ না। তাহলে খাও। চামচ হাতে নিয়ে বসে আছ কেন ?
তিনি পর পর কয়েক চামচ সুপ মুখে দিলেন। শামা বলল, শরীরটা কি এখন আগের চেয়ে ভাল লাগছে ?
একটু ভাল না অনেকখানি ভাল ?
অনেকখানি ভাল। স্যুপ খেয়ে শুয়ে পড়।
আবদুর রহমান সাহেব আরাে এক চামচ সুপ মুখে দিলেন। ভক করে মুরগির গন্ধ নাকে লাগল। শরীর কেমন যেন মােচড় দিচ্ছে। বমি হয়ে যেতে পারে। তিনি বমি আটকাবার চেষ্টা করলেন। তার শরীরের কলকজা ভাল না। একবার বমি শুরু হলে বাড়িতে আবারাে হৈচৈ শুরু হবে। মন্টুর পড়া হবে না। পরীক্ষার আগের রাতের রিভিশনটা এক মাসের পড়ার সমান। কাল তার পরীক্ষা। মনেই ছিল না। স্যুপ খাওয়াটা বন্ধ করতে হবে। মেয়ে এমন আগ্রহ নিয়ে খেতে বলছে তিনি নাও করতে পারছেন না। মন্টু দরজা ধরে আবারাে এসে দাড়িয়েছে। তিনি চোখের ইশারায় ছেলেকে কাছে ডাকলেন। মন্টু এগিয়ে এলাে।
রিভিশন শেষ হয়েছে ?
না ।
বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৬)- হুমায়ূন আহমেদ
আমার শরীর ভাল আছে। আমাকে নিয়ে মােটেও চিন্তা করবি না। হাত মুখ ধুয়ে বই খাতা নিয়ে বসে যা। রাত দু’টা পর্যন্ত পড়বি। দু‘টার পর ঠাণ্ডা পানিতে হাত মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়বি। পরীক্ষার আগের রাতে রিভিশন যেমন দরকার, ঘুমও ঠিক তেমনই দরকার । দু’টার ইম্পর্টেন্সই সমান সমান। ফিফটি ফিফটি। বুঝতে পারলি ?
মন্টু মাথা কাত করল। শামা বলল, তােমার উপদেশ দেবার কোনাে দরকার নেই বাবা, তুমি স্যুপটা শেষ কর। ঠাণ্ডা হলে আর খেতে ভাল লাগবে না।
আবদুর রহমান সাহেব নিচু গলায় বললেন, আমি আর খাব না। বমি আসছে। বাতি নিভিয়ে দিয়ে তুই চলে যা। আমি শুয়ে থাকব।
মাথায় হাত বুলিয়ে দেই? দরকার নেই। তােমার কি ঘুম পাচ্ছে ? হুঁ।
ঘুম পেলে মাথায় হাত না বুলালেই ভাল । ঘুমের সময় মাথায় হাত বুলালে ঘুম কেটে যায়।
শামা বাবার ঘরের বাতি নিভিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল।
সুলতানা রান্নাঘরে রুটি বানাচ্ছেন। শামা মা’র পাশে বসতে বসতে বলল, রুটি বানাচ্ছ কেন ?