বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-৮)- হুমায়ূন আহমেদ

থ্যাংক য়ু। 

না, আপনাকে করতে হবেআমি চাই আপনি আপাকে চমকে দিনআপার একটা শিক্ষা হােকআপনাকে কলেজের গেটের সামনে দাঁড়াতে হবে নাএকটা কনফেকশনারির দোকান আছে নাম নিরালা। আপনি দোকানে ঢুকে একটা কোক বা পেপসি খাবেনআপা সেখানে উপস্থিত হবে। 

বৃষ্টি বিলাসসে শুধু শুধু সেখানে যাবে কেন

যাবে কারণ আমি তাকে বলে দেব ঐ দোকান থেকে আমার জন্যে একটা জিনিস আনতেপারবেন

পারব না। আপনাকে পারতেই হবেপ্লিজআগামীকাল দুপুর দেড়টায়একটা চল্লিশে অপার ক্লাস শেষ হবেদোকানে আসতে আসতে তার লাগবে দশ মিনিট। 

এশা আমি এই কাজটা করতে পারব নানা পারলে কী আর করাআমার অফিস আছেঅফিস কামাই দিয়ে দোকানে বসে কোক খাওয়া! কোক খাওয়ার জন্যেতাে অফিস কামাই দিচ্ছেন না। যে মেয়েটিকে বিয়ে 

করতে যাচ্ছেন তার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করতে যাচ্ছেন। 

বিয়ের পরতাে গল্প করবইবিয়ের পর গল্প করা আর বিয়ের আগে গল্প করা কি এক

এক না ? না এক না। আকাশ পাতাল তফাততুমি বুঝলে কী করে? তুমিতাে বিয়ে কর নিবিয়ে না করলেও বুঝতে পারছিএইসব ব্যাপারে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অনেক বেশি বােঝেআপনি যাবেন কিন্তু। 

ধর আমি গেলামতারপর দেখলাম তােমার আপা আসে নিআপা যাবেআমি ব্যবস্থা করে রাখবআর না গেলে দেখা হবে নাতুমি দেখি খুবই ইন্টারেস্টিং মেয়েদুলাভাই আপনি যাবেন তাে? মাই গড এখনি দুলাভাই ডাকছ কেন ? একদিনতাে ডাকতেই হবে, একটু প্র্যাকটিস করে নেই আগেভাগে প্র্যাকটিস করতে হবে নাআমার খুবই লজ্জা লাগছেলজ্জা লাগলে ডাকব নাআচ্ছা শুনুন, আপনি কাল যাচ্ছেন তাে ? এখনাে বলতে পারছি না। 

বৃষ্টি বিলাস হুমায়ূন আহমেদ

আপনাকে যেতে হবেনা গেলে আমি খুবই রাগ করব। আমি আপনার একটা মাত্র শালীআমাকে রাগালে তার ফল শুভ হবে নাটেলিফোন রাখিঅনেকক্ষণ কথা বলে ফেললাম, আপনি বােধহয় আমাকে ফাজিল টাইপ মেয়ে ভাবছেনদুলাভাই আমি কিন্তু ফাজিল টাইপ নাসরি, আবার দুলাভাই বলে ফেললাম। 

শামা টেলিফোন রেখে খানিক্ষণ হাসল ছােটবােন সেজে টেলিফোন করার এই বুদ্ধিটা হঠাৎ তার মাথায় এসেছেবুদ্ধিটা যে এমন কাজে লাগবে আগে বুঝতে পারে নিমানুষটার গলার স্বর সুন্দরশুনতে ভাল লাগছিলআরাে কিছুক্ষণ কথা বললে হতআরেক দিন বললেই হবেপ্রথম দিন এত কথা বলা ঠিক নাএশাকে সে ফাজিল মেয়ে ভাববেএশা মােটেই ফাজিল মেয়ে না । 

মুত্তালিব সাহেব বারান্দায় বসেছিলেনশামা বারান্দায় এসে দাঁড়ালমুত্তালিব সাহেব বললেন, কার সঙ্গে কথা বললি

শামা হাসলমুত্তালিব সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, প্রশ্ন করলে প্রশ্নের জবাব দিবিহেসে 

ফেলবি নাএতক্ষণ ধরে কার সঙ্গে কথা বললি

বলা যাবে না। 

দুনিয়াতে নানান ধরনের ব্যাধি আছে। তার একটা হলাে টেলিফোন ব্যাধিঘণ্টার পর ঘণ্টা টেলিফোনে কথা বলা ব্যাধিএটা ভাল না। 

আপনার পায়ের অবস্থা কী ? আমি একটা প্রশ্ন করেছিলাম তার জবাব কিন্তু এখনাে পাই নিআসুন আপনাকে হাঁটাইতুই তাের কাজে যাআমাকে হাঁটাতে হবে না। 

আমি টেলিফোনে যতক্ষণ কথা বলেছি ঘড়ি ধরে ঠিক ততক্ষণ আপনাকে হাঁটাবনগদ বিদায়। 

শামা মুত্তালিব সাহেবকে টেনে দাঁড় করালােশামা বলল, আমার কাঁধে হাত রাখুনআমাকেইতাে ধরে আছেন আবার দেয়াল ধরছেন কেন ? ভেরি গুড়একী দুটা পা এক সঙ্গে ফেলছেন কেন ? আমি ওয়ান টু বলবওয়ান হলাে ডান পা, টু হলাে বাম পাওয়ান-টুওয়ানটুহাঁটি হাঁটি পা পা । 

বৃষ্টি বিলাস হুমায়ূন আহমেদ

সুলতানা রান্নাঘরেআবদুর রহমান সাহেব আজ অফিস থেকে ফেরার পথে ইলিশ মাছ কিনে এনেছেনতার হঠাৎ সর্ষে ইলিশ খেতে ইচ্ছা করছেকাঁচা বাজার থেকে রাই সরিষা, কাঁচা মরিচ কিনেছেনদুই কেজি আতপ চালও কিনেছেনসর্ষে ইলিশ নাকি আতপ চালের ভাত দিয়ে খেতে মজাইলিশ সর্ষে রান্না হচ্ছেএশা খুব আগ্রহ নিয়ে বসে আছেসুলতানা বললেন, রান্নাঘরে বসে আছিস কেন

এশা বলল, রান্না শিখছিমা, আজ আমি রাঁধবতুমি আমাকে দেখিয়ে দাও। 

সুলতানা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেনএশার মুখ থেকে অন্ধকার দূর হয়েছেগত কয়েকদিন চিমসে মেরে ছিলএখন হাসি খুশি ভাবটা ফিরে এসেছেতার যে সমস্যা ছিল সেই সমস্যা নিশ্চয়ই দূর হয়েছেসুলতানার সামান্য মন খারাপ হলােতার মেয়েগুলির খুবই চাপা স্বভাবমনের কথা কেউ মাসঙ্গে বলে না। 

এশা বলল, লবণের অনুমানটা কীভাবে কর মা ? কোনাে নিয়ম কি আছে

সুলতানা বললেন, পুরােটাই আন্দাজমাখানাের পর জিবে নিয়ে লবণ দেখে নিতে হয়। 

ওয়াক থু, কাঁচা মাছের রস মুখে দেব ? পরে পানি দিয়ে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করবি । 

বৃষ্টি বিলাস হুমায়ূন আহমেদ

এশা মাছ মাখাচ্ছেসুলতানা মুগ্ধ হয়ে মেয়ের কাজ দেখছেনসময় কত দ্রুত পার হচ্ছেএতটুকু মেয়ে ছিল, দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেছে

একজনের তাে বিয়েই ঠিক হয়ে গেল। 

মা দেখতে লবণ কি এতটুক দেব

বেশি হয়ে গেছেআরাে কমএকটা ব্যাপার খেয়াল রাখবিলবণ কম হলে পরে দেয়া যায়বেশি হলে কিন্তু কমানাে যায় না। 

বেশি হলে পানি দিয়ে ঝােল বাড়িয়ে দেবসর্ষে বাটায় পানি দিবি কীভাবে ? তাওতাে কথা। 

সুলতানা আগ্রহের সঙ্গে বললেন, কাঁচা মরিচের একটা ব্যাপার তােকে শিখিয়ে দেই। কাঁচা মরিচ আস্ত দিলে মরিচের ঘ্রাণটা তরকারিতে যায়তরকারি ঝাল হয় নাআর যদি মাঝখান দিয়ে কেটে দিস তাহলে মরিচের ঘ্রাণও যায় তরকারি ঝালও হয়। 

আমরা কী করব মা? ঝাল করব, না মরিচের গন্ধওয়ালা তরকারি করব ? তুই রান্না করছিস, তুই ঠিক কর । 

এশাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছেসে কী করবে বুঝতে পারছে নাসে ভুরু কুঁচকে আছেএশা বলল, মা আমার খুব আশ্চর্য লাগছে। 

কেন ? সামান্য রান্না, তার মধ্যে ডিসিশান নেয়ার ব্যাপার আছেআমাকে চিন্তা করতে হচ্ছে কী করবঝাল তরকারি করব, নাকি মরিচের ঘ্রাণওয়ালা তরকারি করবমা, আমি তাে খুবই চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছি। 

সুলতানা তার চিন্তাগ্রস্ত মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেনতার খুবই মজা লাগছে। 

এশা বলল, মা তুমি যদি এখন বারান্দায় যাও তাহলে খুব মজার একটা দৃশ্য দেখবে। 

কী দৃশ্য দেখব

আপা বাড়িওয়ালা চাচাকে হাঁটা শেখাচ্ছেধরে ধরে হাঁটাচ্ছেআর মুখে মুখে বলছে হাঁটি হাঁটি পা পা আপা খুবই মজা পাচ্ছেবারান্দার এক মাথা থেকে আরেক মাখায় যাচ্ছে। 

বৃষ্টি বিলাস হুমায়ূন আহমেদ

সুলতানা ছােট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, মুত্তালিব সাহেব বেচারা পা নিয়ে ভাল সমস্যায় পড়েছেনকী অদ্ভুত রােগহাঁটু বাঁকে না

এশা বলল, মা তােমাকে একটা কথা বলব ? তুমি কিন্তু রাগ করতে পারবেযদি প্রমিজ কর রাগ করবে না, তাহলেই কথাটা বলব। 

রাগ করার মতাে কথা

আমার কথা শুনে তােমার হয়ত মনে হবে আমার মন ছােট বলে ধরনের কথা বলছি। 

কথাটা কী ? বাড়িওয়ালা চাচার সঙ্গে আপার এত মেশা ঠিক নামেশামেশি বেশি হচ্ছে। 

সুলতানা বিস্মিত হয়ে বললেন, এইসব কী বলছিস! উনি শামাকে নিজের মেয়ের মত দেখেনমা ডাকেন। 

এশা বলল, মা ডাকলেও ঠিক নাঠিক না কেন

আমি তােমাকে বুঝিয়ে বলতে পারব না মাআমার কাছে মনে হচ্ছে ঠিক মুত্তালিব চাচা আপাকে খুব পছন্দ করেন আবার আপাও উনাকে খুব পছন্দ করেনতুমি কি লক্ষ করেছ দিনের মধ্যে একবার দোতলায় না গেলে আপা থাকতে পারে না

যায় টেলিফোন করতেটেলিফোন করতে যাওয়াটা আপার একটা অজুহাত। 

তুই বেশি বেশি বােঝার চেষ্টা করছিস এশা

 

(চলবে)

বৃষ্টি বিলাস (পর্ব-৭)- হুমায়ূন আহমেদ

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *