ভেষজগুন সম্পূর্ণ মহৌষধ আদা! জানেন কি এর কি কি গুনাগুন রয়েছে?

আদা একটি অতি পরিচিত মশলা।রান্নায় কম বেশি আদার ব্যবহার আমরা সবাই করি।শুধু আমাদের দেশে নয় বিদেশেও রান্নায় আদার ব্যবহার সমাদৃত।আদায় অনেক ঔষুধি গুন রয়েছে।কবিরাজি শাস্ত্রে আদার ঔষুধি গুনের বর্ণনা রয়েছে।আদা রান্নায় বয়বহৃত হয়ে খাবারের স্বাদ বহুগুন বাড়িয়ে দেয়।এতে প্রচুর পুষ্টি গুন রয়েছে আদার বৈজ্ঞানিক নাম হলো Zingiber Officinale. এটি জিঞ্জাবারসি পরিবারের জিঞ্জাবার গণের ছোট রাইজোম সমৃদ্ধ বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ।আদা  সুগন্ধী ও ঝাঁঝালো স্বাদযুক্ত। আদার ভিতরের রং ঘিয়ে রঙ্গের। গবেষকেরা গবেষনা করো দেখেছেন যে, এর ‘জিনজেরল কম্পাউন্ড’-এর পুষ্টিগত ভূমিকাকে মুখ্য হিসেবে খুঁজে পাওয়া গেছে। এই উপাদানটি আদার স্বাদ ও গন্ধের জন্য দায়ী। এই জিনজেরলে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ক্ষমতা, যা মানবদেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য করে।

আদা

আদা চাষ করার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু পূর্ণ আবহাওয় দরকার। সামান্য ছায়াযুক্ত স্থানে আদা চাষ ভাল হয়। আদা চাষের জন্য ঊর্বর দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। তবে এঁটেল মাটিতে চাষ করলে পানি নিষ্কাশনের খুব ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে।আদার পুষ্টিগুন অনেক এবং এই পুষ্টিগুনগুলো মানব শরীরের জন্য খুবই উপকার। আর ব্যবহারও খুব সহজ।বিভিন্ন রকম রোগ প্রতিরোধে আদা একটি কার্যকর ভেষজ উপাদান।বিভিন্ন চিকিৎসা শাস্ত্রে যুগ যুগ ধরে আদার ব্যবহার হচ্ছে।   নিম্ন আদার মানুষের শরীরের কি কি উপকারে আসে তা আলোচনা করা হলো :-

কবিরাজি মতে আদার উপকারিতা ও ব্যবহার :

নিম্নে কবিরাজি বা হাকিমি চিকিৎসায় কিভাবে আদা ব্যবহূত হয় এবং এর উপকারিতা দেয়া হলো:

  • পেটের সমস্যা দূর করে : আদা খাবার হজম করতে ও মল পরিষ্কার করতে সহায়তা কর।মস্তিষ্কের স্মৃতি শক্তি বাড়াতে আর পাকস্থলী ও লিভারের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।মুখের অরুচি দূর করে খাবার খাওয়ার রুচি বাড়ায়।কোষ্ঠকাঠিন্য ও কৃমি নিরসনে সহায়তা করে।
  • নাক, কান ও গলার রোগের চিকিৎসায় : আদার  সাহায্যে  নাক, কান ও গলার অনেক রোগ নিরসণ করা সম্ভব।শ্বাসরোগ বা কন্ঠ, কাশি ও বধিরতা ূূর করতে সহায়তা করে।আদা দিয়ে তৈরি মোরব্বা খেলে বুকের কফ সরানো সম্ভব।
  • চোখের সমস্যা নিরসণে :পক্ষপাত, চোখের ছানি ও অন্যান্য চোখের সমস্যা নিরসনে সহায়তা করে।
  • পেশীবৃদ্ধি সারাতে সহায়তা : পেশী ও শিরা যদি বায়ুবৃদ্ধির কারণে ফুলে উঠা  আদা বাটার প্রলেপ লাগালে কমিয়ে দেয়।ঠান্ডা লাগার জন্য যদি শরীরের কোন অংশ ব্যথা হয় বা শ্লেষ্মাজনিত করণে কোন অংশ ফুলে গেলে আদা এই সব ব্যথায় আরাম হয়। আদার রস তিল তেলের সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে গরম গরম মালিশ করলে বায়ুজনিত ব্যথা, সন্ধিস্থলে ব্যথা ও ফিক ব্যথা সারাতে সাহায্য করে।

 বৈদ্যশাস্ত্রে আদার ব্যবহার :-

বৈদ্যশাস্ত্রে আদার ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।নিম্নে সে সম্পর্কে লিখা হলো :সর্দি ও কাশিতে আদার ব্যবহার : সর্দি কাশির প্রথম পর্যায় এক চামচ মধুর সাথে আদার রস মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া,যায় আর অল্পতেই সেরে যায়।

  • খিদে না হলে : খাবারের রুচি না থাকলে বা খিদা না লাগলে সামান্য আদা কুঁচি লবন দিয়ে চিবিয়ে খেলে এই অরুচি দূর হয়।
  • আমবাতে আদার ব্যবহার : আমবাত নিরসনে আদার রসের সাথে পুরানো গুড় মিশিয়ে খেলে সহজে উপকার পাওয়া যায় । 
  • কানের ব্যথা নিরসণে আদা : কানের ব্যথা নিরসনে আদার রস, তিল তেল , মধু ও লবন মিশিয়ে গরম করে কানের ছিদ্রে দিলে উপকার পাওয়া যায়। 
  • আধুনিক চিকিৎসায় আদার ব্যবহার :- আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রেও আদার উপকারিতার কথা বলা হয়েছে। নিম্নে দেওয়া হলো :
  • ,মাথা ব্যথা সারাতে কার্যকরী : আদার রস নাকে নস্যি হিসাবে দিলে মাথা ব্যথা তারাতাড়ি কমে যায়।আদা বেটে কপালে প্রলেপ লাগালেও মাথা ব্যথ সারে।
  • দাঁতের রস সারাতে :  আদা বেট এর প্রলেপ লাগাকে দাতেঁর ব্যথা কমে এবং টনসিলের ব্যথাও উপসম হয়।
  • পেটের সমস্যা নিরসনে : পেট ফাঁপা রোগে, অম্বল হলে ও উত্তেজনা বৃদ্ধিতে আদা একটি মহৌষধ।  আদার রস খেলে পেট ব্যথা কমে এবং আদার রস চুনের জলের সাথে মিশিয়ে খেলে অম্বল উপশম  করা যায়। 
  • শক্তি বৃদ্ধিতে আদার ব্যবহার : শরীরকে সতেজ রাখতে ও কাজ করার শক্তি বৃদ্ধিতে আদা খুবই ভালো কাজ করে। 
  • অন্যান্য : আদা ক্ষুদা বৃদ্ধি,  জীবনীশক্তি বাড়াতে অত্যান্ত  উপকারী একটি উপাদান আদা।

এগুলো ছাড়াও আরও নানা রকম কাজে আদা ব্যবহূত হয় এবং উপকৃত ও হই। নিম্নে দেয়া হলে : –

Image by Couleur from Pixabay

১/ আদা খেলে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দূর হয়।  

২/ আদাতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক যা শরীরের রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। 

৩/ আদা খেলে কোলন ক্যান্সার ও জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। 

৪/ আদা শরীরের বিভিন্ন রকমের ব্যথা নাশকের কাজ করে।  

৫/ আদায় অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট রয়েছে, যা শরীরের রোগজীবাণু ধ্বংস করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।  

৬/ আদা শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির শোষন ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে। 

৭/নিয়মিত আদা খেলে হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা দূর করে। 

৮/রক্তের অনুচক্রিক ও হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখতে আদা দারুন কার্যকর। 

৯/ নিয়মিত আদা খেলে ত্বকে ব্রণ উঠা বন্ধ হয় এবং ত্বক মশ্রিন ও পরিস্কার হয়।  

১০/ আদার রস রক্ত শূন্যতা দূর করে।

১১/ যারা গান গায় তাদের গলা পরিস্কার করতে আদা ও লবন খুবই উপকার।  

১২/ আদার রস শরীর শীতল করে।

১৩/ আদা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে ও রক্তে সুগার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

১৪/ আদা দেহের ক্ষত স্থান দ্রুত শুকাতে সহায়তা করে।

১৫/ আদার রস দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে ও দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা জীবানু ধ্বংস করে।   

১৬/ মাইগ্রেনের ব্যথা ও কিডনির জটিলতা দূর করতে আদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১৭/ আদা রক্তের কলেস্টেরলের মাত্রা কার্যকরভাবে কমাতে সাহায্য করে। 

১৮/ আদা খেলে মহিলাদের মাসিকের সময় তল পেট ব্যথা ও শরীরিক অস্বস্তি দূর হয়।

১৯/ আদায় থাকা কিছু উপাদান মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে।

২০/ আমাশয়, জন্ডিস ও পেট ফাঁপা রোধে আদার রসে খুব উপকার পাওয়া যায়।  

২১/   আদা স্ক্যাল্প থেকে মরা কোষ দূর করে চুলের ভেতর পর্যন্ত পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে।এটি চুলের খুশকি দূর করে।

২২/ অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে আদা বিষ্ময়কর ভাবে কাজ করে। 

২৩/   আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় ভুগলে সারা দিনের খাবারে অল্প পরিমাণে আদা রাখার চেষ্টা করা উচিত। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে জিঞ্জার অয়েল উপকারী।

২৪/ গর্ভধারনেরবপ্রথম দিকে গর্ভবতী মারা সকালে ঘুম থেকে উঠার পর অস্বস্তি ও বমি ভাব হলে সামান্য আদা কুচি খেলে খারাপ লাগা দূর হয়।

২৫/ যে কোন অপারেশনের পর কাঁচা আদা খেলে দ্রুত অপরেশনের জায়গা শুকাতে সহায়তা করে।   

ভেষজ পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ আদার গুনের ও উপকারিতার শেষ নেই।তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আদা কম ব্যবহার করাই ভালো। যেমন —-

১/ গলস্টোনের সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বেশি আদা না খাওয়াই শ্রেয় । 

২/ গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বেশি আদার না খাওয়াই ভালো।

মহৌষধ নামে খ্যাত আদার রয়েছে প্রচুর ভেষজ গুন। এই ভেষজগুণের কারনে আদা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষার সাথে ত্বকেরও বিভিন্ন উপকারে আসে। নিত্য প্রয়োজনীয় এই আদায় রয়েছে ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, লবন, পটাশিয়াম, ভোলাটাইল,অয়েল ইত্যাদি। আদা খাদ্যশিল্প , সুগন্ধি তৈরিতে,আচার, ঔষধ, পানীয় তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।আদা কাঁচা ও রান্না করে সব রকম ভাবেই খাওয়া যায়। বাংলাদেশের আবাহওয়া আদা উৎপাদনের জন্য উপযোগ। গ্রীষ্ম মন্ডলীয় অঞ্চলে আদার চাষ ভালো হয়। আদা শরীরের জন্য খুবই উপকারী  একটি মশলা।

 

 

By ত্রোপা চক্রবর্তী

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *