বৃষ্টি বিলাস (শেষ-পর্ব)- হুমায়ূন আহমেদ

এশা কী করছে ? রান্না করছেতােমার শরীর ঠিক আছে মা? হ্যা। 

শামা রান্নাঘরে চলে গেলএশা বােনকে দেখে হাসলযেন বাড়িতে কিছুই হয় নিশামা বলল, কী রান্না করছিস

বৃষ্টি বিলাসমাংসবাবা আজ বাংলাদেশের সবচেপ্রবীণ গরুর মাংস নিয়ে এসেছেনএক ঘন্টার ওপর জ্বাল হয়ে গেছেযতই জ্বাল হচ্ছে মাংস ততই শক্ত হচ্ছে। 

গন্ধতাে খুব সুন্দর বের হয়েছেগন্ধে গন্ধেই খেতে হবে। 

শামা বােনের পাশে বসতে বসতে বলল, তুইতাে ভাল রান্না শিখে যাচ্ছিসদিন মাছের ঝােল রান্না করলি, আমি বুঝতেই পারি নি তাের রান্নাআমি ভেবেছি মা বেঁধেছে। 

রান্না শেখার কাজটা আমি মন দিয়ে শিখছি আপাকারণ শুনতে চাও ? কারণ হচ্ছে বিয়ের পর আমাদের সংসারে খুব গরিবি হালত চলবেকাজের বুয়া রাখতে পারব নারান্নাবান্না আমাকেই করতে হবেআমি এমন রান্না কখনাে রাধব না যে মাহফুজ মুখে দিয়ে বলবেকী বেঁধেছ

তুই এত কিছু চিন্তা করিস

এশা হাসতে হাসতে বলল, আমি তােমার মতাে না আপাআমি খুবই চিন্তাশীল তরুণী। 

তাের বিয়েটা কবে হচ্ছে

তােমার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমি বিয়ে করব নাতুমি যদি বিয়ে করতে দশ বছর দেরি কর, আমিও ঠিক দশ বছরই দেরি করব। 

বৃষ্টি বিলাস (শেষ-পর্ব)- হুমায়ূন আহমেদ

কারণ কী ? বললাম না, আমি খুব চিন্তাশীল তরুণীচিন্তাশীল তরুণী বলেই তােমার 

বিয়ের জন্যে অপেক্ষা করব। 

কেন অপেক্ষা করবি ? আমার সঙ্গে তাের কী ? সেদিন না বললি আমি আলাদা, তুই আলাদা

এই সংসারে যতদিন আছি ততদিন আলাদা নাসংসার থেকে বের হলে আলাদাআপা শােন, আমি কখনাে হুট করে কিছু করি নাযাই করি খুব ভেবে চিন্তে করিআমার সব কিছুর পেছনে একটা পরিকল্পনা থাকে। 

শামা আগ্রহ নিয়ে বলল, তাের বিয়ের পরিকল্পনাটা শুনিথাক এখন না, রাতে ঘুমুতে যাবার সময় শুনব। 

এশা হাঁড়িতে পানি দিয়ে নাড়তে নাড়তে বলল, রাতে ঘুমুতে যাবার সময় কিছু শুনতে পারবে না আপাতখন বাসায় খুব হৈচৈ হতে থাকবেকান্নাকাটি হতে থাকবেএর মধ্যে গল্প শুনবে কি

হৈচৈ কান্নাকাটি হবে কেন

কারণ মন্টু রাতে বাসায় ফিরবে নাবাবা ছেলের জন্যে অস্থির হয়ে পড়বেনতার ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাবেরাত বারটা একটার সময় কাদতে কাঁদতে নিজেই ছেলের সন্ধানে বের হবেনবের হলেও লাভ হবে নাআগামী এক সপ্তাহ তিনি ছেলে খুঁজে পাবেন না। 

শামা বলল, তুই তাকে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছিস

হ্যাআমি তাকে মুত্তালিব চাচার ঘরে রেখে এসেছিতাঁকে বলে এসেছি মন্টুকে যেন এক সপ্তাহ লুকিয়ে রাখেনআমি চাই বাবার একটা ভাল শিক্ষা হােকছেলের ওপর তিনি যত রাগই করেন, অচেনা অজানা একদল মানুষের সামনে তিনি তাকে লজ্জা দিতে পারেন না। 

বৃষ্টি বিলাস (শেষ-পর্ব)- হুমায়ূন আহমেদ

মা জানে যে, মন্টুকে তুই লুকিয়ে রেখেছিস ? জানেন। 

আমিতাে এই মাত্রই মুত্তালিব চাচার কাছ থেকে এলামতুই কখন মন্টুকে নিয়ে গেলি

আমি খুব দ্রুত কাজ করি আপা। 

তাইতাে দেখছিএখন শুনি তাের বিয়ের পরিকল্পনাতুই কথা শুরু করার আগে আমি তােকে একটা কথা বলে নেইমাথায় আঁচল দিয়ে তুই রান্না করছিসতােকে বউ বউ লাগছেমনে হচ্ছে তুই একটা বিরাট বড় বাড়ির বড় বউএবং বাড়িটার সমস্ত ক্ষমতা তাের হাতের মুঠোয়। 

আমাকে সুন্দর লাগছে কিনা সেটা বল

তােকে পরীর মতাে লাগছেমনে হচ্ছে এক্ষুণি শাড়ির ফাক দিয়ে তাের পাখা বের হয়ে আসবে। 

এশা ছােট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তােমার সবচেবড় গুণ কী জান আপা? তােমার সবচেবড় গুণ হলাে তুমি চট করে মানুষকে খুশি করে ফেলতে পারআমি পারি নাতুমি খুব সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলআমি মিথ্যা কথা বলতে পারি নাযে মিথ্যা কথা বলতে পারে না তাকে মানুষ ভয় পায়ভালবাসে না, পছন্দও করে না। 

জ্ঞানের কথা বন্ধ করে তাের বিয়ের পরিকল্পনাটা বল, আমার শুনতে ইচ্ছা করছে। 

এশা বােনের দিকে ফিরল সে বসেছিল পিঁড়িতেপিড়ি আরেকটু টেনে নিল শামার দিকেগলা সামান্য নামিয়ে বলল, আপা শােন, আমি খুব খারাপ ধরনের, খুবই বাজে টাইপ একটা ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছিকারণ তাকে আমার খুবই পছন্দ। 

বৃষ্টি বিলাস (শেষ-পর্ব)- হুমায়ূন আহমেদ

কেন পছন্দ

কেন পছন্দ সেটা আরেকদিন বলবএখন পরিকল্পনাটা শােনআমি ঠিক করেছি তাকে বিয়ে করব কাজি অফিসেতার বিরুদ্ধে পুলিশের বেশ কয়েকটা মামলা আছেসে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, আমি ব্যবস্থা করে রাখব যেন কাজি অফিসে বিয়ের পর পর পুলিশ তার খোঁজ পায়কাজি অফিস থেকেই পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়যেন পরের দুই বা তিন বছর সে জেল থেকে বের হতে 

পারে । 

বলিস কী

এটা ছাড়া আমার কোনাে পথ নেই আপাবিয়ের পর পর সে যদি জেলে চলে যায়, যদি অনেকদিন সে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে না পারে, তাহলে সে যে কষ্টটা পাবে তার কোনাে তুলনা নেইএই কষ্টটাই তাকে বদলে ফেলবেবাকি জীবন সে চেষ্টা করবে যেন এক মুহূর্তের জন্যেও আমাকে ছেড়ে থাকতে 

হয়। 

তাের কষ্ট হবে না

আমি ভবিষ্যতের আনন্দটা দেখতে পাচ্ছিতােআমার কষ্ট হবে নাতােমার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমি কেন বিয়ে করতে পারছি না তা বুঝতে পারছছাতাে? যে পরিবারের একটা মেয়ে এমন একজনকে বিয়ে করে, যাকে বিয়ের দিনই পুলিশ ধরে নিয়ে হাজতে ঢুকিয়ে দেয়, সেই পরিবারের মেয়েরা কেমন ? সেই পরিবারের 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *