বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৯)- হুমায়ূন আহমেদ

আজ দেখবে না তা করা যাবে ।

ফজরের আজান হতেই মাবাবা দুজনই উঠে পড়বেনতারা অজু করতে এসে দেখবেন তাদের বড় মেয়ে একা একা বারান্দায় বসে আছেমনের কষ্টে মেয়ে সারা রাত ঘুমুতে পারে নিতারা দুজনই খুবই দুঃখিত হবেন বৃষ্টি বিলাসসেটা হতে দেয়া যায় নাশামা মনের কষ্টে ঘুমুতে পারছে না, এটা ঠিক নাতার মনে কষ্ট নেইতবে তার খারাপ লাগছে। 

খারাপ লাগলেই সেই খারাপ লাগাটা অন্যকে দেখাতে হবে কেন ? আজ তার জন্যে খারাপ একটা রাত যাচ্ছেরাতটা কোনাে মতে পার করতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবেএকজন লােকের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিলযে কোনাে কারণে বিয়েটা ভেঙে গেছেএটা এমন কোনাে বড় ঘটনা না এই 

লােকের সঙ্গে বিয়ে হলে তার এক ধরনের ছেলেমেয়ে হতঅন্য আরেক জনের সঙ্গে বিয়ে হলে অন্য ধরনের ছেলেমেয়ে হবেব্যাস এইতাে! এর বেশি আর কী

তিনটা কুড়ি বাজেএই শেষবার ঘড়ি দেখাশামা ঠিক করে ফেলল সকালের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আতাউর নামের মানুষটার ব্যাপারে সে কিছু ভাববে নাআংটিটা ফেরত পাঠাতে হবেভাগ্যিস সে আংটি আঙুলে আর পরে নিআতাউরের সঙ্গে শেষবার কি শামা কথা বলবে ? হ্যা বলবে, শামা হিসেবে বলবে নাএশা হয়ে বলবেএই একটা ভাল সুবিধা হয়েছেএশা সেজে সে অনেক কিছু বলতে পারছেযাকে বলা হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। 

বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৯)- হুমায়ূন আহমেদ

শামা ভেবেছিল বাসর রাতে পুরাে ঘটনাটা আতাউরকে হাসতে হাসতে বলবে এবং মানুষটার হতভম্ব মুখ দেখবেমানুষটা নিশ্চয়ই খুব লজ্জা পাবেবিড়বিড় করে বলবে, তুমি এমন মেয়ে! আশ্চর্য! তখন শামা হঠাৎ শুরু করবে একটা ভূতের গল্পসে খুব ভাল ভূতের গল্প বলতে পারেতার নানিজানদের বাড়ির পেছনের জঙ্গলে বার তের বছর বয়েসী একটা মেয়ের ডেডবডি পাওয়া গিয়েছিলমেয়েটা কে ? কোথেকে এখানে এসেছে, কেউ কিছু জানে নাফুটফুটে চেহারা, মাথাভর্তি চুলঠোটের কোণায় হাসির রেখাপুলিশ এল তদন্ত হলাে

কিছুই বের হলাে নামেয়েটার কবর হলাে গ্রামের মসজিদের পেছনের কবরস্থানেতারপর শুরু হলাে যন্ত্রণাগভীর রাতে মেয়েটার কান্না শােনা যায়লােকজনদের ফিসফিস করে বলেএই তােমরা আমাকে কবর দিলে কেন ? আমি হিন্দুআমার নাম লীলাবতীগ্রামের লােকজন অস্থির হয়ে পড়লশেষে সবাই মিলে সালিস করে ঠিক করল কবর খুঁড়ে মেয়েটার ডেডবডি বের করে শ্মশানে নিয়ে পােড়ানাে হবেকবর খােড়া হলাে, দেখা গেল কবরে কিছুই নেইকাফনের কাপড়টা শুধু পড়ে আছে। 

ভূতের গল্প শেষ করে শামা ভয় কাটানাের জন্যে একটা মজার গল্প বলবে যে গল্প বলবে সেটাও ঠিক করাগল্পটা সবচেসুন্দর বলতে পারে তৃণাতবে সে নিজেও খারাপ বলে এক পথচারী অন্য একজনকে জিজ্ঞেস করল, ভাই শুনুন, এই রাস্তাটা কি হাসপাতালের দিকে গিয়েছে ? উত্তরে সেই লােক বলল, রাস্তার কি অসুখ হয়েছে যে রাস্তা হাসপাতালের দিকে যাবে

গল্পগুজব শেষ হবার পর মানুষটাকে পুরােপুরি চমকে দেবার জন্যে সে বলবে, আচ্ছা শুনুন, অনেক গল্প করা হয়েছেএখন আমার খুব ঘুম পাচ্ছেগতকাল রাতেও ঘুমুই নিঘুমে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছেআমি ঘুমাব। 

বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৯)- হুমায়ূন আহমেদ

ঘুমের মধ্যে আপনি কিন্তু আমার গায়ে হাত দেবেন নাঘুমের সময় কেউ আমার গায়ে হাত দিলে আমার খুব খারাপ লাগেএই বলেই সে পাশ ফিরে শুয়ে গভীর ঘুমের ভান করবেলােকটা কী করবে? বাধ্য ছেলের মতাে চুপচাপ পাশে বসে থাকবে

আজান হচ্ছেসুলতানা উঠেছেনরান্নাঘরের দিকে যাচ্ছেনচুলায় চায়ের কেতলি বসিয়ে তিনি তাঁর স্বামীকে ডেকে তুলবেনদুজনে ফজরের নামাজ পড়ে এক সঙ্গে চা খাবেনতারপর আবার ঘুমুতে চলে যাবেনঘণ্টা খানিক ঘুমিয়ে আবার উঠবেনএই ওঠা ফাইনাল ওঠাআগেরটা সেমিফাইনালএই রুটিনের কোনাে ব্যতিক্রম শামা তার জীবনে দেখে নিশামা এবং তার বাবা রুটিনের মধ্যে আটকা পড়ে গেছেনমানুষ অতি দ্রুত রুটিনে আটকা পড়ে যায়ভালবাসাবাসিও কি এক সময় রুটিনের মধ্যে চলে আসে? রুটিন করে একজন আরেক জনকে ভালবাসে

শামা বিছানায় উঠে বসলসে ঠিক করল এক কাপ চা নিয়ে ছাদে চলে যাবেছাদে হাটতে হাটতে চা খাবেচা খেতে খেতে গুছিয়ে নেবেএশা সেজে আজ কী কী কথা আতাউর নামের মানুষটাকে বলবে কথা বলবে কি না সেটাও ভাবার ব্যাপার আছেএখন আর কথা বলে কী হবে! তবু সে হয়ত বলবেকারণ তার কথা বলতে ইচ্ছা করছেকথা বলতে হবে নটার আগেটার সময় মানুষটা নিশ্চয়ই অফিসে চলে যাবেশামা কলেজ বাদ দিয়ে ঘরে বসে থাকতে পারেমানুষটা পারবে নাতাকে বেঁচে থাকতে হলে অফিস করতে হবেবেতন তুলতে হবেসে নিশ্চয়ই রুটিনে ঢুকে পড়া মানুষ। 

বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-১৯)- হুমায়ূন আহমেদ

এখন বাবার গলা পাওয়া যাচ্ছেবাবার অসুখটা তাহলে সেরে গেছেতিনি রােজদিনের মতাে নামাজ পড়বেনকোরান তেলাওয়াত করবেনতারপর ছােট্ট ঘুম ঘুমাতে যাবেনঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে অফিসের দিকে রওনা হবেনতার জীবন আগের মতােই চলবেশামার জীবনও হয়ত আগের মতােই চলবেএক সময় আতাউর নামের লােকটার কথা মনেও থাকবে নাঅনেক অনেক দিন পর তার নিজের মেয়ে বড় হবেসে তার বান্ধবীর বিয়ে দেখে বাসায় ফিরে মাসঙ্গে গল্প করতে বসবে তখন হয়ত শামা হঠাৎ করে বলবে, জানিস আমার একজনের সঙ্গে বিয়ে প্রায় ঠিকই হয়ে গিয়েছিললােকটার নাম আতাউরআমি ঠাট্টা করে বলতাম খাতাউর । 

তার মেয়ে বলবে, ছিঃ মানুষের নাম নিয়ে ঠাট্টা করা ঠিক নানামটাতাে সে রাখে নিবাবা মা রেখেছে। 

শামা বলবে, তা ঠিকতখন আমার বয়স কম ছিলঠাট্টা তামাশা করতে খুব ভাল লাগত। 

উনার সঙ্গে বিয়ে হলাে না কেন

আমার বাবা কোনাে খোঁজখবর না নিয়েই বিয়ে ঠিক করেছিলেন তাে শেষে তিনি জানতে পারলেন, কিছু সমস্যা আছে। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *